Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ক্ষমতা ভোগ নয় জনসেবাই আমার লক্ষ্য : শেখ হাসিনা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৫ জুলাই, ২০১৮, ১২:০৬ এএম

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বেসরকারি ননএমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির বিষয়ে দ্রত কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। গতকাল বুধবার জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তর পর্বে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা বলেন। এদিকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আমাদের রাজনীতির লক্ষ্য ক্ষমতায় বসে ক্ষমতা ভোগ করা নয়, জনসেবা করা। দেশকে গড়ে তোলা, দেশের মানুষের কল্যাণ করা।
সংসদে গতকাল ছিল প্রধানমন্ত্রীর নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্ব। সংসদ সদস্যদের বিভিন্ন প্রশ্নের জাবাব দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার দায়িত্বগ্রহণের পর শিক্ষার গুণগতমান উন্নয়নের লক্ষ্যে সারাদেশে ১ হাজার ৬২৪টি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হয়েছে। অবশিষ্ট ননএমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সুনির্দিষ্ট নীতিমালার ভিত্তিতে এমপিওভুক্ত করার জন্য ইতোমধ্যে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (স্কুল ও কলেজ) জনবল কাঠামো এবং এমপিও নীতিমালা ২০১৮ জারি করা হয়েছে। তিনি বলেন, যথাযথ নীতিমালা অনুসরণ করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির (মান্থলি পেমেন্ট অর্ডার) বিষয়ে দ্রæত কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। এ লক্ষ্যে অনলাইন অ্যাপলিকেশন গ্রহণ এবং ব্যবস্থাপনা ও বিধি মতে প্রতিষ্ঠান বাছাইয়ের জন্য পৃথক দুটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, দেশের মোট রপ্তানি আয়ের ৮২ শতাংশ আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে। বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান খাত এটি। আগামী ২০২১ সাল নাগাদ এই খাতের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এ লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে তৈরি পোশাক রপ্তানির ধারা অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে ২০১৫-১৮ মেয়াদের জন্য গৃহীত রপ্তানি-আমদানি নীতির ধারাবাহিকতায় ২০১৮-২০২১ মেয়াদের জন্য অনুরূপ নীতি প্রণয়নের কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।
সরকার দলের এমপি আনোয়ারুল আবেদীন খানের লিখিত প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তৈরি পোশাক খাতের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করা হচ্ছে। তেরি পোশাক রপ্তানির বিদ্যমান বাজার সুসংহত ও স¤প্রসারণ করার লক্ষ্যে নতুন নতুন বাজার অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে ব্রাজিল, মেক্সিকো, দক্ষিণ আফ্রিকা, চিলি এবং রাশিয়াসহ অপরাপর উন্নত দেশে বাণিজ্য প্রতিনিধি দল পাঠানো হচ্ছে। ব্যাকওয়ার্ড ও ফরওয়ার্ড লিংকেজ শিল্প স্থাপনে আর্থিক ও বিভিন্ন ধরণের উৎসাহ প্রদান করা হচ্ছে। বর্তমানে চাকরিতে নেই কিন্তু ভবিষৎতে এ খাতে কাজ করতে যাচ্ছে এমন যুবশ্রেণি এবং এ খাতের কর্মীদের দক্ষতা বাড়াতে প্রশিক্ষণ-নীতিমালা প্রণয়নের কাজ হাতে নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি দ্বিগুন বৃদ্ধি করে ৫ হাজার ৩শ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তাদের মজুরি ও ভাতা নির্ধারণের জন্য জাতীয় মজুরি ও উৎপাদনশীলতা কমিশন-২০১৫’ গঠন করা হয়েছে। এ কমিটির মাধ্যমে অন্যান্য শ্রমিকদের সঙ্গে পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের বেতনও শীঘই পুনঃনির্ধারণ করা হবে।
বগুড়া এমপি মোঃ নুরুল ইসলাম ওমরের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার দেশের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে। বেসরকারি শিক্ষকরাও এর বাইরে নয়। এসব শিক্ষক-কর্মচারিদের কল্যাণে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা বেতন পাচ্ছেন ১০০ ভাগ। স্কুল ও কলেজের শিক্ষকদের সঙ্গে মাদরাসা শিক্ষকদের বেতন ও মর্যাদার সমতা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে এবং শিক্ষা কার্যক্রমে গতিশীলতা ও স^চ্ছতা আনয়নের জন্য ২০১৫ সালের জুলাই থেকে এমপিও কার্যক্রমের বিকেন্দ্রীকরণ ও এবং অনলাইন ভিত্তিক করা হয়েছে। এছাড়া এবতেদায়ী শিক্ষকদের বেতন প্রতি মাসে ৫০০ থেকে বাড়িয়ে ১ হাজার টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। তাছাড়া ২০০৯ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে এ পর্যন্ত দেশের মোট ১৪২টি বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং ৪০টি বেসরকারি কলেজ সরকারি করা হয়েছে। তিনি বলেন, যেসব উপজেলায় কোন সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং কলেজ নেই সেখানে একটি করে মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং একটি কলেজ সরকারিকরণের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ কার্যক্রমের আওতায় আরও ১৭৯টি বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং ২৯৮টি কলেজ সরকারিকরণ কার্যক্রম চলছে।
বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে পুরস্কার বিতরণ
এদিকে গতকাল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রণালয় ও বিভাগ গুলোর ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা রাজনিতিবিদেরা শুধু উন্নয়নের পথ দেখাতে পারি। কিন্তু এই কাজের বাস্তবায়নের দায়িত্ব আপনাদের (সরকারি কর্মকতাদের) ওপরই বর্তায়। আমাদের রাজনীতির লক্ষ্য কিন্তু ক্ষমতায় বসে ক্ষমতা ভোগ করা নয়, জনসেবা করা। দেশকে গড়ে তোলা। দেশের মানুষের কল্যাণ করা।
এ সময় তিনি বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি বাস্তবায়নে সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়ায় বাস্তবায়ন ও মূল্যায়ন বিভাগ, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং কৃষি মন্ত্রণালয়কে সম্মাননা তুলে দেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, যত বাধাই আসুক না কেন, তা অতিক্রম করে সাফল্য অর্জন করা হবে। জন্য প্রয়োজন আত্মবিশ্বাস, দৃঢ়তা ও পরিকল্পনা নেয়ার মতো চিন্তা-ভাবনা। কেবল ক্ষমতা ভোগ করা নয়, জনগণের সেবা করাই আওয়ামী লীগ সরকারের মূল লক্ষ্য। আমি মনে করি, সরকারি কর্মচারীদের দক্ষতা ও দায়বদ্ধতা বৃদ্ধি করা একান্তভাবে প্রয়োজন। কারণ আমরা যদি এই লক্ষ্যটা অর্জন করতে পারি, সমস্ত কাজগুলো বা সরকারি কর্মকান্ডগুলো ভালোভাবে বাস্তবায়ন করতে পারি, দক্ষতার সাথে বাস্তবায়ন করতে পারি, তার সুফল স্থায়ী ও দীর্ঘমেয়াদীভাবে দেশেরমানুষ পাবে। সরকারি কর্মচারীদের দক্ষতা এবং দায়বদ্ধতা বৃদ্ধির মাধ্যমে লক্ষ্য অর্জনের জন্য পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এ ধরণের পারফরমেন্স ম্যানেজমেন্ট ব্যবস্থা চালু রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণের ওপর গুরুত্বারোপ করে ২০৪১ সালের মধ্যে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সরকারি কর্মচারীদের কাছে মাঠ পর্যায়ে প্রাপ্ত অভিজ্ঞতা এবং চিন্তা-ভাবনা কর্মপরিকল্পনায় সন্নিবেশের আহŸান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ২০২১ থেকে ২০৪১ সালের মধ্যে আমরা কেমন বাংলাদেশ দেখতে চাই তা বাস্তবায়নের জন্য পরিকল্পনা প্রণয়ন শুরু করেছি। মাঠ পর্যায়ে কর্মরত আপনাদের সেখানে কোন পরিকল্পনা ও অভিজ্ঞতা যোগ করার থাকলে তা করতে পারেন। সরকারি কর্মকান্ডে দক্ষতা বৃদ্ধি ও গতিশীলতা আনা, সেবার মানোনয়ন এবং প্রতিষ্ঠানের কার্যকারিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বাংলাদেশে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ফলাফলভিত্তিক এই সরকারি কর্মসম্পাদন ব্যবস্থাপনা চালু করা হয়।
প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধি হিসাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব এবং মন্ত্রীর প্রতিনিধি হিসেবে সচিবের মধ্যে বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি একটি সমঝোতা দলিল হিসাবে বিবেচিত হয়। একইভাবে মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবরা দপ্তর ও সংস্থার সঙ্গে এবং দপ্তর ও সংস্থাগুলোর প্রধানরা মাঠ পর্যায়ের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করেন। এই চুক্তিতে মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কৌশলগত উদ্দেশ্যগুলো এবং তা অর্জনের জন্য গৃহীত কার্যক্রম এবং এ কার্যক্রমের ফলাফল পরিমাপের জন্য কর্মসম্পাদন সূচক ও লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা থাকে। অর্থবছর শেষে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে মন্ত্রণালয় ও বিভাগের প্রকৃত অর্জন মূল্যায়ন করা হয়।
সরকারি কর্মকর্তাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে যাচ্ছে এবং অনেক অর্জন আমরা দেখাতে পারছি। ২০১৭ সালে শুদ্ধাচার পুরস্কার প্রদান নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের (সমন্বয় ও সংস্কার) সচিব এন এম জিয়াউল আলম। অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন অর্থমন্ত্রী আবু মাল আবদুল মুহিত, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেক, মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম, মুখ্য সচিব মোঃ নজিবুর রহমান এবং প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ।



 

Show all comments
  • আমিনুল ইসলাম ৫ জুলাই, ২০১৮, ৪:০৫ এএম says : 0
    কথায় নয়, আমরা কাজে দেখতে চাই।
    Total Reply(0) Reply
  • ফাহাদ ৫ জুলাই, ২০১৮, ৪:০৫ এএম says : 1
    কথাগুলো শুনতে খুবই ভালো লাগলো।
    Total Reply(0) Reply
  • মো. মহিউদ্দিন ৫ জুলাই, ২০১৮, ৪:০৬ এএম says : 2
    সুন্দর ও স্পষ্ট ভাষার কথাগুলো বলার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মোবারকবাদ জানাচ্ছি।
    Total Reply(0) Reply
  • Akramul hoque ৫ জুলাই, ২০১৮, ৪:০৭ এএম says : 0
    tahole akbar free and fair election din.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: শেখ হাসিনা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ