পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
১৬ জুলাইয়ের ঘটনা। ভোর সাড়ে ৬টার দিকে দক্ষিণ যাত্রাবাড়ীর ১২৩/ক নং মধ্যপাড়ার বাড়ির নীচ তলা থেকে একটি মোটরসাইকেল চুরি করে নিয়ে যায় দু’জন চোর। ইয়ামাহা ফিজার মডেলের দামি মোটরসাইকেলটি ওই বাড়ির নীচ তলার সিঁড়ি ঘরে রাখা ছিল। ভোরে ওই বাড়ির একজন মসজিদে ফজরের নামাজ পড়তে যাওয়ার সময় প্রধান গেটটা খুলে রেখে যান। এই সুযোগে দুজন চোর ভিতরে প্রবেশ করে হাইড্রোলিক তালা ভেঙ্গে মোটরসাইকেলটি চুরি করে নিয়ে যায়। ওই ভবনের স্থাপিত সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজে সাদা চেক ও কালো শার্ট পরিহিত দুজন চোরের চেহারা স্পষ্ট ধরা পড়েছে। এ ঘটনায় যাত্রাবাড়ী থানায় মামলা (নং-৭৩, ১৭/০৭/১৮ ইং) করেন মোটরসাইকেলের মালিক মামুন। পুলিশের কাছে তিনি সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজও জমা দিয়েছেন। কিন্তু ঘটনার পর ৫ দিন অতিবাহিত হলেও পুলিশ চোরচক্রকে সনাক্ত করতে পারেনি। উদ্ধার হয়নি চুরি যাওয়া মোটরসাইকেলটিও। অন্যান্য এলাকার মতো রাজধানীর অভিজাত এলাকাগুলোতেও প্রায়ই গাড়ি চুরি, ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধের ঘটনা ঘটছে। এমনকি অভিজাত এলাকার মসজিদের দানবাক্স থেকে টাকা চুরির ঘটনাও ঘটছে। সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজে চুরির সেই দৃশ্য ধরাও পড়ছে। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পুলিশের দাবি, ফুটেজ স্পষ্ট না হওয়ায় অপরাধীদেরকে সনাক্ত করা যাচ্ছে না। ভুক্তভোগীরা বলেন, সিসি ক্যামেরা না থাকলে পুলিশ বলে, এটা নাই কেনো? আবার থাকলে বলে, ফুটেজ স্পষ্ট নয়। পুলিশের দাবি অনুযায়ী রাজধানীর গুলশান-বনানী ও বারিধারা সিসি ক্যামেরার আওতায় এসেছে। অথচ অভিজাত এসব এলাকার মসজিদ থেকে টাকা ও গ্যারেজ থেকে গাড়ি চুরির ঘটনা ঘটেই চলেছে। অনেকের অভিযো, নিজ উদ্যোগে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের পরও তারা খুব একটা উপকার পাচ্ছেন না। এজন্য নিম্নমানের সিসি ক্যামেরাকে পুলিশ দায়ী করলেও ভুক্তভোগিরা পুলিশের আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। অপরাধ বিশেষজ্ঞদের মতে, সারা বিশ্ব যেখানে প্রযুক্তি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে, সেখানে ঢাকায় গত ১৫ বছরেও সরকারি উদ্যোগে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা সম্ভব হয়নি। এটা অনেক বড় ব্যর্থতা। কর্তৃপক্ষের উচিত অপরাধ নিয়ন্ত্রণের জন্য পুরো রাজধানীকে সিসি ক্যামেরার আওতায় নিয়ে আসা।
জানা গেছে, রাজধানীসহ সারা দেশে একের পর এক নৃশংস খুনের ঘটনায় সচেতনতার অংশ হিসেবে ২/৩ বছর আগে থেকেই নগরজুড়ে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা বসানো শুরু হয়। বিভিন্ন স্তরের ক্রেতা নিজেদের নিরাপত্তার জন্য সিসি ক্যামেরা কিনছেন। এ কারনে এখন বিভিন্ন আলামতের পাশাপাশি অপরাধীদের শনাক্তে ঘটনাস্থল বা আশপাশের ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার ফুটেজই পুলিশের বড় ভরসা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিছু ঘটলেই পুলিশ সিসি ক্যামেরার ফুটেজ খোঁজে। কিন্তু সেই ফুটেজ থেকে কতোটা উপকার মেলে সেটাই প্রশ্ন।
জানা গেছে, ২০১৫ সালের পয়লা বৈশাখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নারী নির্যাতনের ঘটনায় ফুটেজ থাকার পরও তা অপরাধী শনাক্তে কাজে আসেনি। ২০১৬ সালের ৫ জুন চট্টগ্রামে পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যার ঘটনা ধরা পড়ে রাস্তার বিপরীতে একটি বেসরকারি ব্যাংকের সিসি ক্যামেরায়। পুলিশের ভাষায়, সংগৃহীত সেই ফুটেজও স্পষ্ট ছিল না। সে কারনে খুনীকে সনাক্ত করা যায়নি।
রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী মহাখালী গাউছুল আজম মসজিদে গত ৫ ও ৬ মে রাতে দুর্ধর্ষ চুরির ঘটনা ঘটে। মুখোশধারী চোর মসজিদের হ্যাজবল ভেঙ্গে ভিতরে প্রবেশ করে দুটি দানবাক্সের তালা কেটে আনুমানিক ৮ লাখ টাকা চুরি করে নিয়ে যায়। এই ঘটনা সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজে ধরা পড়লেও পুলিশ একমাত্র চোরকে সনাক্ত করতে পারেনি। এই ঘটনার কয়েকদিন পর কিশোরগঞ্জের পাগলা মসজিদের দানবাক্সের তালা কেটে একইভাবে টাকা চুরির চেষ্টা হয়। এখানেও চোর ছিল একজন এবং কালো মুখোশধারী। ভিডিও ফুটেজ দেখেও এই ঘটনায় চোরকে সনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ। অনেকের প্রশ্ন, সিসি ক্যামেরা থাকলেই যে অপরাধীকে সনাক্ত করা যাবে তার গ্যারান্টি কোথায়?
সিসি ক্যামেরা বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বাজারে থাকা সিসি ক্যামেরার দাম মানভেদে ১৫শ’ থেকে আড়াই লাখ টাকা পর্যন্ত। ইদানিং মূলত নাইট ভিশন ক্যামেরাগুলো দেড় হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকায় বিক্রি হয় বেশি। তবে প্যানেল ক্যামেরার দাম বেশি। এগুলোতে রেকর্ডারসহ একাধিক প্যানেল রয়েছে। এসব ক্যামেরা দেড় লাখ টাকা থেকে চার লাখ টাকায়ও বিক্রি হচ্ছে। আগে এগুলোর দাম ছিল দেড় থেকে দুই লাখ টাকা। এখন বেশিরভাগ সিসি ক্যামেরাই চীন থেকে আমদানি করা, যে কারণে দামও কম। তবে তাইওয়ান, কোরিয়া, জাপান থেকেও কিছু নিরাপত্তাসামগ্রী আসছে। সেগুলো উন্নতমানের এবং দামও তুলনামুলক বেশি।
গুলিস্তান স্টেডিয়াম মার্কেটের একজন ব্যবসায়ী জানান, সাধারণ মানের ক্যামেরা দিয়ে মাত্র ১০ থেকে ২০ মিটার দূরত্বের চিত্র ধারণ সম্ভব। তবে এইচডি মানের ক্যামেরা দিয়ে ৩০ থেকে ৭০ মিটার দূরত্বের চিত্র ধারণ করা যায়। কিন্তু মানুষের মধ্যে ধারণা না থাকায় সাধারণ মানের ক্যামেরাই তারা বেশি কেনে। এগুলোর ফুটেজ খুব একটা স্পষ্ট হয় না। এলিফ্যান্ট রোডের একজন বিক্রেতা বলেন, আগের তুলনায় সিসি ক্যামেরা বিক্রি কয়েক গুণ বেড়েছে। আগে বড় কোম্পানি ও শপিং মলে সিসি ক্যামেরা বসানো হতো। এখন ছোটখাটো দোকান থেকে শুরু করে বাসাবাড়িতেও বসানো হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সুনির্দিষ্ট কোনো নিয়ম-নীতি ও মনিটরিং না থাকায় চীন থেকে গণহারে আনা হচ্ছে নিম্নমানের সিসি ক্যামেরা। এসব ক্যামেরার চিত্র ধারণক্ষমতা একেবারেই সীমিত। নিম্নমানের ক্যামেরায় নাইটভিশন সিস্টেম দুর্বল হওয়ায় রাতের চিত্র দেখে অপরাধীকে শনাক্ত করা কঠিন। এই সুযোগটাই কাজে লাগাচ্ছে পুলিশ।
জানা গেছে, ২০১৪ সালে রাজধানীর অভিজাত গুলশান, নিকেতন, বারিধারা এলাকার বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে ৬৪২টি সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়। এর নিয়ন্ত্রণ দেওয়া হয় ঢাকা মহানগর পুলিশের গুলশান বিভাগকে। তবে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের পরও ভিডিও ফুটেজ দেখে অপরাধীকে সনাক্ত করতে না পারাকে পুলিশের ব্যর্থতা হিসাবেই দেখছেন ভুক্তভোগিরা। তারপরেও নিরাপত্তার জন্য রাজধানীবাসীকে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের জন্য উৎসাহ জুগিয়ে থাকে পুলিশ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।