উত্তর ঃ ইসলাম ধর্মে দান বা সদাকার গুরুত্ব অপরিসীম। দান করার জন্য ধনী হওয়ার প্রয়োজন নেই, সুন্দর ইচ্ছাই যথেষ্ট। দান শুধু অর্থ বা সম্পদ প্রদানে সীমাবদ্ধ নয়। কারো শুভ কামনা, সুন্দর ব্যবহার, সুপরামর্শ, পথ হারাকে পথ দেখানো, পথ থেকে অনিষ্টকারী বস্তু সরিয়ে ফেলা- এ জাতীয় সকল কর্মই দান। দানের গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে পবিত্র কোরআন এবং হাদিস শরীফের কথাগুলো জেনে নিই।
মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘মুমিনগণ! তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্তুতি যেন তোমাদেরকে আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফেল না করে। যারা এ কারণে গাফেল হয়, তারাই তো ক্ষতিগ্রস্ত। আমি তোমাদেরকে যা দিয়েছি, তা থেকে মৃত্যু আসার আগেই ব্যয় কর। অন্যথায় সে বলবে, হে আমার পালনকর্তা, আমাকে আরও কিছুকাল অবকাশ দিলেন না কেন? তাহলে আমি সদাকা করতাম এবং সৎকর্মীদের অন্তর্ভুক্ত হতাম।’ (সূরা মুনাফিকুন : ৯-১০) ‘আর ব্যয় কর আল্লাহর পথে, তবে নিজের জীবনকে ধ্বংসের মুখোমুখী করো না। আর মানুষের প্রতি অনুগ্রহ কর। আল্লাহ অনুগ্রহকারীদেরকে ভালবাসেন।’ (বাকারাহ : ১৯৫।)
‘যদি তোমরা প্রকাশ্যে দান-খয়রাত কর, তবে তা কতইনা উত্তম। আর যদি দান গোপনে কর এবং অভাবগ্রস্তদের দিয়ে দাও, তবে তা তোমাদের জন্যে আরও উত্তম। আল্লাহ তা’আলা তোমাদের কিছু গোনাহ দূর করে দিবেন। আল্লাহ তোমাদের কাজ কর্মের খুব খবর রাখেন। (সূরা বাকারাহ : ২৭১।) যারা স্বীয় ধন সম্পদ আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে, এরপর ব্যয় করার পর সে অনুগ্রহের কথা প্রকাশ করে না এবং কষ্টও দেয় না, তাদেরই জন্যে তাদের পালনকর্তার কাছে রয়েছে পুরস্কার (সূরা বাকারা : ২৬২) আল্লাহ তাআলা আরো বলেন, শয়তান তোমাদেরকে অভাব অনটনের ভয় দেখায় এবং অশ্লীলতার আদেশ দেয়, আর আল্লাহ তাআলা দান করার বিনিময়ে ক্ষমা করা ও সম্পদ বৃদ্ধি করার ওয়াদা করেন। বস্ততঃ আল্লাহপাক সমৃদ্ধিশালী, সর্বজ্ঞানী। (সুরা বাকারা : ২৬৮)
দান সদাকার গুরুত্ব বুঝাতে গিয়ে রাসুল (দ.) বলেছেন, ‘খেজুরের একটি টুকরা দান করে হলেও তোমরা জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচার চেষ্টা করো।’ (বুখারী ও মুসলিম) হজরত উকবা বিন আমের (রা:) থেকে বর্ণিত। দয়াল নবীজী (দ:) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই দান-ছাদকা কবরের আজাব বন্ধ করে দেয়। আর কিয়ামতের দিন বান্দাহকে আরশের ছায়ার নিচে জায়গা করে দেয়। (তাবরানি ও বায়হাকি) হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা:) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (দ:) বলেন, ‘মানুষের জীবদ্দশায় এক দিরহাম দান করা, তার মৃত্যুর পর এক শত দিরহাম দান করার চেয়ে উত্তম (আবু দাউদ মিশকাত)। হজরত আবু হুরাইরা (রা:) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (দ:) আরো বলেন, ‘দান সম্পদ কমায় না, দান দ্বারা আল্লাহ পাক বান্দার সম্মান বৃদ্ধি ছাড়া কমায় না। কেউ আল্লাহর ওয়াস্তে বিনয় প্রকাশ করলে আল্লাহ তায়ালা তাকে বড় করেন (মুসলিম)।
হজরত আবু হুরাইরা (রা:) থেকে বর্ণিত। রাসূল (সা:) বলেছেন, ‘এমন কোনো দিন যায় না যে দিন দু’জন ফেরেশতা পৃথিবীতে আগমন করেন না, তাদের একজন দানশীল ব্যক্তির জন্য দোয়া করতে থাকেন এবং বলেন, হে আল্লাহ! আপনি দানশীল ব্যক্তিকে উত্তম বদলা দিন। দ্বিতীয় ফেরেশতা কৃপণের বিরুদ্ধে আল্লাহর কাছে বদদোয়া করে বলেন, হে আল্লাহ! কৃপণকে ধ্বংস ও বরবাদ করুন’ (বুখারি-মুসলিম)।
রাসূল (দ:) বলেছেন, ‘দানকারী আল্লাহর নিকটতম, বেহেশতের কাছাকাছি এবং মানুষের ঘনিষ্ঠ হয়ে থাকে, আর দূরে থাকে ভয়াবহ দোজখ থেকে। পাক্ষান্তরে কৃপণ অবস্থান করে আল্লাহ থেকে দূরে, বেহেশতের বিপরীতে এবং মানুষের শুভকামনা থেকে দূরে অথচ দোজখের একান্ত সন্নিকটে। জাহেল দাতা, বখিল আবেদের চেয়ে আল্লাহর কাছে অবশ্যই বেশি প্রিয়।’ (তিরমিজি)
তাই আমাদের সকলের উচিত গরীব- দু:খী, অভাবী, আত্মীয় স্বজন আপনজনদের বেশী দান সদাকা করা। কেননা, দান সদাকায় বালা মুছিবাত বিপদ আপদ দূর হয়। মহান আল্লাহ তায়ালা নূর নবীজি (দ:) এর উসিলায় আমাদের আমল করার তাওফীক দিন।
উত্তর দিচ্ছেনঃ মুফতি মাওলানা মুহাম্মাদ এহসানুল হক মুজাদ্দেদি।