Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পাকিস্তানে কর্তৃত্বপরায়ণতার খায়েশ এক বড় চ্যালেঞ্জ

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২০ জুলাই, ২০১৮, ১২:০০ এএম

পাকিস্তানে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের আর মাত্র পাঁচদিন বাকি। আগামী ২৫ জুলাই এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপের অভিযোগ ও ক্রমবর্ধমান সন্ত্রাসী হামলার পর এ নির্বাচন নিয়ে গভীর উদ্বেগজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। পাকিস্তান আশা করছে, এই নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক উপায়ে ক্ষমতার হাতবদল হবে। এমন পালাবদল পাকিস্তানের ইতিহাসে খুব অল্প সময়েই ঘটেছে। পর্যবেক্ষকরা এরই মধ্যে ব্যালট নিয়ে ভয়াবহ কারচুপি হতে পারে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এ নির্বাচনে তিন বারের প্রধানমন্ত্রী বর্তমানে জেলে থাকা নওয়াজ শরীফ ও বিশ্বকাপ বিজয়ী ক্রিকেটের সাবেক অধিনায়ক ইমরান খানের দলের মধ্যে তীব্র লড়াই হতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন।
এদিকে নির্র্বাচন নিয়ে হিউম্যান রাইটস কমিশন অব পাকিস্তান তাদের গভীর উদ্বেগের কথা জানিয়েছ। নির্বাচনে ভয়াবহ, নজিরবিহীন জালিয়াতির চেষ্টা হতে পারে বলে তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। বলেছেন, নির্ধারিত দিনে নির্বাচন হওয়াটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু তা হওয়া নিয়ে সংশয় রয়েছে। তাদের আশঙ্কা, যদি সামান্য নিরাপত্তাহীনতা দেখা দেয়, যদি একটু পিছলে যায়, যদি কর্তৃত্বপরায়ণতা জেগে ওঠে তাহলে পাকিস্তান এক বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। বার্তা সংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে।
ইতোমধ্যে নির্বচনী মিছিল ও সমাবেশে বেশ কয়েকটি সন্ত্রাসী হামলায় বিপুল জনসংখ্যার এ দেশটিতে নিরাপত্তার মান নিয়ে ভীতির সৃষ্টি হয়েছে। পাকিস্তানের সাবেক কূটনীতিক হুসেইন হাক্কানি বলেছেন, নির্বাচনে ফল যা-ই হোক না কেন, ২৫ জুলাইয়ের নির্বাচন পাকিস্তানে শুধু অস্থিতিশীলতা বাড়াবে। এ নির্বাচন হবে এমন, যাতে কেউই জিতবে না। নির্বাচনে প্রায় ১০ কোটি ৬০ লাখ পাকিস্তানি তাদের ভোটের মাধ্যমে বেছে নেবেন পাকিস্তানের পরবর্তী নেতাকে।
পিএমএলএনের নওয়াজ শরীফ ক্ষমতায় এসেছিলেন ২০১৩ সালে। তারা এবারও আশা করছে, নওয়াজ শরীফের ভাই শাহবাজ শরীফের অধীনে তারাই নির্বাচনে ম্যান্ডেট পাবে। তাই এ নির্বাচন ইমরান খানের পাকিস্তান তেহরিকে ইনসাফ দলের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
তবে নওয়াজ শরীফ বর্তমানে জেলে রয়েছেন। পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) সহসভাপতি ও সাবেক প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারির নাম জড়িয়ে আছে তিনটি ব্যাংক থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ অবৈধ উপায়ে লেনদেনের সঙ্গে। সাবেক স্বৈরশাসক পারভেজ মোশাররফ রাজনৈতিক দল দাঁড় করালেও তিনি স্বেচ্ছা নির্বাসনে রয়েছেন। ফলে পাকিস্তানের রাজনীতির মাঠ বলতে গেলে ফাঁকা। এই ফাঁকা মাঠে ইমরান খানের জন্য ‘ছক্কা’ মারাটা খুবই সহজ হতে পারে। যদি তিনি তা না পারেন তাহলে এমন সুযোগ আর পাবেন কিনা তা বলা মুশকিল। তিনি না পারলে নিহত প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোর ছেলে বিলাওয়াল ভুট্টো তার পিপিপিকে নিয়ে কিং মেকারে ভূমিকায় যেতে পারেন। বিজয়ীদের নিয়ে তিনি যেতে পারেন জোট গঠনের দিকে।
এক্ষেত্রে পরস্পর বিরোধী দুটি পক্ষের মধ্যে কথার লড়াই দেখা দিয়েছে। এতে রাজনৈতিক পরিবেশের ওপর পড়েছে বিরূপ ছায়া। এ লড়াই এমন দু’টি রাজনৈতিক কুশীলবের মধ্যে যারা প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিতে পারবে না। তার একজন হলেন দুর্নীতির দায়ে ক্ষমতাচ্যুত ও রাজনীতিতে নিষিদ্ধ সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ। দ্বিতীয় পক্ষ হলো সেনাবাহিনী। সেনাবাহিনীর জেনারেলরা তার দলকে টার্গেট করছে বলে অভিযোগ করেছেন নওয়াজ শরীফ। বলা হচ্ছে, তার দলের প্রার্থীদের তারা ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। বিশেষ করে পাঞ্জাবে তা বেশি। পাকিস্তানে ক্ষমতার মূল নিহিত রয়েছে এই প্রদেশে। কেননা, দেশটির জাতীয় পরিষদ বা পার্লামেন্টে যে ৩৪২টি আসন আছে তার মধ্যে পাঞ্জাবেই রয়েছে ১৪১টি। নওয়াজ শরীফ ও সেনাবাহিনীর মধ্যে বিরোধ এ মাসের শুরুতে চরমে ওঠে, যখন তার অনুপস্থিতিতে দুর্নীতির দায়ে তাকে ১০ বছরের কারাদÐ দেয়া হয়। নওয়াজের স্ত্রী কুলসুম নওয়াজ লন্ডনে ক্যান্সারের চিকিৎসা নিচ্ছেন। সেখান থেকে এক সপ্তাহ আগে নওয়াজ পাকিস্তান ফিরলে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। বিশ্লেষকরা বলছেন, সামরিক বাহিনীর কারসাজির শিকার হয়ে তিনি নিজের সক্ষমতা কতটুকু দেখাতে পারবেন তার ওপর নির্ভর করছে পিএমএলএনের পরিণতি। সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগ শুধু নওয়াজের একার নয়। তাদের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ক্রমবর্ধমান হারে অপহরণ ও ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগ রয়েছে পাকিস্তানের বড় বড় মিডিয়া ও অধিকারকর্মীদের। একটি থিংকট্যাংক এই চাপকে ‘নীরব অভ্যুত্থান’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। প্রচারণায় ফোকাসে ফেলা হয়েছে পিএমএলএনকে। ওদিকে বিলাওয়াল ভুট্টোও তার প্রচারণায় বিঘœ ঘটানোর অভিযোগ করেছেন। এমনিতেই পাকিস্তানে একটি দুর্বল বেসামরিক সরকার হোক এমনটা চায় সেনাবাহিনী- এ রকম একটি ব্যাপক ধারণা প্রচলিত আছে। তারা চায় না বেসামরিক সরকার ও নিরাপত্তা বিভাগগুলোর মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য আসুক। নিরাপত্তা বিশ্লেষক আয়েশা সিদ্দিকা বলেন, সেনাবাহিনী সুস্পষ্টভাবে নতুন প্রজন্মের নেতৃত্ব সৃষ্টির চেষ্টা করছে। এতে সুবিধা পাবেন ইমরান খান। এমনটা মনে করা হচ্ছে। তাকে পাকিস্তানে অবাধে চলাচল করতে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। সেনাবাহিনী দেখছে দেশ শাসন করার জন্য তিনিই উত্তম বাছাই হতে পারেন। পাকিস্তানের ইতিহাসে প্রায় অর্ধেক সময় শাসন করেছে সেনাবাহিনী। এবার তাদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে বা হচ্ছে তা তারা প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা বলেছে, নির্বাচনে তাদের সরাসরি কোনো ভূমিকা নেই। নির্বাচনের দিনে তারা ৩ লাখ ৭০ হাজারেরও বেশি সেনা মোতায়েন করবে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পাকিস্তান


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ