পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
‘রেড চিটাগং’। ‘লাল বিরিষ’। লালচে কিংবা মেরুন রঙের বৃষ জাতের গরু। বন্দরনগরীসহ বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলে কয়েকশ’ বছর যাবত ‘লাল বিরিষ’র চাহিদা সবচেয়ে বেশী। সারাবছর ধরে চাটগাঁইয়া মেজ্জান (মেজবান) জিয়াফত বিয়ে-শাদিসহ সামাজিক অনুষ্ঠানে তো বটেই। পবিত্র ঈদুল আজহায় লাল বৃষ গরুর কাটতি ঘরে ঘরে। ছেলে-বুড়ো সবার কাছে সমান কদর।
এবারের ঈদুল আজহায়ও চাহিদা মেটাতে লাল বিরিষের সমারোহে কোনো ঘাটতি নেই। দেশীয় গৃহস্থীদের গোয়ালে বছরব্যাপী সযত্মে লালিত হৃষ্টপুষ্ট কোরবানী পশুর জোগানই আছে যথেষ্ট। কিন্ত ভারত ও মিয়ানমারের গরু আমদানি অথবা চোরাপথে যদি ঢুকে তাহলে গরু লালন-পালনকারী কৃষক-কিষানীর হবে সর্বনাশ। কেননা অনেক কষ্টে-সৃষ্টে গরু ছাগল পালনকারী কৃষকরা উপযুক্ত মূল্য থেকে বঞ্চিত হবেন। সর্বশেষ তথ্য-পরিসংখ্যান তাই বলছে।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামে এ বছর কোরবানি পশুর লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬ লাখ ৫৫ হাজার ৪১৪টির। এখানে স্থানীয়ভাবেই জোগান রয়েছে ৫ লাখ ৮১ হাজার ৬৩৪টি পশুর। ৭৩ হাজারের মতো কোরবানি পশুর ঘাটতি এ মুহূর্তে থাকলেও চট্টগ্রাম ও তিন পার্বত্য জেলায় প্রত্যন্ত গ্রামে পালিত এবং উত্তরবঙ্গ, পাবনা, কুষ্টিয়াসহ বিভিন্ন জেলায় বাড়তি থাকা গরু ছাগল চট্টগ্রামে বিক্রির জন্য প্রতিবছরের মতো আনার পর থেকেই চাহিদা পূরণ হয়ে যাবে। ফলে ভারত ও বর্মী গরুর কোন প্রয়োজন হচ্ছে না। বৃহত্তর চট্টগ্রামে কোরবানি পশুর চাহিদা দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে এমনিতেই বেশী। এবার দেশে কোরবানিযোগ্য এক কোটি ১৬ লাখ পশুর মধ্যে চট্টগ্রামের চাহিদা সাড়ে ৬ লাখেরও বেশী।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পবিত্র কোরবানি ঈদের আর বাকি তিন সপ্তাহেরও কিছু বেশী। চট্টগ্রামে কোরবানিযোগ্য পশুর মধ্যে বর্তমানে জোগান রয়েছে গরু ৩ লাখ ৯৪ হাজার ৫০৩টি, মহিষ ৪৩ হাজার ৯২১টি, ছাগল-ভেড়া ১ লাখ ৪২ হাজার ৮১৯টি ও অন্যান্য পশু ৩৯১টি। এখানে কেউ কেউ শখ করে পাহাড়ি ঢাউস সাইজের গয়াল (গরু) কোরবানি দেন। চট্টগ্রামে বিত্তবান, বনেদী, ব্যবসায়ী-শিল্পপতি পরিবারগুলো নজরকাড়া, বড় সাইজের গরু কোরবানি দিতেই পছন্দ করে থাকেন। গতবছর চট্টগ্রামে ৫ লাখ ৯৫ হাজার ৮৩১টি পশু কোরবানি দেয়া হয়। এরমধ্যে গরু ৪ লাখ ১০ হাজার ৩৮৪টি, মহিষ ৩ হাজার ৩টি, ছাগল-ভেড়া এক লাখ ৮২ হাজার ৪৪১টি।
চট্টগ্রামের প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোঃ রেয়াজুল হক জানান, কৃত্রিম উপায়ে মোটাতাজাকরণে যাতে কোরবানি পশু স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যমান হারিয়ে না ফেলে এরজন্য খামারী ও গৃহস্থীদের হাতেকলমে স্বাস্থ্যবান্ধব খাদ্য সম্পর্কে সচেতন করা হয়েছে। ন্যায্যমূল্যে গবাদিপশুর রোগ-বালাইয়ের প্রতিষেধক টিকাদান, স্বল্পমূল্যে স্বাস্থ্যবান্ধব খাদ্য ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে প্রশিক্ষণসহ আনুষঙ্গিক সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে। এরফলে উপকারভোগী খামারী-গৃহস্থীর সংখ্যা আগের তুলনায় বেড়ে গেছে। সমগ্র চট্টগ্রামে পশু পালনে সৃষ্টি হয়েছে ব্যাপক উৎসাহ।
তিনি আরও জানান, গরু ছাগল পালনসহ কোরবানি পশু বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে হৃষ্টপুষ্ট করার জন্য ঘাসের সঙ্গে দানাদার খাবার প্রদানে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। শুকনো ও কাঁচা ঘাসের সাথে মিশিয়ে গমের ভূষি, চালের কুঁড়া, ডালের ভূষি, সয়াবিনের ভূষি, তিল ও সরিষার খৈল পরিমাণ মতো নিয়মিত খাওয়াতে হবে।
এতেই কোরবানি পশু হবে যথেষ্ট সবল হৃষ্টপুষ্ট। বাজারে বিকিকিনিতে ভাল দামও পাওয়া যাবে। আবার স্বাস্থ্যসম্মতও হবে কোরবানি গরুর গোশত। অথচ অনেকে অজ্ঞতার বশে ক্ষতিকর বড়ি, ইউরিয়া সারসহ নানাবিধ অখাদ্য কুখাদ্য খাইয়ে গরু ছাগলকে রাতারাতি মোটাতাজা করার যে অপচেষ্টা করে তা টেকসই হয় না। এতে গবাদি পশুর মৃত্যুও ঘটতে পারে। তবে খামারী ও গৃহস্থীরা এ বিষয়ে এখন আগের তুলনায় অনেক সচেতন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, তিনটি পার্বত্য জেলা বান্দরবান, রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি, বৃহত্তর চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড, আনোয়ারা, পটিয়া, চন্দনাইশ, মীরসরাই, ফটিকছড়ি, হাটহাজারী, রাউজান, রাঙ্গুনিয়া, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, বাঁশখালী, চকরিয়া, পেকুয়াসহ অনেক জায়গায় কোরবানির হাটকে টার্গেট রেখে ব্যাপকহারে গরু লালিত পালিত হচ্ছে খামার কিংবা গৃহস্থীর গোয়ালে।
তাছাড়া পতেঙ্গা, হালিশহর, পাহাড়তলী, ডবলমুরিং, বাকলিয়া, চান্দগাঁও, বায়জিদসহ বন্দরনগরীর বিভিন্ন স্থানে ও শহরতলীতে গড়ে উঠেছে মৌসুমী অনেকগুলো খামার। সেখান থেকে লাল বিরিষসহ হরেক জাতের সবল গরু ছাগল কোরবানি হাটে আনার জন্য এখন পুরোদমে প্রস্তুত। ভারত ও বর্মী গরু আসা বন্ধ বা হ্রাস পাওয়ার ফলেই কৃষক পরিবারগুলো গরু ছাগল লালন-পালনে ঝুঁকেছে বেশীহারে। খামারের সংখ্যাও বেড়ে চলেছে। বেড়েছে গবাদিপশু পালনে উৎসাহ-উদ্দীপনা। এরফলে অনেক অস্বচ্ছল কৃষক পরিবার খুঁজে পেয়েছে কিছুটা হলেও আর্থিক স্বচ্ছলতার অবলম্বন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।