মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
থাইল্যান্ডের একটি গুহায় আটকেপড়া ১২ জন কিশোর ফুটবলার এবং তাদের কোচের একটি নতুন ভিডিও বের হয়েছে- যাতে তারা বলছে যে তাদের শারীরিক অবস্থা ভালো আছে। ওই ভিডিওতে তারা এক এক করে নিজেদের পরিচয় দেয়, কখনো কখনো তাদের হাসতে দেখা যায়। তারা আরো জিজ্ঞেস করছিল, খাবার কত তাড়াতাড়ি আসবে। তাদের গা গরম রাখার জন্য ফয়েলের কম্বল দেয়া হয়েছে- ভিডিওতে দেখা যায়, সেটা গায়ে জড়িয়ে তারা বসে আছে। তাদের কারো কারো গায়ে আঁচড় লেগেছিল- একজন সামরিক ডাক্তার তার চিকিৎসা করেছেন। এদিকে শিশুদেরকে স্কুবা ডাইভিং শেখানো হচ্ছে। ডাইভিং করে গুহা থেকে বের হয়ে আসার সময় কীভাবে স্কুবা মাস্কের সাহায্যে শ্বাস-প্রশ্বাস চালাতে হবে তা নিয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। গুহার পানি নিষ্কাশনেরও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে থাই কর্তৃপক্ষ। আগামীকাল শুক্রবার একটি ঝড়ের পূর্বাভাস রয়েছে। আবারও বৃষ্টি শুরু হলে গুহা পুরোপুরি প্লাবিত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছে কর্তৃপক্ষ। আর তার আগেই শিশুদের উদ্ধারের জন্য উদ্ধারকারীদেরকে দ্রæততার সঙ্গে কাজ করার তাগিদ দেয়া হচ্ছে।
গত মঙ্গলবার থাইল্যান্ডের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অনুপং পাওজিন্দা জানান, ১২ ফুটবলার ও তাদের কোচকে গুহার প্রবেশপথে নিয়ে আসার জন্য কাজ চলছে। শুরুতে উদ্ধারকারীরা যতটা সম্ভব পানি কমানোর চেষ্টা করছেন। তারপরও কিছু কিছু জায়গায় আটকা পড়া ফুটবলারদের সাঁতরে আসতে হবে। তাদের প্রত্যেকের সঙ্গে দুইজন করে উদ্ধারকারী থাকলেও সরু পথগুলো দিয়ে তাদেরকে একাই পার হতে হবে।
সামনের সপ্তাহে নতুন করে বৃষ্টিপাত শুরুর আগেই আটকা পড়া ফুটবলারদের বের করে আনাকে জরুরি বলে মনে করছে কর্তৃপক্ষ। উদ্ধারকারী ডুবুরিরা যেন তাদেরকে গুহার বাইরে নিয়ে আসতে পারেন তা নিশ্চিত করতে ওই শিশুদেরকে স্কুবা মাস্ক দিয়ে শ্বাসগ্রহণে অভ্যস্ত করে তুলতে হবে। আর সেদিক বিবেচনায় নিয়ে এরইমধ্যে শিশু ফুটবলারদেরকে স্কুবা মাস্ক ব্যবহারের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
১১ দিন ধরে আটকা পড়ে থাকা শিশুদের চিকিৎসা সহায়তা দিতে গত মঙ্গলবার রাতে তাদের কাছে পৌঁছান এক চিকিৎসক। সারারাত সেখানে কাটিয়েছেন তিনি। একজন নার্স ও চার সেনা সদস্যও তার সঙ্গে যান। চিয়াং রাই প্রদেশের গভর্নর বলেন, ‘আমাদের নিজেদের সন্তানের মতো করেই আমরা ওদের খেয়াল রাখছি।’ কর্তৃপক্ষ বলছে, খাবার ও পানি পাওয়ার পর শিশুদেরকে মানসিক ও শারীরিকভাবে আগের চেয়ে সুস্থ মনে হয়েছে। তবে তাদের সঙ্গে মা-বাবার যোগাযোগ করিয়ে দেওয়া সম্ভব হয়নি।
গত মঙ্গলবার থাই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অনুপং বলেন, ‘যেহেতু আগামী কয়েকদিন বৃষ্টি হবে বলে আভাস রয়েছে, সেক্ষেত্রে উদ্ধার প্রক্রিয়া জোরেশোরে চালাতে হবে। ডাইভিং গিয়ার ব্যবহার করা হবে। যদি পানি বেড়ে যায়, কাজ কঠিন হয়ে পড়বে। আমাদের তার আগেই ওই বাচ্চাদের বের করে আনতে হবে।’
উদ্ধারের পর ফুটবলারদের চিকিৎসা দেওয়ার জন্য চিয়াং রাই প্রাচানুকরোহ হাসপাতাল প্রস্তুত রাখা হয়েছে। জনস্বাস্থ্য বিষয়ক মহাপরিদর্শক থংচাই লের্তিউইলাইরাতানাপং জানান, গুহায় আটকা পড়া ফুটবলাররা ভালো আছেন। তবে তাদের যথাযথ পুষ্টির দরকার। দীর্ঘ সময় ধরে অন্ধকারে থাকার কারণে বাইরে আসার পর আলোর সঙ্গে খাপ খাওয়াতে তাদের সমস্যা হতে পারে। এজন্য তাদের সানগøাস ব্যবহার করতে হতে পারে।
উদ্ধারকারীরা নানা পরিকল্পনার কথা বিবেচনা করছেন, তবে থাই সেনাবাহিনী বলেছে এমনও হতে পারে যে আটকাপড়া দলটিকে উদ্ধার করতে চার মাস পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে। এই কিশোররা যেন তাদের পরিবারের সাথে কথা বলতে পারে সে জন্য গুহায় টেলিফোন লাইন বসানোর চেষ্টা করা হচ্ছে, তবে মঙ্গলবার পর্যন্ত এ চেষ্টা সফল হয়নি। তাদের উদ্ধার করার কোন উপায় এখনো ঠিক হয়নি। উদ্ধারকারীরা এখনো নানা বিকল্প বিবেচনা করছেন। যদি সত্যি তাদের উদ্ধার করতে কয়েক মাস লেগে যায় - তাহলে মাটির প্রায় এক কিলোমিটার নিচে ওই অন্ধকার গুহায় এই বাচ্চারা কিভাবে এত দিন টিকে থাকবে?
আটকাপড়া দলটির কাছে ইতিমধ্যে খাদ্য আর চিকিৎসা পৌঁছে দেবার ব্যবস্থা হয়েছে। কিন্তু তাদের মনের ওপর এই গুহাবন্দী অবস্থার কি প্রভাব পড়বে?
অনেকের হয়তো মনে আছে, ২০১০ সালে চিলিতে একটি খনিতে একদল শ্রমিক আটকা পড়েছিলেন, যাদের প্রায় ৭০ দিন পরে পাহাড়ে সুড়ঙ্গ কেটে উদ্ধার করা হয়েছিল। কিন্তু থাইল্যান্ডের ঘটনাটি তার তুলনায় ভিন্ন কারণ, আটকা পড়াদের একজন বাদে সবাই একেবারেই বাচ্চা ছেলে। এ ক্ষেত্রে নিজেদের মধ্যে মন খুলে কথা বলা এবং পরিবারের সাথে যোগাযোগের সুযোগ তাদের মনোবল বাড়িয়ে দেবে - বলছিলেন লন্ডনে শিশু মনোবিজ্ঞানী ড. আন্দ্রেয়া ডানিজ।
উল্লেখ্য, গত ২৩ জুন থাইল্যান্ডের স্থানীয় সময় বিকাল ১১টা থেকে ১৬ বছর বয়সী ১২ ফুটবলার ও তাদের ২৫ বছর বয়সী কোচ উত্তরের প্রদেশ চিয়াং রাইয়ের ‘থাম লুয়াং নায় নন’ গুহায় প্রবেশ করেন। পরে প্রবল বৃষ্টিতে গুহার প্রধান প্রবেশপথ রুদ্ধ হলে তারা আটকে পড়ে। আটকে পড়া শিশুরা জীবিত আছে বলে সোমবার নিশ্চিত হওয়া গেছে। আটকে পড়া ১২ শিশু ফুটবলারের কেউই সাঁতার জানে না।
এ কথা ভেবেই গুহাটিতে টেলিফোন সংযোগ দেবার ব্যবস্থা করছে থাই কর্তৃপক্ষ। তার আগে পর্যন্ত দুজন করে ডুবুরি দলটিকে সঙ্গ দেবেন। অবরুদ্ধ অবস্থায় একটা বড় চ্যালেঞ্জ হলো আলোর অভাব। গুহাটির ভেতরে দিন ও রাতের পার্থক্য বোঝার মতো আলো নেই, তাই মানুষের দেহ-ঘড়ির ছন্দ তখন নষ্ট হয়ে যায়। এতে যে শুধু ঘুমের ওপর প্রভাব ফেলে তাই নয়, তাদের মানসিক অবস্থা, মলমূত্র ত্যাগের অভ্যাস এবং শরীরের অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গের কাজও বিঘিœত হয়।
তবে যেহেতু তারা একটা দলে আছে তাই হয়তো টিকে থাকার জন্য তাদের মধ্যে একটা ঐক্য গড়ে উঠবে - বলছিলেন আমেরিকার ভার্জিনিয়ার রিচমন্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডোনেলসন আর. ফরসাইথ।
তিনি বলছিলেন, তাদের মধ্যে পরস্পরকে দোষ দেয়া, নৈরাশ্য, ক্রোধ বা নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা দেখা দিতে পারে কিন্তু তাদের একটি দলে খেলার অভিজ্ঞতা তাদের ঐক্যের জন্য সহায়ক হতে পারে। এ কিশোরদের উদ্ধার করার পরেও তাদের মনের ওপর এর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব রয়ে যাবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
বস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব পাবলিক হেল্থের মনোবিজ্ঞানী প্রফেসর স্যান্ড্রো গালিয়া বলছেন, যে শিশুরা এই পর্যায়ের ট্রমা বা মানসিক বিপর্যয়ের শিকার হয় - তাদের পরবর্তীতে বিষণœতা, দুশ্চিন্তা, মুড ডিজঅর্ডার বা হঠাৎ রেগে যাওয়ার মতো বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেবার ঝুঁকি আছে। সূত্র : বিবিসি ও দি গার্ডিয়ান।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।