পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
০ রাজশাহী ও চাঁপাইয়ে রফতানির অক্ষোয় ৫ হাজার মেট্রিক টন আম
বিশ্ব বাজারে বাংলাদেশের সুস্বাদু আম গোপালভোগ, ক্ষিরসাপাতি, ল্যাংড়া, আ¤্রপালির চাহিদা বাড়ছে। ব্যবসা করার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে আমের বাগানের পরিধি বেড়ে উৎপাদনে রীতিমত বিপ্লব ঘটছে। আম উৎপাদনকারী দেশ হিসাবে তিন ধাপ এগিয়ে সপ্তমে আছে বাংলাদেশ। পাঁচ বছর আগে ১০ নম্বরে ছিল। বছরের চাকা ঘুরলেই আম চাষের জমির পরিমাণ বাড়ছে। উৎপাদনে যোগ হচ্ছে বাড়তি পঞ্চাশ হাজার মেট্রিক টন। বর্তমানে প্রায় এক লাখ হেক্টর জমিতে আম চাষ হচ্ছে। আর উৎপাদন ১৪ লাখ টন হতে পারে। আমের বাজারের ব্যাপ্তি প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকা। এ হিসাব জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেদনে দেখা যায়।
বাংলাদেশে যখন আম পাকে তখন বিশ্ব বাজারে অপর কোনো দেশের আম পাওয়া যায় না। অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে রফতানিযোগ্য আমের পরিমাণ পাঁচ হাজার মেট্রিক টন। বিদেশী ক্রেতাদের চাহিদার দিকে লক্ষ্য রেখে আম রফতানির স্বপ্ন দেখছেন উৎপাদকরা। সাধারণ আম চাষের পাশপাশি যোগ হয়েছে ফ্রুট ব্যাগিং আম এবং এটি উৎপাদনে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। ব্যাগিং এর কারনে আমের গুণগতমান আকর্ষণীয় রঙ সবার মন কাড়ছে। শতভাগ বিষ মুক্ত বলে এই আমের প্রতি দেশ-বিদেশের ভোক্তাদের আসক্তি বেশি।
উৎপাদকদের স্বপ্ন তাদের আম বিদেশে যাবে এবং আসবে বৈদেশিক মুদ্রা। এমন স্বপ্ন নিয়ে সবাই যখন সামনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে, ঠিক তখন কৃষি ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের উদাসীনতা আর মহল বিশেষের অপতৎপরতায় আম রফতানির সম্ভাবনাকে বাধাগ্রস্ত করছে। গত দুই বছর ধরে এমন অবস্থা চললেও এবার দুই হাজার মেট্রিক টন আম রফতানির সম্ভাবনা ছিল। এ পর্যন্ত ১০০ টনও রফতানি হয়নি। জানা গেছে, অপরিপক্ক আম ইতালী ও সুইডেনসহ কয়েকটি দেশে পাঠানোর ফলে পচে যায়। ফলে বিদেশী ক্রেতারা হতাশ ও ক্ষুব্ধ। তারা বাংলাদেশের আম নিতে অপরাগতা প্রকাশ করেছে।
গত মে মাসের মাঝামাঝি সাতক্ষীরা থেকে প্রায় ৩০ টন আম বিদেশে পাঠানোর সময় প্রতারণা আশ্রয় নেয়া হয়। অভিযোগ রয়েছে, ওই আম প্যাকেজিংয়ে ব্যবহার করা হয় রাজশাহীর সুস্বাদু আম বলে। আম পরিপক্ক হওয়ার আগে পাঠানো হয় বিদেশে। এমন প্রতারণায় হতবাক ও ক্ষুব্ধ রাজশাহী অঞ্চলের আম চাষীরা। এসব আম ছিল নন ব্যাগিং। এজন্য তারা দায়ি করছেন উদ্ভিদ সংগ নিরোধ উইংকে। এরা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের একটি শাখা। আমসহ কৃষি পণ্য বিদেশে পাঠানোর আগে তারা যাচাই-বাছাই করে থাকে। প্রশ্ন উঠেছে তারপরও কিভাবে অপরিপক্ক আম ইউরোপের বাজারে গেল?
রাজশাহীর অ্যাগ্রো ফুড প্রডিউসার সোসাইটির আহŸায়ক আনোয়ারুল হক বলেন, এটি উদ্ভিদ সংগ নিরোধ বিভাগের ষড়যন্ত্র। আর ফ্রুট ব্যাগিং আমের ব্যাপারে তাদের উদাসীনতা বালাইনাশক কোম্পানিগুলোর সাথে যোগসাজশের ফল। এ ষড়যন্ত্র নতুন নয়। গত বছর আম রফতানি নিয়ে ষড়যন্ত্রের অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্তে উদ্ভিদ সংগ নিরোধ উইংয়ের অবহেলার অভিযোগ প্রমানিত হয়।
তদন্ত কমিটির সুপারিশের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল, ব্যাগিং পদ্ধতিতে আম চাষের সুবিধা বিবেচনায় রফতানির পাশাপাশি দেশের চাহিদা মোটাতে সকল ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নিতে হবে। ইউরোপিয় ইউনিয়নসহ বৈদেশিক বাজারে আম রফতানির ক্ষেত্রে ব্যাগিং পদ্ধতিতে উৎপাদিত আম অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গ্রহণ করতে হবে। রফতানিকারক ও নির্বাচিত আম চাষীদের মাঝে চুক্তিপত্র সম্পন্ন করতে হবে। রফতানির জন্য বাছাইকৃত আম স্থানীয়ভাবে প্যাকিং করার ব্যবস্থা করতে হবে।
সুপারিশমালা পেয়ে এবার রাজশাহী অঞ্চলের চাষীরা নতুন উদ্যোমে আম চাষে মাঠে নামেন। কৃষি বিভাগ আম চাষীদের বাছাই করে তাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে। বিগত বছরে যেসব কর্মকর্তা ফ্রুট ব্যাগিং আমের বিরোধীতা করেছিলেন সুপারিশের পর তারা এবার রফতানির ক্ষেত্রে ব্যাগিং আমকে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলছেন। এমন কথায় এবার আট কোটি আমে ব্যাগিং করা হয়।
কৃষি বিভাগের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানান, ২৮ জন রফতানিকারকের মাধ্যমে রাজশাহী অঞ্চলের ৩১২ জন কৃষকের সাথে চুক্তি হয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো চলতি মওসুমে আম রফতানির জন্য গঠিত তদন্ত কমিটির কোন সুপারিশমালা অনুসরণ করা হয়নি। অভিযোগ রয়েছে, রফতানির জন্য চাষীদের কোন গাইড লাইন দেয়া হয়নি। সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নিয়ে যে সমন্বয় করার কথা ছিল তাও করা হয়নি। ফলে এবারো সম্ভাবনা থাকা সত্বেও বিপুল পরিমাণ আম রফতানি করা হয়নি।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা রফতানি না হওয়ার দায়ভার রাজশাহী ও চাপাইনবাবগঞ্জের চাষীদের চাপিয়ে দিয়ে বলছেন, তারা চুক্তির শর্ত মেনে আম উৎপাদনে আগ্রহী নয়। বিদেশে যে ধরনের আমের চাহিদা রয়েছে সে রকম আম হয় না। চাষীদের কথায়, যে ৩১২ জনের সাথে চুক্তির কথা বলা হচ্ছে তাদের আম নেয়া হলো না কেন? এই প্রশ্নের কোনো জবাব সংশ্লিষ্টরা দিচ্ছেন না। আম চাষীরা এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
২০১৫ সালে ১৫৩ মেট্রিক টন দিয়ে বিদেশে আম রফতানি শুরু হয়। ২০১৬ সালে রফতানি হয়েছে ৬৬৪ মেট্রিক টন। ওই দুই বছর আম চাষীদের বাগানে আম প্যাকিং করা হয়েছিল। একজন গবেষক সব সময় রফতানিযোগ্য আমের গুণগত মান নিশ্চিত করেই স্বাক্ষর করতেন। গত বছর বিশেষজ্ঞ ছাড়াই আম যাচাই বাছাই করার জন্য নিয়ে যাওয়া হয় নারায়ণগঞ্জে। এবার রফতানি করা আম নিয়ে অভিযোগ ওঠে। কারণ হিসাবে জানা যায় বাকী আম চাষীদের কাছে থেকে নয়, ঢাকার স্থানীয় বাজার থেকে সংগ্রহ করে রফতানি করা হয়েছিল। ফলে নন কমপ্লায়েন্স আসে।
অথচ তখন রাজশাহী অঞ্চলে কোটি কোটি টাকার আম গাছে গাছে। স্বপ্ন ভঙ্গ ও লোকসান হয় চাষীদের। বাংলাদেশে ব্যাগিংয়েরজনক বিশিষ্ট আম গবেষক কৃষিবিদ ও বিজ্ঞানী ড. শরফ উদ্দিন আম চাষী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে নিবিড় যোগাযোগ করে তাদের উৎসাহিত করেন। আম গবেষণা ও অবদান রাখা ও নিরাপদ, বিষমুক্ত ও রফতানিযোগ্য আম উৎপাদনের জন্য ফ্রুট ব্যাগিং প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও ছড়িয়ে দেবার জন্য তাকে বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার প্রদান করা হয়। রাষ্ট্রপতি পদকও তিনি লাভ করেন।
চলতি মাসের গোড়ার দিকে হুট করেই চাঁপাইনবাবগঞ্জ ফল গবেষণা (সাবেক আম গবেষনা কেন্দ্র) মৌলভীবাজার আকবরপুরের আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে বদলি করা হয়। মৌলভীবাজারের কেন্দ্রে শাকসবজি ফলমূল নিয়ে গবেষণা করা হয়। আমের ভর মওসুমে তারমত আম বিশেষজ্ঞ ও আম চাষীদের বন্ধুকে একেবারে আম বাগান থেকে চা বাগানে বদলী করায় প্রচন্ড ক্ষুব্ধ।
সংশ্লিষ্ট বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এ পর্যন্ত মাত্র ৭৮ মেট্রিক টন আম রফতানি হয়েছে। আর এ ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে নন ব্যাগিং সাতক্ষীরার আমকে। রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমকে দেয়া হয়নি গুরুত্ব। মাত্র সাড়ে ছয় টন রাজশাহীর বাঘা আর দুই টনের মত চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে নেয়া হয়েছে। রফতানির সময় ফুরিয়ে যাচ্ছে। অথচ রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে হাজার হাজার মেট্রিক টন আম রফতানির অক্ষোয় রয়েছে। ফিকে হচ্ছে চাষীদের আম রফতানির স্বপ্ন। বাড়ছে লোকসান।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।