Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৪ আশ্বিন ১৪৩১, ১৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি ট্রাম্প, আইএস নয়

প্রকাশের সময় : ১৭ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান মনোনয়নপ্রত্যাশী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বিভিন্ন বিষয়ে তার অবস্থান এবং বিতর্কিত মন্তব্য, কট্টরপন্থা এবং অজ্ঞতার কারণেই বিপজ্জনক বলে ভাবা হচ্ছে। শুধু তা-ই নয় যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি আইএস বা অন্য কোনো সন্ত্রাসীগোষ্ঠী নয়, বরং দেশটির ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার জন্য এখন সবচেয়ে বড় হুমকি মনে করা হচ্ছে তাকে। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে কট্টরপন্থি এবং অজ্ঞ প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীও ভাবা হচ্ছে। সম্প্রতি নিউইয়র্ক টাইমসকে প্রদত্ত পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প যা বলেছেন তাতে এই বোকামি এবং অজ্ঞতাই ফুটে উঠেছে বলে জানিয়েছে সংবাদ মাধ্যম। ডোনাল্ড ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতির প্রথম কথাই হলো যুক্তরাষ্ট্র ফার্স্ট (যুক্তরাষ্ট্রই প্রথম)। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় চার্লস লিন্ডবার্গ যুক্তরাষ্ট্র ফার্স্ট নামের এই দর্শন চালু করেন। নাৎসি বাহিনীর প্রতি সমবেদনা প্রদর্শনের অংশ হিসেবে বিচ্ছিন্নতাবাদী এই দর্শন চালু করেছিলেন লিন্ডবার্গ। কিন্তু ট্রাম্প এই দর্শনের গোড়ার খবর ভালোভাবে না জেনেই যুক্তরাষ্ট্র ফার্স্ট শব্দ দুটি দিয়ে তার পররাষ্ট্রনীতির কথা নিউইয়র্ক টাইমসের কাছে তুলে ধরেন। যুক্তরাষ্ট্রের অনেকেই এটাকে চরম অজ্ঞতা হিসেবে মনে করছেন। মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে ট্রাম্পের যে বিষয়টি সবাইকে বিস্মিত করেছে, তা হলোÑ বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী সামরিক জোট ন্যাটো সম্পর্কে তার মন্তব্য। এই সামরিক জোটকে অকার্যকর হিসেবে উল্লেখ করেছেন আবাসন ব্যবসায়ী ট্রাম্প। তার এমন মন্তব্য শুনে অনেকের চোখই কপালে উঠেছে। ট্রাম্পের অজ্ঞতা এবং অদূরদর্শিতার কাহিনী এখানেই শেষ নয়। তার সম্পর্কে মূল্যায়ন করতে গিয়ে কমেন্টারি ম্যাগাজিনের বিশ্লেষক ম্যাক্স বুট যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারের পর সবচেয়ে হতাশাবাদী মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে উল্লেখ করেছেন তাকে। ১৯৭৯ সালে কার্টার একটি হতাশামূলক বক্তব্য দিয়ে নিজেকে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে হতাশাবাদী প্রেসিডেন্ট হিসেবে মেলে ধরেছিলেন। ঠিক একই কাজ অব্যাহত রেখেছেন ট্রাম্প। নিউইয়র্ক টাইমসের সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ধনী দেশ নয়। আমরা এখন ঋণগ্রস্ত। আমাদের সেনাবাহিনীকে একটু একটু করে শেষ করে ফেলা হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, ২০১৪ সালেও বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ ছিল যুক্তরাষ্ট্র। আর সর্বোচ্চ মাথাপিছু আয়ের দিক থেকে ছিল পঞ্চম স্থানে। একই সঙ্গে বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী সেনাবাহিনী হলো যুক্তরাষ্ট্রের বাহিনী। আবার বিশ্বের সবচেয়ে বড় সংগঠনগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র উল্লেখযোগ্য তহবিল সহায়তা দেয় না বলেও ট্রাম্প ওই সাক্ষাৎকারে অভিযোগ করেন। কিন্তু জাতিসংঘ এবং ন্যাটোসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক সংগঠনে তহবিল সহায়তার তালিকায় দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্র এসব সংগঠনে প্রধান দাতা দেশ। রিপাবলিকান মনোনয়নপ্রত্যাশী ট্রাম্পের আরেকটি মন্তব্য সবাইকে খুব বেশি বিস্মিত করেছে। আর তা হলোÑ যুক্তরাষ্ট্র ঋণগ্রস্ত হওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে, ফেডারেল বাজেটের বড় একটি অংশ নাকি সামরিক খাতে ব্যয় করা হয়। কিন্তু বাস্তব অবস্থা হলো, দেশটির ফেডারেল বাজেটের মাত্র ১৬ ভাগ সামরিক খাতে ব্যয় করা হয়। অর্থাৎ, কোনো বিষয় সম্পর্কে ভালোভাবে না জেনেই তিনি এসব কথা বলেছেন বলে মনে করেন বুট।
নিউ ইয়র্ক টাইমসের সাক্ষাৎকারে ট্রাম্পকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে তিনি কোন সময়টাকে অনুসরণ করবেন? এর উত্তরে তিনি বলেন, চল্লিশ থেকে পঞ্চাশের দশকের সময়টাকেই আমি অনুসরণ করতে চাই। এর কারণ হিসেবে ট্রাম্প বলেন, ওই সময় যুক্তরাষ্ট্রকে সব দেশ শ্রদ্ধা করত এবং সারা বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রর দোর্দ- প্রতাপ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। কিন্তু ট্রাম্পের এই মন্তব্য ছিল ঐতিহাসিকভাবে ভুল। কারণ, চল্লিশের দশকে যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন পর্যায়ে পরাজয়ের পর পরাজয় বরণ করেছিল। তৎকালীন চেকোসেøাভাকিয়া থেকে চীন পর্যন্ত তখন সব দেশই কমিউনিস্টদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। আর ওই সময়ই তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন পরমাণু অস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছিল। আবার উত্তর কোরিয়া দক্ষিণ কোরিয়াকে আক্রমণ করেছিল। এভাবে সবকিছু গোলমাল পাকিয়েই সাক্ষাৎকারটি দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। কমেন্টারি ম্যাগাজিন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি ট্রাম্প
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ