Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পুরনো প্রকল্পে নির্বাচনী চাপ

বাড়ছে খরচ ও মেয়াদ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৫ জুলাই, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

পুরনো প্রকল্প পরিণত হচ্ছে নির্বাচনী প্রকল্পে। অর্থাৎ মেয়াদ শেষ হলেও বাস্তবায়ন অগ্রগতি কম, তার উপর জনতুষ্টির বিভিন্ন বিষয় যোগ করার ফলে ব্যয় ও মেয়াদ বাড়ছে প্রকল্পে। এরকম একটি প্রকল্প হচ্ছে ‘বরিশাল বিভাগ পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প’।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় বলছে, স্থানীয় এমপিদের বাড়তি চাহিদার পাশাপাশি প্রকল্পটি সংশোধনের আরও কয়েকটি কারণ রয়েছে। সেগুলো হচ্ছে, বরিশালে শেখ হাসিনা ক্যান্টনমেন্ট স্থাপন, পটুয়াখালী পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ এলাকায় প্রাথমিক যোগাযোগ স্থাপন এবং রেট সিডিউল পরিবর্তনের কারণে ব্যয় ও মেয়াদ দুটিই বাড়ানো হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি এক ধরণের নির্বাচনী প্রকল্প। কেননা সংবিধান অনুযায়ী আগামী ডিসেম্বর মাসে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। তার আগে এলাকার অবকাঠামো উন্নয়নে অতিরিক্ত চাহিদা দেয়াটা মোটেও কাম্য নয়।
অন্যদিকে প্রকল্পের ব্যয় ও মেয়াদ বৃদ্ধিতে ইতোমধ্যেই ভেটো দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন। প্রকল্পটি অনুমোদন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে স¤প্রতি অনুষ্ঠিত হয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা। এতে সভাপতিত্ব করেন, পকিল্পনা কমিশনের কৃষি, পানি সম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য এএন সামসুদ্দিন আজাদ চৌধুরী। ওই সভায় ভেটো দেয়া হয় বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, বরিশাল বিভাগ পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পটির মূল ব্যয় ধরা হয়েছিল ৬৩৮ কোটি টাকা। পরবর্তীতে প্রথম সংশোধনীর মাধ্যমে ব্যয় বাড়িয়ে করা হয় ৬৭৬ কোটি টাকা। এখন দ্বিতীয় সংশোধনীর মাধ্যমে প্রথম সংশোধিত ব্যয়ের চেয়ে ৩৯৪ কোটি টাকা বাড়িয়ে মোট ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে ১ হাজার ৭০ কোটি টাকা। তাছাড়া প্রকল্পটি ২০১৩ সালের জুলাই থেকে ২০১৮ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের কথা ছিল। কিন্তু এ সময়ে কাক্সিক্ষত অগ্রগতি হয়নি। শুরু থেকে গত মে মাস পর্যন্ত প্রায় ৬ বছরে প্রকল্পটির অনুকুলে ব্যয় হয়েছে ৪৩২ কোটি ৯০ লাখ টাকা, অর্থাৎ মোট ব্যয়ের ৬৪ দশমিক ৪ শতাংশ। বাস্তব অগ্রগতি হয়েছে ৬৫ শতাংশ। এ অবস্থায় ২ বছর মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রকল্পটির আওতায় মূল কার্যক্রম হচ্ছে, গ্রোথ সেন্টার ও গ্রামীণ বাজার উন্নয়ন, সড়ক নির্মাণ ও উন্নয়ন,ঘাট নির্মাণ, ব্রিজ বা কালভার্ট নির্মাণ, মাটির কাজ এবং বৃক্ষরোপ ও পরিচর্যা। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে, বরিশাল, ভোলা, বগুনা, ঝালকাঠি, পটুয়াখালী এবং পিরোজপুর জেলার ৪২টি উপজেলায়।
প্রকল্পটি সংশোধনের কারণ হিসেবে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, পল্লী যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে প্রকল্প এলাকার সংশিষ্ট সংসদ সদস্যদের চাহিদার প্রেক্ষিতে সড়ক উন্নয়ন কাজের কলেবর বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে সড়ক উন্নয়ন কাজের তালিকা বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে।
এছাড়া বরিশাল শেখ হাসিনা ক্যান্টমেন্ট স্থাপনের জন্য ওই এলাকার প্রাথমিক যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য সড়ক ও ব্রিজ বা কালর্ভার্ট নির্মাণ কাজ সংশোধিত স্কিম তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। পটুয়াখালী পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর স্থাপনের জন্য এলাকার প্রাথমিক যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য সড়ক ও ব্রিজ বা কালভার্ট নির্মাণ কাজ অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব করা হয়েছে। সেই সঙ্গে যোগাযোগ নেটওয়ার্ক সম্পন্ন করার প্রয়োজনে সড়ক উন্নয়ন কাজে অতিরিক্ত কিছু ছোট আকারের কালভার্ট, ইউড্রেন ও স্লোপ প্রোটেকশন কাজ যুক্ত করা হয়েছে।
অন্যদিকে চলমান প্রথম সংশোধিত প্রকল্পের ব্যয় এলজিইডির ২০০৯-১০ অর্থবছরের রেট সিডিউল অনুসারে প্রাক্কলন করা হয়েছিল। কিন্তু ইতোমধ্যেই নির্মাণ সামগ্রীর দাম এবং শ্রমিক মজুরি বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবের নতুন স্কীমের ক্ষেত্রে এলজিইডির ২০১৭-১৮ অর্থবছরের হালনাগাদ রেট সিডিউল বিবেচনায় নেয়া হয়।
সূত্র জানায়, ইতোমধ্যেই এত ব্যয় বাড়ানোর বিপক্ষে ভেটো দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন। গত ১৪ জুন অনুষ্ঠিত প্রকল্পটির এ্যাপ্রেউজল সভায় বলা হয়, এই ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব পিইসি সভায় পর্যালোচনা করা যেতে পারে। সেই সঙ্গে বিবেচ্য প্রকল্পে নতুন স্কীমগুলো যাচাই-বাছাই করে কম গুরুত্বপূর্ন স্কীম বাদ দিয়ে মোট প্রকল্প ব্যয় ৯২০ কোটি টাকার মধ্যে রেখে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) সংশোধন করার সুপারিশ দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া আরও বলা হয়েছে, পরিপত্র ১ দশমিক ১ দশমিক ৮ অনুযায়ী বিশেষ প্রকল্প ছাড়া সকল প্রকল্পের বাস্তবায়ন মেয়াদ ৩ বছর করার জন্য নির্দেশনা রয়েছে। প্রকল্পটি ২০১৩ সাল থেকে ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। পুনরায় ২ বছর মেয়াদ বৃদ্ধি না করে যদি একান্ত প্রয়োজন হয় তাহলে নতুন প্রকল্প আকারে অথবা চলমান প্রকল্পের সংশোধনীর সময় তা অন্তর্ভূক্ত করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে প্রকল্পটির দুই বছর মেয়াদ বাড়ানোর যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। বলা হয়েছে, এর মেয়াদ বাড়ানোর যৌক্তিকতা সংশোধিত ডিপিপিতে প্রতিফলন করতে হবে। প্রকল্পটির ব্যয় বৃদ্ধির যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয় অ্যাপ্রেইজল সভায়। বলা হয়, প্রকল্প মেয়াদে ক্রমপুঞ্জিত আর্থিক অগ্রগতি ৪৩২ কোটি ৯০ লাখ টাকা। এখনো ২৪৩ কোটি টাকার কার্যক্রম অবশিষ্ট রয়েছে। সেইসব কার্যক্রম সম্পূর্ণ না করে পুনরায় ৩৯৪ কোটি টাকা বৃদ্ধি করে দ্বিতীয় সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধির যৌক্তিকতা সুস্পষ্টভাবে আরডিপিপিতে প্রতিফলন করতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নির্বাচন

১৬ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ