Inqilab Logo

বুধবার, ১২ জুন ২০২৪, ২৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৫ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

শো ডাউনে মনোনয়নপত্র জমা দিলো দুই প্যানেল

প্রকাশের সময় : ১৯ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্পোর্টস রিপোর্টার : নির্বাচনী আমেজে এখন অনেকটাই উৎসবমূখর পরিবেশ বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) ভবনে। মনোনয়নপত্র সংগ্রহের দু’দিন নিরুত্তাপ কাটলেও তা জমা দেয়ার দিনটি ছিলো উৎমবমুখর। বাফুফে নির্বাচনকে সামনে রেখে বর্তমানে স্পষ্ট দু’ভাগে বিভক্ত দেশের ফুটবল সংগঠকরা। বর্তমান সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন প্যানেল ও ‘বাঁচাও ফুটবল’ আন্দোলন প্যানেলের সদস্যরা এখন সবাই সরব। তারা বিভিন্ন প্রতিশ্রæতি দিয়ে যাচ্ছেন। নির্বাচিত হলে দেশের ফুটবল উন্নয়নে কে কি ভুমিকা রাখবেন এ নিয়েই তাদের মুখ থেকে ঝরছে কথার ফুলঝুড়ি।
গতকাল ছিলো বাফুফে নির্বাচনের মনোয়নপত্র জমা দেয়ার শেষদিন। একই সঙ্গে প্রত্যাহারেরও। অবশ্য প্রত্যাহারের জন্য আরো দু’দিন বাড়তি সময় পাচ্ছেন প্রার্থীরা। তার আগে আজ মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই হবে। নির্বাচনকে সামনে রেখে আপাতত কোনো কথাই বলবেন না বাফুফের বর্তমান সভাপতি কাজী কাজী সালাউদ্দিন। এটা তিনি আগেই জানিয়েছেন। ২৩ এপ্রিল আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে তিনি ইশতেহারসহ নির্বাচনের যাবতীয় বিষয় ব্যাখ্যা দেবেন। তাই কাল বেলা ৩টায় মনোনয়নপত্র জমা দিয়েই নিজ কক্ষে চলে গেলেন সালাউদ্দিন। তবে মনোনয়নপত্র জমা দিতে সদলবলেই আসেন তিনি। তার প্যানেলের প্রায় সব সদস্যই এসময় সালাউদ্দিনের সঙ্গে ছিলেন। এসময় বাফুফে ভবনে চোখে পড়ার মতো শো-ডাউন লক্ষ্য করা যায়। মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার পর সালাউদ্দিন প্যানেলের সিনিয়র সহ-সভাপতি প্রার্থী আব্দুস সালাম মুর্শেদী মিডিয়ার মুখোমুখী হন।
তিনি বলেন, ‘যদি আমরা নির্বাচিত হই একাডেমির কাজ বাকি আছে। এটা সম্পন্ন করা হবে। এছাড়া স্কুল ফুটবল এবং জেলার ফুটবল উন্নয়নে আমরা কাজ করব। গত আট বছর দায়িত্বে থেকে আমরা কি করতে পেরেছি তা দেশের জনগনই বলে দেবেন। খেলোয়াড়ী জীবনে ফুটবল নিয়ে যেভাবে কাজ করেছি, ঠিক তেমনি সংগঠক হিসেবেও দেশের ফুটবল উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করেছি। কোথাও সাফল্য পেয়েছি, কোথাও বা ব্যর্থ হয়েছি। তবে চেষ্টা তো করছি। আমি মনে করি এদেশের ফুটবল উন্নয়নে আমাদের কমিটি সবেচেয়ে বেশি কাজ করেছে। চলতি বছর দু’টি আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট সফলভাবে শেষ করতে পেরেছি আমরা। নির্বাচনের আমেজ দেখেই বুঝা যাচ্ছে, এদেশের মানুষ কতটা ফুটবলপ্রেমী। আমি আশাবাদি আমাদের প্যানেলই জয়ী হবে।’
২১ জনের মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার কথা থাকলেও সালাউদ্দিন প্যানেল ২২ সদস্যের মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছে। প্রার্থীতা প্রত্যাহারের শেষদিন একজনের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেয়া হবে। ২২ জনের ১৪ জনই সালাউদ্দিন মনোনীত, বাকি ৮ জন জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংগঠক পরিষদের। ৮ জনের মধ্যে শেষ পর্যন্ত ৭ জন নির্বাচনী লড়াইয়ে থাকবেন বলে জানিয়েছেন সালাউদ্দিনের প্যানেলের জেলা ও বিভাগের সমন্বয়কারীর দায়িত্ব পাওয়া বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের উপ-মহাসচিব আশিকুর রহমান মিকু। সুত্র জানায় এই আট জনের মধ্য থেকে আজমল আহমেদ তপনের বাদ পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সালাউদ্দিন প্যানেল মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার পর বিকাল সাড়ে ৩টায় বিশাল বহর নিয়ে বাফুফে ভবনে আসেন ‘বাঁচাও ফুটবল’ আন্দোলনের নেতারা। তারা তাদের সভাপতি প্রার্থী কামরুল আশরাফ খান এমপি’র নেতৃত্বে মনোনয়নপত্র জমা দিতে আসেন। ২১টি পদে মনোনয়নপত্র জমা দিলেও এখনো প্যানেল চূড়ান্ত করতে পারেননি ‘বাঁচাও ফুটবল’ এর নেতারা। সভাপতি, সিনিয়র সহ-সভাপতি এবং সভাপতি পদে ঝামেলা না থাকলেও সদস্য পদে হিসাব মেলেনি তাদের। ১৫ সদস্যের বিপরীতে ১৩ জনের তালিকা চূড়ান্ত হয়েছে। আগামীকাল পূর্ণ প্যানেল চূড়ান্ত হয়ে যাবে বলে জানান এই প্যানেলের সিনিয়র সহ-সভাপতি প্রার্থী মনজুর কাদের। মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার পর মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলেন ‘বাঁচাও ফুটবল’ প্যানেলের সভাপতি প্রার্থী কামরুল আশরাফ খান এমপি। তিনি বলেন,‘আমার ইচ্ছা তৃণমূল থেকে ফুটবলের উন্নয়ন করা। নির্বাচিত হলে আমি সর্বপ্রথম জেলা ফুটবকে প্রাধান্য দিয়ে ফুটবল উন্নয়নে কাজ শুরু করবো। একটা বিষয় আমি ভালোভাবে জানি, ভালো ফুটবল খেলোয়াড় কখনো সফল কোচ হতে পারেননা। যার উৎকৃষ্ট প্রমাণ দিয়াগো ম্যারাডোনা। ঠিক তেমনি ভালো ফুটবল খেললেই সফল সংগঠক হওয়া যায় না। আমার প্যানেল নির্বাচিত হলে সবার সহযোগিতা নিয়ে আমি দেশের ফুটবল উন্নয়নে কাজ করে যাবো ইনশাল্লাহ।’ বাফুফে নির্বাচনে অংশ নিবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের সভাপতি মনজুর কাদের। কিন্তু তিনি তার কথা রাখতে পারেননি। ‘বাঁচাও ফুটবল’ আন্দোলন প্যানেলের সিনিয়র সহ-সভাপতি পদে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করে তা জমাও দিয়েছেন কাদের। তবে শেষ পর্যন্ত নির্বাচনী ময়দানে থাকবেন কিনা সেটা পরিষ্কার করে বলেননি তিনি। যেহেতু আগামীকাল পর্যন্ত প্রার্থীতা প্রত্যাহারের সময় রয়েছে, সেই পর্যন্ত সবাইকে অপেক্ষায় রেখেছেন। এ প্রসঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘যেহেতু সিনিয়র সহ-সভাপতি পদে আমি ছাড়াও দেওয়ান শফিউল আরেফীন টুটুল এবং লোকমান হোসেন ভূইয়া আছেন, সেহেতু প্রার্থীরা প্রত্যাহারের দিন আমাদের তিনজনের যে কেউ একজন থাকবেন, বাকিরা প্রত্যাহার করে নিবেন।’
মনজুর কাদের আরো বলেন, ‘আমরা বাধ্য হয়েছি বাফুফে নির্বাচনে একটি প্যানেল দেয়ার জন্য। এদেশের ফুটবলকে বাচাতেই এই প্যানেল দিয়েছি আমরা। সবাই জানেন সালাউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন কমিটি গত আট বছর দেশের ফুটবলের ১২টা কিভাবে বাজিয়েছে। জেলা ফুটবল প্রায় বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। যে কারণে নতুন নতুন খেলোয়াড় তৈরী হচ্ছে না। আমরা এখানে শো-কল করতে আসিনি। এসেছি ফুটবল উন্নয়নে কাজ করতে। আর এটা করতে হলে আমাদেরকে নির্বাচনে জিততে হবে। আমি আশাবাদি আমাদের প্যানেল জয়ী হবে। শুরুতেই জেলা ফুটবলকে এগিয়ে নেয়ার কাজে হাত দেবো। দেশের ফুটবলকে এগিয়ে নিতে হলে জেলা ফুটবলকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। সালাউদ্দিনের কমিটি শেরেবাংলা ও সোহরাওয়াদী কাপ বন্ধ করে দিয়েছে। জেলা ফুটবলের দায়িত্ব হাতে নিয়ে আমি এই দু’টো টুর্নামেন্ট মাঠে গড়াতে চেয়েছিলাম। কিন্তু কাজী সালাউদ্দিন তা করতে দেননি। অথচ তিনি মহিলা ফুটবলের জন্য ১৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। নিজের স্বার্থেই এ টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন সালাউদ্দিন। স্বাচ্ছ¡তা ও জবাবদিহীতার জন্যই আমরা পূর্ণ শক্তি নিয়ে নির্বাচনে এসেছি। ২১ এপ্রিল পুরো প্যানেল ঘোষণা করবো আমরা মিডিয়ার সামনে।’
দেওয়ান শফিউল আরেফিন টুটুল বলেন, ‘খুব দেরী করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, বাফুফের নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার। রোববার রাতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমি নির্বাচন করবো। তা বুঝে শুনেই নিয়েছি। মূলত দেশের ফুটবলের দুর্দশা লাঘবের উদ্দেশ্যেই নির্বাচনে এসেছি। একজন সাবেক ফুটবলার হিসেবে জোর গলায় বলতে চাই, নির্বাচিত হলে ফুটবলকে এগিয়ে নিতে কাজ করে যাবো। বাফুফের বর্তমান নেতৃত্বে কোন জবাবদিহীতা ও স্বচ্ছতা নেই। আমাদের প্যানেল নির্বাচিত হলে আমরা জবাবদিহীতা ও স্বচ্ছÍা ফিরিয়ৈ আনা হবে। সম্মিলিত চেষ্টায় তৃণমূল থেকেই ফুটবলের উন্ণয়ন করা হবে। আমি বিশ্বাস করি নির্বাচনে আমি জিতবো। আর জেতার জন্যই নির্বাচন করছি। আমি চেষ্টা করবো ফুটবলকে তার আগের জায়গায় পৌছে দিতে। আর আমার বিশ্বাস আমি তা পারবো।’
আগামী ৩০ এপ্রিল বাফুফের নির্বাচনকে সামনে রেখে মনোনয়নপত্রের ওপর আপত্তি গ্রহণ করা হবে আজ। একইদিন মনোনয়ন পত্র যাচাই বাছাইও করা হবে। আগামীকাল মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহার করা যাবে। ২১ এপ্রিল বাফুফের নির্বাচন কমিশন চূড়ান্ত প্রার্থীর তালিকা প্রকাশ করবে। ৩০ এপ্রিল রেডিসন বøু হোটেলে অনুষ্ঠিত হবে বহুল আলোচিত এই নির্বাচন।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: শো ডাউনে মনোনয়নপত্র জমা দিলো দুই প্যানেল
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ