পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
এক সময়কার রুগ্ন ও বিক্রির তালিকায় থাকা খুলনা শিপইয়ার্ড গত অর্থবছরে প্রায় ১২৫ কোটি টাকা মুনফা অর্জন করেছে। এর মধ্যে নীট মুনফা হচ্ছে ৫৫ কোটি টাকা। গত অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটির টার্নওভার এর আগের বছরের ৫৫০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে হাজার কোটির ঘর স্পর্শ করেছে।
একই সময়ে প্রতিষ্ঠানটি সরকারের কোষাগারে বিভিন্ন ধরনের শুল্ক ও কর বাবদও প্রায় ৭৪ কোটি টাকা জমা দিয়েছে। এছাড়াও শ্রমিক-কর্মচারি কল্যাণ তহবিলেও প্রায় সাড়ে ৬ কোটি টাকা প্রদান করেছে বলে জানা গেছে। বর্তমানে খুলনা শিপইয়ার্ডে প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকার বিভিন্ন ধরনের নৌ নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। চলতি অর্থ বছরে সরকারি-বেসরকারি পর্যায় থেকে আরো বিপুল অর্থের নতুন অর্ডার পেতে পারে খুলনা শিপইয়ার্ড।
প্রায় ১৭৫ কোটি টাকার দারদেনা আর লোকসানের বোঝা নিয়ে ১৯৯৯ সালের অক্টোবরে খুলনা শিপইয়ার্ড বাংলাদেশ নৌবাহিনীর কাছে হস্তান্তরের পরে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। সব দারদেনা পরিশোধ করে লোকসান থেকে উত্তরণের মধ্যদিয়ে দেড় দশকে প্রায় হাজার কোটি টাকা মুনফা অর্জন করেছে। খুলনা শিপইয়ার্ডে বিভিন্ন কর ও শুল্ক বাবদও কোষাগারে আরো পাঁচ শতাধিক কোটি টাকা জমা দিয়েছে। গত কয়েক বছর ধরেই নৌ বাহিনীর প্রতিষ্ঠানটি দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সেরা করদাতার সম্মান অর্জন করছে। আইসিএমএ থেকে একাধিকবার ‘বেষ্ট বিজনেস অ্যাওয়ার্ড’ লাভ করেছে। এছাড়াও বিদেশ থেকে একাধিক সম্মান অর্জন করেছে আইএসও সনদপ্রাপ্ত খুলনা শিপইয়ার্ড।
১৯৫৭ সালে রূপসা নদীর তীরে স্থাপিত খুলনা শিপইয়ার্ড স্বাধীনতার পরে বিএসইসি’র অঙ্গ প্রতিষ্ঠান হিসেবে লাভজনকভাবে পরিচালিত হলেও পরবর্তীতে অব্যাহত লোকসানে একটি রুগ্ন শিল্পে পরিণত হয়। এক পর্যায়ে প্রতিষ্ঠানটি বিরাষ্ট্রীয়করনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হলেও ক্রেতার অভাবে সেটিও সম্ভব হয়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর তিনি ১৯৯৯ সালের অক্টোবরে নির্দেশ দিলে প্রায় ১৭৫ কোটি টাকার দারদেনা নিয়ে খুলনা শিপইয়ার্ডকে বাংলাদেশ নৌবাহনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়। নৌবাহিনীর দক্ষ ব্যবস্থাপনা আর কর্মকর্তা-কর্মচারিদের প্রচেষ্টায় খুলনা শিপইয়ার্ড প্রথম বছরেই লোকসানের বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে আসে। প্রতিষ্ঠানের সাথে সংশ্লিষ্ট সবার আন্তরিকতার ফলেই সফলতা এসেছে বলে জানিয়েছেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমোডর আনিসুর রহমান-বিএন।
তিনি বলেন, উৎপাদন, বিক্রি ও মুনফার টার্গেট অতিক্রমের ফলে গত কয়েকটি অর্থবছরে খুলনা শিপইয়ার্ড কর্মকর্তা-কর্মচারি ও শ্রমিকদের জন্য উৎসব ভাতার অতিরিক্ত আরো একাধিক বোনাস দিয়ে আসছে। এছাড়াও শ্রম আইন অনুযায়ী নিট মুনফার ৫% ওয়র্কার্স পার্টিসিপেশন ও কল্যাণ তহবিলে প্রদান করেছে খুলনা শিপইয়ার্ড। এতে করে সবার মাঝে কাজের উৎসাহ ও আগ্রহ বেড়েছে।
খুলনা শিপইয়ার্ড এ পর্যন্ত প্রায় ৭৫০ নতুন নৌযান নির্মাণ ছাড়াও আরো আড়াই হাজারের মত মাঝারি ও বড় আকারের নৌযান মেরামতের কাজ সাফল্যজনকভাবে সম্পন্ন করেছে। ইতোপূর্বে নৌ বাহিনীর জন্য ৫টি মধ্যম মানের পেট্রোল ক্রাফট নির্মাণ সম্পন্ন করার পর দুটি বড় আকারের যুদ্ধ জাহাজ ‘লার্জ পেট্রোল ক্রাফট-এলপিসি’ নির্মাণেও সফলতা অর্জন করেছে। গত বছর ৮ নভেম্বর প্রেসিডেন্ট অ্যাডভোকেট মো. আবদুল হামিদ দেশে নির্মিত সবচেয়ে বড় যুদ্ধ জাহাজের আনুষ্ঠানিক কমিশনিং করেন।
খুলনা শিপইয়ার্ড ইতোমধ্যে নৌ বাহিনীর জন্য দুটি ‘সাবমেরিন টাগ’-এর নির্মাণও সম্পন্ন করেছে। বাংলাদেশ কোষ্ট গার্ড-এর জন্য ‘ইনশোর পেট্রোল ভেসেল’ ও ‘সেলফ প্রপেলড ফ্লোটিং ক্রেন’ ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের সমর নৌযানের নির্মাণ কাজ চলছে। বিআইডব্লিউটিএ’র দুটি পুরনো ড্রেজার পূণর্বাসন ও আধুনিকায়ন ছাড়াও প্রতিষ্ঠানটি বিআইডব্লিউটিসি ও নৌ কল্যাণ ফাউন্ডেশনের জন্য ইতোমধ্যে ৪টি ‘কন্টেইনার ভ্যাসেল’সহ বিভিন্ন ধরনের নৌযান নির্মাণ সাফলভাবে সম্পন্ন করেছে।
গত অর্থবছরে খুলনা শিপইয়ার্ড উৎপাদন ও আয়সহ প্রতিটি ক্ষেত্রেই তার লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করেছে বলে জানা গেছে। প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন ব্যাংকে গচ্ছিত তার স্থায়ী আমনত থেকেও মুনফা অর্জনসহ সরকারকে আয়কর প্রদান করে। এছাড়াও প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন স্ক্র্যাপ বিক্রি করে বেশ কিছু অর্থ আয় করতে সক্ষম হয়েছে। খুলনা শিপইয়ার্ড ‘চায়না ক্লাসিফিকেশন সোসাইটি’, ‘ব্যুরো অব ভেরিটাস’, ‘লয়েডস’ ও ‘ক্লাস-এনকেকে’র তত্ত্বাবধানে ও যৌথভাবে বিভিন্ন নৌযান নির্মান করছে। খুব শিগরিই একটি নিজস্ব ‘ডিজাইন হাউজ’ গড়ে তোলা হবে বলেও জানা গেছে।
কমোডর অনিসুর রহমান মোল্লা (এল) এনইউপি, পিএসসি-বিএন ইনকিলাব’কে জানান, একাধিক যুদ্ধ জাহাজ ও সাবমেরিন টাগ নির্মানের অভিজ্ঞতার আলোকে ভবিষ্যতে ফ্রিগেট-এর মত অত্যাধুনিক বড় আকারের সমর নৌযান নির্মাণেরও পরিকল্পনা রয়েছে। এতে করে দেশ বিশ্ব দরবারে বিশেষ মর্যাদা লাভ করবে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক ইচ্ছায় পায়রা সমুদ্র বন্দরের কাছে একটি ফরোয়ার্ড ইয়ার্ড নির্মাণের লক্ষ্যে খুলনা শিপইয়ার্ডের জন্য জমি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এতে করে বিদেশে বিনিয়োগে সমুদ্রগামী নৌযানসহ সব ধরনের সমর ও বাণিজ্যিক নৌযান নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।