Inqilab Logo

বুধবার ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ক্ষতি ১১৬ কোটি টাকা

বিমানের ভ্রান্ত নীতিতে ২০ হজ ফ্লাইট বাতিল

শামসুল ইসলাম : | প্রকাশের সময় : ১৬ আগস্ট, ২০১৮, ১২:০১ এএম

৬০৬ জন হজযাত্রী হজে যাননি : শেষ ফ্লাইটেও ২০১ সিট খালি


বিমানের হজ ফ্লাইটের শেষ দিনেও দু’টি হজ ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছর বিমানের ২০টি হজ ফ্লাইট বাতিল করতে হয়েছে। বিমানের শেষ হজ ফ্লাইট (বিজি-৭০৯৩) গতকাল বিকেল সাড়ে ৪টায় ২০১টি সিট খালি নিয়ে ২১৮ জন যাত্রীসহ জেদ্দার উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করেছে। বিমানের ভ্রান্ত নীতি এবং হজ টিকিট নিয়ে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির দরুণ হজযাত্রী পরিবহনে এ অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এতে বিমান কর্তৃপক্ষ প্রায় ১১৬ কোটি টাকা ক্ষতির সম্মুখীন হলো। এছাড়া হজ এজেন্সিগুলোও প্রায় ৫০ কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছে। এ জন্য বিমানের অসাধু ও অর্থব কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী উঠেছে। হাবের শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ এ অভিমত ব্যক্ত করেছেন। এবারই প্রথম বিমানের কোনো হজ টিকিটের বুকিং-এর তারিখ পরিবর্তন করতে ১০০ মার্কিন ডলার জরিমানা দিতে হয়েছে। বিমানের হজ ফ্লাইটের শেষের দু’তিন দিনে টিকিটের চাহিদা থাকে সবচেয়ে বেশি। কিন্ত বিমানের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা দেড় মাস আগে থেকেই বলে আসছে ২৪ আগষ্ট ও ১৫ আগষ্টের হজ ফ্লাইটের সকল টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। এতে বাধ্য হয়ে হজ এজেন্সিগুলো বিমানের উপর ভরসা না রেখে সাউদিয়ার হজ ফ্লাইটে উল্লেখিত দু’দিন হজযাত্রীদের টিকিট কিনে ফেলেছেন। হজ টিকিট নিয়ে এ ধরনের কারসাজির সাথে কারা জড়িত তা’খতিয়ে দেখার দাবী উঠেছে। এবার ৬০৬ জন হজযাত্রী হজে যাননি।
বিমানের হজযাত্রীদের প্রথম ফিরতি ফ্লাইট ২৭ আগস্ট এবং শেষ ফিরতি ফ্লাইট ২৫ সেপ্টেম্বর। গতকাল বুধবার পর্যন্ত বিমানের মাধ্যমে ৬২ হাজার ৭শ’৯৬জনসহ সর্বমোট ১ লাখ ২১ হাজার ৮শ’ ৬৮ জন হজযাত্রী সউদী আরবে পৌছেছেন। বাকি হজযাত্রী আগামী ১৭ আগষ্টের মধ্যে সাউদিয়া এয়ারলাইন্সে’র মাধ্যমে সউদীতে যাবেন।
এদিকে, গতকাল বুধবার হাজী ক্যাম্পে সংবাদ সম্মেলনে ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান বলেছেন, হজ এজেন্সিগুলোর অবহেলা আর অনাগ্রহের কারণে এ বছর ৬০৬ জন হজে যেতে পারলেন না। এর সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ধর্মমন্ত্রী বলেন, গুরুতর অসুস্থ, মৃত্যু এজেন্সিদের অনাগ্রহের কারণে ৬০৬ জন ভিসার আবেদন করেননি। শেষ পর্যন্ত ১০ হাজার ৯৪২ জন রিপ্লেসমেন্ট আবেদনের বিপরীতে ১০ হাজার ৭৭৪ জনকে রিপ্লেসমেন্ট দেয়া হয়েছে। কিছু এজেন্সির বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেছে, ফিরে এসে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব আনিছুর রহমান, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব (হজ) মো: হাফিজ উদ্দিন, হজ অফিসের পরিচালক হজ মো: সাইফুল ইসলাম, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব (হজ) শরাফত জামান, মহাসচিব এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম, হাবের অর্থ সচিব মাওলানা ফজলুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে ২০ আগস্ট। সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় মোট হজযাত্রীর সংখ্যা ১,২৬,৭৯৮ জন। গতকাল বিমানের শেষ হজ ফ্লাইটে হাবের মহাসচিব এম শাহাদাত হোসাইন তসলিমের উদ্যোগে এয়ার ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনালের (১৩৩৮) এর ৯ জন হজযাত্রীর টিকিট যোগার করে তারা হজে গেছেন। সাদেক ট্রাভেলসের (২৮৭) এর ১৭ হজযাত্রীর মধ্যে ৯ জন হজযাত্রীর বিমানের টিকিট না দিয়েই লীড এজেন্সি’র এয়ার ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনালের মালিক আইনুল হক সউদী আরবে গা-ঢাকা দিয়েছে। সাদেক ট্রাভেলসের স্বত্বাধিকারী ওয়াইজ উদ্দিনকে গতকাল হাজী ক্যাম্পে পরিচালক হজ সাইফুল ইসলামের রুমে অবরুদ্ধ রেখে চার জন হজযাত্রীর টিকিটের টাকা যোগাড় করে এসব হজযাত্রীদের হজে পাঠানো হয়েছে। অপর দিকে, এয়ার লাইফ ইন্টারন্যাশনালের ম্যানেজার নাসির উদ্দিন জানান, তাদের ৯৪জন হজযাত্রীকে বিমানের শেষ হজ ফ্লাইট যোগে সউদী আরবে পাঠানো হয়েছে। নাসির উদ্দিন জানান, লীড এজেন্সি’র সাথে যুক্ত হয়ে সিরাজগঞ্জের মুফসাফির ট্রাভেলসের স্বত্বাধিকারী মর্জিনা খাতুনের স্বামী শফিকুল ইসলাম প্রায় ৯৮ লাখ টাকা পরিশোধ না করে সউদীতে গা-ঢাকা দিয়েছে। হাবের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুল কবির খান জামান রাতে ইনকিলাবকে বলেন, বিমানের অর্থব ও অসাধু কর্মকর্তারা হজ ফ্লাইটের শেষ সপ্তাহের হজ টিকিটের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি এবং ভ্রান্ত নীতির কারণে দফায় দফায় হজ ফ্লাইট বাতিল হয়েছে। তিনি বলেন, এবার আগে ভাগেই বিমানের হজ টিকিট বিক্রির উদ্যোগ নিয়ে কেন ২০টি হজ ফ্লাইট বাতিল হলো তা’ খতিয়ে দেখতে হবে। এতে বিমানের প্রায় ১১৬ কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। হাবের সাবেক নেতা আব্দুল কবির খান জামান বলেন, বিমানের অসাধু কর্মকর্তারা হজ এজেন্সিগুলোকে চাহিদানুযায়ী হজ টিকিট না দিয়ে সংকট সৃষ্টির অযুহাত তুলে আর্থিকভাবে মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন করেছে। এজেন্সিগুলোও বিমানের কাছে কোটি কোটি টাকার চেক জমা দিয়েও শেষ দিকের সিট পায়নি। এতে মক্কা-মদিনায় বাড়ী ভাড়ার জন্য এজেন্সিগুলোরও প্রায় ৫০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। হজ এজেন্সিগুলো যথাসময়ে হজযাত্রীর টিকিট ক্রয় না করায় হজ ফ্লাইট বাতিল করতে হয়েছে এমন অভিযোগ সঠিক নয় বলেও আব্দুল কবির খান উল্লেখ করেন। তিনি হজ ফ্লাইট বাতিলের সাথে জড়িত বিমানের অর্থব ও অসাধু কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত পূর্বক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন। উল্লেখ্য, ধর্মমন্ত্রী প্রিন্সিপাল মতিউর রহমান ও ধর্ম সচিব আনিছুর রহমানের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল গতকাল দুপুরেই সউদী’র উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করেন। বিমানের জনসংযোগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক শাকিল মেরাজ রাতে জানান, গতকাল বিমানের দু’টি হজ ফ্লাইট নিয়ে সর্বমোট ২০টি ফ্লাইট বাতিল হয়েছে।



 

Show all comments
  • মো: ইমরান শেখ ১৬ আগস্ট, ২০১৮, ৩:২৮ পিএম says : 0
    প্রতি বছর এই সমস্যায় পড়েন হজ্জ যাত্রীরা । কিন্তু সরকার কোন ব্যাবস্তা গ্রহন করে না ।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: হজ

২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ