Inqilab Logo

শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

বিপিসিকে সরকারি কোষাগারে ৫ হাজার কোটি টাকা জমা দেয়ার নির্দেশ

গত বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত সরকারের কাছ থেকে নেয়া ঋণের পরিমাণ হচ্ছে ২৪ হাজার ৬০৩ কোটি টাকা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার : | প্রকাশের সময় : ৬ জুলাই, ২০১৮, ৬:০২ পিএম

আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমায় মুনাফায় রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি)। তারপরও সরকারের কাছ থেকে নেয়া ঋণ পরিশোধ করছে না সংস্থাটি। অর্থ মন্ত্রণালয় বলছে বিপিসি নীতিগর্হিত ও সরকারি হিসাব রক্ষার নিয়ম অমান্যকর কাজ করে যাচ্ছে। যা মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। পাশাপশি সরকারের নিকট থেকে গৃহীত ঋণের ন্যূনতম পাঁচ হাজার কোটি টাকা অবিলম্বে সরকারি কোষাগারে পরিশোধ করে তার চালানের কপি অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রেরণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। স¤প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ থেকে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব বরাবর একটি চিঠি পাঠিয়ে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ জানানো হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়, বিপিসি থেকে জ্বালানি তেল আমদানির নিমিত্তে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুক‚লে যথাক্রমে ৩০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ও ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের রাষ্ট্রীয় কাউন্টার-গ্যারান্টি প্রদানের অনুমোদন প্রদানকালে উপস্থাপিত সারসংক্ষেপে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বেশ কিছু অনুশাসন প্রদান করেছেন। ‘এগুলো হচ্ছে-সরকারের নিকট হতে গৃহীত ঋণ পরিশোধ বাবদ নূন্যতম ৫ হাজার কোটি টাকা অবিলম্বে সরকারি কোষাগারে পরিশোধ করে চালানের কপি অর্থ বিভাগে প্রেরণ নিশ্চিত করতে হবে। প্রতি মাসের ৭ তারিখের মধ্যে পূর্ববর্তী মাস পর্যন্ত গৃহীত সাপ্লাইয়ার্স ক্রেডিট বা অন্যান্য স্বল্পমেয়াদি ঋণের নিট পরিমাণ অর্থ বিভাগকে অবহিত করতে হবে। রাষ্ট্রীয় গ্যারান্টির আওতায় এবং অভ্যন্তরীণ ব্যাংক হতে গৃহীত ঋণের আউটস্টান্ডিংয়ের পরিমাণ পৃথকভাবে প্রতি মাসের ৭ তারিখের মধ্যে বিপিসি এবং সংশ্লিষ্ট ব্যাংক বা ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান অর্থ বিভাগকে প্রেরণ করবে। এছাড়া প্রতিমাসের ৭ তারিখের মধ্যে তার পূর্ববর্তী মাস পর্যন্ত বিপিসির নগদ অর্থের স্থিতির প্রতিবেদন অর্থ বিভাগে প্রেরণ করতে হবে।
বিপিসির চেয়ারম্যান মো. আকরাম আলী হোসাইন বলেন, এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত আমরা কোনো মন্ত্রণালয় থেকে কোনো ধরনের চিঠি পাইনি। যদি চিঠি পাই তাহলে আমরা পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেব। অর্থ মন্ত্রণালয় প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা-২০১৮’ প্রতিবেদন অনুযায়ী গত বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত সরকারের কাছ থেকে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের নেয়া ঋণের পরিমাণ হচ্ছে ২৪ হাজার ৬০৩ কোটি টাকা। এদিকে ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে অর্থ মন্ত্রণালয়কে এক চিঠি দিয়ে সরকারের কাছ থেকে ঋণ হিসেবে নেয়া ২৭ হাজার ৪১৯ কোটি ৮১ লাখ টাকা ভর্তুকিতে রূপান্তরের অনুরোধ জানিয়েছিল বিপিসি। তবে গত বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত সময়ে ২ হাজার ৮১৬ কোটি ৮১ লাখ টাকা সরকারের কোষাগারে জমা দেয়ার পর বিপিসি’র ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ২৪ হাজার ৬০৩ কোটি টাকা। এর আগেও বিষয়টি বিবেচনার দু’দফা জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ অনুরোধ জানিয়েছিল। সে সময় বিপিসির ঋণের পরিমাণ ২৬ হাজার ৩৪৯ কোটি ৮১ লাখ টাকা বলা হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে পর্যালোচনা করে দেখা যায়, অর্থ মন্ত্রণালয় ২০০৬ সালের ২১ মে তারিখে এক চিঠির মাধ্যমে সোনালী ব্যাংকের অনুক‚লে বিপিসির জন্য ১ হাজার কোটি টাকার বন্ড ইস্যু করে। একই সঙ্গে উক্ত টাকা বিপিসির বিপরীতে ৪ শতাংশ সুদসহ পরবর্তী ১৫ বছরে পরিশোধযোগ্য উল্লেখ করে ঋণ হিসেবে প্রদান করা হয়। ওই সময়ে সংশ্লিষ্ট চিঠিতে অসাবধানতাবশত দুটি ভুল তথ্য উল্লেখ করায় ১ হাজার ৭০ কোটি টাকার ঋণকে বন্ড হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছিল। সুতরাং উক্ত এক হাজার ৭০ কোটি টাকাসহ বিপিসির মোট ঋণের পরিমাণ হয় ২৭ হাজার ৪১৯ কোটি ৮১ লাখ টাকা।
সূত্র জানায়, ১৯৭৭ সাল থেকে বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করে বিপিসি। এরপর ১৯৭৬-৭৭ থেকে ১৯৮১-৮২ পর্যন্ত কয়েক বছর প্রতিষ্ঠানটি লোকসানের মুখোমুখি হয়। পরবর্তী সময়ে ১৯৮২-৮৩ থেকে ১৯৯৮-৯৯ পর্যন্ত সময়ে লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে বিপিসি। এর মধ্যে শুধু ১৯৯৬-৯৭ সালে লোকসান করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এরপর আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম আকস্মিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং সে অনুযায়ী স্থানীয় বাজারে জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় না করায় বিপিসিকে ক্রমাগত লোকসানের মুখে পড়তে হয়।
সূত্র জানায়, আবার ২০১৩-১৪ অর্থবছর থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমতে থাকায় মুনাফা করছে বিপিসি। উক্ত মুনাফা থেকে প্রতিষ্ঠানটি পর্যায়ক্রমে ৩ হাজার ৮৫ কোটি ৮৭ লাখ টাকা সোনালী, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংকের দেনা পরিশোধ করেছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন পেট্রোবাংলার বকেয়া পাওনা ১ হজার ৭০০ কোটি টাকা, ভ্যাট কর্তৃপক্ষের বকেয়া পাওনা, ৬০৩ কোটি টাকা, রিফাইনারি ২য় ইউনিটের জমি ক্রয়ের জন্য ২৩৫ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। একই সঙ্গে লভ্যাংশ হিসেবে সরকারকে ১ হাজার কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। পাশাপাশি জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ইআরএল ইউনিট-২, ঢাকা-চট্টগ্রাম পাইপলাইন, সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং প্রকল্প, ভারতের নুমালিগত রিফাইনারি থেকে পার্বতীপুর পাইপলাইন স্থাপন, পায়রা বন্দরে নতুন অয়েল রিফাইনারি স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান রাখতে হচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম স্থিতিশীল থাকে না। তাই দেশে জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ৬০ দিনের জ্বালানি তেলের মজুদ ধরে রাখার জন্য বিপিসিকে পাঁচ হাজার কোটি টাকার কার্যকরি মূলধন গঠন করতে হয়। এসব বিবেচনা করে বিপিসিকে ২৭ হাজার ৪১৯ কোটি ৮১ লাখ টাকার ঋণকে ভর্তুকি হিসেবে রূপান্তরের অনুরোধ করেছিল জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সরকারি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ