চলতি আগস্ট (শ্রাবণ-ভাদ্র) মাসে বাংলাদেশে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশিহারে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। মৌসুমী বায়ুর সক্রিয় প্রভাবে উজানের নদ-নদী অববাহিকায় ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে। এ কারণে আগস্টের দ্বিতীয় এবং চতুর্থ সপ্তাহে দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল, মধ্যাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের জেলাসমূহের বিভিন্ন স্থানে স্বল্প থেকে মধ্যমেয়াদী বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। এ মাসে বঙ্গোপসাগরে এক থেকে দু’টি মৌসুমী লঘুচাপ সৃষ্টি এবং এর মধ্য থেকে অন্তত একটি মৌসুমী নিম্চানপে পরিণত হতে পারে।
আগস্ট মাসের দীর্ঘমেয়াদি আবহাওয়া পূর্বাভাস প্রদানের লক্ষ্যে বিশেষজ্ঞ কমিটির সভায় অতিবর্ষণ এবং বন্যার এ আশঙ্কার কথা জানানো হয়েছে। গতকাল বুধবার বিকেলে আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্র ঢাকায় অনুষ্ঠিত উক্ত বিশেষজ্ঞ কমিটির সভায় সভাপতিত্ব করেন আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক ও বিশেষজ্ঞ কমিটির চেয়ারম্যান সামছুদ্দিন আহমেদ। সর্বশেষ তথ্য-উপাত্ত, ঊর্ধ্বাকাশে আবহাওয়ার বিন্যাস বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা করে উপরোক্ত পূর্বাভাস প্রদান করা হয়।
এদিকে গত জুলাই (আষাঢ়-শ্রাবণ) মাসে সারাদেশে সার্বিকভাবে স্বাভাবিক (শূন্য দশমিক এক শতাংশ বেশি) বৃষ্টিপাত হয়েছে উল্লেখ করে গতকাল কমিটির সভায় জানানো হয়, তবে বিভাগওয়ারি হিসাবে উত্তরাঞ্চলের রংপুর বিভাগে ৩১.৯ শতাংশ কম, সিলেট বিভাগে ২৩.৭ শতাংশ কম, ঢাকা বিভাগে ৩.৩ শতাংশ কম, চট্টগ্রাম বিভাগে স্বাভাবিকের চেয়ে ১৩ শতাংশ বেশী বৃষ্টিপাত হয়েছে। এর আগে গত জুন মাসে দেশে সার্বিক বৃষ্টিপাত হয় স্বাভাবিকের চেয়ে গড়ে ৩ দশমিক ৬ শতাংশ বেশী। গত মে মাসে স্বাভাবিক হারের তুলনায় ১৪.৩ শতাংশ বেশী এবং এপ্রিল মাসে ৩৬.৭ শতাংশ বেশী বৃষ্টিপাত হয়। অর্থাৎ এবার ভরা বর্ষার তুলনায় বর্ষার আগেই বৃষ্টি ঝরেছে বেশিহারে।
সর্বশেষ আবহাওয়া সতর্কবার্তায় আবহাওয়াবিদ মোঃ আবদুর রহমান খান জানান, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও এর সংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় বায়ুচাপের তারতম্যের আধিক্য বিরাজ করছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর, বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্র বন্দরসমূহের উপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি এসে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়।
এদিকে পাউবোর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা, গঙ্গা-পদ্মা ও আপার মেঘনা অববাহিকায় সুরমা-কুশিয়ারা নদ-নদীসমূহের পানির সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে। যা আগামী ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে পাহাড়ি নদ-নদীসমূহের পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশ ও ভারতের আবহাওয়া বিভাগের তথ্য অনুযায়ী আগামী ২৪ থেকে ৭২ ঘণ্টায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল, দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল এবং এর সংলগ্ন ভারতীয় অঞ্চলে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে।
অঝোর বর্ষণ নেই
বৃষ্টি হচ্ছে হালকা ও বিক্ষিপ্তভাবে। শ্রাবণের স্বাভাবিক অঝোরধারায় বর্ষণ নেই। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশের অধিকাংশ স্থানে হালকা বর্ষণ হয়েছে। কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাত হয়। এ সময় ঢাকায় ২০ মিমি, মাদারীপুরে দেশের সর্বোচ্চ ৭৩ মিমি, চট্টগ্রামে ১৫ মিমি, রাজশাহীতে ১৫ মিমি, রংপুর ও ময়মসিংহে এক মিমি, সিলেটে ২০ মিমি, খুলনায় ৫ মিমি, বরিশালে ১৯ মিমি বৃষ্টি হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে জানা গেছে, খুলনা, ঢাকা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ বিভাগের অনেক জায়গায় হালকা থেকে মাঝারী ধরনের বৃষ্টি হতে পারে। কোথাও কোথাও মাঝারী ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে। সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি, রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। আগামী ৪৮ ঘণ্টায় আবহাওয়ার কিছুটা পরিবর্তন হতে পারে। বর্ষার মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের ওপর মোটামুটি সক্রিয় আছে।