Inqilab Logo

শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

রাসূল (সা.) এর দরবারের আদব-০২

মুফতি মো. আবদুল্লাহ | প্রকাশের সময় : ১৯ জুলাই, ২০১৮, ১২:০২ এএম

উদাহরণ-০২ পবিত্র কুরআনের যেখানে যেখানে পূর্ববর্তী উম্মতদের নিজ নিজ নবীগণের সঙ্গে বাক্যালাপের বর্ণনা করা হয়েছে, তাতে চিন্তা করলে এ বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যায় যে, তারা নবীগণের নাম ধরে সম্বোধন করতো। উদাহরণত, বনী-ইসরাঈল হযরত মূসা (আ) এর সঙ্গে কথোপকথন কালীন বলেছে- “হে মূসা! আমরা একই রকম খাদ্যে কখনও ধৈর্য ধারণ করবো না”। (বাকারা : ৬১)
একইভাবে হযরত ঈসা (আ) এর সঙ্গীগণ এভাবে বলেছিল- “হে র্মাইয়াম-তনয় ঈসা! আপনার রব কি আমাদের জন্য আসমান থেকে খাদ্য পরিপূর্ণ খাঞ্চা পাঠাতে সক্ষম ? ”(আল-মায়েদা:১১২)
উপরিউক্ত আয়াতদ্বয় থেকে বোঝা যাচ্ছে, প্রথমত তারা নাম ধরে আল্লাহর নবীগণের সঙ্গে কথা বলতো, দ্বিতীয়ত তাদের কথোপকথনের ধারাও এমন ছিল , যেমনটি তারা নিজেদের মধ্যে পরষ্পর বাক্যালাপ করছে। যেহেতু এমনটি বে-আদবীর কাতারে গন্য , তাই আল্লাহ তা‘য়ালা উম্মতে মুহাম্মদী (স)-কে এমন ধারার বাক্যালাপ থেকে বেঁচে থাকার নির্দেশ প্রদান করেছেন। তাঁর ইরশাদ হচ্ছে- “তোমরা রাসূলের আহ্বানকে তোমাদের একে অপরের আহ্বানের মত গণ্য করো না ; ” (আন-নূর : ৬৩)
সাহাবাগণের আনুগত্য, মান্যতা ও সর্বোত্তম আদবের অনুশীলনের ব্যাপারে আমাদের জীবন উৎসর্গ করা চাই, উক্ত আয়াতটি অবতীর্ণের পর যখনই তাঁরা মহানবী (স)-কে সম্বোধন করতেন তখনই তাঁরা ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ’, ‘ইয়া নাবীআল্লাহ’, ‘ইয়া হাবীবাল্লাহ’-বলতেন এবং তার পাশাপাশি এমনটিও বলতেন-“আপনার জন্য আমার পিতা-মাতাও জীবন উৎসর্গ করুক”-সুবহানাল্লাহ্!
উদাহরণ-৩ “হে ঈমানদারগণ! তোমরা যখন রাসূলের সঙ্গে চুপি চুপি কতা বলতে চাও, তখন তোমাদের এরূপ কথার পূর্বে কিছু সাদাকাহ্ পেশ কর,” (আল-মুজাদালাহ : ১২)
আয়াতটির শানে-নুযূল হচ্ছে, মদীনার মুনাফিকরা লোকজনের মাঝে নিজের বড়ত্ব প্রকাশের লক্ষ্যে এমন পন্থা অবলম্বন করেছিল যে, মহানবী (স) এর সঙ্গে কানে-কানে কথা বলার রীতি অনুসরণ করছিল। যাতে প্রত্যক্ষকারীরা এমন ধারণা নেয় যে, বাক্যালাপকারী একজন বড় কেউ এবং তিনি বিশেষ কোন কথাবার্তা বলছেন। কোন কোন সরল-সহজ মুসলমানও অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তার ক্ষেত্রেও তেমন পন্থা অনুসরণ করছিলেন। যেহেতু এ সবই নবীর প্রতি আদব প্রদর্শনের পরিপন্থী ছিল তাই আল্লাহ তা‘য়ালা নির্দেশ প্রদান করলেন, হে ঈমানদারগণ! যখন তোমরা নবীর সঙ্গে কানকথা বলতে চাইবে তখন কিছু হাদিয়া দিয়ে দিবে। এতে লোকজন যখন নিজেদের ভুল কর্মপন্থার বিষয়টি অনুভব করতে পারলো, এমন কর্মপন্থা পরিত্যাগ করলো। অতপর আল্লাহ তা‘য়ালা উক্ত নির্দেশ রহিত করে দিয়ে মুসলমানদের প্রশস্ততার দ্বার উন্মুক্ত করে দিলেন।
আল্লামা শিব্বির আহমদ উসমানী (র) লিখছেন, “যখন উক্ত বিধানটি অবতীর্ণ হলো তখন মুনাফিকরা কৃপনতার দরুন সেই অভ্যাস পরিত্যাগ করলো এবং মুসলমানরাও বুঝে গেল যে, অধিক কানাকানি করা আদব পরিপন্থী যা আল্লাহ তা‘য়ালা পসন্দ করেন না।
উদাহরণ-৪ মহান আল্লাহর ইরশাদ করছেন- “হে ঈমানদারগণ! আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সমক্ষে তোমরা কোন বিষয়ে অগ্রণী হয়ো না ”হুজুরাত:০১)
মহান আল্লাহর প্রকৃত আনুগত্য তাঁর রাসূলের প্রকৃত আনুগত্যের মধ্যে লুকায়িত। আর আনুগত্য ও মান্যতা বিষয়টির সম্পর্ক হয়ে থাকে আদবের সঙ্গে। তাই আয়াটিতে মুসলিম উম্মাহকে নবীর প্রতি আদবের শিক্ষা দেয়া হয়েছে। সাহাবাগণ যেহেতু প্রিয়নবীর সাহচর্য প্রাপ্ত ছিলেন তাই তাঁরা অন্তরের দিক থেকে তাকওয়া দ্বারা পরিপূর্ণ হওয়ার পাশাপাশি বাহ্যিকভাবেও মহানবী (স) এর আদবের প্রতি এত বেশী যত্মবান ছিলেন যে, কোন কাজেই মহানবী (স) থেকে অগ্রণী হতেন না। কথা বলতেন নীচুস্বরে , মজলিসে বসতেন এমনভাবে যেন মাথার ওপর পাখি বসে আছে। তাঁদের অন্তর মহানবীর প্রেমাগ্নিতে ভরপুর ছিল ; তাঁদের দিবারাত্রির পুরো সময় ছিল নেক আমলে পরিপূর্ণ এবং তাঁদের পুরো জীবনই ছিল সর্বপ্রকার বে-আদবী হতে মুক্ত। যে-কারণে তাঁদের সম্পর্কে মহান আল্লাহর বাণী অবতীর্ণ হয়েছিল-“তাঁরা এমন যে, মহান আল্লাহ তাঁদের অন্তরের তাকওয়ার পরীক্ষা নিয়েছেন। তাঁদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও মহাপুরর্স্কা”। (প্রাগুক্ত : ০৩)
উপরিউক্ত আয়াতগুলোকে একত্র করে চিন্তা করলে এ বিষয়টি সু¯পষ্টভাবে সামনে এসে যায় যে, একদিকে রাব্বুল-‘আলামীন আয়াতগুলো অবতীর্ণ করে মহানবী (স) এর ব্যাপারে আদব রক্ষার নির্দেশ প্রদান করেছেন, অন্যদিকে তেমন সবকিছুর গোড়া কর্তন করে দিয়েছেন যা নবীর আদব-পরিপন্থী। যেখানে আদব রক্ষার কথা বলেছেন সেখানে বে-আদবী থেকেও বেঁচে থাকতে নির্দেশ প্রদান করেছেন। মোটকথা নিজ সন্তুষ্টি ও অসন্তুষ্টি উভয়প্রকারের বিষয়গুলোই স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছেন। এক্ষেত্রে সাহাবাকিরাম এমন উজ্জ¦ল উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন যা আজও উম্মতের জন্য আলোকবর্তিকাস্বরূপ কাজ করে যাচ্ছে। নিম্নে তাঁদের ঘটনা-সম্ভার হতে উদাহরণরূপে কয়েকটি আলোচনা করা হচ্ছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ