Inqilab Logo

বুধবার ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ২১ কার্তিক ১৪৩১, ০৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি ফেরিঘাটে সিরিয়াল বাণিজ্য

ঈদে ঘরমুখো মানুষের দুর্ভোগ

মাদারীপুর জেলা সংবাদদাতা : | প্রকাশের সময় : ২০ আগস্ট, ২০১৮, ১২:০১ এএম

নাব্য সঙ্কট আর ডুবোচরে নৌপথ সরু হয়ে আসছে দেশের অন্যতম শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি নৌরুট। ফলে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়ে ঘাট এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে দীর্ঘ যানজট। যাত্রীবাহি পরিবহন ও হালকা যানবাহন অগ্রাধিকার দিয়ে পার করায় বিপাকে পড়েছে ট্রাক চালকরা। এই সুযোগে সিরিয়াল বাণিজ্যের রমরমা ব্যবসা করছে ঘাটের এক শ্রেণীর অসাধু চক্র। অভিযোগ উঠেছে পুলিশ ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে। এতে অসহনীয় দুর্ভোগে পড়েছে পারাপারের অপেক্ষায় থাকা পরিবহন চালক, শ্রমিকসহ ঈদে ঘরমুখী মানুষ ও সাধারণ যাত্রীরা।
গত শনিবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কাঁঠালবাড়ি ফেরি ঘাটের বিআইডবিøউটিএ’র কাউন্টারের সামনে ১০ থেকে ১৫ জনের একটি টিম যাত্রীবাহি পরিবহন, ট্রাক, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাসসহ অন্য ছোট-বড় যানবাহন থেকে নির্ধারিত টিকিট ও কুপন ছাড়াই টাকা নিচ্ছে। দেখে বোঝার উপায় নেই এদের মধ্যে কে বিআইডবিøউটিএ’র কর্মকর্তা-কর্মচারী। তাদের সাথে যোগ দিয়ে টাকা নিচ্ছে আনছার বাহিনীর পোষাক পরিহিত কয়েকজন সদস্য। এদের মধ্যে আবার ভিন্ন পোষাকেরও কয়েকজন সাথে ট্রাক আসলেই সাথে সাথে দৌড়ে গিয়ে টাকা নিয়ে আসছে। এভাবে এক থেকে দেড় ঘন্টার মধ্যে প্রায় শতাধিক ছোট-বড় পরিবহন থেকে বেশ মোটা অঙ্কের টাকা নিচ্ছে চক্রটি। এরইমধ্যে সাংবাদিক দেখে কয়েকজন যুবক তেড়ে আসে, বাঁধা দেয় ক্যামেরায় ছবি তুলতে। তিন-চার জন কেটেও পড়ে। সরেজমিন অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, কাঁঠালবাড়ি ঘাটে পারাপারের অপেক্ষায় রয়েছে প্রায় তিন শতাধিক ট্রাক চালক ও শ্রমিকরা। গত দশ দিন ধরে কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া নৌরুটে উজানে ব্যাপক নদী ভাঙ্গনের ফলে তীব্র স্রোতের সাথে ভেসে আসা পলির কারণে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। এরমধ্যে পাঁচ দিন ধরে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ রূপ নেয়। এতে ঘাট এলাকায় দেখা দিয়েছে স্থবিরতা। এই পরিস্থিতিতে বিআইডবিøউটিএ কর্তৃপক্ষ যাত্রীবাহী বাস ও হালকা পরিবহন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পারাপার শুরু করে। তবে দুর্ভোগে পড়ে ভারি মালামালবাহি ট্রাক। এই সুযোগেই সিরিয়ালের নামে রমরমা বাণিজ্য শুরু করে হাইওয়ে পুলিশ, স্থানীয় সাধারণ পুলিশ, ঘাট ইজারাদার, বিআইডবিøউটিসি ও বিআইডবিøউটিএ’র কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ঘাট এলাকার এক শ্রেণীর অসাধু প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। এতে অসহনীয় দুর্ভোগে পড়ে ঘাটে আটকে পড়া ট্রাক চালক ও শ্রমিকরা।
টাকা উত্তোলনের সাথে থাকা বিআইডবিøউটিএ’র কর্মচারি পরিচয় দেয়া সবুর হোসেন নামের একজন জানান, ‘আমরা বিআইডবিøউটিএ, আনছার বাহিনী, ঘাট ইজারাদারের লোকজন মিলে এক সাথে টাকা নেই। নির্ধারিত কুপনের বাহিরে টাকা নেয়া হয় না। তবে অন্যরা কিছু নিতে পারে। আমরা সরকারী লোক, তবে আমাদের মাঝে মাঝে স্থানীয় লোকজন সহযোগিতা করে।
তবে ঝালকাঠি থেকে আসা পশুবাহী ট্রাকের চালক আব্দুস মোবারেক জানান, ‘আমি ভাঙ্গা থেকে এই পর্যন্ত পাঁচ জায়গায় টাকা দিয়ে এসেছি। সিরিয়াল করতে যেখানে আগে ৫শ’ থেকে ৭শ’ টাকা দিতে হতো, এখন সেখানে ৫ হাজার থেকে ৭ হাজার টাকা পর্যন্ত দিতে হচ্ছে। টাকা না দিলে সিরিয়াল মিলছে না। ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে এই চক্রের লোকজন রাখা আছে। পুলিশকে বললেও কাজ হচ্ছে না। তাদেরও বাড়তি টাকা দিতে হচ্ছে। ফেরি কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি বললেও কাজ হচ্ছে না।
দশ দিন ধরে পারাপারের অপেক্ষায় থাকা ট্রাক চালক রমিজ উদ্দিন আক্ষেপ করে বলেন, ‘আমি টাকা দিতে পারি নাই বিধায় দশ দিন ধরে কাঁঠালবাড়ি ঘাটে বসে। কোন দিন পার হতে পারবো, সেটাও জানি না। ঘাটের লোকজনকে কিছু বললে ছোট ছোট ছেলেরাও মারধর করে। যে টাকা ভাড়া নিয়ে আসছিলাম, সেই টাকাও এখন শেষ পর্যায়ে, কিভাবে বাড়ী যাবো সেটা নিয়েও টেনশনে আছি।’ অতিরিক্ত টাকা উত্তোলনের বিষয়ে বিআইডবিøউটিসি’র কাঁঠালবাড়ি ঘাটের সহকারী ব্যবস্থাপক অব্দুল মোমিন বলেন, আমরা নির্ধারিত টিকিটের বাহির এক পয়সাও নিচ্ছি না। আমাদের কোন কর্মকর্তা-কর্মচারী অতিরিক্ত টাকা নেয়ার সাথে জড়িত না। আমরা বর্তমানে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে হালকা পরিবহান ও পশুবাহী ট্রাক পারাপার করছি।
আর কাঁঠালবাড়ি ঘাটের দায়িত্ব থাকা ট্রাফিক ইন্সপেক্টর উত্তম শর্মা টাকা নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে জানান, যারা সাংবাদিকদের কাছে টাকা নেয়ার বিষয়টি অভিযোগ করেন, তারা মূলক সঠিকভাবে পার না হতে পেরে বলে। যদি পুলিশের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উঠে, তাহলে দ্রæততার সঙ্গে বিষয়টি দেখা হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ফেরিঘাট


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ