ইভিএম-এ ভোট কেন?
আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম-এ ১৫০ আসনে ভোট গ্রহণের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। কাকতালীয় কিনা জানি না, ১৫০ সংখ্যাটা আমাদের এর আগে চিনিয়েছিলেন রকিবুল
ঢাকাকে নতুন করে গড়ে তোলার জন্য সরকারকে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সরকার ২০৪১ সালে উন্নত দেশের কাতারে শামিল হওয়ার পরিকল্পনা করেছে। কিন্তু ঢাকার অবস্থা কী হবে, তা নিয়ে তেমন কোন উন্নত পরিকল্পনা ঘোষণা করেনি। তবে সরকারের স্থানীয় সরকার মন্ত্রী ঢাকাকে নিয়ে বর্তমান সরকারের উচ্চমানের পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন।
বিশ্বের বড় বড় শহরগুলো গড়ে উঠেছে বিশ্বমানের পরিকল্পনা ও উন্নত স্থাপনা ও আধুনিক সকল বাণিজ্য বিজ্ঞান নিয়ে। কিন্তু আমাদের ঢাকা বা বাংলাদেশের কোন শহর বিশ্বমানের গড়ে তোলার কোন দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নেয়া হয়নি। বিক্ষিপ্ত, অপরিকল্পিত ও নন টেকসই ব্যবস্থাপনা নিয়ে আমাদের ঢাকা শহর গড়ে উঠেছে। দিন দিন ঢাকা শহর হয়ে পড়ছে মানুষ বাসের অনুপযোগী ও অস্বাস্থ্যকর।
বৃহত্তর ঢাকা দেশের মোট ভূমির ১ শতাংশ। জনসংখ্যার ১০ শতাংশ ও শহুরে মানুষের ৩৬ শতাংশ এইটুকু জায়গায় বাস করে। আনুষ্ঠানিক কর্মসংস্থানের ৪৪ শতাংশও এখানে। আবার রপ্তানিমুখী পোশাকশিল্পের ৮০ শতাংশ কারখানা গড়ে উঠেছে এখানেই। বন্যা, গাদাগাদি-ঘিঞ্জি পরিবেশ ও বিশৃঙ্খলা ঢাকার অগ্রগতি ব্যাহত করছে। এই অবস্থার অবসান ঘটাতে ঢাকার পূর্বাঞ্চলকে পরিকল্পিতভাবে গড়ে তুলতে হবে।
ঢাকা নিয়ে এসব তথ্য ও নতুন পরিকল্পনার বিষয়টি বিশ্বব্যাংকের ‘টুওয়ার্ড গ্রেট ঢাকা: অ্যা নিউ আরবান ডেভেলপমেন্ট প্যারাডাইম ইস্টওয়ার্ড’ শিরোনামের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। বিশ্বব্যাংকের একদল বিশেষজ্ঞ, যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজন গবেষক এবং বাংলাদেশের বেসরকারি প্রতিষ্ঠান পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) গবেষকেরা প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, ঢাকা হচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল শক্তিকেন্দ্র। জিডিপিতে ঢাকার অবদান ২০ শতাংশ। কিন্তু শহরটি পরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠেনি। ১৯৮০ সালে ঢাকার জনসংখ্যা ছিল ৩০ লাখ, বর্তমানে তা ১ কোটি ৮০ লাখ। তাদের মধ্যে ৩৫ লাখ মানুষ বাস করে বস্তিতে। ঢাকার পশ্চিম অংশের সিটি করপোরেশন এলাকায় এক বর্গকিলোমিটারে বাস করে ৪১ হাজার মানুষ। এই শহরে গাড়ির গতি ঘণ্টায় সাত কিলোমিটার। শহরে যানজটের কারণে দৈনিক ৩২ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হয়। উন্নতির জন্য ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কাজ না করলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে, পরিণতিতে সামাজিক মূল্য দিতে হবে আরও বেশি। ২০৩৫ সালে বৃহত্তর ঢাকার জনসংখ্যা হবে আড়াই কোটি। প্রথম অধিবেশনে বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের মুখ্য অর্থনীতিবিদ মার্টিন রেমা বলেন, ঢাকার সমৃদ্ধি মানে বাংলাদেশের সমৃদ্ধি। তিনি আরও বলেন, তিনটি প্রধান কারণ ঢাকার উন্নতি-অগ্রগতিকে ব্যাহত করছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বন্যা ও জলাবদ্ধতা, ঘনবসতি ও এর ঘিঞ্জি পরিবেশ এবং বিশৃঙ্খলা। কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে ঢাকার পূর্বাঞ্চলের উন্নয়ন ঘটালে এই শহর বসবাসের উপযুক্ত হবে। কিন্তু এর জন্য এখনই কাজে নামতে হবে। অতীতে বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থার কাজে যেসব দ্বৈততা ও বিশৃঙ্খলা ছিল, তা এড়াতে হবে।
১৬০ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদনে বাংলাদেশের নগরায়ণ পরিস্থিতি ও দুর্বলতা, ঢাকা নগরের চরিত্র-বৈশিষ্ট্য, উন্নয়নে জড়িতদের বিভিন্ন সংস্থার কাজের দুর্বলতা, পশ্চিম ও পূর্ব অংশের তুলনা, অর্থনৈতিক অগ্রগতির সম্ভাবনা, ২০৩৫ সালে ঢাকার পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াতে পাওে প্রস্তাবিত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন কৌশল আলোচনা করা হয়েছে। প্রতিবেদনে অন্যতম গবেষক ও পিপিআরসির চেয়ারপারসন হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, কলকাতা শহরের পরিস্থিতি একসময় করুণ ছিল। কলকাতা ঘুরে দাঁড়িয়েছে। রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে এবং নীতি ও ধারণার ঐকমত্য হলে ঢাকাও ঘুরে দাঁড়াবে, দাঁড়ানো সম্ভব। তিনি বলেন, এই প্রতিবেদনে ঢাকার জন্য তৈরি করা হলেও এতে রাজনৈতিক-অর্থনীতির ওপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে। এই কৌশল অন্য শহরের জন্যও প্রযোজ্য হবে। অনুষ্ঠানের বিভিন্ন পর্বে ঢাকা প্রশাসনের দুর্বলতা নিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তি কথা বলেন। প্রতিবেদনে খন্ডিত দায়দায়িত্ব শিরোনামে একটি অধ্যায়ে বলা আছে, ঢাকার উন্নয়ন ও নাগরিক সুবিধার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত ৫৫টি প্রতিষ্ঠান দুর্বল, তাদের কাজের সমন্বয়ের কৌশলও অকার্যকর। ঢাকার উন্নয়নের জন্য যেসব পরিকল্পনা অতীতে হয়েছে, সেগুলো আংশিকভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে। অনুষ্ঠানের একাধিক নির্ধারিত আলোচক বলেন, হাতিরঝিল প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব হলে ঢাকাকে বদলানোর অন্য পরিকল্পনার ক্ষেত্রেও তা সম্ভব।
বাড্ডা, সাতারকুল, উত্তরা, ডুমনি, বরাইদ, পূর্বাচল এসব এলাকা ঢাকার পূর্বাঞ্চলে। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, ঢাকার পূর্বাঞ্চলের উন্নয়নে তিনটি কাজ করতে হবে। প্রথমত, বন্যা সমস্যা মোকাবিলার জন্য বালু নদের পূর্ব পাড়ে বাঁধ নির্মাণ করতে হবে। দ্বিতীয়ত, ঘিঞ্জি পরিবেশ এড়াতে সড়ক ও পরিবহন ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। তৃতীয়ত, প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিকে আকর্ষণ করা জন্য শক্ত নীতি-পরিকল্পনার ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক মানের ব্যবসাকেন্দ্র গড়তে তুলতে হবে। এসব করা গেলে বাড়তি ৫০ লাখ মানুষ শহরে আরামে বসবাস করতে পারবে এবং ১৮ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হবে। বিনিয়োগ ও আর্থিক লাভ-লোকসানের হিসাবও করেছে প্রতিষ্ঠানটি। তাতে বলা হয়েছে, তিনটি কাজ বাস্তবায়ন করতে খরচ হবে ১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আর ২০৩৫ সাল নাগাদ এই অঞ্চলে বছরে প্রায় ৫৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের আয়-উপার্জন হবে। সমাপনী অধিবেশনে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘ঢাকা শুধু বাংলাদেশের রাজধানী নয়। ঢাকা বাংলাদেশের রাজনীতি, সমাজনীতি ও সংস্কৃতির ঐতিহ্য। ২০২১ সাল বা ২০৪০ সালের ঢাকা মহানগরকে আমরা কোথায় নিতে চাই, তা নিয়ে বর্তমান সরকারের পরিকল্পনা আছে।’ তিনি আরও বলেন, বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে যে তিনটি প্রস্তাব করা হয়েছে, তা যৌক্তিক।
এক সময় ঢাকার চকবাজার ছিল মূল ঢাকা শহর। চকবাজারকে কেন্দ্র করে ইমামগঞ্জ, ইসলামপুর, চক বাজার,মোগলটুলি প্রভৃতি বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসাবে গড়ে উঠেছে। পরবর্তীতে ধানমন্ডি, গুলশান, বনানী, বারিধারা নতুন ঢাকা হিসাবে গড়ে তোলার চেষ্টা করা হয়। সর্বশেষ উত্তরাকে নতুন ঢাকার আধুনিক শহর বানানোর চেষ্টা চলেছে। কিন্তু বর্তমানে এই সকল অঞ্চল জনবসতি, ঘন ও গিঞ্জি এক এক এলাকা হিসাবে গড়ে উঠেছে। সর্বশেষ সরকার পূর্বাচলকে ঢাকার নতুন স¤প্রসারিত শহর হিসাবে গড়ার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
যে বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করতে হবে:
১) তিনটি বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের এই গবেষণাপত্রে বিশেষ পরামর্শ রাখা হযেছে। বিশেষ করে ঢাকা পূর্বাঞ্চলের উন্নয়নের জন্য তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ রাখা হয়েছে। ক) বন্যা মোকাবেলায় বালু নদের পূর্বাঞ্চলে বাঁধ নির্মাণ। খ) সড়ক ও পরিবহন সংস্থা উন্নত করতে হবে গ) আন্তর্জাতিকমানের ব্যবসা কেন্দ্র গড়ে তোলা। উল্লিখিত তিনটি প্রস্তাব বাস্তবায়ন সরকারের পক্ষে সম্ভব। কিন্তু এর জন্য সরকারকে সক্রিয় ও চিন্তাশীল হতে হবে। দ্রæত পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদী সুপরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।
২) এই ক্ষেত্রে শুধু স্থানীয় বিশেষজ্ঞদের সহযোগিতার সঙ্গে সঙ্গে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা গ্রহণ করতে হবে। এই জন্য প্রয়োজনীয় বিদেশি সাহায্য গ্রহণ করা উচিত।
৩) শুধুমাত্র বিশ্ব ব্যাংকের এই গবেষণা পত্র অনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ না করে, আন্তর্জাতিক সংস্থা কর্তৃক নতুন করে গবেষণা করে ঢাকার ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এই গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ, দিয়ে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার। আন্তর্জাতিক টেন্ডার প্রদানের মাধ্যমে নিরপেক্ষ স্বচ্ছতার সঙ্গে বিষয়টি এগিয়ে নেয়া প্রয়োজন।
৪) ঢাকাকে রক্ষা ও নতুন ঢাকা স¤প্রসারণের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে মনোযোগ দিতে হবে। তার দ্রুত পদক্ষেপে নতুন ঢাকা স¤প্রসারণ সহজ, দ্রুত, সুন্দর ও ঠিকসহ করা সম্ভব। ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে উন্নত দেশে পরিণত করতে হলে ঢাকা স¤প্রসারণ ও উন্নয়ন অন্তত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
৫) শুধু ঢাকা কেন, পুরো দেশকে একটি সুষ্ঠু, দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার মাধ্যমে এগিয়ে নেয়া দরকার। বেশ কিছু দিন পূর্বেও আমি এ বিষয়টি নিয়ে আমার বিভিন্ন প্রবন্ধে উল্লেখ করেছি। দেশে রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি নিয়ে বিভিন্ন স্থাপনা স্থাপন করা হচ্ছে। কোথাও রাজউক, কোথাও সিটি করপোরেশন, কোথাও জেলা পরিষদ, কোথাও পৌরসভা, কোথাও ইউনিয়ন পরিষদ স্থাপনা স্থাপনের নকশার অনুমতি দিয়ে আসছে। কিন্তু সরকার কর্তৃক রাষ্ট্রীয় একটা কর্তৃত্বে কোথায় কি স্থাপন হবে তা করা হয়নি। তাই দেশের কোথায় কি স্থাপন করা যাবে তার একটি নকশা থাকা দরকার। কোথায় শিল্প স্থাপন হবে, কোথায় আবাসিক ভবন হবে, কোথায় কৃষি কাজ হবে, কোথায় নদী-নালা থাকবে, কোথায় জলাশয় থাকবে, কোথায় বন্দর থাকবে এইভাবে সুনির্দিষ্ট করে দেশকে একটি পরিকল্পনায় নিয়ে আসতে হবে। তাতে দেশের উন্নতি নিয়ম মত ও সুশৃঙ্খলভাবে হবে। আমাদের দেশে প্রচুর জনবল। তাদের বসতের জন্য প্রচুর ভূমি লাগে। অন্যদিকে দেশকে শিল্পায়ন করতে হবে। কৃষিকে প্রধান্য দিয়ে খাদ্য উৎপাদন ঠিক রাখতে হবে। বন্যা, সাইক্লোন থেকে বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় নদ নদী, বনভূমিও থাকতে হবে। আমাদের দেশ বেশ ছোট ভূমির উপর প্রতিষ্ঠিত। দিন দিন জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশ যখন স্বাধীন হয় তখন জনসংখ্যা ছিল মাত্র সাড়ে সাত কোটি। আর এখন দেশের জনবল হচ্ছে প্রায় ১৬ কোটি। এই বিশাল জনগোষ্ঠীর আবাসন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করা আজ বেশ কঠিন কাজ। তবুও দেশ এগিয়ে চলেছে। আমরা ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশের তালিকায় নাম লেখার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছি। এই অবস্থায় ঢাকার সমস্যা বড় সমস্যা। ঢাকাকে উপযুক্ত সুশৃঙ্খলভাবে গড়ে তোলা জরুরি। তাই বিশ্বব্যাংকের এই প্রতিবেদন আমাদের অনেক কাজে লাগবে। আমাদের চিন্তার খোরাক জোগাবে। আমাদের দেশের শাসক দলের নেতাদের জন্য একটি পথ নির্দেশিকা হিসেবে কাজ করবে।
লেখক: সাবেক সহ সভাপতি এফবিসিসিআই, বিটিএমইএ, বিজিএমইএ , বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতি, প্রতিষ্ঠতা চেয়ারম্যান ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।