পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
শুল্কায়ন নিষ্পত্তি ছাড়াই চুপিসারে বিশ্ববিখ্যাত রোলস রয়েস ব্র্যান্ডের একটি গাড়ি সরিয়ে নেওয়ার ঘটনায় সংশ্লিষ্ট বিভাগে তোলপাড় চলছে। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কোন প্রকার ছাড়পত্র ছাড়াই কিভাবে ২৭ কোটি টাকার গাড়িটি সংরক্ষিত ইপিজেড এলাকা থেকে নিয়ে যাওয়া হলো এবং গাড়িটি উদ্ধার করতে কেনই বা এতো সময় লাগলো তা-নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
বলা হচ্ছে, ইপিজেডে বিনিয়োগকারী হিসাবে আমদানিকারক যে বিধিতে শুল্কমুক্ত সুবিধায় গাড়িটি আমদানি করেছেন তাতেও বিধি লঙ্ঘন করা হয়েছে। কারণ তাতে দুই হাজার সিলিন্ডার ক্যাপাসিটির গাড়িতে এ সুবিধা পাওয়া যায়। তবে আমদানি করা গাড়িটির বনেটে স্টিকার অনুযায়ী এটির সিলিন্ডার ক্যাপাসিটি ছয় হাজার ৭৫০। অর্থাৎ শুল্কমুক্ত সুবিধা না পেলে গাড়িটি আমদানি বাবদ ২৪ কোটি টাকা শুল্ককর দিতে হবে। মিথ্যা ঘোষণায় শুল্কমুক্ত সুবিধার আড়ালে মোটা অংকের রাজস্ব ফাঁকির চেষ্টার পরও কেন তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হলো না তাও এখন বড় প্রশ্ন। এক্ষেত্রে কাস্টমস হাউস বিশেষ করে চট্টগ্রাম ইপিজেডে কর্মরত কাস্টমস কর্মকর্তাদের ভূমিকা এখনও প্রশ্নের মুখে। এই প্রতিষ্ঠানসহ আরো কেউ মিথ্যা ঘোষণায় এমন মূল্যবান গাড়ি আমদানির মাধ্যমে শুল্ক-কর ফাঁকি দিয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখার দাবি উঠেছে। যদিও চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার মোহাম্মদ ফখরুল আলমের মতে, শুল্কায়নের আগেই গাড়ি সরিয়ে নেওয়ার ঘটনা সাম্প্রতিক সময়ে এটাই প্রথম। বিগত ৫ বছরে এমন শুল্কমুক্ত সুবিধায় দেশের ইপিজেডগুলোতে কত গাড়ি আমদানি করা হয়েছে তার তথ্য জানতে চেয়েছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর।
গতকাল বৃহস্পতিবার এমন তথ্য চেয়ে চট্টগ্রাম ইপিজেড, কর্ণফুলী ইপিজেডসহ ইপিজেডগুলোতে চিঠি দেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক বশির আহমেদ। তিনি বলেন, শুল্কায়ন ছাড়া আমদানিকৃত একটি গাড়ি চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার ঘটনার তদন্ত চলছে। গাড়িটির আমদানি সংশ্লিষ্ট যাবতীয় কাগজপত্র কাস্টম হাউস থেকে চাওয়া হয়েছে। জানা গেছে পাশাপাশি আগে এমন ঘটনা ঘটেছে কি না তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আর এই লক্ষ্যে গত ৫ বছরের গাড়ি আমদানির রেকর্ড তলব করা হয়েছে।
এদিকে, কাস্টমস শুল্কায়ন সম্পন্ন ও শুল্ক কর পরিশোধ না করে ব্যক্তিগত গ্যারেজে রেখে কাস্টমস আইন ১৯৬৯ এর বিধান লঙ্ঘন করায় ২৭ কোটি টাকা দামের গাড়িটি আটক করা হয়েছে বলে দাবি করেন শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের কর্মকর্তারা। কাস্টম হাউসের পক্ষ থেকে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানকে শোকজ করা হয়েছে। পরবর্তিতে কাস্টম আইন মামলা হবে। এছাড়া তদন্তে জালিয়াতির কোন প্রমাণ ফেলে ফৌজদারি মামলাও হতে পারে।
গাড়িটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শরীফ জহিরের বারিধারার বাড়ি থেকে আটক করা হয়েছে। শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফরের কর্মকর্তারা জানান, শুল্কমুক্ত সুবিধার আওতায় গাড়িটি আমদানি করা হয়। তবে আমদানিতে মিথ্যা ঘোষণার বিষয়টি ধরা পড়তেই গাড়িটি চট্টগ্রাম ইপিজেড থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়। শুল্কায়ন ছাড়াই কীভাবে গাড়িটি সরানো হলো এবং এর নেপথ্যে কারা তা খুঁজতে তদন্ত শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে।
রোলস রয়েস ব্র্যান্ডের ২০২১ সালের কালিনান এসইউভি মডেলের গাড়িটি ছয় হাজার ৭৫০ সিসির বলে জানিয়েছেন শুল্ক গোয়েন্দারা। গাড়িটি চট্টগ্রাম ইপিজেডের ‘জে এন্ড জে ইনটিমেটস লিমিটেড’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের নামে ২৭ এপ্রিল আমদানি করা হয়। তবে নিয়ম অনুযায়ী গাড়িটি চট্টগ্রাম বন্দর থেকে চট্টগ্রাম ইপিজেডে কারখানা প্রাঙ্গণে নেওয়া হয়। কিন্তু শুল্কায়ন শেষ হওয়ার আগেই ১৭ মে গাড়িটি ইপিজেড থেকে ঢাকার বারিধারায় নিয়ে যাওয়া হয়।
গাড়িটি ইপিজেড থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে এমন খবর পেয়ে প্রথমে ইপিজেডে অভিযান চালানো হয়। পরে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের যুগ্মপরিচালক মো. শামসুল আরেফিন খানের নেতৃত্বে একটি দল গত সোমবার বারিধারায় ওই প্রতিষ্ঠানের এমডির গ্যারেজে গাড়িটির সন্ধান পান। অধিদফতরের তরফে বলা হয়, গাড়িটি এসআরও (স্ট্যারুচেরি রেগুলেটরি অর্ডারে) এবং কাস্টমস মূসক সিপিসি (কাস্টমস প্রসিডিউর কোড) ১৭০ এর আওতায় আমদানি করা।
এই আইনের সংশ্লিষ্ট ধারা অনুসারে দুই হাজার সিসি পর্যন্ত গাড়ি আমদানি শুল্কমুক্ত হবে। গাড়ির বনেটে থাকা স্টিকারে গাড়িটি ছয় হাজার ৭৫০ সিসি বলে উল্লেখ আছে। আটক গাড়িটি ২০০০ সিসি’র বেশি হওয়ায় শুল্ক মুক্ত সুবিধা প্রাপ্য না হলে সরকার ২৪ কোটি টাকা রাজস্ব হারাবে। এ ধরনের গাড়িতে শুল্ককর দিতে হয় শুল্কায়িত মূল্যের আট গুণ। স্পোর্টস ইউটিলিটি ভেহিকেল ধরনের এ গাড়ি উৎপাদনের সাল ২০২১। মডেলের নাম কুলিনান এসইউভি।
গাড়িটি সংশ্লিষ্ট এসআরও অনুসারে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে কিনা তা খতিয়ে দেখতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানাবে শুল্ক গোয়েন্দা। আমদানির নথি অনুসারে, যুক্তরাজ্যের রোলস রয়েস ব্র্যান্ডের গাড়িটির আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান হংকং ও বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত প্রতিষ্ঠান। আমদানির পর দুই মাসেরও বেশি সময় পার হলেও গাড়িটির শুল্কায়ন কেন করা হয়নি তা নিয়ে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের তদন্ত চলছে। আমদানিকারক বেআইনিভাবে শুল্কায়ন প্রক্রিয়া না করেই গাড়িটি গ্যারেজে লুকিয়ে রেখে শুল্ক আইনের বিধান ভঙ্গ করেছেন। এ ক্ষেত্রে চোরাচালান হিসেবে গণ্য হওয়ার অপরাধ হয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার মোহাম্মদ ফখরুল আলম বলেন, গাড়িটি আমদানির পর নিয়ম অনুযায়ী চট্টগ্রাম ইপিজেডে নেওয়া হয়েছে। শুল্কায়নের জন্য তারা কিছু কাগজপত্রও জমা দিয়েছে। কিছু আইনগত কোয়ারি থাকায় গাড়িটির শুল্কায়ন সম্পন্ন হয়নি। এ বিষয়ে মতামত চেয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) চিঠি দেয়া হয়েছে। তাদের মতামত এখনও পাওয়া যায়নি। তবে আমদানিকৃত গাড়িটি শুল্ক মুক্ত সুবিধা পাবে কি পাবে না তা নিষ্পত্তির আগেই ইপিজেড থেকে ঢাকায় নেয়া বেআইনি। গত সাড়ে তিন বছরে এমন ঘটনা এটাই প্রথম বলেও জানান তিনি।
শুল্ক গোয়েন্দা অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক বশির আহমেদ বলেন, পুরো ঘটনার তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে আমদানিকারকের বিরুদ্ধে মামলা হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।