পাক সেনাপ্রধান কামার জাভেদ বাজওয়াকে আলিঙ্গন করায় কংগ্রেস নেতা নভোজ্যেৎ সিং সিধুর মৃত্যুদণ্ডের দাবি তুলেছে ক্ষমতাসীন বিজেপির সংখ্যালঘু মোর্চা। মোর্চা নেতা আফতাব আদবানি ‘রাষ্ট্রদ্রোহী’ আখ্যা দিয়ে বলেছেন, সিধু ভারতীয়দের কথা ভুলে গিয়েছিলেন। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ির শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার চাইতে ইমরানের শপথে যোগ দেয়া বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছিল সিধুর। এই ধরনের মানুষের এ দেশে থাকার কোনো অধিকার নেই।
পাকিস্তানের নতুন প্রধানমন্ত্রী
ইমরান খানের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে নভজ্যোৎ সিধু ও পাক সেনাপ্রধান জেনারেল বাজওয়ার আলিঙ্গন নিয়ে ভারতে আলোচনা ও সমালোচনার ঝড় বইছে। নভজ্যোৎ সিধু ভারতের সাবেক ক্রিকেটার ও অধুনা রাজনীতিবিদ। তিনি বিজেপির টিকিটে দুইবার এমপিও হন। বর্তমানে তিনি ভারতের একটি রাজ্যের কংগ্রেস সরকারের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ভবনে
ইমরান খানের শপথ গ্রহণের অনুষ্ঠানেই দেখা গেছে, সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া নিজে থেকেই এগিয়ে এসে ভারত থেকে আসা অতিথি সিধুর সঙ্গে আলিঙ্গন করছেন। অন্তত দুইবার তাদের বুকে বুক মেলাতে দেখা যায়। পরষ্পরের মাঝে হাসিমুখে বেশ কিছু কথাবার্তারও আদানপ্রদান হয়। বিষয়টি ভালোভাবে নেয়নি ভারতীয়রা। নভজ্যোত সিধুর সঙ্গে পাকিস্তানি সেনাপ্রধানের সেই ছবি সামনে আসার পর থেকেই ভারতের সোশ্যাল মিডিয়ায় সিধুকে আক্রমণের মুখে পড়তে হচ্ছে। ভার্চুয়াল জগতে ভারতীয়দের তীর্যক মন্তব্য শুনতে হচ্ছে সিধুকে। অনেকেই মন্তব্য করেছেন, 'শত্রু রাষ্ট্রের সেনাপ্রধানের সঙ্গে গলাগলি করে' তিনি কাজটা মোটেই ভাল করেননি।
হরিয়ানার বিজেপি সরকারের ক্যাবিনেট মন্ত্রী অনিল ভিজ তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, ‘পাকিস্তানি সেনাপ্রধানকে জড়িয়ে ধরে সিধু নিজ দেশের সঙ্গে বেইমানি করেছেন।’ আবার কেউ বলছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীর মৃত্যুতে ভারত যখন ৭ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালন করছে তখন নভজ্যোত সিধুর ওই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে যাওয়াই উচিত হয়নি।
এসব সমালোচনার মুখে সিধু অবশ্য দাবি করেছেন, জেনারেল বাজওয়ার সঙ্গে তার শুধু শান্তি নিয়েই কথা হয়েছে। ভারতীয় একটি টিভি চ্যানেলকে সিধু বলেছেন, ‘জেনারেল বাজওয়া এগিয়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরেন - আর তারপরই বলেন আমি এমন একজন সেনাপ্রধান যে আসলে ক্রিকেটার হতে চেয়েছিল!’ উনি তারপরেই বললেন, নভজ্যোত - উই ওয়ান্ট পিস!
ভারতীয়দের জন্য করিডোর খুলে দেবে পাকিস্তান
সিধু আরও জানিয়েছেন, পাকিস্তানের কর্তারপুরে যে গুরুদুয়ারা দরবারা সাহিব আছে সেখানে আগামী ২০১৯ সালে গুরু নানকের ৫৫০তম জন্মবার্ষিকীতে ভারতের শিখ তীর্থযাত্রীদের জন্য একটি করিডোর খোলা হবে বলে পাকিস্তানি জেনারেল তাকে ‘নিজে থেকেই’ কথা দিয়েছেন। শিখ ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা গুরু নানক দেবের সমাধিস্থল পাকিস্তানের ওই গুরুদুয়ারাতেই - আর শিখদের কাছে তা অত্যন্ত পবিত্র তীর্থস্থান বলে গণ্য হয়। তবে ভিসা হয়রানির কারণে ভারত থেকে সেখানে যাওয়া মোটেই সহজ নয় - কিন্তু সিধু বলছেন, পাকিস্তানি সেনাপ্রধানের প্রতিশ্রুতি তার কাছে একটা 'ড্রিম কাম ট্রু' - অর্থাৎ স্বপ্ন পূরণের মতো ব্যাপার। সীমান্তের দুপারে পাঞ্জাবের বাজওয়া, সিধু, সান্ধু, চিমা - এই সব পদবীর লোকেরা যে আসলে সবাই 'জাঠ' পরিবারভুক্ত এবং তারা পরস্পরের প্রতি আলাদা একটা টান অনুভব করেন, সেটাও অবশ্য জানাতে ভোলেননি এই সাবেক ক্রিকেটার। ভারতের সাবেক তারকা ক্রিকেটার নভজ্যোত সিং সিধু - যিনি একটা সময়
ইমরান খানের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটও খেলেছেন - শনিবারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে তিনিই ছিলেন ভারত থেকে যাওয়া একমাত্র অতিথি।
ইমরান খান তার যুগের ভারতীয় তারকা সুনীল গাভাস্কার ও কপিল দেব এবং তার প্রিয় বলিউড অভিনেতা আমির খানকেও আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন বলে শোনা গিয়েছিল - কিন্তু তারা কেউই শেষ পর্যন্ত ওই অনুষ্ঠানে যাননি। ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়ে নভজ্যোত সিধু বিজেপির রাজনীতিতে যোগ দেন। বিজেপির হয়ে দুবার তিনি পাঞ্জাবের অমৃতসর থেকে এমপিও হয়েছেন। কিন্তু গত বছর দলের সঙ্গে মতপার্থক্যের জেরে বিজেপি ছেড়ে তিনি কংগ্রেসে যোগ দেন। বর্তমানে তিনি ভারতের পাঞ্জাব রাজ্যের কংগ্রেস সরকারের একজন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীও।