মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
১৫ আগস্ট ২০১৭। দেশজুড়ে ভাইরাল একটি ছবি। আসামের দক্ষিণ শালমারার বানে ডোবা স্কুলে দেশের পতাকা উঠেছে। গলাপানিতে দাঁড়িয়ে জাতীয় পতাকায় সম্মান প্রদর্শন করছে আদুরে গায়ে দুই খুদে শিক্ষার্থী। পাশে প্রধান শিক্ষক। এ বছর গুয়াহাটির গান্ধী মন্ডপে যখন ৩০৬ ফুট উচ্চতায় পতাকা উড়িয়ে চমক দেয়া চলছে, বাক্সার গোরেশ্বরে যখন সাড়ে তিন কিলোমিটার দীর্ঘ তেরঙা বানিয়ে জাতীয় নজির গড়ার চেষ্টা চলছে, তখনই ৩৬৫ দিন আগে ভারতীয় ও দেশপ্রেমের প্রতীক হয়ে ওঠা ওই দুই ছাত্রের একজন হায়দার আলি খান- আপাতত ‘দেশহীন’। সৌজন্যে আসামের নাগরিকত্ব নিবন্ধনের (এনআরসি) চূড়ান্ত খসড়া। বাবা প্রাণ দিয়েছেন জঙ্গির বুলেটে। মা জাইবন খাতুন, দাদা জাইদর আর বোন রিনার নাম আছে নাগরিক নিবন্ধনে। অজ্ঞাত কারণে বাদ পড়েছে হায়দার। হায়দারের সেরা বন্ধু জিয়ারুল অনেকটা ছটফটে। কিন্তু হায়দার ততটাই চুপচাপ। কিন্তু সাঁতারে দুজনই দক্ষ। তাই গত বছর যখন নসকরা নিম্নপ্রাথমিক বিদ্যালয় বন্যায় ডুবে যায়, ওই দুই খুদে সাঁতারু পানিতে ঝাঁপ দিয়ে চলে গিয়েছিল স্কুলের সামনে পতাকাস্তম্ভের কাছে। ডুব দিয়ে খুলে ফেলেছিল জাতীয় পতাকার রশি। প্রধান শিক্ষক তাজেম শিকদারও সাঁতরে চলে আসেন। বাকি শিক্ষক ও ছাত্ররা তখন উঁচু রাস্তায় দাঁড়িয়ে। পতাকা উত্তোলন করে স্যালুট ঠোকেন তাজেম, হায়দার ও জিয়ারুল। এগিয়ে আসেন অন্য শিক্ষকরাও। ধরেন জাতীয় সংগীত। গলা মেলায় আশপাশে জমে থাকা ভিড়। শিক্ষক মিজানুর রহমান ওই ছবি তুলে পোস্ট করেছিলেন নিজের ফেসবুক পাতায়। বিকালের মধ্যে তা গোটা দেশে ভাইরাল হয়ে যায়। অভিনন্দনে ভাসেন নসকরা স্কুলের শিক্ষক-ছাত্ররা। স্থানীয় এমপি বদরুদ্দিন আজমল স্কুলকে এক লাখ টাকা এবং ওই দুই ছাত্র ও চার শিক্ষককে নিজের তরফে আর্থিক বকশিশ দেন। মিজানুর বাবু বলেন, আমাদের এলাকা এতই প্রত্যন্ত যে ধুবুরি যেতেও দুই ঘণ্টা নৌকায় পাড়ি দিতে হয়। রাস্তাঘাট নেই। আমার নিজের বাড়ির একটি অংশ নদীতে তলিয়ে গেছে। নেতারা পাত্তা দেন না। গতবার হইচইয়ের পর ভেবেছিলাম, এবার এলাকার উন্নতি হবে। কিন্তু কিছুই হল না। চলতি বছর ৩০ জুলাই এনআরসির চূড়ান্ত খসড়া তালিকা প্রকাশ হলে দেখা যায়, গ্রামের অনেকের মতো হায়দারের নামও তালিকায় নেই। হায়দারের মা জানান, এনআরসি সেবাকেন্দ্র থেকে বলা হয়েছে, হায়দারের জন্ম সনদে সম্ভবত গোলমাল আছে। সেবাকেন্দ্র সূত্রে বলা হচ্ছে, গ্রামে মহিলাদের অনেকের প্রসবই হাসপাতালে হয় না। পরে জন্ম সনদ সংগ্রহ করতে যায় পরিবার। তখনই কোনো গোলমাল হয়ে থাকবে। ২০১২ সালে কোকরাঝাড়ে জঙ্গি হানায় মারা যান হায়দরের বাবা রূপনাল খান। তার পর থেকেই চুপচাপ হায়দার। এখন চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র। ছোট হলেও নাম বাদ পড়ার গুরুত্ব সে বোঝে। তাই আরও চুপ হয়ে গেছে। মা মাদ্রাসায় রান্না করে নামমাত্র টাকা পান। বলেন, সংসারই চালাতে পারি না, ছেলেকে ভারতীয় প্রমাণ করতে মামলা-মকদ্দমা চালানোর সাধ্য কোথায়! সেবাকেন্দ্র ভরসা দিয়েছে পরের বার ঠিকমতো আবেদনপত্র জমা দিলে নাম উঠবে। আশঙ্কাকে সঙ্গী করেই হায়দার এবারেও স্বাধীনতা দিবসে পতাকা তুলবে। কয়েক দিনের মধ্যেই হায়দারের নিম্ন প্রাথমিক স্কুলটি এলাকার মধ্যে ইংরেজি স্কুলে মিশে যাচ্ছে। তাই এবারই স্কুলের মাঠে শেষবার পতাকা তোলা হবে। গাওয়া হবে ভারতের জাতীয় সংগীত। ছোট্ট হায়দার জানে না, তার কপালে কী লিখে রেখেছেন ভারত ভাগ্যবিধাতা। এবিপি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।