Inqilab Logo

রোববার ০৩ নভেম্বর ২০২৪, ১৮ কার্তিক ১৪৩১, ৩০ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

বাউফলে বিলুপ্ত হতে চলেছে ঐতিহ্যবাহী বাঁশ শিল্প

বাউফল(পটুয়াখালী) সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২২ জুলাই, ২০১৮, ২:৩২ পিএম

বাঁশের অপ্রতুলতা ও পৃষ্ঠপোষকতার অভাব এবং পরিকল্পিত উদ্যোগের অভাবে বিলুপ্ত হতে চলেছে বাউফলের বাঁশ শিল্প। বর্তমান বাজারে প্লাস্টিক পণ্য সামগ্রীর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে টিকে থাকতে না পেরে মুখ থুবড়ে পড়েছে এককালের ঐতিহ্যবাহী এই শিল্পকর্মটি। অপরদিকে উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় অভাব-অনটনের মধ্যে দিনাতিপাত করছেন এ শিল্পকর্মের সাথে সংশ্লিষ্ট পরিবারগুলো। পরিবার পরিজন নিয়ে বেঁচে থাকতে তারা এ পেশাকে ছেড়ে অন্য পেশায় ঢুকে পড়ছেন। ফলে শীঘ্রই ঐতিহ্যবাহী এ শিল্পকর্মটি দেশ থেকে বিলুপ্ত হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে।
জানা গেছে, বাউফলের দাসপাড়া, বগা, নওমালা, কাছিপাড়া ও মদনপুরা ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে বিগত কয়েক দশক ধরে প্রায় দুই শতাধিক পরিবার বাঁশ শিল্পের সাথে সম্পৃক্ত ছিল। এক সময় বাউফলে গৃহস্থ পর্যায়ে প্রচুর বাঁশ উৎপাদিত হতো। এছাড়া চট্টগ্রাম থেকেও বাউফলসহ দক্ষিণাঞ্চলে প্রচুর বাঁশ আনা হতো। ওই বাঁশ দিয়ে চালন, কুলা, সাঝি, ধান-চাল ও ডাল সংরক্ষণের জন্য মোরা, বাজার করার খাড়ই(টোনা),মাটি কাটার বিড়া, চাল মাপার পুরা, মাছ ধরার পল্লা, চাষাবাদের জন্য চঙা, চাল ধোয়ার ঝাঁঝড়ি, ঝুড়ি, ঠাকনা এবং সৌখিন অনেক পণ্যসহ গৃহস্থালি কাজের অনেক মালামাল তৈরি করা হতো। এগুলো প্রত্যেক পরিবারের জন্যই ছিল অপরিহার্য। কিন্তু কালের বিবর্তনে বাজারে প্লাস্টিকের হরেক রকমের পণ্য আসায় মৃত্যুপথযাত্রী হতে চলেছে এ শিল্পটি। একদিকে যেমন এলাকায় বাঁশ উৎপাদন নেই, তেমনি চট্টগ্রাম থেকেও কোন বাঁশ এ অঞ্চলে আসছে না। আপরদিকে প্লাস্টিকের বাজারে প্রতিযোগিতায় এ পণ্যগুলো টিকতেও পারছেনা। ফলে এ শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট পরিবারগুলোতে নেমে এসেছে দুর্দিন। জীবনযাপনের তাগিদে অনেকেই পেশা পাল্টে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে বাউফলে হাতে গোনা ১৫/১৬টি পরিবার এ শিল্পের সাথে কোন রকমে টিকে রয়েছে।
অনুসন্ধান করে জানা গেছে, পুরুষদের পাশাপাশি এ শিল্পের সাথে প্রায় ৩ শতাধিক নারী শিল্পী জড়িত ছিলেন। এছাড়া পরিবারের মেয়ে সন্তানরাও একাজে সহায়তা করতো। বাঁশের কাজ করে নারীরা স্বাবলম্বী ছিলেন এবং তাদের কাছে জমাকৃত টাকা মেয়ের বিয়ে কিংবা স্বামী-সংসারের প্রয়োজনীয় অন্য কাজে লাগাতো। এখন কাজ না থাকায় ওই নারী শিল্পীরা বেকার হয়ে পড়েছেন। বাঁশ শিল্পের সাথে জড়িত অঞ্জনা নামের এক গৃহবধূ জানান, বাঁশের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, চাহিদা কম, পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধি এবং পণ্য বিক্রি করতে গিয়ে বাজারে খাজনাদারদের অতিরিক্ত খাজনা দিতে বাধ্য হওয়ায় এখন আর লাভ হয়না। ফলে তাদের সংসারে অভাব অনটন লেগেই আছে। অনিমা, মায়া রানী ও অর্চনা রানী নামের বাঁশ শিল্পীরা জানান, কাজ না থাকায় তাদের হাতে কোন টাকা পয়সা থাকেনা। ফলে নিজের রুচি কিংবা চাহিদা মোতাবেক কোন জিনিষপত্রও কিনতে পারছেন না। যে কোন প্রয়োজনে স্বামী বা সন্তানের মুখের দিকে চেয়ে থাকতে হয়। তাদের অভিমত, বাঁশ শিল্পকে রক্ষা করতে হলে বাজারে বাঁশ পণ্যের খাজনাবিহীন বিক্রির সুযোগ করে দিতে হবে এবং সরকারিভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করতে হবে এবং সরকারিভাবে প্লাস্টিক ব্যাবহারের খারাপ দিকগুলো প্রচার করতে হবে।
সচেতনমহল মনে করেন, এ শিল্প বাঙালি শিল্প-সংস্কৃতিরই অংশ। এ শিল্পটি ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের অন্তর্ভুক্ত হলেও সরকারি কিংবা বেসরকারি কোন সংস্থাই এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখার ভূমিকা নিচ্ছেন না। বাঁশ শিল্পকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে হলে জরুরী ভিত্তিতে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও পরিকল্পনা ও আধুনিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা দরকার এবং এ পেশার সাথে জড়িতদের তালিকা করে সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা করা উচিৎ। এবিষয়ে বাউফল উপজেলা নির্বাহী অফিসার পীযুষ চন্দ্র দে বলেন, শিল্পটি আমাদের বাঙালি সংস্কৃতিরই অংশ। আমরা চেষ্টা করবো এদেরকে সার্বিক সহায়তা দিয়ে এ শিল্পকে সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ