Inqilab Logo

শক্রবার ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চাহিদায় দেশি গরু সরবরাহ পর্যাপ্ত

চট্টগ্রামে জমজমাট পশুর হাট

রফিকুল ইসলাম সেলিম : | প্রকাশের সময় : ২১ আগস্ট, ২০১৮, ১২:০২ এএম

আনোয়ারার হাইলধর গ্রামের চাষী আবুল হাশেম দুটি গরু নিয়ে স্টিল মিল বাজারে আসেন। দুটি গরুই বিক্রি হয়ে গেছে। বড়টি ৭০ হাজার আর ছোটটি বিক্রি করেছেন ৪০ হাজার টাকায়। এই দাম পেয়ে তিনি খুুিশ। ক্রেতারাও সন্তোষ প্রকাশ করে বললেন- গরুর যা সাইজ তাতে দাম তেমন বেশি না। কৃষকের ঘরে লালিত-পালিত পছন্দের দেশি গরু কিনতে পেরে খুশি দুই ক্রেতা। চট্টগ্রাম নগরীর অন্যতম প্রধান কোরবানির পশু হাট স্টিল মিল বাজারের ওই বিক্রেতা আর ক্রেতাদের মতো নগরীর প্রায় সবকটি পশুর হাটে দাম নিয়ে সন্তুষ্ট সবাই। সরবরাহ বেশি থাকায় দাম নিয়ে এবার তেমন আপত্তি নেই কারও।
বাজারে দেশি গরুর চাহিদা বেশি, সরবরাহও পর্যাপ্ত। এবার ভারতীয় গরু নেই বললেই চলে। মিয়ামনার থেকে কিছু গরু আসলেও দেশি গরুতে ঠাসা পশুরহাট। নগরীর আটটি কোরবানির পশুর হাটের পাশাপাশি বৃহত্তর চট্টগ্রামের শতাধিক হাটে জমে উঠেছে বেচাকেনা। পবিত্র ঈদ উল আযহার আর মাত্র কয়েক ঘন্টা বাকি। শেষ সময়ে পছন্দের পশুটি কিনে নিতে বাজারে ক্রেতাদের ভিড়। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে নগরবাসী ছুটছেন বাজারে। পছন্দ আর দামে দরে মিললেই ক্রেতারা কিনে নিচ্ছেন কোরবানির পশু। বিক্রেতারাও চাহিদা মতো দাম পেলে ছেড়ে দিচ্ছেন। জমজমাট এই বেচাকেনা চলবে ঈদের দিন সকাল পর্যন্ত।
নগরীর স্টিল মিল, পতেঙ্গা সিটি কর্পোরেশন হাইস্কুল মাঠের গবাদি পশুরহাটসহ কয়েকটি হাট ঘুরে দেখা গেছে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। হাটে গরুর সরবরাহ প্রচুর। গতকালও দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে গরুবাহী ট্রাক আসে পশুর হাটে। ক্রেতারা বলছেন, যেভাবে গরু আসছে তাতে শেষ মুহূর্তে দাম আরও পড়ে যেতে পারে। বাজার ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বড় সাইজের গরুর দাম কিছুটা কম হলেও ছোট গরুর দাম একটু বেশি। বিক্রেতারা বলছেন, চাহিদা বেশি হওয়ায় ছোট গরুর দামও বেশি। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ৩০-৩৫ হাজার টাকায়ও ভালোমানের গরু মিলছে। নগরীর পতেঙ্গা, স্টিল মিল ও কইল্ল্যার হাটে দক্ষিণ চট্টগ্রামসহ কক্সবাজার অঞ্চলের কৃষকের বাড়ি ও খামারে লালিত-পালিত গরুর সরবরাহ বেশি। এদের মধ্যে বেশিরভাগই চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী লাল বিরিষ। নগরীর সবচেয়ে বড় স্থায়ী পশুর হাট সাগরিকা গরুর বাজারে হরেক রকম গরুর সমাহার। সেখানে চট্টগ্রামের স্থানীয় গরুর পাশাপাশি বৃহত্তর বগুড়া, কুষ্টিয়া ও ফরিদপুর অঞ্চল থেকেও বিপুল সংখ্যক গরু এসেছে। এ পশুর হাটে ছোট গরুর চেয়ে বড় গরুর সরবরাহ বেশি।
নগরীর সবচেয়ে বড় অস্থায়ী পশুর হাট কর্ণফুলী পশুর হাটে বৃহত্তর চট্টগ্রাম ছাড়াও মিয়ানমার থেকেও প্রচুর গরু এসেছে। এ হাটে খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ও রাঙ্গামাটির পাহাড়ি খামারে সযত্মে লালিত গরু নজর কাড়ছে ক্রেতাদের। এসব গরু যেমন মোটাতাজা তেমনি রঙ এবং সাইজেও আকর্ষণীয়। পাহাড়ের গরু মোটাতাজা হলেও চর্বিমুক্ত। এ কারণে এ গরুর চাহিদা বেশি। আর এ সুযোগে দামও বেশি হাঁকছেন বিক্রেতারা। অন্য হাটের মতো এ হাটেও দেশি গরুর চাহিদা বেশি। ক্রেতাদের পছন্দের শীর্ষে এই অঞ্চলের কৃষক আর খামারীদের ঘরে সযত্মে লালিত-পালিত হৃষ্টপুষ্ট দেশি গরু-তথা লাল বিরিষ। কৃত্রিমভাবে মোটাতাজা করা গরু এড়িয়ে চলছেন ক্রেতারা। বিক্রেতারা বলছেন, মানুষ এখন অনেক সচেতন। কৃত্রিম উপায়ে মোটাতাজা করা গরু দেখলেই বোঝা যায়।
এদিকে ভারতীয় গরুর কোন কদর নেই। এবার চট্টগ্রামের পশুর হাটে ভারতীয় গরু নেই বললেই চলে। গরুর খামারি, চাষি ও বিক্রেতারা বলছেন, ভারত থেকে গরু আসা বন্ধ হওয়ায় গত কয়েক বছর ধরে দেশে গরু লালন-পালন বেড়ে গেছে। বর্তমানে কোরবানি ঈদে চাহিদার তুলনায় অতিরিক্ত গরু মজুদ রয়েছে। এ কারণে কৃষক ও খামারিরা ভাল দাম পাচ্ছেন। কোরবানি দাতারাও দেশি গরু দিয়ে কোরবানি করতে পেরে খুশি। মহানগরীর স্থায়ী এবং অস্থায়ী আটটি হাটের পাশাপাশি কোরবানি দাতাদের অনেকে নিজেদের উদ্যোগে গরু কিনে এনে আত্মীয়-স্বজনদের মাঝে বিক্রি করছেন। অনেকে দলবেঁধে রংপুর, কুষ্টিয়া, তিন পার্বত্য জেলা ও কক্সবাজারের গ্রামের কৃষকদের কাছ থেকে গরু কিনে নিয়ে আসছেন। চট্টগ্রাম নগরীর পাশাপাশি জেলার ১৪টি উপজেলা সদরসহ প্রত্যন্ত অঞ্চলে শতাধিক পশুর হাট বসেছে। স্থায়ী-অস্থায়ী এসব পশুর হাটে চলছে জমজমাট বেচাকেনা। নগরীর পোস্তারপাড়ে একমাত্র ছাগলের হাটেও ক্রেতাদের ভিড়। সেখানেও চলছে জমজমাট বেচাকেনা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: গরু

২ মার্চ, ২০২২
২ জানুয়ারি, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ