Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শরীয়তপুরে নৌকা তৈরির ধুম

শরীয়তপুর থেকে মো: হাবিবুর রহমান হাবীব | প্রকাশের সময় : ১৪ জুলাই, ২০১৮, ১২:০২ এএম

বর্ষা মৌসুমে কোষা নৌকা পল্লী বাসীর বড়বান্ধবের মত উপকারে আসে। বাড়ির চারিদিকে যখন বর্ষার পানি থৈ-থৈ করে তখন গ্রামাঞ্চলের বেশীর ভাগ মানুষই তাদের পারাপার, কৃষি কাজ, মাছ ধরা, হাট-বাজার করা, গবাদী পশুর খাদ্য সংগ্রহ সহ বিভিন্ন দিকে যাতায়াতের অন্যতম বাহন হিসেবে কোষা নৌকা ব্যবহার করে। এটা দেশের মধ্য অঞ্চল বিশেষ করে শরীয়তপুর জেলার সর্বত্রই আবহমান কাল থেকে চলে আসছে। 

বর্ষার আগমনের সাথে সাথে শরীয়তপুর জেলার বিশেষ কয়েকটি হাট-বাজারে কোষা নৌকা বিক্রির ধুম পরে যায়। সদর উপজেলার বুড়িরহাট ও সুবচনি বাজার, নড়িয়া উপজেলার ভোজেশ্বর বাজার, জাজিরা উপজেলার কাজীর হাট, ভেদরগঞ্জ উপজেলার সখিপুর ও গোসাইরহাট হাটের ইদিলপুর বাজারে বর্ষা মৌসুমে কয়েক হাজার কোষা বিক্রি করা হয়। এর মধ্যে সদরের বুড়িরহাট বাজারের প্রায় ২শত বছরের পুরোনো ঐতিহ্য রয়েছে কোষা নৌকা বিক্রির হাট হিসেবে। এক সময়ে জেলার বাইরে থেকে অনেক লোক বড় বড় ঘাঁসি নৌকা (পাল তোলা মালবাহী নৌকা) ভাড়া করে বুড়িরহাটে আসতো কোষা কিনতে। তারা একেকটি ঘাঁসি নৌকার ভেতরে, ছাদে ও এর সাথে বেধে ৮০-৯০ মাইল দুরে বরিশাল সহ দেশের অনেক এলাকায় কিনে নিয়ে যেত। বুড়িরহাটের সেই ঐতিহ্য এখনো স্বদম্ভে টিকে রয়েছে। এখন বাইরের লোক না আসলেও জেলার অভ্যন্তরে প্রচুর কোষা বিক্রি করে বুড়িরহাটের বিক্রেতারা। পাপরাইল, চন্দনকর, ছয়গাঁও, পাটানিগাঁও আটেরপাড়া, মাকসাহার, ঘোড়ার ঘাট, বিঝারী, ডুবিসায়বর ও ডুবুলদিয়া গ্রামে কাঠ মিস্ত্রিরা বর্ষা শুরু হওয়ার আগে থেকেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করে কোষা তৈরীর জন্য। জৈষ্ঠ মাস থেকে কার্ত্তিক মাস পর্যন্ত মিস্ত্রিরা জীবিকা নির্বাহ করে কোষা গড়িয়ে। জারুল, গোয়ারা, পউয়া ও উড়িয়া আম গাছের কাঠ কোষা তৈরীর সবচেয়ে উপযোগী কাঠ। কোষা নির্মাতারা জানান, বর্তমানে পর্যাপ্ত কাঠ না পাওয়ায় এবং উপযোগী গাছ গুলো প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ায় রেইনট্রি কড়ই, চাম্বুল ইত্যাদি গাছের কাঠ দিয়েই কোষা তৈরী করা হয়।
চন্দনকর গ্রামের কাঠ মিস্ত্রি অশিত কুমার (৪৫) জানান, তারা জৈষ্ঠ মাসের শুরু থেকেই কোষা তৈরীর কাজ করে। একেকটি কোষা তৈরী করতে সময় লাগে ২/৩ দিন। বিক্রি করা যায় ৩/৪ হাজার টাকা। প্রতি মঙ্গলবার বুড়ির হাটে এই কোষা গুলো বিক্রি করা হয়। ডুবিসায়বর গ্রামের কোষা নির্মাতা আঃ কাদের (৬৮) ও রমজান মিয়া (৩৫) জানান, ভালো কাঠ না থাকায় তারা কড়ই ও চাম্বুল কাঠ দিয়ে কোষা তৈরী করছে। তারা বলেন, রাত দিন কাজ করে আমরা ২ জনে ৩/৪টি কোষা নামাতে পারি। একটি কোষা তৈরী করলে ৭০০ টাকা মুজুরী পাওয়া যায়। করই কাঠের প্রতিটি কোষা তৈরীতে খরচ হয় ৩ হাজার থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা। বিক্রি হয় ৪ হাজার থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকা। এই মৌসুমে তারা ৯৪ টি কোষা তৈরী করে অনেক টাকা আয় করেছে। কোষা গুলো স্থানীয় কাজীর হাটে বিক্রি হয়েছে।
স্থানীয় সমাজ সেবক আবদুল মজিদ মাদবর বলেন, বৃটিশ আলম থেকে বুড়ির হাটে কোষা বিক্রি শুরু হয়। এক সময় চাঁদপুর, বরিশাল ও ফরিদপুরের নামা অঞ্চল থেকে পাইকাররা কোষা কিনতে বুড়ির হাট আসতো। এখন ভালো কাঠ পাওয়া যায়না বলে অনেকে কোষা বানানো ছেড়ে দিয়েছে। তবুও বুড়ির হাটকে এখনো কোষা নৌকার হাট বলেই অনেকেই চিনে থাকে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নৌকা


আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ