যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি নেতা গিয়াস আহমেদ, জিল্লুর রহমান জিল্লু ও মিজানুর রহমান মিল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য পদে যুক্ত হলেন
যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির তিন নেতাকে কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হিসাবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। নিয়োগ প্রাপ্তরা হলেন
দশ মাস যাবত বেতন পাচ্ছে না কর্মীরা নীরব হাইকমিশন!
দশ সিন্ডিকেট চক্র এখনো জি টু জি প্লাস প্রক্রিয়ায় মালয়েশিয়া গমনেচ্ছু কর্মীদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। কর্মী প্রতি অভিবাসন ব্যয় প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। মালয়েশিয়া থেকে প্রতারণার শিকার জি টু জি প্লাসের একাধিক কর্মী এ তথ্য জানিয়েছে। জি টু জি প্লাসের অনেক কর্মী মালয়েশিয়ায় গিয়ে বিগত দশ মাসে এক টাকাও দেশে পাঠাতে পারেনি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসব কর্মীদের বেতন ভাতা ও খাবার পর্যন্ত দেয়া হচ্ছে না। তারা দেশটিতে অবরুদ্ধ অবস্থায় মানবেতর জীবন-যাপন করছে। কুয়ালালামপুরস্থ বাংলাদেশ হাই কমিশনের অর্থব কর্মকর্তাদের কাছে দফায় দফায় অভিযোগ দিয়েও প্রতারণার শিকার এসব কর্মীরা কোনো সহায়তা পাচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। দেশের বাড়ীতে তাদের আত্মীয়-স্বজনরা চড়া সুদের টাকা পরিশোধ করতে না পেরে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো’র উপ-পরিচালক (কর্মসংস্থান) মো: আসাদুজ্জামান মোল্লা গত ১০ জুলাই এক নোটিশে (স্মারক নং২৪৮৬) দশ সিন্ডিকেটের অন্যতম সদস্য মেসার্স আল ইসলাম ওভারসীজের (আরএল-১০৬) স্বত্বাধীকারী জয়নাল আবেদীন জাফরকে প্রতারণার শিকার কর্মীদের সৃষ্ট সংকট দ্রæত নিরসনের নিদের্শ দিয়েছেন। অন্যথায় তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বায়রার সাবেক মহাসচিব রুহুল আমিন মিন্টু দশ সিন্ডিকেটের মূল হোতা। তার রিক্রুটিং এজেন্সি ক্যাথারসিস ইন্টারন্যাশনাল (আরএল-৫৪৯) দশ সিন্ডিকেটের মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যাক কর্মী মালয়েশিয়ায় পাঠিয়েছে। এ প্রতিষ্ঠানটি ২০১৭ সনের ৮ মার্চ থেকে গত ১১ জুলাই পর্যন্ত জি টু জি প্লাসের মাধ্যমে ২৫ হাজার ৭শ’ ৯২ জন কর্মীকে মালয়েমিয়ায় পাঠিয়েছে। চড়া অভিবাসন ব্যয়ে উল্লেখিত সময়ে দশ সিন্ডিকেট ১ লাখ ৭৯ হাজার ২শ’ ২ জন কর্মীকে মালয়েমিয়ায় পাঠিয়েছে। বিএমইটি’র নির্ভরযোগ্য সূত্র এতথ্য জানিয়েছে। প্রথম দিকে জনপ্রতি মাত্র ৩৮ হাজার টাকায় মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল সিন্ডিকেট চক্র। জি টু জি প্লাসের কর্মীরা উচ্চ অভিবাসন ব্যয়ে টাকা তুলতে পারছে না। ভিটেমাটি ও গবাদিপশু বিক্রি এবং চড়া সুদে ঋণের টাকা নিয়ে দশ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় গিয়ে কর্মীরা বিপাকে পড়েছে। জি টু জি প্লাসের কোনো কোনো কর্মী মালয়েশিয়ায় গিয়ে বিগত দশ মাস যাবত বেতন ভাতা ও খাবার পাচ্ছে না।
সংশ্লিষ্ট কোম্পানিতে কাজ না থাকায় প্রায় ২০ জন কর্মী মালয়েশিয়ার মালেক্কা মসজিদ তানহা ওয়ালা সুঙ্গাইবারুস্থ একটি আবদ্ধ রুমে অনাহার-অনিদ্রায় বন্দি দশায় দিন কাটাচ্ছে। উল্লেখিত একটি রুমে প্রায় ৫০ জন কর্মীর জন্য একটি মাত্র টয়লেট। কুয়ালালামপুরস্থ বাংলাদেশ হাই কমিশনের শ্রম সচিব সাইদুল ইসলামের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোনো সুরাহা পাচ্ছে না প্রতারণার শিকার এসব কর্মীরা। আল ইসলাম ওভারসীজ কর্তৃপক্ষ বিগত ১০ মাস আগে কুমিল্লা ও বি-বাড়ীয়া জেলার বেশ কিছু কর্মীর কাছ থেকে জনপ্রতি সাড়ে তিন লাখ টাকা করে নিয়ে মালয়েমিয়ার রিসা বারকোট এসডিএন বিএইচডি’কোম্পানিতে পাঠায়। কিছু দিন কাজ করানোর পর প্রতারক কোম্পানিটি বাংলাদেশী প্রায় ৪০ জন কর্মী বেতন ভাতা ও খাবার সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। প্রতারণার শিকার এসব কর্মীরা কুয়ালালামপুরস্থ বাংলাদেশ হাই কমিশনে গিয়ে শ্রম সচিব সাইদুল ইসলামকে বিষয়টি লিখিতভাবে জানান। শ্রম সচিব তাদের বেতন ভাতা পরিশোধ এবং অন্যত্র কাজের ব্যবস্থার আশ্বাস দিয়ে অদ্যবধি কোনো সহায়তার হাত বাড়ায়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। গতকাল সোমবার মালয়েশিয়া মালেক্কা মসজিদ তানহা ওয়াল সুঙ্গাইবারু থেকে প্রতারণার শিকার বি-বাড়ীয়ার জসিম, কুমিল্লা’র ফারুক, তোতা মিয়া, শামীম , কসবার বশির মিয়া, ফরহাদ, মমিনুল ইসলাম, নাসির , বাগেরহাটের জাহাঙ্গীর, শহিদুল ইসলাম হাওলাদা, নসু মিয়া, ফয়সাল বেগ এসব অভিযোগ তুলে ধরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তারা বলেন, আমরা এক কেজি ডাল বিশ জনে দু’বেলা খেয়ে কোনো মতে বেঁচে আছি। প্রতারক কোম্পানী থেকে বেতন ও খাবার না পেয়ে আরো বিশ জন কর্মী অন্যত্র পালিয়ে গেছে। শামীমের বাবা খোকন মিয়া কুমিল্লা থেকে টেলিফোনে কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, ঋনের টাকা পরিশোধ করতে না পেরে অধিকাংশ সময়ই পালিয়ে থাকতে হচ্ছে। তিনি বলেন, আপনারা একটু প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে লেখুন আমরা আপনাদের জন্য মন ভরে দোয়া করবো। তিনি প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য জোর দাবী জানান। বি-বাড়ীয়ার ফয়সাল বেগের বাবা একরাম হোসেন বেগও গতকাল একই দাবী জানান। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিগত ৯ মাসে তার ছেলে ফয়সাল বেগ মাত্র দশ হাজার টাকা দেশে পাঠিয়েছে।
এদিকে, মালয়েশিয়ায় জি টু জি প্লাসে দশ সিন্ডিকেট চক্রের কর্মী নিয়োগের চলমান প্রক্রিয়া সম্প্রতি স্থগিত ঘোষণা করেছে দেশটি’র নতুন সরকার। ওই চক্রের বিষয়ে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত এই স্থগিতাদেশ বহাল থাকবে। জি টু জি প্লাস প্রক্রিয়ায় ২০১৭ সালের ৮ মার্চ থেকে দশ সিন্ডিকেট চক্র মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাচ্ছে। এতে সিন্ডিকেট চক্র প্রায় ৪ হাজার ২শ’ ১৮ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। আরও অন্তত একলাখ লোক মালয়েশিয়ায় যাওয়ার অপেক্ষায় আছে। উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যাপক কূটনৈতিক উদ্যোগে মালয়েশিয়া জনশক্তির জন্য বাংলাদেশকে তাদের ‘সোর্স কান্ট্রির’ তালিকাভুক্ত করে। ফলে সেবা, উৎপাদন, নির্মাণসহ অন্যান্য খাতেও বাংলাদেশি কর্মী নেয়ার সুযোগ তৈরি হয়।
সম্প্রতি মালয়েয়িশাভিত্তিক একটি ইংরেজী পত্রিকার বিশেষ প্রতিবেদনে তা’ প্রকাশ পেয়েছে।
প্রবাসী এক বাংলাদেশি ব্যবসায়ীর নেতৃত্বে একটি চক্র মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগসাজশে ওই এজেন্সিগুলোকে নিয়ে সিন্ডিকেট করে শ্রমিকদের কাছ থেকে বিগত ১৫ মাসে অন্তত ২০০ কোটি রিঙ্গিত হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ ওঠার পর দেশটির সরকার এই সিদ্ধান্ত নিল।
মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রী এম কুলাসেগারান বলেছেন, “বিগত সরকারের সময়ে মানবসম্পদ আমদানির বিষয়টি পরিচালনা করা হয়েছে ব্যক্তিগত ব্যবসার কায়দায়, যাতে কেবল ব্যক্তি বিশেষই লাভবান হয়।” তিনি বলেন, যেভাবে বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় জনশক্তি নেয়া হচ্ছিল তাতে শ্রমিকদের কাছ থেকে মোটা অংকের বাড়তি অর্থ আদায় করা হচ্ছিল, আর তা যাচ্ছিল দুই দেশের কিছু দালালের পকেটে। “আমরা এ নিয়ে তদন্ত করছি। সমস্যাগুলো দূর করার প্রক্রিয়াও ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা শুরু হয়েছে; আমার বিশ্বাস, শিগগিরই আমরা একটি সমাধান খুঁজে বের করতে পারব।”
প্রবাস জীবন বিভাগে সংবাদ পাঠানোর ঠিকানা
[email protected]
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।