Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আনোয়ারা উপকূল রূপালী ইলিশে জেলেদের হাসি

জাহেদুল হক, আনোয়ারা (চট্টগ্রাম) থেকে | প্রকাশের সময় : ১ আগস্ট, ২০১৮, ২:৫০ পিএম

আদিকাল থেকে বাঙালির পাত আলো করে রাখা মীনশ্রেষ্ঠ বলতে বোঝায় রূপালী ইলিশ। সামুদ্রিক মৎস্য দপ্তরের নিষেধাজ্ঞা মেনে চলায় শ্রাবণের মাঝ সময়ে জেলেদের জালে ঝাঁকে ঝাঁকে ধরা পড়ছে ইলিশ। জো-এর দিনক্ষণ মিলিয়ে চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপকূলে জমে উঠেছে রূপালী ইলিশের মেলা। উপকূলজুড়ে জেলেদের মুখে তৃপ্তির ঢেকুর আর সোনালী হাসি। ইলিশের গন্ধ মুহু মুহু ধ্বনিতে বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে। জেলেদের ঘর থেকে উঁচু মহল পর্যন্ত এখন ইলিশের স্বাদে আচ্ছন্ন। তবে দাম চড়া হওয়ার কারণে নি¤œআয়ের ক্রেতারা সেই স্বাদ পাচ্ছেন না। উপজেলা মৎস্য দপ্তরের দাবি,সরকারের পক্ষ থেকে মা ইলিশ ধরা বন্ধ ও জাটকা নিধনে কড়াকড়ি থাকায় সাগরে বড় ইলিশ দেখা যাচ্ছে বেশি।
গতকাল দুপুরে গহিরা ফকিরহাট এলাকায় সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়,গত তিন দিনে সাগর থেকে ইলিশ বোঝাই করে ঘাটে ফিরেছে অর্ধশতাধিক ট্রলার। ফিরে আসা ইলিশ ভর্তি এসব ট্রলার গহিরা উপকূলের বিভিন্ন ঘাটে সারিবদ্ধভাবে নোঙ্গর করে রাখা হয়েছে। মৌসুমের শুরুতে ইলিশের দেখা না পেলেও এখন কাঙ্খিত ইলিশ ধরা পড়তে শুরু করায় হাসি ফুটেছে জেলে,আড়তদার ও মৎস্যজীবীদের মুখে। কেউ ইলিশ মাছের ঝুড়ি টানছেন, কেউ প্যাকেট করছেন,আবার কেউ কেউ সেই প্যাকেট বিভিন্ন স্থানে পাঠাতে তুলে দিচ্ছেন ট্রাকে।
আনোয়ারা উপজেলা মৎস্য দপ্তর সূত্র জানায়,উপজেলার খুরুসকুল গোদারপাড় থেকে পারকি সৈকত পর্যন্ত প্রায় ২০টি ঘাটে তালিকাভুক্ত ৭৮৪টি মাছ ধরার নৌযান আছে। এর বাইরেও অর্ধসহস্রাধিক নৌকা দিয়ে সাগর ও শঙ্খের মোহনা থেকে মাছ আহরণ করে জেলেরা। দীর্ঘ আট মাস সাগরে জাটকা আহরণ বন্ধ থাকার পর জুলাইয়ের শুরু থেকে সাগরে মাছ ধরতে যান তারা। সেসময় তাদের জালে তেমন ধরা পড়েনি ইলিশ। তবে ভরা মৌসুমের মাঝামাঝি সময়ে এসে জেলেদের জালে ধরা পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ।
মাছ ব্যবসায়ী মো.শাহজাহান জানান,এবারে মোটামোটি ভাল সাইজের ইলিশ পাওয়া গেছে। ৩৫০ থেকে ৭০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ পাইকারীতে ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা এবং ৮০০ থেকে এক কেজির বেশি হলে ৭০০ থেকে এক হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এসব মাছ বরফ দিয়ে বাজারজাত করে ঢাকার যাত্রাবাড়ি ও আবদুল্লাহপুরে পাঠানো হচ্ছে। তবে এখনও পর্যন্ত ইলিশের দাম চড়া থাকায় স্থানীয় বাজারে তেমন মিলছে না। এ কারণে নিম্নআয়ের ক্রেতারা ইলিশের স্বাদ নিতে পাচ্ছেন না।
এফবি আল্লার দান নামক ট্রলারের মালিক মো.আজগর বলেন, মৌসুমের শুরুতে ইলিশ না মিললেও এবারে তার ট্রলারের মাঝিমাল্লারা পেয়েছেন দুই হাজার পাঁচশ ইলিশ। গড়ে একশ মাছ তের হাজার টাকা দামে বিক্রি করে পেয়েছেন তিন লক্ষ পঁচিশ হাজার টাকা। সব খরচ বাদ দিয়ে দুই লক্ষ টাকারও বেশি তার লভ্যাংশ মিলেছে। আবহাওয়া ভালো হলে তারা আবার মাছ ধরতে সাগরে ফিরে যাবেন। সাগরে এবার নৌদস্যু আতঙ্ক আছে কি না জানতে চাইলে তিনি জানান,মাঝে মধ্যে নৌদস্যুদের শিকার হতে হয় জেলেদের। নৌদস্যুদের হাতে অপহৃত বা চাঁদাবাজির কারণে অনেকেই এ পেশা ছেড়ে দিয়েছেন। সাগরে কোস্টগার্ডের নিয়মিত টহল আরও জোরদার করা প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।
সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সৈয়দ হুমায়ুন মোরশেদ ইনকিলাবকে জানান,জাটকা নিধন ও মা ইলিশ ধরা বন্ধে সফলতার কারণে সাগরে ইলিশ বেড়েছে। এছাড়া নদীর স্রোত বেড়ে যাওয়ায় সাগর থেকে শঙ্খের মোহনায় ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ উঠে আসে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ