Inqilab Logo

মঙ্গলবার ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ধীরগতির মাশুল মাত্র ৪৬৭ কোটি টাকা

৭ বছরেও শেষ হয়নি ৭ সড়কের নির্মাণকাজ

নূরুল ইসলাম : | প্রকাশের সময় : ২৯ জুলাই, ২০১৮, ১২:০১ এএম

সাতটি সড়ক নির্মাণ করতে পেরিয়ে গেছে সাত বছর। তারপরেও কাজ শেষ হয়নি। সময়মতো কাজ না হওয়ায় এই সাত সড়ক নির্মাণে ব্যয় বেড়েছে প্রায় ৪৬৭ কোটি টাকা। ময়মনসিংহ, খুলনা ও সিলেট জোনের সাতটি সড়ক নির্মাণ নিয়ে বিপাকে পড়েছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, সাতটি সড়কের কোথাও ঠিকাদারের অবহেলা, টেন্ডারে জটিলতা, জমি অধিগ্রহণ নিয়ে জটিলতা এবং গাছ কাটা নিয়ে সমস্যার কারণে দফায় দফায় নির্মাণকাজ পিছিয়েছে। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ব্যয়। তাতে নতুন করে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। শেষ পর্যন্ত সঠিক সময়ে কাজ না হওয়ায় অতিরিক্ত মাশুল গুণতে হচ্ছে ৪৬৬ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। সড়কগুলো হলো- সাতক্ষীরা বাইপাস, ঝিনাইদহ-চুয়াডাঙ্গা-মুজিবনগর, কুষ্টিয়া শহর বাইপাস, খুলনার আশাশুনি-পাইকগাছা, হবিগঞ্জের বানিয়াচং-আজমিরীগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ-করিমগঞ্জ-চামড়াঘাট-মিঠামইন ও ময়মনসিংহের উজানচর-বাজিতপুর-অষ্টগ্রাম সড়ক।
জানা গেছে, ময়মনসিংহ, খুলনা ও সিলেট জোনের এই সাতটি সড়ক নির্মাণে ২০১০ ও ২০১১ সালে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এরপর সাত-আট বছর পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত কোনোটিরই কাজ শেষ করতে পারেনি সওজ অধিদপ্তর। শুরুতে এই সাতটি সড়ক নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৬১৪ কোটি ১৯ লাখ টাকা। ধীরগতিতে দফায় দফায় বেড়ে তা এখন ১ হাজার ৮০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। নির্মাণাধীন এ সাতটি সড়ককে ‘ধীরগতিসম্পন্ন প্রকল্প’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আবশ্যিকভাবে প্রকল্পগুলো শেষ করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১০ সালের জুলাই মাসে শুরু হয় ভোমরা স্থলবন্দরসহ সাতক্ষীরা বাইপাস সড়ক নির্মাণের কাজ। এর প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছিল ১১৬ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। ২২ কিলোমিটার দীর্ঘ বাইপাস সড়কটির নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৪ সালের জুন মাসে। কিন্তু গত ৮ বছরে এই প্রকল্পের কাজ এগিয়েছে মাত্র ৭৫ শতাংশ। সওজের হিসাবে এখনও ২৫ শতাংশ কাজ বাকি। সঠিক সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় এরই মধ্যে এই বাইপাস সড়কের নির্মাণব্যয় বাড়িয়ে ১৭৬ কোটি ৬০ লাখ টাকায় উন্নীত করা হয়েছে।
২০১১ সালের জানুয়ারিতে ঝিনাইদহ থেকে চুয়াডাঙ্গা হয়ে মেহেরপুরের মুজিবনগর পর্যন্ত সড়কের উন্নয়নকাজ শুরু হয়। ৮২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সড়কটির কাজ ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা ছিল। ঠিকাদারের অসহযোগিতার কারণে দফায় দফায় সময় বাড়ানো হয়েছে। অথচ কাজ শেষ হয়নি। শুরুতে এই প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৮০ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। বর্তমানে তা বাড়িয়ে করা হয়েছে ২৮৬ কোটি ৭৪ লাখ টাকা।
২০১১ সালের জানুয়ারিতে শুরু হয় কুষ্টিয়া শহর বাইপাস সড়ক নির্মাণের কাজ। সাড়ে ৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সড়কটির নির্মাণকাজ শেষ করার কথা ছিল ২০১৩ সালের জুনে। আড়াই বছরে যে কাজ শেষ হওয়ার কথা গত সাড়ে ৭ বছরেও তা শেষ হয়নি। শুরুতে সড়কটির নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছিল ৫২ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। চলতি বছরের জুনে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় থেকে প্রকল্পটি সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়। এতে করে এই প্রকল্পের ব্যয় বাড়িয়ে ৭৮ কোটি ৩০ লাখ টাকা করা হয়।
২০১০ সালের জুলাইয়ে শুরু হয়ে খুলনার আশাশুনি-পাইকগাছা সড়ক উন্নয়নকাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে। গত ৮ বছরে একাধিকবার সময় বাড়িয়ে সর্বশেষ চলতি বছরের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ নির্ধারণ করা হয়। তবে দরপত্র জটিলতায় এ মেয়াদেও কাজ শেষ হয়নি। ২২ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কটি নির্মাণে শুরুতে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৬৬ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০৮ কোটি ৮২ লাখ টাকা।
২০১০ সালের ১ ডিসেম্বর শুরু হয় হবিগঞ্জের বানিয়াচং-আজমিরীগঞ্জ সড়কের নির্মাণকাজ। কাজটি শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৪ সালের জুলাইয়ে। প্রায় ৮ বছর অতিক্রান্ত হলেও এখনও এ প্রকল্পের কাজ শেষ হয়নি। সময়ের সাথে প্রকল্প ব্যয়ও বেড়েছে। শুরুতে এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ৭৩ কোটি ৯ লাখ টাকা। এখন তা বেড়ে হয়েছে ১১৬ কোটি টাকা।
২০১১ সালে শুরু হয় কিশোরগঞ্জ-করিমগঞ্জ-চামড়াঘাট-মিঠামইন সড়কটির উন্নয়নকাজ। ৪৪ কোটি ১৯ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি শেষ হওয়ার কথা ছিল সর্বোচ্চ আড়াই বছরে। কিন্তু সাড়ে ৭ বছরেও তা শেষ হয়নি। নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় প্রকল্পটির ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩২ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, ঠিকাদারের অসহযোগিতার কারণে এ প্রকল্পের কাজ বার বার পিছিয়ে গেছে।
২০১১ সালের জানুয়ারিতে শুরু হয় ময়মনসিংহের উজানচর-বাজিতপুর-অষ্টগ্রাম সড়কটির নির্মাণকাজ। ৭৯ কোটি ৩১ লাখ টাকার এ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৩ সালের জুনে। কিন্তু এখনো প্রকল্পের কাজ শেষ করতে পারেনি সওজ অধিদপ্তর। এতে করে নির্মাণ ব্যয় দ্বিগুণের বেশি বেড়ে ১৮১ কোটি ৭৩ লাখ টাকায় ঠেকেছে।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, নির্মাণসামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধি, প্রকল্পের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বাবদ বাড়তি ব্যয় ও পূর্ত কাজ বৃদ্ধির ফলে প্রকল্পগুলোর ব্যয় বেড়েছে। আবার কোথাও কোথাও যথাযথ পরিকল্পনার অভাবেও বেড়েছে সময় ও ব্যয়। একজন কর্মকর্তা জানান, সাতক্ষীরা বাইপাস সড়কটি নির্মাণের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সংস্থার পরিষেবা অবকাঠামো (ইউটিলিটি) স্থানান্তরের প্রয়োজন ছিল। অথচ বিষয়টি শুরুতে অনুধাবনই করতে পারেননি প্রকল্প কর্মকর্তারা। প্রথম দফায় প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) সংশোধন করা হলেও বিষয়টি কারো নজরে আসেনি। এ কারণে সড়কটির নির্মাণকাজ পিচিয়ে যায়।
উজানচর-বাজিতপুর-অষ্টগ্রাম সড়কটি নির্মাণে বেশকিছু ত্রুটি ধরা পড়েছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) পরিবীক্ষণে। আইএমইডির নিবিড় পরিবীক্ষণ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রকল্পটি অনুমোদনের আগে কোনো ধরনের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করা হয়নি। বার বার প্রকল্প পরিচালক ও প্রকৌশলী বদল হয়েছে। দরপত্র প্রক্রিয়া বিলম্বিত হয়েছে। নকশা অনুযায়ী সব জায়গায় কাজ ঠিকমতো হয়নি।
###



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সড়ক

১৫ জানুয়ারি, ২০২৩
২১ ডিসেম্বর, ২০২২
২৩ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ