বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
টানা বৃষ্টি ও প্রবল স্রোত প্রমত্তা নবগঙ্গা নদীর অব্যাহত ভাঙ্গনে নড়াইলের কালিয়া উপজেলার নদী তীরবর্তী শুক্ত গ্রামের প্রায় দুইশ’ বছরের পুরনো পালপাড়া নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। নদী ভাঙ্গনে প্রায় ৫০টি পাল পরিবারসহ শতাধিক পরিবার গৃহহীন হয়ে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছে। এছাড়া ভাঙ্গনের হুমকির মুখে রয়েছে নদী তীরবর্তী ঐতিহ্যবাহী শুক্তগ্রাম বাজারসহ কয়েকশ’ পরিবারের বসতবাড়ি।
প্রতি বছরই বর্ষা মৌসূমে নবগঙ্গা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে নদী ভাঙ্গনের তীব্রতা বৃদ্ধি পাওয়ায় নদী তীরবর্তী অনেক গ্রাম ভাঙ্গনের শিকার হয়। চলতি বর্ষা মৌসূমেও নদী তীরবর্তী শুক্তগ্রাম ভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষা পায়নি। নদীর শুক্তগ্রাম পয়েন্টে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করায় এ বছর ভাঙনের তীব্রতা আরো বেড়েছে। এ এলাকায় বিভিন্ন সময়ে নদী ভাঙ্গনে কয়েক হাজার হেক্টর ফসলী জমি ইতিমধ্যে নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। প্রায় সশ্রাধিক পরিবার গৃহহারা হয়েছে। ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছে লখ লাখ টাকার ফলজ ও বনজ বৃক্ষাদি। সরেজমিনে দেখা গেছে, নবগঙ্গা নদীর ভয়াল আগ্রাসনে শুক্তগ্রামের কুমোর পাড়ার সব জায়গা জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। গত ১৫ দিনের অব্যাহত ভাঙ্গনে একে একে সবাই হারিয়েছে তাদের বাপ-দাদার ভিটেমাটি। যে যেভাবে পারছে বাড়িঘর ভেঙ্গে অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে। রাতারাতি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে তাদের পারিবারিক মন্দির, কুমোর শিল্পের চাকার ঘর, হাড়ি-কলসি পোড়ানের পাজা, নার্সারীসহ অসংখ্য ফলজ ও বনজ বৃক্ষাদি।
কালিয়া উপজেলার বাবরা-হাচলা ইউনিয়নের মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ও সাবেক ইউপি মেম্বর লায়েক হোসেন মোল্লা জানান, ওই গ্রামের অরুন পাল, রতন পাল, কালিদাস পাল, মনি মোহন পাল, হরিদাস পাল, কার্তিক পাল, বিকাশ পাল, ঝন্টু পাল, লিমা বেগম, রতন শিকদার, হাসান শিকদার, আকবার খান, আকতার মন্ডল, দিলিপ পাল, রবি পালসহ শুক্তগ্রাম বাজারের পূর্বপাশে অবস্থিত প্রায় পুরো এলাকাই নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এভাবে আর কিছুদিন চলতে থাকলে ঐতিহ্যবাহী শুক্তগ্রাম বাজার ও কয়েকশ’ পরিবারের বসতবাড়িও নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।
শুক্তগ্রামের পালপাড়ার প্রবীণ ঝন্টু পাল (৭০) জানান, বাবার হাত ধরেই তিনি এ পেশায় এসেছেন প্রায় ৪৫ বছর আগে। স্ত্রী ও এক অন্ধ ছেলেসহ চার সন্তান এবং তাদের সন্তানসহ মোট ১১ জন সদস্য নিয়ে তার সংসার। ১৭ শতক জমিতে চারটি ছোট টিনের ঘর ও একটি মৃৎশিল্প তৈরির চাকা এবং পোড়ানের পাজা ছিল তাদের। তিনটি ঘর অন্যত্র সরিয়ে নিতে পারলেও বাকি সব নবগঙ্গায় বিলীন হয়ে গেছে। তিনি বলেন, তার কোন সামর্থ নেই অন্যত্র জমি কিনে নতুন করে বাড়িঘর নির্মাণ করার। ১৫দিন ধরে কাজ বন্ধ। যে সব জিনিসপত্র তৈরি করা ছিল তাও সরাতে পারেননি। এই বৃদ্ধ বয়সে তিনি এখন কি করবেন সেকথা বলে অঝোরে কেঁদে উঠলেন। নার্সারি ব্যবসায়ি বিলায়েত হোসেন মোল্লা জানালেন, তার ১৮ বিঘা জমির মাত্র বিঘা দুয়েক আছে। বাকি সবই সর্বনাশা নবগঙ্গা খেয়ে ফেলেছে। তার ওই জমিতে ছিলো ২টি আম গাছের নার্সারি, ২টি মেহগনি গাছের নার্সারি, ১টা আম বাগান ও ৪টা কুল বাগান। সব হারিয়ে তিনি এখন পথের ফকির।
নড়াইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহ নেওয়াজ তালুকদার বলেন, বিষয়টি আমরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে ভাঙ্গনরোধে ব্যবস্থা গ্রহন করা হচ্ছে । নড়াইলের জেলা প্রশাসক মো. এমদাদুল হক চৌধুরী বলেন, জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে নদী ভাঙ্গন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করে পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়ের সচিবের সাথে কথা বলেছি। নবগঙ্গা নদীভাঙ্গন কবলিত এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডকে ভাঙ্গন রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে। নড়াইল-১ আসনের এমপি মো. কবিরুল হক মুক্তি এ বিষয়ে বলেন, বিষয়টি সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আশা করি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নবগঙ্গা নদীর ভাঙ্গনরোধে ভাঙ্গন কবলিত এলাকায় দ্রুত কাজ শুরু করবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।