বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান বলেছেন, ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে রাজধানীর ৭০-৮০ ভাগ লোকই নীতিমালা অমান্য করছে। এ কারণে শহরের নানাবিধ সমস্যার সৃষ্টি করছে। আমরা উদ্যোগ নিয়ে রাজউক এলাকার এলাকার বৈধ ও অবৈধ ভবনের তালিকা প্রস্তুত করেছি। শিগগিরই এসব তালিকা জনসম্মুখে প্রকাশ করা হবে।
গতকাল শনিবার সকালে রাজধানীর বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি) মিলনায়তনে ঢাকা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট প্ল্যান এরিয়ার (ডিএমডিপি) জন্য ‘ডেনসিটি জোনিং’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন। রাজউক ও বিআইপি যৌথভাবে এই সেমিনারের আয়োজন করে।
রাজউক চেয়ারম্যান বলেন, ঢাকা শহরকে বাসযোগ্য করে গড়ে তুলতে এবার নিখুঁতভাবে ডিটেইল্ড এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ) প্রণয়নের কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। এই ড্যাপ ৯৯ ভাগ নিখুঁত করতে পারলে অনেক সমস্যারই সমাধান মিলবে। তবে এবারে ‘ড্যাপে ডেনসিটি জোনিং এবং এডুকেশন জোন’ করার সুপারিশ থাকছে। এসব বাস্তবায়ন করার আগে সকল শ্রেণী-পেশার মানুষের মতামত গ্রহণ করা হবে।
তিনি আরও বলেন, বিদ্যমান ড্যাপে কিছু ভুল-ত্রæটি ছিল, সেটা আমরা অকপটে স্বীকার করছি। তারপরও এটা সত্য যে, একটি মাস্টারপ্ল্যান হয়েছিল বলেই আজ আমরা নতুন করে নিখুঁত মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের কাজ শুরু করতে পেরেছি। শুরুটা না হলে, এখন সমালোচনা বা নতুন করে ভাল উদ্যোগ গ্রহণ করাও অনেক দূরহ ব্যাপার হতো।
এক প্রশ্নের জবাবে রাজউক চেয়ারম্যান বলেন, বিদ্যমান ড্যাপে ভুল-ত্রæটি থাকায় সেসব সংশোধন করতে মন্ত্রীসভার প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠিত হয়েছে। ওইসভায় অনেক ভুলের সংশোধন করা হয়। বর্তমান ড্যাপ নিখুঁত করার চেষ্টা করছি, যাতে ওই কমিটির কোন প্রয়োজন না হয়।
রাজউকের সদস্য (পরিকল্পনা) আবুল কালাম আজাদ বলেন, ড্যাপ নিয়ে আমাদের অনেক ভুল ছিল। সকলের মতমত নিয়ে সেসব সমাধান করে একটি বাস্তসম্মত ও নির্ভুল ড্যাপ প্রণয়ের প্রচেষ্টা চালাচ্ছি। নগর বিশেষজ্ঞ ও স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন বলেন, শুধু ঢাকা নয়। সারা দেশকেই নিয়েই চিন্তা করতে হবে। আগের কি ভুল হয়েছে, সেগুলো সামনে আনতে হবে। যাতে নতুন করে ভুল না হয়। পাশাপাশি এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত আলোচনা হওয়া উচিত।
নগর বিশেষজ্ঞ ও স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, ঢাকা শহরের জন্য সুষ্ঠু পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হলে চারটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। সেগুলো হল-প্রথমত, মাস্টারপ্ল্যান বা ডেনসিটি জোনিং (জনসংখ্যার ঘনত্ব) পরিবর্তনশীল হতে হবে। প্রয়োজনের আলোকে সংযোজন-বিয়োজন করতে হবে। দ্বিতীয়ত, ভৗগোলিক অবস্থান বিবেচনা করে ভবনের উচ্চতা এবং এলাকার জনসংখ্যার ঘনত্ব নির্ধারণ করতে হবে। তৃতীয়ত, যোগাযোগ অবকাঠামোর উপর ভিত্তি করে জনসংখ্যার ঘনত্ব কম বেশি করা যেতে পারে। চতুর্থ, জনসংখ্যার ঘনত্ব নির্ধারণের ক্ষেত্রে কর্মসংস্থান বা অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনা করতে হবে।
সেমিনারের মূল প্রবন্ধে বিআইপি’র সাধারণ সম্পাদক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের ৯০ শতাংশ এলাকায় ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি মানুষ বসবাস করে। অতিরিক্ত মানুষের চাপেই সড়কের যানজট, নাগরিক সেবার অবনতিসহ জীবনযাত্রার মান ক্রমেই নিচে নামছে। এসব কারণে ক্রমে বাসযোগ্যতা হারাচ্ছে ঢাকা শহর।
তিনি আরও বলেন, রাজউক মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করছে, ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিতে। জমির মালিকরা সরকারি প্ল্যান মানতে চান না। এসব কারণে সুষ্ঠু পরিকল্পনা হলেও সেটার বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয় না। তাছাড়া এই শহরের বেশির ভাগ মানুষ নিয়ম মানে না। মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে এসব চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। এজন্য বহনক্ষমতা বিবেচনা করেই সংশোধিত ড্যাপে ডেনসিটি জোনিং (জনসংখ্যার ঘনত্ব) নির্ধারণ করে দেয়ার কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। এসময় তিনি রাজউকের মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়নে রাজউকের সক্ষমতা আরো বাড়ানোর পরামর্শ দেন।
রাজউকের ডিটেইল এরিয়া প্ল্যানে (ড্যাপ) প্রকল্প পরিচালক আশরাফুল ইসলাম বলেন, রাজধানীতে জনসংখ্যার উপর ভিত্তি করে উন্নয়ন করা হয় না। একারণে উন্নয়ন কাজ হলেও তার কার্যকর সুফল মিলছে না। এসব বিবেচনা করে সংশোধিত ড্যাপে জনসংখ্যার ঘনত্ব (ডেনসিটি জোনিং) অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। ভৌগোলিক, সামাজিক, অর্থনৈতিকসহ সার্বিক দিক বিবেচনা করে বিদ্যমান সমস্যার সমাধান করা হবে।
রাজউক সদস্য (পরিকল্পনা) আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে ও আর বিআইপির সহ-সভাপতি ড. আকতার মাহমুদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন, বিআইপির সভাপতি অধ্যাপক ড. একেএম আবুল কালাম প্রমুখ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।