বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
সিরাজদিখান উপজেলায় প্রায় ৪’শ বেদে পরিবারে এখন আর আগের মতো ঈদ আনন্দ নেই। ভোটার হওয়া সত্বেও তারা নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত তারা। আধুনিক সভ্যতার অগ্রযাত্রায় সিরাজদিখানের আদিবাসী বেদে পরিবারগুলো এখন অতিকষ্টে দিনাতিপাত করছে। মুন্সীগঞ্জ জেলার এই সিরাজদিখান উপজেলায় ১৬৩৮ খ্রীস্টাব্দে শরনার্থী আরাকান রাজ বল্লাল রাজার সাথে বেদেরা প্রথম এখানে আসে। সিরাজদিখান বাজার, তালতলা বাজার, রাজানগর, শেখরনগর, তুলশীখালী, ভবানিপুড় এলাকা মিলিয়ে এই উপজেলায় প্রায় সাড়ে ৪’শ বেঁদে পরিবার বসবাস করে আসছে।
নগরায়নের এই যুগে ঢাকার পাশের জেলা মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলাটি অতি দ্রুত শহরায়ন হয়ে উঠছে। তৈরী হচ্ছে নতুন নতুন মার্কেট, গড়ে উঠেছে আধুনিক দোকানপাট। তাই গায়েঁর পথে ঝুড়ি মাথায় কিংবা কাঁধে লম্বা ব্যাগ ঝুলাঁনো বেদে পরিবারের সদস্যদের আগের মতো চুরী ফিতা বিক্রি করতে দেখা যায় না। সভ্যতার অগ্রযাত্রায় ব্যস্ত এ সময়ে মানুষ আর আগের মতো জড়ো হয়ে সাপ খেলা দেখার সময় পায় না। তাছাড়া ইন্টানেটের এই যুগে মিডিয়া গুলো অহরহ সাপ নিয়ে মেগা সিরিয়াল তৈরী করায় সাপ খেলা দেখার আগ্রহও মানুষের এখন নেই বললেই চলে। তাই তাদের অর্থনৈতিক অবস্থ অতি দুর্বল হয়ে পরেছে। সিরাজদিখান উপজেলার বেদে পল্লীতে এবার ঈদ আনন্দ আর আগের মতো দেখা যাবে না। কোন রকমে দুমুঠো খেয়ে পড়ে বেচে আছে এ অঞ্চলের বেদেরা। তাদের কাছে ঈদ আনন্দ এখন উচ্ছ্বসিত হয় না। অর্থের অভাবে কোরবানী দেওয়া আর হয়ে উঠে না এখানকার বেদেদের। তাই ঈদের দিনও অন্য সব দিনের মতোই মনে হয় তাদের কাছে। বেদে পরিবারের শিশু-কিশোরদের মাঝে ঈদ নিয়ে হইচই, আঁতশবাজি করতে দেখা যায় না। ঈদের আনন্দ এখন মনে ধরে না বেদেদের। এমনটাই জানালেন বেদে পরিবারের অনেকে। তারা আরো জানান সিারজদিখান উপজেলার সিরাজদিখান বাজারের গোডাউন ঘাটে ইছামতি নদীতে ভাসমান ভাবে ছোট ছোট ডিঙ্গি নৌকায় বর্তমানে অতি কষ্টে দিনাতিপাত করছে ৫০ টি বেদে পরিবার। বংশ পরম্পরায় এ নদীতে বসবাস করে আসছে ওই বেদে পরিবারগুলো।
সিরাজদিখান বাজারে ঝোলা কাঁধে বের হওয়া বেদে পরিবারের সদস্য শুক্কুরি বেগম (৪০) জানান, ‘আমাদের কাছ থেইক্কা মানুষ আগে চুরী ফিতা কিনলেও এখন বাড়ির বউ-ঝিরা হাট বাজারে গিয়া কিনে। এ ছাড়া যেহানে সেহানে ডাক্তার থাকায় আমাগো কাছ থেকে সিংগা ও তাবীজ কিনে না।
সিরাজদিখানের বেদে সম্প্রদায়ের মোতালেব মিয়া (৬০) জানান, নারীদের আগের মতো গ্রামে- গঞ্জে চুড়ি, ফিতা বিক্রি, সিংগা লাগানো, তাবিজ বিক্রি কিংবা সাপ খেলা দেখানো পেশায় এখান আর কোন উপার্জন নেই। তবে বিভিন্ন গ্রামীণ মেলায় ছোট ছোট দোকান বসিয়ে খেলনা থেকে শুরু করে বিভিন্ন মাটির তৈরী সামগ্রী, মেলায় চুড়ি, ফিতা, নেইলপালিশ বিক্রি করে এখোন কিছুটা উপার্জন হয় তাদের। পুরুষরা মাছ ধরে নারীদের পাশাপাশি কিছুটা উপার্জন করে। এতে অর্ধহারে দিনাতিপাত করছে তারা। কাজেই এবার কোরবানীর ঈদে বেদেদের কোন আনন্দ নেই। তাদের কাছে ঈদ বলতে কোন বিশেষ দিন এখন আর মনে হয় না।
সিরাজদিখানের বেদে পল্লীর সর্দার বোরহানউদ্দিন (৫৬) জানান, ভোটার হওয়া সত্ত্বেও সকল প্রকার নাগরিক সুবিধা হতে বঞ্চিত হচ্ছেন তারা। তাদের দাবি দেশের সকল নাগরিকদের মতো তাদেরকেও সকল ধরণের সুযোগ সুবিধা দেওয়া হউক। অনেক কর্মকর্তা সাংবাদিক আসে খোঁজ নেয়, কেউ ছবি নেয়। শুনি সরকার আমাদের জন্য অনেক কিছু করবে কিন্তু কিছুই তো হচ্ছে না আমাদের ক্ষোভের সাথে তিনি একথা বলেন।
সিরাজদিখান উপজেলা নির্বাহী অফিসার তানবীর মোহাম্মদ আজিম জানান, বেদেঁদের ভোটার তালিকায় অর্ন্তভূক্ত করে তাদের সকল ধরনের নাগরিক সুযোগ সুবিধাদানের চেষ্টা চলছে। সরকারী সকল সুযোগ সুবিধাই তাদের পর্যায়ক্রমে দেয়া হচ্ছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।