পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ভোটের বছরে চ্যলেঞ্জ নিয়ে নতুন অর্থবছর শুরু হচ্ছে আজ। জাতীয় সংসদে প্রায় ৫৬ ঘণ্টা আলোচনার পর ভোটের বছরের জন্য চার লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকার বাজেট পাস হয়। গত সাড়ে নয় বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকারের চলতি মেয়াদের শেষ এই বাজেটে স্বাভাবিকভাবেই জনতুষ্টির উদ্যোগ বাড়তি গুরুত্ব পেয়েছে। অর্থনীতিবিদদের মতে, নতুন বাজেট বাস্তবায়নে সরকারকে বেশকিছু জটিল চ্যলেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে। মূল চ্যলেঞ্জগুলোর মধ্যেÑ বাজেট বাস্তবায়ন, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়ন, রাজস্ব আহরণ, বিনিয়োগ বাড়ানো বা উৎসাহিত করা, রফতানি বাড়ানো, ঘাটতি মেটানো, অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ঘাটতি মেটানোর কৌশল, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়ানো, সুশাসন নিশ্চিত করা, ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ফেরানো, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা ইত্যাদি। অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা বাজেট অবাস্তব এবং সংবিধান অনুযায়ী মানুষের চাহিদা মেটানোর চেষ্টা নেই বলে উল্লেখ করেছেন। নতুন বাজেটে মাথাপিছু ২৯ হাজার টাকা খরচের লক্ষ্যমাত্রা কার্যকর হবে আজ থেকে। এই টাকা যোগাড়ে আর্থিক ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে কী কৌশলে এগুবে সরকার, সেই আলোচনাই নানা মহলে। বিশেষজ্ঞ এবং ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজেটের বড় ব্যর্থতাই হলো আয়-ব্যয়ের লক্ষ্য পূরণ না হওয়া। যে ধারাবাহিকতায়ই হাটতে হবে নতুন বছরেও।
প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে সংসদে কিংবা সংসদের বাইরে হয়েছে আলোচনা-সমালোচনা। প্রস্তাব-পরামর্শ এসেছে নানা মহল থেকে। তবে শেষ পর্যন্ত চার লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকার পুরোটাই খরচ করতে চায় সরকার। এর মধ্যে দুই লাখ ৮৫ হাজার কোটিই যাবে অনুন্নয়ন খাত, অর্থাৎ বেতন-ভাতা আর সুদ পরিশোধে। আর উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ এক লাখ আশি হাজার কোটি। যা বিনিয়োগ করে আগামী অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি নেয়ার লক্ষ্য সাত দশমিক আট শতাংশে। বাজেটে ছোট-বড় পরিবর্তন এসেছে বেশ কয়েকটি। যেমন, ব্যাংক খাতে কমানো হলেও বেড়েছে পোশাক খাতের করপোরেট কর। নয় থেকে কমিয়ে পাঁচ ধাপ করা হয়েছে মূল্য সংযোজন করের স্তর। এছাড়া, শুল্ক ব্যবস্থায় পরিবর্তন এসেছে বিভিন্ন পণ্য এবং সেবায়। আর এসব পরিবর্তন এনে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য রাখা হয়েছে তিন লাখ ৩৯ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে এনবিআরকে আদায় করতে হবে দুই লাখ ৯৬ হাজার কোটি। তবে, নতুন বাজেটের আকার বাড়লেও বঞ্চিত থেকে গেছে শিক্ষা-স্বাস্থ্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ খাত। যা ভবিষ্যতে আরো বড় সঙ্কট হয়ে দেখা দেবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
জিডিপি’র সাড়ে একত্রিশ শতাংশে থাকা বিনিয়োগকে নেয়ার লক্ষ্য দেয়া হয়েছে সাড়ে তেত্রিশে। কিন্ত সেজন্য দেয়া হয়নি স্পষ্ট রূপরেখা। এছাড়া, বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণেও নেই কাঠামোগত সংস্কারের উদ্যোগ। যাকে ব্যবসায়ীরা দেখছেন বড় ঘাটতি হিসেবে। রেকর্ড ঘাটতি বাজেট দুশ্চিন্তায় ফেলতে পারে সরকারকে। তাই, পরামর্শ দেয়া হয়েছে দেশীয় উৎস থেকে ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকার।
সাবেক তত্ত¡াবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আকবর আলি খান বলেছেন, বর্তমানে মূল বাজেট অর্থহীন। সম্পূরক বাজেটই আসল বাজেট। একই সঙ্গে বর্তমানে সম্পূরক বাজেট নিয়ে সংসদে আলোচনা হয় না। তাই বাজেট ব্যবস্থায় সংবিধানে যে চাহিদা মেটানোর চেষ্টা থাকে তা নেই। এটা করতে হবে। সংবিধান অনুসারে যে বাজেট পাচ্ছি তা মর্যাদা সম্পন্ন কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন রাখেন তিনি।
আকবর আলি খান বলেন, প্রথম বাজেট থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আমি যে পর্যন্ত ছিলাম প্রত্যেকটা বাজেটের অর্থের উৎস, আয়-ব্যয়ের পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব দেওয়া হত। রাজস্ব কিভাবে অর্জিত হবে তার একটি হিসেবে দেওয়া হত। এরফলে পুরোপুরি না হলেও কাছাকাছি লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হতো। এখন এটা হয়না।
আমার জানামতে, পৃথিবীর কোন দেশের বাজেটে এভাবে অবাস্তব সংখ্যা পেশ করা হয় না। এটা শুধু আয়ের ক্ষেত্রেই নয়; ব্যয়ের ক্ষেত্রেও অবাস্তব বলে উল্লেখ করেন এই অর্থনৈতিক বিশ্লেষক।
বাজেট রাজনীতির ওঠানামার সঙ্গে জড়িত। যখন নির্বাচন হয় তার আগে বাজেটের আকার বড় হয়। যখন সরকার নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় আসে তখন বাজেটের আকার অপেক্ষাকৃত ছোট হয়। সুতরাং বাংলাদেশে এ বছর বড় বাজেট হবে এটা প্রত্যাশিত বলে উল্লেখ করেন আকবর আলি খান।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) অর্থনীতি বিশ্লেষক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেছেন, সরকার বড় বাজেট দিচ্ছে। বাস্তবায়ন করছে। কিন্তু মানুষের আয় বৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থানের দিকে নজড় নেই। তাই এ দিকটায় আরও বেশি নজড় দেওয়া দরকার। তিনি বলেন, জিডিপি প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা সাত দশমিক আট। এটা ইতিবাচক। সাতের উপর প্রবৃদ্ধি কম দেশেরই আছে। তবে এক্ষেত্রে সরকারি বিনিয়োগ প্রবৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে। ধারণা ছিল সরকারি বিনিয়োগ বাড়লে বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়বে। কর্মসংস্থান বাড়বে। মানুষের আয় বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু তা হচ্ছে না। সাম্প্রতিক সময়ে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি হতে দেখছি। কিন্তু মানুষের আয় বৃদ্ধি পাচ্ছে না। বরং কমে যাচ্ছে। সরকারের পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যমতে, সরকারের প্রকৃত আয় কমে যাচ্ছে।
খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, বাজেটে দেশীয় শিল্পখাতে সরকার প্রাধিকার দিয়েছে যা ইতিবাচক। সামগ্রিক ক্ষেত্রে আমাদের যে অবস্থা তাতে শুধু ব্যাংকিং খাতে করপোরেট কর হার কমানোর সুবিধা দেওয়ার যৌক্তিকতা নেই বলে উল্লেখ করেন তিনি।
গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, বিশ্ববাজারে তেলের দাম বৃদ্ধি; ডলারের বিপরীতে টাকা অবমূল্যায়িত। ফলে মুদ্রা সরবরাহজনিত কারণেও এক ধরনের মূল্যস্ফীতির ঘটনা ঘটতে পারে। আগামী দিনে খাদ্য বহির্ভূত মূল্যস্ফীতি হয়তো বাড়বে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন।
অগ্রনী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও অর্থনীতিবিদ ড. জায়েদ বখত বলেন, এটি একটি বড় বাজেট। নিঃসন্দেহে এটি বাস্তবায়ন বড় চ্যলেঞ্জ। রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা প্রতিবছরই ফেল করে। আবার তা সংশোধন করা হয়। এরপরও দেখা যায় আদায় হয় না। এ অবস্থায় এত বড় একটি টার্গেটের রাজস্ব আদায় হবে বড় চ্যালেঞ্জ। এডিপি বাস্তবায়নের সরকার শতভাগ দক্ষ নয়। এটিও প্রতি বছর সংশোধন করা হয়। এডিপি বাস্তবায়ন বাজেটের অন্যতম চ্যলেঞ্জ।
এদিকে নতুন অর্থবছরে মূল্যস্ফীতির চাপে থাকবে দেশ। নির্বাচনকে সামনে রেখে অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে নির্বাচনকেন্দ্রিক প্রকল্প বাস্তবায়নের তাড়া থাকবে সরকারের। এতে বাজারে বাড়বে অর্থের জোগান। এ সময়ে খাদ্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে থাকলেও খাদ্য বহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি বাড়বে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। তারা বলছেন, এ পরিস্থিতিতে সার্বিকভাবে বছরটিতে দেশ থাকবে মূল্যস্ফীতির চাপে।
বিদায়ী অর্থবছরের (২০১৭-১৮) চেয়ে দশমিক শূন্য এক শতাংশ বাড়িয়ে নতুন অর্থবছরের (২০১৮-১৯) বাজেটে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে পাঁচ দশমিক ছয় শতাংশ। শেষ হতে যাওয়া অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা ধরে রাখা সম্ভব হয়নি মূল্যস্ফীতির পারদ। হাওরে আকস্মিক বন্যায় গত বছরের বোরো মৌসুমে যে ক্ষতি হয়েছিল তা পুষিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি। চলতি মৌসুমে বোরোর বাম্পার ফলন হলেও আশানুরূপ কমেনি চালের দাম। আবার চাল আমদানিতে যে শুল্ক কমানো হয়েছিল, নতুন অর্থবছরে তা নেওয়া হয়েছে আগের অবস্থায়। এসব বিষয় নিয়েও মূল্যস্ফীতি সম্পর্কে আশঙ্কা আছে বিশ্লেষকদের।
বর্তমানে মূল্যস্ফীতি প্রত্যাশিত পর্যায়েই রয়েছে জানিয়ে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ও অর্থনীতিবিদ ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, আশঙ্কাটা হচ্ছে, সামনে নির্বাচনের সময়ে লেনদেন ও টাকা-পয়সার চাপ বেড়ে যেতে পারে। নতুন বাজেটে অনেক প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে, যার অনেকগুলোই অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে বাস্তবায়নের চেষ্টা করা হবে। সব মিলিয়ে টাকা পয়সার লেনদেন বাড়লে মূল্যস্ফীতির ওপর একটি চাপ পড়ে এবং তা বাড়ার প্রবণতা থাকে। তার মতে, বর্তমানের মূল্যস্ফীতি নিয়ে ভাবনার তেমন কিছু নেই। বরং আগামী ছয় মাস কিভাবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়, তা নিয়েই ভাবতে হবে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, এর আগে ২০১২-১৩ ও ২০১৩-১৪ অর্থবছরে (নির্বাচনের বছর) লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়নি।
নতুন বাজেটে উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে এক লাখ ৭৯ হাজার ৬৬৯ কোটি টাকা। আর পরিচালন ব্যয় ধরা হয়েছে দুই লাখ ৮৪ হাজার ৯০৪ কোটি টাকা। এই বাজেটে সামগ্রিক ঘাটতি দেখানো হয়েছে এক লাখ ২৫ হাজার ২৯৩ কোটি টাকা। ঘাটতির এই পরিমাণ মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) চার দশমিক নয় শতাংশ। এই ঘাটতির মধ্যে চার হাজার ৫১ কোটি টাকা বৈদেশিক অনুদান থেকে মেটানোর আশার কথা বলেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। ওই অনুদান পাওয়া গেলে ঘাটতি থাকবে এক লাখ ২১ হাজার ২৪২ কোটি টাকা, যা জিডিপির চার দশমিক সাত শতাংশ। গত অর্থবছরের ঘোষিত বাজেটের চেয়ে ১৬ শতাংশ ব্যয় বাড়িয়ে নতুন অর্থবছরের ব্যয়ের ফর্দ তৈরি করেছেন মুহিত, যা বিদায়ী বছরের সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ২৫ শতাংশ বেশি। এবারের বাজেট নিয়ে বড় কোনো ক্ষোভ-বিক্ষোভ হয়নি। তবে ব্যাংক খাতের দুরবস্থা নিয়ে নিজ দলের সংসদ সদস্যসহ জাতীয় পার্টির সাংসদদের সমালোচনার মুখে পড়তে হয় অর্থমন্ত্রীকে। ####
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।