Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

হালদা বাঁচাতে সুপারিশ মরছে ২০ জাতের মাছ

চট্টগ্রামে সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা

চট্টগ্রাম ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ৩০ জুন, ২০১৮, ১২:০২ এএম

চট্টগ্রাম ব্যুরো : এশিয়ায় মিঠাপানির বড় জাতের মাছের একমাত্র প্রাকৃতিক প্রজননক্ষেত্র ও মা-মাছের ডিম সংগ্রহের জন্য অনন্য ঐতিহ্য-সম্পদ হালদা নদীতে সাম্প্রতিক ভয়াবহ দূষণে অন্তত ২০ প্রজাতির মাছ মারা গেছে। এরমধ্যে ব্যাপক হারে মারা পড়ে ডিম ও রেণু-পোনার উৎস মা-মাছ। রুই, কাতলা, মৃগেল, কালিবাউশ এই চারটি প্রধান জাতের মাছ ছাড়াও আইড়, বামোস, চিংড়ি, চেউয়া, কুচিয়া, বুরগুনিসহ হরেক প্রজাতির মাছ ও জলজ প্রাণী মরে ভেসে ওঠে। হালদার তীরে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা কল-কারখানা, পিকিং পাওয়ারসহ বিভিন্ন প্ল্যান্ট, ট্যানারি, পোল্ট্রি ফার্মের বিষাক্ত বর্জ্য ও বিভিন্ন ধরনের ময়লা-আবর্জনার দূষণ ঘটে। এতে করে নদীর পানি স্বাভাবিক অক্সিজেন প্রায় হারিয়ে ফেলে এবং বিষাক্ত অ্যামোনিয়া ভয়াবহ মাত্রায় বৃদ্ধি পায়। এ কারণে হালদায় মাছ মারা যায়।
গতকাল (শুক্রবার) এক সংবাদ সম্মেলনে উপরোক্ত তথ্য তুলে ধরেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রণিবিদ্যা বিভাগের হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির কো-অর্ডিনেটর প্রফেসর ড. মনজুরুল কিবরীয়া। হালদা নদী রক্ষা কমিটির উদ্যোগে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত এ সংবাদ সম্মেলনে হালদায় সা¤প্রতিক সময়ের ভয়াবহ দূষণ বিপর্যয়, কারণগুলো চিহ্নিত এবং নদী রক্ষার উপায় সম্পর্কে অভিমত ব্যক্ত করা হয়।
এতে কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, সম্প্রতি পাহড়ি ঢল ও বন্যায় রাশি রাশি বর্জ্য ও আবর্জনা নদী, এর সাথে সংযুক্ত খাল-ছরা, বিলে, আশপাশের বসতিতে ছড়িয়ে পড়ে। এ কারণে পুকুরের মাছ মরছে, ফল-ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। নদীর বিভিন্ন অংশের পানির নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করে দেখা যায়, পানিতে স্বাভাবিক দ্রবীভূত অক্সিজেনের মাত্রা যেখানে ৫ মিলিগ্রাম (লিটারপ্রতি) থাকার কথা থাকলেও পাওয়া যায় শূন্য দশমিক ২১ থেকে এক দশমিক শূন্য মিলিগ্রাম পর্যন্ত। নদীর তলদেশে অক্সিজেনের হার ছিল আরও কম। ফলে তলদেশের মাছ বেশিহারে মারা গেছে। এ ধরনের প্রায় অক্সিজেন-শূণ্য পানিতে মাছসহ জলজ প্রাণিগুলোর পক্ষে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়।
হালদা গবেষক ও হালদা নদী রক্ষা কমিটির সভাপতি ড. মনজুরুল কিবরীয়া বলেন, নানামুখী দূষণের মাঝেও এ বছর হালদা নদীতে মা-মাছেরা রেকর্ড হারে ডিম ছাড়ে (২২ হাজার ৬৮০ কেজি)। অথচ এর মাত্র তিন মাসের মাথায় দূষণের এই ভয়াবহ বিপর্যয়ে হালদা নিয়ে জনমনে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি দখল-দূষণ থেকে হালদাকে রক্ষায় ১১ দফা সুপারিশ তুলে ধরেন। এরমধ্যে রয়েছে- হাটহাজারী পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্টসহ অক্সিজেন থেকে কুলগাঁও পর্যন্ত শিল্প, কল-কারখানায় ইটিপি স্থাপন বাধ্যতামূলক করা, এশিয়ান পেপার মিলসহ অন্যান্য কারখানায় ইটিপি স্থাপন ও ব্যবহারে বাধ্য করা, হাটহাজারীর নন্দীর হাটের ‘মরা ছড়া’ খালের বর্জ্য ডাম্পিং স্থায়ীভাবে বন্ধ করা, বিক্ষিপ্তভাবে গড়ে ওঠা অবৈধ পোল্ট্রি খামারগুলোর উৎস থেকে দূষণ রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) অনন্যা আবাসিক এলাকার ভরাট করে দেয়া বামনশাহী খাল পুনঃখনন করে আগের অবস্থানে ফিরিয়ে আনা, অনন্যা আবাসিকের মাস্টার ড্রেনেজ সিস্টেমকে বামনশাহী খাল ও কুয়াইশ খাল থেকে বিচ্ছিন্ন করা, অনন্যা আবাসিক এলাকার বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় এসটিবি স্থাপন, শিকারপুর ও মাদার্শা এলাকার ছোট খাল ও ছড়াগুলো খনন করে পানির প্রবাহকে বাধামুক্ত করা, হালদাকে পরিবেশগত বিপন্ন এলাকা (ইকোলজিক্যালি ক্রিটিক্যাল এরিয়া-ইসিএ) ও ‘জাতীয় নদী’ ঘোষণা এবং হালদা নদী ব্যবস্থাপনায় সমন্বয়ের জন্য হালদা নদী কমিশন গঠন করা।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কমিটির সহ-সভাপতি চৌধুরী ফরিদ, সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী, চবি শিক্ষক আমেনা বেগম এবং হালদার কয়েক জন মৎস্যজীবী ও ডিম সংগ্রহকারী।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: হালদা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ