চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
পাঁচ
এজন্যই রাসূলুল্লাহ স. হাদীসে তাদের উভয়কে একত্রিত করেছেন। রাসূলুল্লাহ স. বলেন: তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং প্রত্যেককে নিজের দায়িত্ব সম্পর্কে জবাবদিহি করতে হবে। শাসক বা খলীফা জাতির দায়িত্বশীল এবং নিজের প্রজা সম্পর্কে তাকে জবাবদিহি করতে হবে। আর ব্যক্তি তার পরিবারের দায়িত্বশীল তাকে তার পরিবারের সদস্যদের সম্পর্কে জবাবদিহি করতে হবে।
পিতার দায়িত্ব শুধু পরিবারে হিফাযত করা নয় বরং সে তাদের ভরণ-পোষণ, প্রশিক্ষণ এবং সুষ্ঠুভাবে তাদের জীবনের প্রয়োজন পূরণ এবং তাদের মধ্যে ইনসাফ কায়েম করার ব্যাপারে জবাবদিহি করবে। এমনিভাবে জাতির শাসককে সকল প্রজাদের ব্যাপারে জবাবদিহি করতে হবে। এ অনুভূতি থেকেই ‘উমর রা. বলতেন: ফোরাত নদীর তীরে একটি উটও যদি অযতেœ মারা যায়, তাহলেও আমার ভয় হচ্ছে, আল্লাহ হয়ত আমার নিকট এর কৈফিয়ত চাইবেন। দি একটি প্রাণির ব্যাপারে খলীফার দায়িত্ব এটা হয়, তাহলে আশরাফুল মাখলুকাত মানুষের ব্যাপারে তার দায়িত্ব কত বেশি তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
ঐতিহাসিকগণ ‘উমর ইব্ন আব্দুল আযিয রহ. সম্পর্কে একটি ঘটনা বর্ণনা করেছেন। তাঁর স্ত্রী ফাতিমা বলেন, একদিন তাঁর কাছে গেলাম, দেখলাম তিনি জায়নামাজে বসে আছেন এবং তাঁর হাত তাঁর গালে, তাঁর দু’গাল বেয়ে অশ্রæ গড়াচ্ছে। তাঁর এ অবস্থা দেখে আমি জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কাঁদছেন কেন? জবাবে তিনি বললেন: “আমি এ গোটা উম্মতের ওপর দায়িত্বশীল নিযুক্ত হয়েছি। ক্ষুধার্ত দরিদ্র, নিঃস্ব, রোগী, চেষ্টাক্লিষ্ট নগ্ন ব্যক্তি, অভিভাবকহারা ইয়াতিম, উপায়হীন বিধবা, পরাভূত মযলুম, অপরিচিত বন্দি, স্বল্প আয় ও বেশি সন্তান পালনে দায়িত্বশীল এবং ইসলামী রাষ্ট্রের সীমার মধ্যে দূর-দূরান্ত ও চতুর্দিকে অবস্থিত এ ধরনের লোকদের কঠিন দুরবস্থার কথা আমার মনে তীব্রভাবে জেগে ওঠে। আমি জানি, আল্লাহ্ এদের সম্পর্কে আমাকে নিশ্চয়ই জিজ্ঞেস করবেন। রাসূল স. ও এদের সম্পর্কে আমার নিকট কৈফিয়ত চাইবেন। আমি ভয় পাচ্ছি, এ ব্যাপারে আমার কোন ওযরই হয়ত আল্লাহ্ তা‘আলা কবুল করবেন না, রাসূলের স. নিকটও হয়ত আমার কোন যুক্তি খাটবে না। হে ফাতিমা, আল্লাহ্র শপথ! এ চিন্তার তীব্রতায় আমার দিল আবুল হয়ে ওঠেছে, অন্তর ব্যথিত, দুঃখ-ভারাক্রান্ত হয়ে পড়েছে। আর আমার দু’চোখ তপ্ত অশ্রæর ধারা প্রবাহিত করছে। উক্ত অবস্থার কথা আমি যতবেশি স্মরণ করি, আমার ভয় ও আতংক ততই তীব্র হয়ে ওঠে। এজন্য আমি কাঁদছি”। ‘উমর ইব্ন আবদুল আযীয রহ. খলীফা হিসেবে তাঁর উপর অর্পিত দায়িত্বের ব্যাপারে কত বেশি সচেতন ছিলেন, তা তাঁর উপরিউক্ত বক্তব্য থেকেই স্পষ্ট বোঝা যায়। বস্তুত ইসলাম যে রাষ্ট্রপ্রধানের উপরই সকল মানুষের প্রয়োজন পূরণের ও নিরাপত্তা বিধানের দায়িত্ব অর্পন করে, এ তারই বহিঃপ্রকাশ ও অকাট্য প্রমাণ।
বায়তুলমালের দারিদ্র্য বিমোচন কার্যক্রম শুধুমাত্র অসহায় দরিদ্র মুসলিমদের জন্য সীমাবদ্ধ নয়; বরং মুসলিম রাষ্ট্রে বসবাসকারী অমুসলিম নাগরিক বা যিম্মিদেরও বায়তুলমাল থেকে সাহায্য সহযোগিতা ও আর্থিক নিরাপত্তা লাভের অধিকার রয়েছে। আবূ বকর রা. এর সময় ইসলামী রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সেনাপতি খালিদ ইব্ন ওয়ালীদ রা. ‘হিরা’ বাসীদের সাথে এক চুক্তি স্বাক্ষর করেন। এ চুক্তিতে পরিষ্কারভাবে লিখা ছিল যে, তাদের দারিদ্র্য ও বুভুক্ষা, রোগ ও বার্ধক্যে তাদেরকে নিরাপত্তা দেয়া হবে এবং তাদের খরচ-খরচা মুসলিমদের বায়তুলমাল থেকে দেয়া হবে। চুক্তির শব্দাবলি সম্পর্কে খালিদ ইব্ন ওয়ালীদের বর্ণনা নিম্নরূপ: “আমি হীরার অধিবাসীদের ব্যাপারে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, নাগরিকদের মধ্যে যে লোক বার্ধক্য, পঙ্গুত্ব বা বিপদের কারণে অথবা সচ্ছলতা থাকার পর দরিদ্র হয়ে পড়ার কারণে যদি এমন অবস্থায় পড়ে যায় যে, তার স্বধর্মীরা তাকে ভিক্ষা দিতে শুরু করে, তাহলে তার নিকট থেকে জিযিরা নেয়া বন্ধ করা হবে এবং সে যত দিন ইসলামী রাষ্ট্রে বসবাস করে ততদিন পর্যন্ত তাকে এবং তার পরিবারকে বায়তুলমাল থেকে ভরণ-পোষণ করা হবে।
খালিদ রা. সেনাপতি হিসেবে এ চুক্তি স্বাক্ষর করেছিলেন এবং তখনকার খলীফা আবূ বকর সিদ্দিক রা. এ চুক্তি মেনে নিয়েছিলেন। সে সময়কার বড় বড় সাহাবীও এ সিদ্ধান্তে একমত ছিলেন। খালিদের রা. সাথে যে সব সাহাবা সে সময় যুদ্ধে শরিক ছিলেন তাঁরা এ সিদ্ধান্তে রাজি ছিলেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।