Inqilab Logo

রোববার, ২৩ জুন ২০২৪, ০৯ আষাঢ় ১৪৩১, ১৬ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

মৎস্য সেক্টরে বিপ্লবের স্বপ্ন সুযোগ আছে উদ্যোগ নেই

মিজানুর রহমান তোতা : | প্রকাশের সময় : ১১ জুলাই, ২০১৮, ১২:০০ এএম

ক্রমাগতভাবে দেশের নদ-নদী, খাল-বিল, পুকুর ও জলাশয় প্রায় পানিশূন্য হচ্ছে। নানা জাতের প্রাকৃতিক মাছের দুস্প্রাপ্যতা বাড়ছেই। নিকট অতীতেও হাতের নাগালেই পাওয়া যেত দেশী প্রজাতির সুস্বাদু মাছ আর মাছ। এখন সহজে দেশী মাছের দেখা মেলে না। বেশিরভাগই পাওয়া চাষ করা মাছ। তাতে তেমন স্বাদ নেই। যেহারে জনসংখ্যা বাড়ছে, তাতে অদুর ভবিষতে তাও কঠিন হবে।
অথচ দেশের বিল-বাওড়ে চীন ও ভিয়েতনামের মতো ‘কম্পার্টমেন্টাইলাইজেশন’ পদ্ধতিতে লাগসই ও বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে চাহিদা পূরণসহ মৎস্য সেক্টরে বিপ্লব ঘটানোর অফুরন্ত সুযোগ রয়েছে। কিন্তু সুযোগ কাজে লাগানোর উদ্যোগ নেই। এই তথ্য বিল-বাওড় উন্নয়ন প্রকল্প ও মৎস্য অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল সূত্র এবং সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের।
সূত্র জানায়, চীন ও ভিয়েতনামে প্রতি হেক্টর জলাশয়ে মাছ উৎপাদন হচ্ছে ১০ মেট্রিক টন। আর বাংলাদেশে উৎপাদন হচ্ছে মাত্র ১ মেট্রিক টন। মাঠপর্যায়ের মৎস্য কর্মকর্তারা বলেছেন, লাগসই প্রযুক্তি ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ব্যবহার করে পরিকল্পিতভাবে বিল, বাওড় ও পুকুরসহ জলাশয়ে মাছ চাষ করা হলে বিরাট বিপ্লব হবে। চীন ও ভিয়েতনামের মতো বিশাল সফলতা না আসলেও প্রতি হেক্টর জলাশয়ে ১০ মেট্রিক টনের স্থলে খুব সহজেই ন্যূনতম ৫ মেট্রিক টন উৎপাদন করা সম্ভব।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, বাংলাদেশে জনসংখ্যার অনুপাতে মাছের মোট চাহিদা রয়েছে ৩০ লাখ মেট্রিক টন। সেখানে উৎপাদন হচ্ছে সবমিলিয়ে প্রায় ২৪ লাখ মেট্রিক টন। ঘাটতি রয়েছে মাত্র ৬ লাখ মেট্রিক টন। শুধুমাত্র দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ৬শ’ ৩টি বাওড়ে ব্যবস্থাপনাপনা উন্নত করে পরিকল্পিতভাবে মাছ উৎপাদন করে এই ঘাটতির সিংহভাগই পূরণ করা সম্ভব। কিন্তু যথাযথ উদ্যোগের অভাবে তা হচ্ছে না।
সূত্র জানায়, বিল ও বাওড় ছাড়াও যশোর, খুলনা, মাগুরা, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া ও নড়াইলসহ দেশের বিভিন্নস্থানে ছোট-বড় নদ-নদী এবং অসংখ্য খাল-বিল ও পুকুর রয়েছে। বর্তমানে শুধু দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলেই ৫হাজার ৪শ’ ৮৮হেক্টর জলাশয়ের ৬ শতাধিক বাওড় রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ২৪টি বাওড় বিল ও বাওড় মৎস্য উন্নয়ন এবং ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের আওতাধীন রয়েছে। বাকি বাওড়গুলো বিভিন্ন সময়ে প্রভাবশালীদের তদবিরে নামমাত্র মূল্যে ইজারা দেয়া হয়। বাওড় রক্ষা ও পরিচর্যার অভাবে ওই বাওড়গুলো মাছ উৎপাদনে ক্রমেই অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। এমনকি বাওড়ের জীব-বৈচিত্রও নষ্ট হচ্ছে খুব দ্রæত।
মৎস্য অধিদপ্তর ও বিল ও বাওড় উন্নয়ন প্রকল্প দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ১৯৬০ সালের আগে বিল ও বাওড়গুলোতে কোন ব্যবস্থাপনা ছিল না। এক পর্যায়ে মৎস্য বিভাগের বাওড় প্রকল্পের আওতায় আসে। মাঠপর্যায়ের একজন মৎস্য কর্মকর্তা দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, সম্ভাবনাময় বাওড়গুলোকে মৎস্য অধিদপ্তর ও বিল ও বাওড় উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় এনে ‘কম্পার্টমেন্টাইলাইজেশন’ পদ্ধতিতে মাছ চাষ করা হলে বর্তমানের চেয়ে উৎপাদন অন্তত ৫ গুণ বৃদ্ধি পাবে। ওই পদ্ধতিটি হচ্ছে বৃহৎ জলাশয়ে লোহা বাঁশ দিয়ে ভাগ ভাগ করে ১০ বছরেও কাঁকড়ায় কাটতে পারে না এমন নেট লাগানো। জলাশয়ের প্রতিটা কম্পার্টমেন্টে সর্বোচ্চ ১১ দশমিক ২৮ হেক্টর। পদ্ধতিটাতে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি হয়। এর বাইরে নদ-নদীর গভীর অংশ থেকে অগভীর অংশ বিচ্ছিন্ন হয়ে তৈরী হওয়া বিল-বাওড়গুলো এর আওতায় আনা যেতে পারে।
দেশে সর্বমোট কতটি বিল-বাওড় আছে তা সর্বশেষ জরিপের ভিত্তিতে নির্ণয় করে অতীত থেকে বর্তমান ব্যবস্থাপনা বিশ্লেষণ করে লাগসই প্রযুক্তি ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে মাছ উৎপাদন বৃদ্ধির যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। এই সুযোগ বাস্তবে কাজে লাগানো সম্ভব হলে সারাদেশের যে মাছের ঘাটতি তা পূরণ হবে অনায়াসেই।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মৎস্য


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ