Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ফাঁকা রাজধানীতে বেড়েছে ভোগান্তি বের হচ্ছে না কাগজপত্রবিহীন গাড়ি

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১০ আগস্ট, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

চলছে ট্রাফিক সপ্তাহ। গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার মোড়ে বসেছে মোবাইল কোর্ট। বাস মালিক সমিতির নেতারাও টার্মিনাল থেকে গাড়ি বের হওয়ার আগে কাগজপত্র চেক করছেন। রাজধানীতে বাস মিনিবাস চলছে হাতে গোনা। দুরপাল্লার বাসের সংখ্যাও কমে গেছে। এতে করে গণপরিবহন সঙ্কট আরও তীব্র হয়েছে। বাস না পেয়ে বেশি টাকায় সিএনজি অটোরিকশা বা রিকশায় চড়তে বাধ্য হচ্ছেন যাত্রীরা। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ভাড়া কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে সিএনজি অটোরিকশা ও রিকশা চালকরা। যাদের সাধ্য নেই তারা পায়ে হেঁটেই চলছেন। সব মিলে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছে মানুষ। বাস মালিকরা জানান, গত বুধবারেও দেড় হাজারের মতো বাস চলেছে রাজধানীতে। গতকাল বৃহস্পতিবার এক হাজারও চলেনি। এ কারণে সপ্তাহের শেষ দিনে রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকার রাস্তাও ছিল ফাঁকা। বাস মালিকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না থাকার কারণেই রাজধানীতে বাস মিনিবাস নামানো হচ্ছে না। বিআরটিএ-এর হিসাবে রাজধানীতে বিভিন্ন রুটে ৬ হাজার বাস মিনিবাস চলাচল করে। এসব বাসের অনেক বাসের ফিটনেস নেই। তার মধ্যে বেশিরভাগ বাসের আসন সংখ্যা বেশি। যা ফিটনেসের শর্ত ভঙ্গ করে করা। আবার সহ¯্রাধিক বাসের রুট পারমিটও নেই। এছাড়া চালকের লাইসেন্সের বিষয়টা তো আছেই। সব মিলে ত্রæটিমুক্ত বাসের সংখ্যা এক হাজারের কিছু বেশি বলে মালিকদের ধারনা। তা না হলে সেগুলো রাস্তায় নামবে না কেনো?
সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল বাস মালিক সমিতির এক নেতা জানান, রাজধানীর বাস টার্মিনালগুলোতে গণপরিবহনের কাগজপত্র ঠিক আছে কিনা তা চেক করছে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতিসহ সংশ্লিষ্ট শ্রমিক ইউনিয়ন ও কমিটিগুলো। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে কমিটির সদস্যরা টার্মিনালে থাকলেও আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু হয় দুপুরের দিকে।
জানা গেছে, দুপুর ১২টা থেকে সায়েদাবাদ টার্মিনালে চার শতাধিক পরিবহনের কাগজপত্র চেক করা হয়েছে। ৩০-৪০টির মতো গাড়িতে কাগজপত্র আপডেট পাওয়া যায়নি। বাকি গাড়ি টার্মিনাল ছেড়ে গেছে।
সায়েদাবাদ টার্মিনালে চেকের দায়িত্বে ছিলেন আন্তঃজেলা বাস মালিক সমিতির কোষাধ্যক্ষ ও শ্রমিক কমিটির নেতা রাজু আহমেদ। তিনি বলেন, আমরা সকাল থেকেই কাজ শুরু করি। দুপুর পর্যন্ত ৪শ’ গাড়ি চেক করেছি। এরমধ্যে অধিকাংশের কাগজপত্র ঠিক আছে। আর যেসব গাড়ির কাগজপত্র ঠিক নেই সেগুলো টার্মিনাল থেকে বের হতে দেয়া হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সায়েদাবাদ আন্তঃজেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম বলেন, আমরা কাজ শুরু করেছি। অবৈধ পরিবহন বা কাগজপত্রবিহীন কোনও পরিবহনকে ছাড় দেওয়া হবে না। এক্ষেত্রে আমাদের অবস্থান জিরো ট্রলারেন্স।
মহাখালী বাস মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম বলেন, সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে আমাদের যা যা করণীয় তাই করছি। সকাল থেকে আমরা কাগজপত্র ছাড়া কোনও গাড়ি ছাড়তে দিচ্ছি না।
এদিকে, নগরীর টার্মিনালগুলোতে মালিকদের এ অভিযান, ট্রাফিক সপ্তাহ এবং মোবাইল কোর্ট চলার কারণে গতকাল সড়ক জুড়ে লক্কড় ঝক্কড় পরিবহন চোখে পড়েনি। রাস্তায় গণপরিবহন ও কম দেখা গেছে।
দুপুরে মতিঝিল শাপলা চত্বরে দেখা গেছে, রাস্তায় বাস নেই। রিকশার সাথে প্রাইভেট কারই বেশি চলাচল করছে। মাঝে মধ্যে দু’একটি বাস আসছে। আর অমনি শত শত যাত্রী হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন। সোনালী ব্যাংকের সামনে বাসের জন্য অপেক্ষমাণ কয়েকজন যাত্রী বলেন, তারা দীর্ঘ সময় ধরে মিরপুরের বাসের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু বাস আসছে না। মতিঝিল থেকে একটু সামনে রুপালী ব্যংকের সামনে থেকে উত্তরার বাস ছাড়ে। সেখানেও শত শত যাত্রীকে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। সেখানেও দুজন অপেক্ষমাণ যাত্রী আক্ষেপ করে বলেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সময় বলা হলো, নিরাপত্তার জন্য বাস নামানো হচ্ছে না। এখন আন্দোলন শেষে তারা কি বলবে? এখন তো তারা নিজেদের দোষ আড়াল করার জন্য জরিমানার ভয়ে রাস্তায় নামছে না। সরকারের উচিত জনগণকে ভোগান্তিতে ফেলার জন্য এই সব বাস মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া।
কমলাপুর রেল স্টেশনের সামনে দেখা গেছে, শত শত যাত্রী গণপরিবহনের জন্য অপেক্ষা করছেন। অনেকে সিএনজি অটোরিকশা ভাড়া করতে গিয়ে ফিরে আসছেন। একজন যাত্রী জানান, যাত্রাবাড়ীর ভাড়া ৪শ’ টাকা চেয়েছে অটোরিকশা চালক। আর রিকশা চালক চেয়েছে দেড়শ’ টাকা। ওই যাত্রী বলেন, কমলাপুর থেকে যাত্রাবাড়ী যেতে মিটারে ১শ’ টাকা ভাড়া আসে। আর রিকশার ভাড়া ৬০ টাকা। কিন্তু তারা কয়েকগুণ বেশি দাবি করছে। তিনি বলেন, আমি পুলিশকে জানিয়েছি। কিন্তু পুলিশ কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে আমাকে উল্টো কথা শুনিয়ে দিল।
সায়েদাবাদ, মহাখালী ও গাবতলী বাস টার্মিনালে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, টার্মিনালে মালিক সমিতি এবং পথিমধ্যে মোবাইল কোর্টের ভয়ে দুরপাল্লার বাস চলাচলও কমে গেছে। এই সুযোগে বাড়তি ভাড়া হাঁকছে কোনো কোনো পরিবহন কোম্পানী। তাতেও বাড়তি ভোগান্তি যোগ হয়েছে যাত্রীদের কপালে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: গাড়ি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ