পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
খুলনা ও গাজীপুরের মতো রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেট সিটি করপোরেশনেও প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হবে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এই তিন সিটিতেই সর্বশেষ প্রতিদ্ব›দ্বীতায় অবতীর্ণ হবে বড় দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। তাই অন্য দুই সিটির মতো রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেটেও জয়ের ধারা অব্যাহত রাখতে চায় ক্ষমতাসীন দলটি। আর নতুন মডেলের (বিএনপির অভিযোগ ভোট কারচুপির নতুন কৌশল) নির্বাচনী কৌশলের কাছে পরাজিত হলেও আন্দোলনের অংশ হিসেবে লড়াই চালিয়ে যেতে প্রার্থী দিয়েছে বিএনপি। প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনের যৌথ সহযোগিতায় বিএনপির জয় ছিনিয়ে নিয়ে আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন দলটির শীর্ষ নেতারা।
আগামী ৩০ জুলাই এসব সিটিতে নির্বাচন হবে। ইতোমধ্যে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ ও জমাও দিয়েছেন আগ্রহী প্রার্থীরা। মনোনয়ন প্রত্যাহার করা যাবে ৯ জুলাই পর্যন্ত। প্রধান দুই রাজনৈতিক দল তাদের প্রার্থীও ঘোষণা করেছে। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে রাজশাহীতে এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, সিলেটে বদরউদ্দিন আহমদ কামরান ও বরিশালে সাদিক আবদুল্লাহ। বিএনপির প্রার্থী করা হয়েছে রাজশাহীতে বর্তমান মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, বরিশালে মজিবর রহমান সারোয়ার ও সিলেটে বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।
জাতীয় নির্বাচনের আগে এই নির্বাচন নির্বাচন কমিশনের জন্য অস্বস্তি এড়ানোর বড় চ্যালেঞ্জ। খুলনা ও গাজীপুরের নির্বাচনী মডেল থেকে বের হয়ে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভোট আয়োজন করতে না পারলে এই ইসির অধীনে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়বে। আসন্ন জাতীয় নির্বাচন করতে বর্তমান ইসির সক্ষমতা আছে কি-না তা প্রমাণে খুলনা-গাজীপুরের ব্যর্থতার পর এই নির্বাচনের নিরপেক্ষতাকে গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ মনে করছে সারাদেশের মানুষ। আর তাই এই নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে থাকবে দেশের ১৬ কোটি মানুষ, ঢাকায় কর্মরত বিদেশি কূটনীতিক, দাতাদেশ ও সংস্থার প্রতিনিধি এবং দেশি-বিদেশী পর্যবেক্ষকগণ।
দায়িত্ব গ্রহণের পর ২০১৭ সালের মধ্য জুলাইয়ে একাদশ জাতীয় সংসদের নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা করে কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন। ইতোমধ্যেই ডিসেম্বরে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং অক্টোবর মাসে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার বার্তা দেয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশন সে লক্ষ্যে এগিয়েও চলছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত ইসি জনগণের আস্থা অর্জন করতে পারেনি। এর মধ্যে খুলনা ও গাজীপুর নির্বাচন নিয়ে ব্যাপক সমালোচিত ও বিতর্কিত হয়েছে কমিশন। খুলনার পর গাজীপুর সিটিতে সরকারি দলের প্রার্থীর আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগের বিষয়েও কোন সুরাহা করতে পারেননি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকেই এই তিন সিটিতে নির্বাচনী হাওয়া বইছে। প্রার্থীরা ভোটারদের কাছে যাওয়া শুরু করেছেন। ভোট চাচ্ছেন দলীয় নেতাকর্মীরাও। বিভিন্ন এলাকায় শুরু হয়েছে নির্বাচনী বৈঠকও। প্রার্থীরা আশ্বাস নির্বাচিত হলে কি করবেন দেয়া হচ্ছে সেই আশ্বাসও। মনোনয়ন দাখিল পর তিন সিটিতেই নির্বাচনী অফিস চালু করেছে আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা। ঝুঁলছে ছবিসহ পোস্টার ও ব্যানারও। যদিও প্রতীক বরাদ্দের আগে প্রচারণায় নিষেধাজ্ঞা আছে কমিশনের পক্ষ থেকে। কিন্তু এসব নীতিমালাকে আমলে নিচ্ছেনা অনেক প্রার্থীই। তবে খুলনা ও গাজীপুরের নির্বাচনের পর ভোটারদের মধ্যে নেই কোন নির্বাচনী উত্তেজনা বা আগ্রহ। আগের দুই সিটি করপোরেশনের মতো তারাও ভোট দিতে পারবেন কিনা? পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে কেন্দ্রে যেতে পারবেন কিনা তা নিয়ে আছে সংশয়।
যদিও খুলনা ও গাজীপুরে জয়লাভ করে অনেকটা উৎফুল্ল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। অন্যদিকে পরাজিত হলেও খুলনা ও গাজীপুরের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল ও নির্বাচন কমিশনের বিতর্কিত ভূমিকা নিয়ে-দেশে বিদেশে সমালোচনাকেই বড় অর্জন হিসেবে দেখছে বিএনপি। উভয় (খুলনা-গাজীপুর) সিটি নির্বাচনে ভোট কারচুপি, ব্যালট ছিনতাই, এজেন্ট বের করে দেয়া, প্রচারণায় বাঁধা, প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনের পক্ষপাতিত্ব, নেতাকর্মীদের গ্রেফতার এবং ভয়-ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগ করলেও সর্বশেষ বড় স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীল বলেন, ভোট কারচুপির এরকম ঘটনার পরও রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ‘আন্দোলনের অংশ’ হিসেবে অংশ নিচ্ছি। তিনি বলেন, সরকারের নিলর্জ্জ গণবিরোধী চরিত্র উন্মোচনের জন্য ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে অংশ নিচ্ছি আন্দোলনের অংশ হিসেবে। আসন্ন বরিশাল, রাজশাহী ও সিলেট সিটি নির্বাচনে অংশগ্রহনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি একই কারণে। এই জনবিচ্ছিন্ন সরকাররের প্রকৃত চেহারা উন্মোচন, নির্বাচন কমিশনের অযোগ্যতা ও পক্ষপাতিত্ব প্রমাণিত হচ্ছে এই নির্বাচনগুলোর মধ্য দিয়ে।
প্রায় দেড় মাসের ব্যবধানে খুলনা ও গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো। উভয় সিটিতেই বিএনপির প্রার্থীকে পরাজিত করে জয়লাভ করেছে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। দুটি নির্বাচনই শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সম্পন্ন হতে দেখেছে দেশের মানুষ। তবে সংঘর্ষ ও কেন্দ্র দখলের মতো চিরায়ত চিত্র দেখা না গেলেও নতুন মডেলে ভোট কারচুপি, জাল ভোট প্রদান, প্রতিপক্ষের এজেন্ট শূণ্য কেন্দ্রে ইচ্ছেমতো সিল মারার অভিযোগ করেছে পর্যবেক্ষক সংস্থা ও দেশি-বিদেশী বিভিন্ন সংস্থা-প্রতিষ্ঠান। তা নিয়ে প্রকাশ্যে কথাও বলেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট, ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রæপ (ইডবিøউজি) সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান।
খুলনার পর গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অনিয়মের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট। বৃহস্পতিবার এক সভায় বার্নিকাট বলেন, গাজীপুরে ভোটারদের ভোট দিতে বাধা দেওয়া হয়েছে। আগামী স্থানীয় সরকার নির্বাচনের আগেই সরকার এসব বিষয়ের সমাধান করবে বলে তারা আশা করছেন। বার্নিকাট বলেন, গাজীপুর নির্বাচনে পোলিং এজেন্টদের আটক করা হয়েছে অথবা তাদের কেন্দ্রে যেতে বাধা দেওয়া হয়েছে। জনগণকে ভোট দিতে যাওয়ার সময় বাধা দেওয়া হয়েছে, অথবা বলা হয়েছে একটি নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে ভোট দেওয়ার জন্য। অনেকে আবার ভোট দিতে গিয়ে দেখেছে তাদের ভোট আগেই দিয়ে দেওয়া হয়েছে অথবা তাদের সামনেই জাল ভোট দেওয়া হয়েছে।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ২৮টি সংগঠনের প্ল্যাটফর্ম ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রæপ (ইডবিøউজি) পর্যবেক্ষণ করেছে। নির্বাচনে তারা ১৫৯টি নির্বাচনি অনিয়মের ঘটনা পর্যবেক্ষণ করেছে। সংস্থার পর্যবেক্ষকরা যেসব ভোটকেন্দ্র পর্যবেক্ষণ করেছেন সেগুলোতে ৪৬ দশমিক ৫ শতাংশ কেন্দ্রে অনিয়ম দেখেছে। জোর করে ব্যালট পেপারে সিল মারা, ভোটকেন্দ্রের ৪০০ গজের মধ্যে নির্বাচনি প্রচারণা চালানো এবং ভোটকেন্দ্রের ভেতরে অননুমোদিত ব্যক্তির অবস্থান, এসব অনিয়মের বেশিরভাগই দুপুরের পর সংঘটিত হয়েছে।
যদিও
এসব নির্বাচনকে বিএনপির পক্ষ থেকে জাতীয় নির্বাচনের এসিড টেস্ট ও নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সক্ষমতার পরিচায়ক উল্লেখ করা হলেও ইসির ব্যর্থতায় দেখছে দলটি। বিশেষ করে নির্বাচন নিয়ে একপক্ষীয় অবস্থান অন্য পক্ষের অভিযোগের কোন সুরাহা না করার কারণে সাধারণ ভোটারদের মধ্যেও ইসির অবস্থান নিয়ে সন্দেহ-সংশয় তৈরি হয়েছে। এজন্য নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগও দাবি করেছে বিএনপি। জাতীয় নির্বাচনের আগে ইসির জন্য আরও তিনটি সিটি করপোরেশনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে। এসব নির্বাচনই জাতীয় নির্বাচনের গতিবিধি ঠিক করে দেবে বলে দলটির নীতি নির্ধারকরা মনে করেন।
তিন সিটি নির্বাচনের ওপর জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেয়া না নেয়া নির্ভর করছে বলেও জানিয়ে দিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। তিনি বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা আমাদের অনেক পুরনো সিদ্ধান্ত। এখন প্রশ্ন হলো, আপনারা ওই তিন সিটি নির্বাচনে কেন অংশগ্রহণ করছেন? এর উত্তর একটাই- আমরা বারবার প্রমাণ করতে চাই এবং এটা হবে শেষ পরীক্ষা এই সরকার এবং নির্বাচন কমিশনের জন্য। দলীয় সরকারের অধীনে যে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হয় না সেটা আমরা জাতির কাছে বারবার প্রমাণিত করছি। এটা প্রমাণ করার জন্য নির্বাচনগুলোতে আমরা অংশগ্রহণ করছি।
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার আবার প্রমাণ করলো তারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেনা। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা কুক্ষিগত করার জন্য স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও নির্লজ্জভাবে একের পর এক নির্বাচনে ভোট ডাকাতি করে সকল নির্বাচনী ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করছে। খুলনায় নতুন কৌশলে ভোট ডাকাতি করে তারই ধারাবাহিকতায় গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ফলাফল নিজেদের পক্ষে নিয়েছে। তিনি বলেন, সরকার নির্বাচন কমিশনের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় গাজীপুরের নির্বাচনে আর এক কলংকময় অধ্যয় সংযোজন করলো।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।