Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নেছারাবাদে শত বছরের ঐতিহ্যবাহী নৌকার হাট

মো. হাবিবুল্লাহ, নেছারাবাদ (পিরোজপুর) থেকে | প্রকাশের সময় : ৬ জুলাই, ২০১৯, ১২:০৬ এএম

বর্ষা মৌসুম এলেই পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলার আটঘরে জমে উঠে শতবছরের নৌকার হাট। এবারও আটঘরের মানপাশা বাজার সংলগ্ন খাল ও রাস্তার উপরে বসেছে এ অঞ্চলের ঐতিহ্য নৌকার হাট। কিন্তু বছরের চাকা ঘুরলেই হাটের ইজারা মূল্যবৃদ্ধি ও ইজারাদারদের অতিরিক্ত খাজনা আদায়ে মুখ ফিরিয়ে নিতে শুরু করেছেন ব্যবসায়ীরা।

ব্যবসায়ীদের অনেকেই বলেছেন, বছওে শুধুমাত্র বর্ষকালে বসা নৌকার হাটে খাজনার মূল্য কমানোসহ নৌকা বেচাকেনার স্বাভাবিক পরিবেশ গড়ে তোলা জরুরি হয়ে পড়েছে। আর তা করতে পারলে হাটে ব্যবসায় কোন ভাটা আসবে না। তবে ইজারাদাররা দাবি করেন, তারা প্রতি ১০০ টাকায় নয় টাকা করে খাজনা নিচ্ছেন। খাজনার নামে কোন অতিরিক্ত টাকা নিচ্ছেন না। ব্যবসায়ীদের দাবি, যুগ যুগ ধরে চলা ঐতিহ্যবাহী নৌকার হাটকে পর্যটন শিল্পে করতে সরকারি বেসরকারি উদ্যেগের পাশাপাশি ইজারা মূল্য কমানো প্রয়োজন।

জানা গেছে, বংশ-পরস্পরায় এ উপজেলার ছয়টি গ্রামের প্রায় দেড় হাজারের বেশি পরিবার নৌকা ও বৈঠা তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করছে। সপ্তাহে প্রতি শুক্র ও সোমবার বসে নৌকার এ হাট। সরেজমিনে গতকাল শুক্রবার হাটে গিয়ে দেখা যায়, খাল ও রাস্তার দুই দিকে সারি সারি কেবল নৌকা আর বৈঠা। সপ্তাহে দুই দিনের হাটে মেহগনি, চাম্বল, কড়াই ও রেইনট্রি গাছ দিয়ে তৈরী নৌকা দেখার জন্য স্থানীয় ও দূর-দূরান্ত থেকে আসা ব্যবসায়ী আর উৎসুক মানুষের ভিড় লেগেই থাকে। যে দিকে চোখ যায় শুধুই সারিবদ্ধ বিভিন্ন আকারের নৌকা আর নৌকা। কাঠ ও আকারভেদে একেক নৌকার একেক দাম।

চাম্বল কাঠ দিয়ে তৈরী একটি আটহাতি লম্বা নৌকা বিক্রি হয় ১৮০০ থেকে দুই হাজার ২০০ টাকায়। এছাড়া ৯, ১০ ও ১২ হাত লম্বা পর্যন্ত বিভিন্ন ডিজাইনের নৌকা আসে এখানে। ব্যবসায়ীরা হাটে এসে ঘুরে ঘুরে দরদাম করে একসাথে অনেকগুলো নৌকা কিনেন। নৌকার উপর নৌকা সাজিয়ে নসিমন, ভ্যানগাড়ি ও ট্রলারে করে নিয়ে যান দূর-দূরান্তে।
নেছারাবাদ উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার পূর্ব দিকে আটঘর খাল। বর্ষা মৌসুমে এই খালসহ সড়কের প্রায় এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে সরগরম হয়ে ওঠে ঐতিহ্যবাহী নৌকার হাট। বর্ষাকালে পেয়ারা পাড়া, মাছা মারা, গো খাদ্য সংগ্রহ, নার্সারী কাজসহ যাতায়াতের জন্য অপরিহার্য বাহন হচ্ছে নৌকা। তবে বাংলার আপেলখ্যাত কুড়িয়ানার মিষ্টি পেয়ারা, আমড়া ও চাঁই (দোহার) দিয়ে মাছ সংগ্রহের জন্য নৌকাগুলো বেশি বিক্রি হয়ে থাকে। সে জন্য শত বছর ধরে নৌকা তৈরী এ অঞ্চলের মানুষের কাছে বলতে গেলে শিল্প হিসেবে পরিণত হয়েছে।
ইলুহার গ্রাম থেকে আসা নৌকা ব্যবসায়ী মনিরুল ইসলাম বলেন, তিনি ২৫ বছর ধরে এ হাটে একসাথে অনেকগুলো নৌকা নিয়ে আসেন। এক সময় হাটে ধুমধাম বেচাকেনা চলত। এখন আর আগের মত চলে না। নৌকা বানাতে কাঠসহ অন্যান্য জিনিসের মূল্য বৃদ্ধি ও অতিরিক্ত খাজনার জন্য ক্রেতারা কম আসেন।

বিনয়কাঠি থেকে আসা নৌকা ক্রেতা জামাল মিয়া বলেন, তিনি হাট থেকে তিনটি নৌকা কিনতে এসেছেন। কিন্তু প্রতি ১০০ টাকায় ১১ টাকা খাজনায় নৌকার অনেক দাম থাকায় আর কিনবেন না। আগামী সোমবার সপ্তাহের দ্বিতীয় হাটে এসে একটি নৌকা কেনার চেষ্টা করবেন।
নৌকার সাথে বৈঠা দেয়া হয় না। এ জন্যে ক্রেতরা নৌকা কিনে সেটি চালানোর অপরিহার্য বৈঠাও হাট থেকে কেনেন। নৌকার সঙ্গে খালের পাশে রাস্তার উপর বসে বৈঠার পশরা। আমইর, গুলাপ, মেহগনি, রেইনট্রি কাঠ দিয়ে তৈরী এক একটি বৈঠা ৮০ টাকা থেকে শুরু করে ৪০০ টাকা দামে বিক্রি হয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ