Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইচ্ছাকৃত দুর্ঘটনায় শাস্তি মৃত্যুদন্ড

পঞ্চায়েত হাবিব | প্রকাশের সময় : ৬ আগস্ট, ২০১৮, ১২:০১ এএম

ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো ড্রাইভার দুর্ঘটনা ঘটালে (ক্রিমিনাল এক্সিডেন্ট) তার জন্য শাস্তি হবে মৃত্যুদন্ড। এমন বিধান রেখে সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ চূড়ান্ত করেছে সড়ক পরিবহন ও সেতু বিভাগ। ইতোমধ্যে আইনটি ভেটিং শেষ হয়েছে। আজ সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে সড়ক পরিবহন আইনের খসড়া চুড়ান্ত অনুমোদনের জন্য উঠছে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ২৭ মার্চ মন্ত্রিসভার নীতিগত অনুমোদন পায় সড়ক পরিবহনের খসড়া। ৭৯ বছরের পুরনো মোটরযান আইনে চলছে দেশের পরিবহন খাত। ১৯৮৩ সালে অধ্যাদেশ জারি করে আইনটি যুগোপযোগী করা হয়। এর পর আর সংশোধন করা হয়নি। কঠোর শান্তির বিধান রেখে ২০১০ সালে সড়ক পরিবহন আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়। আইনটির খসড়া করা হয়নি। কিন্তু পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের বাধায় চূড়ান্ত হয়নি। সর্বশেষ গত বছরের ফেব্রæয়ারিতে ‹চূড়ান্ত› খসড়া করে মন্ত্রিসভায় পাঠানো হয়। নীতিগত অনুমোদনের পর দেড় বছর ধরে আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিং শেষ করেছে গত বৃহস্পতিবার।
সড়ক পরিবহন আইনে বলা হয়েছে, জেব্রা ক্রসিং বা ফুটওভারব্রিজ ছাড়া পারাপার করলে দুই হাজার টাকা অর্থদন্ড হবে। নীরব এলাকা অতিক্রমের সময় হর্ন বাজালে বা উচ্চমাত্রার কোনো শব্দ করলে এক মাসের কারাদন্ড বা এক হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দন্ড হবে। নিয়োগপত্র ছাড়া মোটরযানের চালক হলে বা রাখলে এক বছরের কারাদন্ড বা ১০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ড হবে। আইনে চালকদের জন্য কর্মঘণ্টা ও বিশ্রামের কথাও বলা হয়েছে। ২০১১ সালে ‘সড়ক পরিবহন ও ট্রাফিক আইন নামে খসড়ায় ২২টি অধ্যায় ও ৩৭২টি ধারা ছিল। ২০১৩ সালে গঠিত কমিটি তা কমিয়ে ১৫ অধ্যায় ও ২৪২টি ধারায় চূড়ান্ত করে। ২০১৫ সালের খসড়ায় ২২টি অধ্যায় ও ৩৭২টি ধারা ছিল। তবে সর্বশেষ খসড়ায় আইনটিকে ১৩টি অধ্যায় ও ৬৩ ধারায় নামিয়ে আনা হয়েছে।
নতুন খসড়া আইনে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদন্ডের বিধান রাখা হয়েছে ড্রাইভিং লাইসেন্স জালিয়াতি নিয়ে। এতে বলা হয়েছে, নির্ধারিত কর্তৃপক্ষ বাদে অন্য কোনো ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রস্তুত বা সংরক্ষণ করলে পাঁচ বছরের কারাদন্ড বা দুই লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দন্ড হবে। আর ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া কেউ গাড়ি চালালে ছয় মাসের কারাদন্ড হবে। নতুন আইনে বলা হয়েছে, লাইসেন্স ছাড়া যানবাহন চালানো নিষিদ্ধ। ১৮ বছর না হলে কেউ লাইসেন্স পাবেন না। তবে ভারী যানবাহন চালানোর ন্যূনতম বয়স ২১ বছর। আর পেশাদার চালকের ক্ষেত্রে ৬০ এবং অপেশাদার চালকের ক্ষেত্রে ৬৫ বছরের অধিক বয়সী ব্যক্তি লাইসেন্স নিতে পারবেন না। লাইসেন্স প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বয়স নির্ধারণ করা হলেও শিক্ষাগত যোগ্যতার বিষয়ে কিছু বলা হয়নি।
খসড়া আইনে গণপরিবহনে লাইসেন্স ছাড়া কন্ডাক্টর হলে বা নিয়োগ করলে তিন মাসের জেল বা তিন হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ডের বিধান রাখা হয়েছে। ট্রাফিক আইন বা সংকেত না মানলে অনধিক ছয় মাসের কারাদন্ড বা ১০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ড হবে। কোনো মোটরযান অতিরিক্ত ওজন বহন করলে অনধিক এক বছরের কারাদন্ড বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা হবে। নির্ধারিত এলাকা ছাড়া অন্য কোথাও গাড়ি পার্ক করলে অনধিক পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা হবে। আইনে মোটরযান চলাচলের জন্য বেশ কয়েকটি সাধারণ নির্দেশাবলী রয়েছে। কেউ মদ্যপান বা নেশাজাতীয় দ্রব্য সেবন করে গাড়ি চালাতে পারবেন না।
সিটবেল্ট বাঁধা ছাড়া গাড়ি চালানো যাবে না। তবে আইনে বলা হয়েছে, সব অপরাধই জামিনযোগ্য ও আপসযোগ্য। খসড়া আইনে হাইওয়ে পুলিশের বিষয়ে বলা হয়েছে, ১০ মিটারের মধ্যে কোনো দোকানপাট থাকলে ভেঙে দিতে পারবে পুলিশ। আইনটি শ্রম আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখা হয়েছে। কোনো ড্রাইভার অপরাধ করলে তার পয়েন্ট কাটা যাবে। এতে ছয় পয়েন্ট কাটা গেলেই তার লাইসেন্স সাসপেন্ড হয়ে যাবে।
আগের আইনে ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে শিক্ষাগত যোগ্যতার কোনো শর্ত ছিল না। নতুন আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার জন্য চালককে কমপক্ষে অষ্টম শ্রেণি পাস হতে হবে। চালকের সহকারীরও পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া থাকতে হবে। সহকারী হতে হলেও বাধ্যতামূলকভাবে লাইসেন্স নিতে হবে। আগের অধ্যাদেশে সহকারীদের লাইসেন্সের কথা থাকলেও তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতার শর্ত ছিল না। গাড়ি চালনার জন্য চালকের বয়স আগের মতই কমপক্ষে ১৮ বছর হতে হবে। আর পেশাদার চালকদের বয়স হতে হবে কমপক্ষে ২১ বছর।
নতুন আইনের খসড়ায় ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালালে অনধিক ৬ মাসের কারাদন্ড বা ৫০ হাজার টাকা অর্থদন্ড বা উভয়দন্ড দেওয়া হবে। আগের আইনে এই ধরনের অপরাধের জন্য তিন মাসের জেল বা ২৫ হাজার টাকা জরিমানার বিধান ছিল। চালকের সহকারীর লাইসেন্স না থাকলে এক মাসের জেল বা ২৫ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রাখার কথা বলা হয়েছে নতুন আইনের খসড়ায়। নতুন আইন পাস হলে কেউ গাড়ি চালানোর সময় মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারবেন না।এ আইন ভাঙলে এক মাসের কারাদন্ড বা পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা হতে পারে। ছয় মাসের কারাদন্ড বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে- এমন অপরাধের ক্ষেত্রে পুলিশ বিনা পরোয়ানায় চালকদের গ্রেপ্তার করতে পারবে।
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, পর্যাপ্ত শাস্তির বিধান রেখে সড়ক দুর্ঘটনা আইন করা হয়েছে। দুর্ঘটনায় মৃত্যু হলে তার জন্য এই আইনে পর্যাপ্ত শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। আইনটি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য সোমবার মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে উঠতে পারে।
গত রোববার জাবালে নূর পরিবহনের দুই বাসের রেষারেষিতে রাজধানীর শহীদ রমিজ উদ্দিন কলেজের দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়। দায়ীদের বিচারের দাবিতে সপ্তাহ জুেিড় রাস্তায় বিক্ষোভ করছে শিক্ষার্থীরা। তাদের আন্দোলনে অচল হয়ে গেছে রাজধানী।এ আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা শহরেও।
মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পর সড়ক পরিবহন আইনের বিভিন্ন ধারায় সাজা কমানোর দাবিতে আন্দোলনে নামে পরিবহন মালিকরা। পরিবহন আইনে সাজা কমাতে গত বছর মালিকদের কর্মসূচি দিয়েছেল। এবং সারাদেশে জেলা প্রশাসককে স্মারকলিপি প্রদান করে। এছাড়া আইনমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করে তাদের দাবি-দাওয়া তুলে ধরবেন। এসব ধারা শিথিলে এরই মধ্যে মালিক ও শ্রমিক নেতারা সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন। আইনের খসড়া প্রণয়নের সময় নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান ও এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান রাঙ্গার নেতৃত্বাধীন সংগঠন সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন ১১৭টি সুপারিশ দিয়েছিল। সবই ছিল শ্রমিক-মালিকদের পক্ষে। এর কিছু রেখেই খসড়া চূড়ান্ত করে বিআরটিএ। তাতেও সন্তুষ্ট নন মালিক-শ্রমিকরা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মৃত্যুদন্ড

১৮ নভেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ