Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

তিন সিটি নির্বাচন : নিরাপত্তার শঙ্কা বাড়ছে

হোসেন মাহমুদ | প্রকাশের সময় : ২৩ জুলাই, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

খুলনা ও গাজীপুর সিটি নির্বাচনের ইতিহাস এখনো পুরনো হয়নি। কারো কারো কথা খুলনার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে গাজীপুরে। সে পুনরাবৃত্তির রূপ বা চারিত্র কী, তা মানুষ শুনেছে, জেনেছে, তবে তা নিয়ে তুলকালাম কিছু হয়নি। অনেক কথা আছে যা বলে লাভ হয় না, শোনারও কেউ নেই- তাছাড়া বললে ঝামেলাও হতে পারে, এটা সে রকম কিছু। এ জন্য এসব নিয়ে বলা ও লেখার ক্ষেত্রে সংযম পালিত হয়েছে। খুলনা ও গাজীপুরের পর রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেট সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে চলেছে। ৩০ জুলাই এ সব সিটিতে নির্বাচন। রাজশাহী-বরিশালে সাধারণ নির্বাচনী চিত্রটি এক হলেও সিলেটে একটু রকমফের দেখা গেছে। বিএনপি-জামায়াতের বহু বছরের মিত্রতা ও রাজনৈতিক ঐক্যে ধাক্কা লেগেছে সিলেটে। জামায়াত নিজের প্রার্থী দিয়েছে এখানে। তাছাড়া বিএনপির একজন বিদ্রোহী প্রার্থীও ছিলেন। ক’দিন আগে তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। যাহোক, সব প্রার্থীই মহা উৎসাহে নিজেদের জন্য নগরবাসীর কাছে ভোট প্রার্থনা করে চলেছেন। সাধারণ রীতি হচ্ছে, প্রার্থীরা সবাই নিজেদের জয়ের ব্যাপারে যথেষ্ট পরিমাণে আশাবাদী হয়েই নির্বাচনে নামেন, কিন্তু জয়ী হন একজন, যাকে বেশির ভাগ মানুষ চায়। এতদিনের প্রচলিত প্রথা ছিল এই যে, নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করা প্রার্থীর ন্বাধীনতা, কিন্তু বিজয় নিশ্চিত করার স্বাধীনতা তাদের নয়। এক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তনের হাওয়া লেগেছে। এখন দেখা যাচ্ছে , ভোটের আগেই ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিত হয়ে যাচ্ছে, আর বহু ভোটারকেই নিজ ভোট দিতে হচ্ছে না। গণমানুষের একটি বড় অংশের এবং নির্বাচন ও দেশের গণতন্ত্র নিয়ে যারা চিন্তাভাবনা করেন তাদের অনেকের আশংকা, খুলনা-গাজীপুরে যেভাবে নির্বাচন হয়েছে, এ তিনটি নির্বাচনেও একই মডেল অনুসরণ করা হতে পারে।
মানুষ প্রকৃতির সন্তান। প্রকৃতির কোলে তার আশ্রয়। মানুষের সাথে প্রকৃতির কিছু মিল আছে। উভয়েই পরিবর্তন প্রয়াসী। উভয়ের স্বভাবে আবার পার্থক্যও আছে। সবচেয়ে বড় পার্থক্য হচ্ছে, প্রকৃতির কিছু মূল সত্যের কখনো ব্যত্যয় ঘটে না। যেমন সূর্যোদয়-সূর্যাস্ত, রাতের আকাশে চাঁদ ওঠা, তারার ঝিলিমিলি ইত্যাদি। এটাকে প্রকৃতির সততাও বলা যেতে পারে। কিন্তু কিছু মানুষের কাছে মূল সত্য বা সততা বলে কিছু নেই। তারা প্রয়োজনে সবকিছুই করতে পারে। চির সত্যকেও মুছে দিতে পারে অবলীলায়, আলো নির্বাপিত করে ডেকে আনতে পারে কালিগোলা আঁধার। এই শ্রেণির মানুষ যে কী পারে আর কী পারে না তা কেউ বলতে পারে না। কিছু মানুষের এই পারা না পারা বাকি মানুষকে বা বহু মানুষকেই বিপন্ন করে, মানুষ সম্পর্কে মানুষের আস্থা-বিশ্বাস নষ্ট করে দেয়।
আস্থা-বিশ্বাস বিনষ্টের বিষয়টি সাম্প্রতিক সিটি নির্বাচনে যে বেগবান হয়েছে, সে কথা সরকার ও তাদের সমর্থকরা ছাড়া অন্য সবাই স্বীকার করেন। সরকার যখন যে কোনো মূল্যে নিজের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য বেপরোয়া হয়ে ওঠে, নির্বাচন কমিশন যখন সরকারের ইশারা ও নির্দেশিত বুলিনির্ভর হয়ে পড়ে, প্রশাসন যখন চোখ ইশারায় নগ্ন পক্ষপতিত্ব করে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যখন সরকার সমর্থিতদের দ্বারা ভীতিগ্রস্ত ও নিয়ন্ত্রিত হয়, তখন নির্বাচনের গতি-প্রকৃতি পাল্টে যায়। বিশেষ কেের ক্ষমতাসীনরা যখন জনগণের উপর ব্যাপকভাবে আস্থা হারিয়ে ফেলে, তখন কোনো ঝুঁকি না নিয়ে সর্বতো উপায়ে ভোট নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ফলাফলকে সপক্ষে রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। তাকেই আবার গণতন্ত্রের বিজয় বলে উচ্চকন্ঠে প্রচারণা চালিয়ে বিরোধী প্রতিবাদকে নির্মম ভাবে থামিয়ে দেয়া হয়। ক্ষমতার প্রতি লোভ, ক্ষমতায় থাকলে দুধের সর খাওয়ার সুযোগ, ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর বিরূপ পরিণতির আশংকা ইত্যাদি ক্ষমতাসীনদের জন্য ক্ষমতা থেকে সরে যাওয়ার বিষয়টিকে ক্রমেই বিভীষিকাময় করে তুলছে। এই আশংকা এত প্রচন্ড যে, এর ফলে ক্ষমতাসীনদের সকল ভালো কাজ, গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়নের সুফল, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের সাফল্য প্রভৃতি জাতীয় কোনো অর্জনও তাদের আত্মবিশ্বাসের ভিতকে ঢালাই সীসার মত মজবুত করতে পারছে না। তাই গণতন্ত্রের নামাবলী গায়ে ক্ষমতায় এসে তারা স্বৈরাচারের মাধ্যমে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার সহজ অথচ বিপজ্জনক পথ বেছে নিচ্ছে। এক্ষেত্রে লক্ষ হল, বিরোধী দলকে দমন ও সম্ভব হলে নিমূর্ল করা যাতে প্রতিবাদ-প্রতিরোধ উত্থিত না হয়। সেই সাথে কোনো অবস্থায়ই ক্ষমতার ধারে কাছে তাদের আসতে না দেয়ার কৌশল গ্রহণ করা। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ইতিহাস সে কথাই বলে।
দেশের সংবাদ মাধ্যগুলোর কল্যাণে তিন সিটি নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা ও পরিবেশ পরিস্থিতি সম্পর্কে অনুপুক্সক্ষ না হলেও মোটামুটি খবরাখবর মিলছে। নির্বাচন পরিস্থিতি গুরুতর ধরনের সহিংস হয়ে ওঠেনি। নির্বাচনী আচরণ বিধি লংঘনের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ অব্যাহত আছে। তবে ৩০ জুলাই এখনো দেরি আছে। পরিস্থিতি এ রকমই থাকবে, না অন্যদিকে রূপ নেবে তা বলার সময় এখনো আসেনি। তবে এটা ঠিক যে খুলনা ও গাজিপুরের অভিজ্ঞতা এই তিন সিটির নির্বাচনে প্রভাব ফেলেছে। বিএনপি প্রার্থীরা সে ব্যাপারে সতর্ক। কিন্তু সতর্ক হয়েছিলেন হাসান উদ্দিন সরকারও। অন্যায় পন্থা অবলম্বন করা হলে সহ্য করা হবে না বলে তিনি বলেছিলেন যদিও তা তার হুঁশিয়ারি বাগাড়ম্বরে পর্যবসিত হয়েছে। সে যাক। যতটা জানা যায়, তিন সিটি নির্বাচনে রাজশাহী ও বরিশালে আওয়ামী লীগের সাথে বিএনপিও জোরেশোরেই মাঠে আছে। বরিশালে বিএনপিকে ঠেলে মাঠ থেকে সরিয়ে দেয়ার বিষয়টি এখনো শুরু হয়নি। শুরু হবে না ,তা কেউ নিশ্চিত নয়। গাজীপুরে বিএনপির কথিত সব অপরাধীর গ্রেফতার করা হয়েছিল নির্বাচনের অল্প ক’দিন আগে। সারা বছর তাদের অপরাধের কথা পুলিশ জানত না বা জানলেও কিছু করেনি। নির্বাচনের আগে তারা কেন এ কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ে? তাদের এসব পদক্ষেপের জবাবদিহিতা নেই। সে রকম গ্রেফতার এ তিন সিটিতেও হবে না তা কী বলা যায়? সিলেটে স্বতন্ত্র প্রার্র্থী হিসেবে জামায়াত পক্ষকে ধরে তিন পক্ষ। সদ্য সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী তার পাঁচ বছরের মেয়াদকালে বহু ঝড়-ঝঞ্ঝা পাড়ি দিয়েছেন। কারো কারো মতে, তারপরও যেটুকু সুযোগ তিনি পেয়েছেন তা জনকল্যাণের কাজে লাগিয়েছেন। শোনা যাচ্ছে, গাজীপুরের পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে সে জন্য সিলেটের ভোটকেন্দ্রগুলোতে স্থানীয় প্রভাবশালীদের পোলিং এজেন্ট হিসেবে রাখা এবং তাদের যাতে বের করে দেয়া না হয় সে জন্য কেন্দ্রগুলোতে পর্যাপ্ত সংখ্যক সমর্থকদের রাখার কথা ভাবা হচ্ছে। কিন্তু খুলনা ও গাজিপুরের মত প্রশাসন ও ক্যাডার বাহিনীর সম্মিলন ঘটলে এ ব্যবস্থা কতটা কাজ দেবে তা বলা যায় না।
যে আশংকা এতদিন অনেকের মনে ঘুরপাক খাচ্ছিল অবশেষে তা আত্মপ্রকাশ করতে শুরু করেছে। নির্বাচনের যখন আর ৮ দিন বাকি, চলছে তুমুল প্রচারাভিযান, এ অবস্থায় ২০ জুলাই শুক্রবার ‘রাসিক কেমন নির্বাচন চাই’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের বিএনপির মেয়র প্রার্থী সাবেক মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের বলা কথাগুলো জনমনে আলোড়ন তুলেছে। তিনি ভোটদাতাদের প্রশ্ন- তারা নিরাপদে ভোটকেন্দ্রে যেতে পারবেন কিনা তুলে ধরার পাশাপাশি ভোটের দিন তার ১৪০০ পোলিং এজেন্টের নিজ বাড়ি থেকে ভোট কেন্দ্রে পৌছবার নিশ্চয়তা দাবি করেছেন নির্বাচন কমিশনের কাছে। তিনি বলেছেন, নির্বাচন কমিশন রাজশাহীতে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরিতে ব্যর্থ হয়েছে। তিনি সুস্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার পরিবেশ এখন পর্যন্ত নেই। গোলটেবিল বৈঠকে বুলবুল তার স্নেহময়ী মায়ের কথা তুলে ধরেছেন এভাবে, ‘ আমার মা গতকাল বলেছে, বাবা তুই এই নির্বাচনে বসে যা, কারণ তুই জিততে পারবি না। কেউ নাকি জিতে আছে।’
সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে যে মায়ের বুক থেকে তার সন্তানের উদ্দেশ্যে এ কথা বেরিয়ে আসে সেই নির্বাচনের এবং এই পরিস্থিতিতে তার সন্তানের নির্বাচন করার আদৌ কোনো প্রয়োজন আছে কী? আর শুধু বুলবুলেই এ অভিযোগ সীমিত থাকবে, সিলেট ও বরিশালের বিএনপি দলীয় মেয়র প্রার্থীরাও শেষমেষ এ অভিযোগে শামিল হবেন না তো?
সিটি নির্বাচন রাষ্ট্রের ক্ষমতা বদলে কোনো ভ‚মিকা পালন করে না। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গাজিপুর, রাজশাহী, খুলনা ও সিলেটে বিএনপি দলীয় প্রার্থীদের বিজয় কী যে অনাসৃষ্টি করেছিল তা জনগণ দেখেছিল। চার সিটি মেয়রের কাউকেই শান্তিতে থাকতে দেয়া হয়নি। আটক, রিমান্ড, কারাগারে প্রেরণ, মুক্তি, আবার গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে তারা অনেকগুলো দিন পাড়ি দিয়েছেন। এর মধ্যে গাজীপুরের মেয়র মান্নান নাজেহাল হয়েছেন সবচেয়ে বেশি। গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত এ সব স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিদের জীবন ও দায়িত্বকাল রাহুর কবলে নিক্ষেপ করার রেকর্ড সৃষ্টি হওয়ার পরও এ দেশে গণতন্ত্রের ঢাকঢোল সমানে বাজে। তাদের উপর করা অন্যায় ও হয়রানির কোনো বিচার হয় না। কী বিচিত্র এ দেশ!
তিন সিটি নির্বাচনে ইতিমধ্যে সংঘটিত দু’টি ঘটনা ভেটাদাতাদের নিরাপত্তা নিয়ে আতংক সৃষ্টি করেছে। একটি হচ্ছে রাজশাহীতে বিএনপির লোকদের উপর ককটেল হামলা অন্যটি হচ্ছে ক্ষমতাসীন দলের নেতা কর্তৃক পুলিশের ঊর্র্ধ¦তন কর্মকর্তার উপর হামলা। একস্থানে পুলিশ জনগণের নিরাপত্তা বিধানে ব্যর্থ হয়েছে, আরেক স্থানে পুলিশ নিজেরাই হামলার শিকার। নির্বাচনের উপলক্ষ ছাড়াও ইতিপূর্বে একাধিকবার ছাত্রলীগ-আওয়ামী লীগ নেতাদের দ্বারা পুলিশ প্রহৃত-লাঞ্ছিত হয়েছে যার অর্থ সরকারী দলের লোকেরা অপরিমেয় ক্ষমতার অধিকারী। এসব ক্ষেত্রে দেখা গেছে, কোনো দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা না করে ঊর্ধ¦তন মহলের নির্দেশে সমঝোতা করানো হয়েছে। যাহোক, প্রশ্ন উঠেছে যে পুলিশ নিজেদের নিরাপত্তাই নিশ্চিত করতে পারে না, তারা জনগণের নিরাপত্তা বিধান করবে কী করে? ভোটদাতারাও নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে শংকিত। এটা কি এখন ভাবা যায় যে ছাত্রলীগ বা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা কোনো লোককে মারধর করছেন আর পুলিশ গিয়ে তাদের উদ্ধার করছে? শোনা যায়, এ ধরনের ঘটনা ঘটলে পুলিশ নীরব ভ‚মিকা পালন করে।
এ বছরের শেষ বা আগামী বছরের শুরুতে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ফাঁকা মাঠে গোল দিয়েছে। নেতৃত্বের দুর্বলতা, নিজেদের শক্তি সম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকা, ভুল হিসাব ও ভুল কৌশল অবলম্বন করে বিপর্যয়ের শিকার হয় বিএনপি। যারা বলেন, বিএনপি নির্বাচন বর্জন করে ভুল করেছে তারা আওয়ামী লীগের ভাষায় জিভ শান দিয়ে এ কথা বলেন। যে কোনো বিজ্ঞ রাজনৈতিক বিশ্লেষকই এ ব্যাপারে একমত যে শুধু তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই নির্বাচনে যাবে বলে দীর্ঘ ঘোষিত নীতির সাথে বিএনপি নেত্রীর ্আপস করার কোনো সুযোগ ছিল না। আর ২০১৪-র নির্বাচনে গেলেও তাদের জয়ী হওয়ার সুযোগ দেয়া হত না যেমন পরবর্তীতে দেয়া হয়নি খুলনা ও গাজীপুরে। সেদিন প্রতিবাদ করলেও কিছু লাভ হত না যেমন হয়নি এ দু’টি নির্বাচনে পরাজয়ের ক্ষেত্রেও। সরকার ও প্রশাসনের সমি¥লিত শক্তি অপ্রতিরোধ্য থাকবে ততক্ষণ যতক্ষণ না তার বিরুদ্ধে গণ উৎক্ষেপ সৃষ্টি হবে। দুর্ভাগ্যক্রমে সেটা সৃষ্টি করতে ব্যর্থ হয়েছে ও এখনো হচ্ছে বিএনপিবিএনপি নেতৃত্ব সম্ভবত ভুলে গেছে যে, বিদেশীদের কাছে দেন-দরবার বা করুণাভিক্ষা করে কোনো লাভ হয় না যদি হিমালয়সম কঠিন পশ্চাৎভ‚মি রচনা না করে জনগণ।
বিগত দশ বছরের প্রতিক‚লতার দিনগুলো পাড়ি দিয়ে বিএনপি আজ দুর্বল, কিন্তু তা যে জনগণের দল, সে সত্যকে মতলববাজরাই শুধু প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে। বিএনপি তার জন্মকালের পর থেকে গণতন্ত্রের গলাটিপে হত্যা করতে এগিয়েছে , এ রকম নজির নেই। আর মরহুম প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে যতই নষ্ট-পচা বলে সম্মানচ্যুত করার চেষ্টা করা হোক না কেন, তিনি যে গণমানুষের কাছাকাছি পৌঁছেছিলেন ও তাদের হৃদয় জয়ে সক্ষম হয়েছিলেন, এ সত্যটি মিথ্যা হয়ে যাবে না।
বাংলাদেশ বিশ্বে গণতন্ত্রের মডেল আর এদেশের মানুষ শুধু আওয়ামী লীগকেই চায় , বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের এ রকম ছবি প্রদর্শন ও ইমেজ প্রতিষ্ঠা করতে চায় সরকার। চাইতেই পারে। আওয়ামী লীগ ছাড়া আর কোনো সরকার দেশের উন্নয়ন করে না। এটা সত্য হতেই পারে। কিন্তু কথাটি শুধু সরকার বা আওয়ামী লীগের লোক বললে বা বিশ্বাস করলে তো হবে না, জনগণের সবাইকে বা বেশির ভাগ অংশকেই তা বিশ্বাস করতে হবে। নিশ্চয়ই জনগণ সে রকম বলে ও বিশ্বাসও করে না। একটানা দশ বছর ধরে জনগণ আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়নের জোয়ারে ভাসছে। তারা অকৃতজ্ঞ হতে যাবে কেন? তাই ‘কেউ নাকি জিতে আছে’র মত ন্যক্কারজনক স্টাইলে না গিয়ে একটি অভিযোগবিহীন, বিতর্কমুক্ত, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডভিত্তিক নির্বাচন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে অন্তত তিন সিটি কর্পোরেশনের ভোটদাতাদের সে বিশ্বাস প্রকাশের সুযোগ দেয়া হোক না!



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সিটি নির্বাচন

১৭ জানুয়ারি, ২০২২
১৭ জানুয়ারি, ২০২২
১২ জানুয়ারি, ২০২২
২২ জানুয়ারি, ২০২১

আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ