মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
পাকিস্তানের রাজনৈতিক ব্যবস্থা দেখার একটি পথ হচ্ছে শক্তিশালী হিসেবে গণ্য হতে পারেন এমন নেতা এবং তারা কত বছর ক্ষমতায় থাকতে সক্ষম হয়েছিলেন তা চিহ্নিত করা। আমার হিসেবে এমন নেতার সংখ্যা ১১। পাকিস্তানের ৭১ বছরের ইতিহাসে তারা ৬০ বছর দেশ শাসন করেছেন। মজার ব্যাপার হচ্ছে যে এই ১১ জনের মধ্যে মাত্র ৪ জন সামরিক ব্যক্তি,বাকি ৭ জন বেসামরিক ব্যক্তি। বেসামরিক ব্যক্তিদের মধ্যে ৩ জন হলেন আমলা থেকে রাজনীতিক ও বাকি ৪ জন রাজনীতিক। পাকিস্তানের ইতিহাসে সামরিক বাহিনী ৩৩ বছর ক্ষমতায় ছিল। কথা হচ্ছে, এ হিসাব কেন? পাকিস্তানের রাজনৈতিক ডিএনএ-তে শক্ত মানবদের শাসনের কিসসা গাওয়া? পাকিস্তানে সংঘটিত ঘটনাবলী কতটা উন্নত বিশে^র চিন্তাভাবনার ফল তা দেখা? পাকিস্তান যখন সাধারণ নির্বাচনের পথে অগ্রসরমান তখন এ সব প্রশ্ন গুরুত্বপূর্ণ। খুব সম্ভবত ২০১৮ সালের নির্বাচন ভবিষ্যত ঘটনাবলীর জন্য মঞ্চ তৈরি করবে।
বহুবারই অগণতান্ত্রিক শাসনের পথে পাকিস্তানের যাত্রা হয়েছে জনগণের রাজনৈতিক চিন্তা এবং অথবা বিদেশী শক্তিগুলোর স্বার্থ অনুযায়ী যাদের কাছে কৌশলগত কারণে দেশটি গুরুত্বপূর্ণ। পাকিস্তানের রাজনৈতিক ঘটনাবলীতে বিদেশী চিন্তার প্রভাব প্রদর্শন করতে আমি ইতিহাস থেকে একটি উদাহরণ দিচ্ছি। জেনারেল আইয়ুব খান যখন রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করেন তখন বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষক এ সিদ্ধান্তে পৌঁছেন যে এশিয়া ও আফ্রিকার সদ্য স্বাধীন দেশগুলো শক্ত হাতে শাসন্ প্রয়েজন। যেমন সুইডিশ পন্ডিত গুনার মাইড্রাল তার প্রখ্যাত গ্রন্থ ‘এশিয়ান ড্রামা’তে উদীয়মান দেশগুলোর অব্যাহত পশ্চাৎপদতা ব্যাখ্যা করতে ‘কোমল রাষ্ট্র’ নামে একটি ধারণা সৃষ্টি করেছেন। ১৯৭৪ সালের জানুয়ারিতে সাবেক প্রেসিডেন্ট আইয়ুবের সাথে তার ইসলামাবাদের বাসভবনে কথাবার্তা বলার সময় আমি তাকে জিজ্ঞেস করি যে তার রাজনীতি বিষয়ক চিন্তা সুইডিশ পন্ডিতের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে কিনা। তিনি বলেন, তিনি প্রোিসডেন্ট থাকাকালে তার রাজনৈতিক আত্মজীবনী ‘ফ্রেন্ডস নট মাস্টার’ লেখার সময় তাকে সাহায্য করছিলেন তার সরকারের তথ্য দফতরের প্রধান আলতাফ গওহর। তিনিই তাকে (আইয়ুবকে) মাইড্রালের চিন্তাভাবনা সম্পর্কে জানান।
দেশের রাজনৈতিক অগ্রগতির সে গুরুত্বপূর্ণ দিনগুলোতে কি ধরনের প্রভাব কাজ করছিল? এটা ছিল এমন এক সময় যখন বিশ্¦ রাজনীতি ও সরকার পদ্ধতিতে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন ঘটছিল। বিশ্রে উন্নত ও উন্নয়নশীল উভয় অংশেই এর প্রভাব পড়েছিল। নানা রকম ধারণা বিশে^র নানা জায়গায় ছড়িয়ে পড়ছিল। উদাহরণ স্বরূপ ২৪ জুন তুরস্কের নির্বাচনের কথা বলা যেতে পারে যাতে তুরস্কের জনগণ পার্লামেন্টারি ব্যবস্থা থেকে প্রেসিডেন্সিয়াল পদ্ধতির শাসন ব্যবস্থা কার্যকর করার জন্য এরদোগানকে ভোট দিয়েছে। এটা যে শুধু তুরস্কের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ তা নয়। পাকিস্তানের মত দেশগুলোর উপরও এর প্রভাব পড়তে পারে যে সব দেশএখনো তাদের রাজনৈতিক ব্যবস্থার উন্নয়নে নিয়োজিত। সামান্যই সন্দেহ ্আছে যে যুক্তরাষ্ট্রের ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউরোপের কয়েকটি ধনী দেশের রাজনৈতিক ঘটনাবলীর উপর প্রভাব বিস্তার করেছেন।
যে পন্থায় ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদ ব্যবহার করছেন তা বিভিন্ন মহলে এ ভীতির সৃষ্টি করেছে যে এই অনির্দেশ্য ও বেপরোয়া আমেরিকান নেতা হয়ত দেশকে কর্তৃত¦পরায়ণ শাসনের দিকে ঠেলে হিচ্ছেন। এ বছরে ‘ হাউ ডেমোক্র্যাসি ওয়াচ’ এবং ‘দি পিপল ভার্সেস ডেমোক্র্যাসি’ ধরনের বইয়ের বিরাট চাহিদা দেখা যাচ্ছে। মূলধারার মার্কিন সংবাদপত্রগুলোর বহু কলাম লেখকের পাশাপাশি নীতি সম্প্রদায়ের সদস্যদের মধ্যেও ভীতি দেখা দিয়েছে। যেমন জর্জ বিশ^বিদ্যালয়ের অধ্যাপক জেমস পি. পিলফার ব্রæকিংস ইনস্টিটিউশনের বøগে লিখেছেন যে ‘ব্যাপকভাবে গৃহীত ঘটনার সত্যতা মেনে নিতে ট্রাম্পের অস্বীকৃতি রাজনীাতির ধারাকে ক্ষয়িত করছে এবং তা বহু কর্তৃত্বপরায়ণ শাসকের আচরণের সাথে সঙ্গতিশীল। তিনি আরো লিখেছেন যে রাজনীতি ও নীতি বিষয়ে ট্রাম্পের আত্মপ্রশংসা ও প্রদর্শনমূলক মিথ্যা বক্তব্য গণতন্ত্রের মর্মমূলে আঘাত হেনেেেছ।
জুনের প্রথমে কানাডার কুইবেকে অনুষ্ঠিত জি-৭ এর বৈঠকে ট্রাম্প যে পন্থায় আচরণ করেছেন তা ইউরোপের গণতান্ত্রিক শাসকদের প্রতি তার অবজ্ঞাকে প্রকাশ করেছে। তিনি কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রডোকে দুর্বল ও অসৎ বলে আখ্যায়িত করেন। এটা তিনি করেন যখন তিনি যুক্তরাষ্ট্র-উত্তর কোরিয়া বৈঠকে যোগ দিতে কানাডা থেকে সিঙ্গাপুর যাচ্ছিলেন। তিনি উত্তর কোরিয়ার ডিক্টেটর ৩৩ বছর বয়সী নেতা কিম জং-উনের সাথে তার সাক্ষাতের ব্যাপারে উৎসাহী ছিলেন। ট্রাম্প এ বৈঠকের পর কিমের প্রশংসা করেন। উত্তর কোরিয়ার নেতার প্রতি ট্রাম্পের এ আগ্রহ প্রকাশ তার কর্তৃত্বপরায়ণ মনোভাবের পরিচায়ক।
পাকিস্তানের মত দুর্বল দেশগুলো কি এ প্রবণতা থেকে মুক্তি পাবে ও গণতান্ত্রিক শাসনের দিকে অভিযাত্রা অব্যাহত রাখবে? মালয়েশিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে তারা কিছু শিক্ষা নিতে পারে যারা স্বৈরাচারী শাসন ব্যবস্থা পরিহার করেছে। প্রথম গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে প্রতিষ্ঠান সমূহ। শক্ত মানবের শাসনের ইচ্ছা প্রতিহত করার জন্য একটি স্বাধীন বিচার বিভাগ ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা গুরুত্বপূর্ণ। দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে লাগামহীন দুর্নীতি ও ক্ষমতাশালী এলিটদের আত্মস্বার্থ প্রীতি অন্তর্ভুক্তিমূলক শাসনের জোর প্রয়োজনীয়তা সৃষ্টি করেছে। আর এ বিষয়টি সুশাসনের প্রত্যাশী তরুণদের নিকট বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এ সব কারণে আমি মনে করি পাকিস্তানে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা অব্যাহত থাকবে।
নিবন্ধকার শহিদ জাভেদ বার্কি পাকিস্তানের সাবেক তত্ত¡াবধায়ক সরকারের অর্থমন্ত্রী ও বিশ^ব্যাংকের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।