Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নেছারাবাদে নৌকার হাট

নেছারাবাদ (পিরোজপুর) থেকে মো. হাবিবুল্লাহ | প্রকাশের সময় : ১৩ জুলাই, ২০১৮, ১২:৩৬ এএম

পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলার আটঘরে শতাব্দী ধরে বর্ষা মৌসুমে জলে-ডাঙায় চলে আসছে নৌকার হাট। উপজেলা থেকে প্রায় আট কিলোমিটার পূর্বে আটঘরের খালে ও জলে প্রায় আধা-কিলোমিটারজুড়ে বসে থাকে এ নয়নাভিরাম হাট। এ ঐতিহ্যবাহী নৌ-হাটকে কেন্দ্র করে উপজেলার আটঘর কুড়িয়ানা ও বলদিয়া মোট দু’টি ইউনিয়নের প্রায় ১২টি গ্রামের দেড় সহস্রাধিক মানুষের কর্মসংস্থান ঘটে থাকে। বাংলা জ্যৈষ্ঠ থেকে শুরু করে আশ্বিন চার মাস নৌকা বেচা-বিক্রির ধুম পড়ে যায় হাটে। তখন খালে জলে সমান তালে চলে বাহারি নৌকা বিকি-কিনি।
সপ্তাহে সোম ও শুক্রবার আটঘরের মানপাশা বাজার নিকটবর্তী খালে বসে থাকে এ নৌ সাম্রাজ্য। হাটে বেশির ভাগ নৌকাই আসে বলদিয়ার চামী, একতা ও কলারদোয়ানিয়া গ্রাম থেকে। একসময় সুন্দরি কাঠ দিয়ে এসব নৌকা তৈরি হতো। এখন নানা বাধ্যবাধকতাসহ বিভিন্ন কারণে সুন্দরি কাঠ দুষ্পাপ্র বিধায়, হাটের নৌকাগুলো তৈরি হচ্ছে চাম্বল, রেইনট্রি, মেহগনি, আমড়াসহ কড়াই কাঠ দিয়ে।
প্রতি হাটে প্রায় চার থেকে পাঁচ শতাধিক নৌকি বিক্রি হয় থাকে এখানে। আর লোকজন বিভিন্ন জায়গা থেকে সড়ক ও জলপথের বিভিন্ন যানবাহনে করে একসাথে অনেকটি নৌকা কিনে নিয়ে যাচ্ছে স্ব-স্ব গন্তব্যে। বিল ও চরাঞ্চলের মানুষের জীবন জীবিকার বিভিন্ন কাজে এসব নৌকা ব্যবহৃত হয়ে থাকে। তবে বাংলার আপেলখ্যাত কুড়িয়ানার বিখ্যাত পেয়ারা সংগ্রহ, চাঁই দিয়ে মাছ মারা, গো খাদ্য সংগ্রহ ও অত্র উপজেলার নার্সারী ব্যবসার বিভিন্ন কাজে বেশির ভাগ নৌকা বিক্রি হয়ে থাকে। যে দিকে চোখ যায় কেবল নৌকা আর নৌকা। এক একটি নৌকা এক হাজার ৬০০ টাকা থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়ে থাকে। নৌকা বেঁচা-বিক্রির এমন দৃশ্য কেউ আপন চোখে না দেখলে বিশ্বাসই করবেন না একসাথে এত নৌকার সমগম ঘটতে পারে। গত শুক্রবার সকালে নৌহাট ঘুরে মনে হলো এ যেন এক নৌকার মেলা।
কথা হয় বলদিয়া ইউনিয়নের চামী গ্রাম থেকে আসা নৌকা বিক্রেতা কবির মিয়ার সাথে। তিনি ওইদিন হাটে বিভিন্ন সাইজের ৫০টি নৌকা নিয়ে আসেন। তিনি বলেন, একটি সাতহাতি চাম্বল কাঠের নৌকা এক হাজার ৮০০ থেকে দুই হাজার টাকায় বিক্রি হয়ে থাকে। এ ছাড়া চাম্বল কাঠের একটি বারোহাতি নৌকা চার হাজার ৫০০ থেকে পাঁচ হাজার টাকায় বিক্রি হয়ে থাকে। একটি চার হাজার ৫০০ টাকার নৌকায় তার ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা লাভ হয়ে থাকে। রাস্তার উপরে নৌকার হাটের পাশেই বসেছে বৈঠার পসরা। নৌকার সাথে বৈঠা বিক্রি হয় না বিধায় পাশেই আলাদাভাবে বসে থাকে বৈঠার দোকান। আমইর, আমড়া, গাভ, মেহগনি কাঠের বৈঠা বিক্রি হয় হাঠে। একটি পাঁচ হাত সাইজের গাব কাঠের বৈঠা ২০০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি হয়ে থাকে। নৌকার হাটকে কেন্দ্র করে রাস্তার পাশেই বসে থাকে ছোট ছোট টং দোকান।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ