চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
পৃথিবীতে একমাত্র সন্দেহমুক্ত আসমানী কিতাব হল পবিত্র ‘আলকুরআন’। পবিত্র এই কুরআন প্রিয় নবীজি হযরত মুহাম্মদ (দ:) এর ওপর নাযিল করা হয়েছে রমাদান মাসে। কুরআনুল কারীমে ইরশাদ হয়েছে, ‘রমাদান মাস, যাতে কুরআন নাযিল করা হয়েছে যা মানুষের জন্য হিদায়াত স্বরূপ এবং হিদায়াতের সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলী ও সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারীরূপে।’ (সূরা বাকারা, আয়াত : ১৮৫)
কুরআনুল কারীম বুঝার জন্য বুদ্ধিমত্ত¡ার চাইতে ‘কালব’ এর পরিশুদ্ধতার প্রয়োজন অনেক বেশি। কেননা, কুরআন নাযিল করা হয়েছে কলব এর উপর। কুরআনুল কারীমে বলা হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই এ কুরআন সৃষ্টিকূলের রবেরই নাযিলকৃত। বিশ্বস্ত আত্মা (জিবরাইল আলাইহিস সালাম) এটা নিয়ে অবতরণ করেছেন তোমার নূরানি কলবে (হৃদয়ে) যাতে তুমি সতর্ককারীদের অন্তর্ভুক্ত হও।’ (সূরা আশশুয়ারা, আয়াত : ১৯২)
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতা‘আলার পক্ষ থেকে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি অবতীর্ণ এ কিতাব কুরআনুল কারীম। যা তাঁর উপর দীর্ঘ ২৩ বছরে নাযিল হয়েছে। এ কিতাবটির নাম, নাযিলের ভাষা, বিষয়বস্ত সব কিছুই অভিনব ও মুযিজাপূর্ণ।
কুরআন শব্দটি (কারউন) শব্দ থেকে নিষ্পন্ন হয়েছে। এর ধাতুগত অর্থ দু’টি।
১. জমা করা। এর তাৎপর্য হলো এ কিতাবের মধ্যে অতীতের সমস্ত আসমানী কিতাবের মূল শিক্ষা একত্রিত হয়েছে। এর মধ্যেই পৃথিবীর প্রলয় দিন অবধি মানব জাতির প্রয়োজনীয় শিক্ষা এবং হিদায়াত সন্নিবেশিত হয়েছে। (উলুমুল কোরআন।)
২. বারবার পাঠ করা। এ কিতাবটি কোটি কোটি মানুষ প্রতিনিয়ত অধ্যয়ন করছে। এত অধিক পঠিত কিতাব দুনিয়াতে আর একটিও নেই। (আল ইতকান।)
এখন আমরা কুরআনের সুমহান মর্যাদা সম্পর্কে জানব ইনশাল্লাহ।
পবিত্র কুরআন হল মানুষের শ্রেষ্ঠত্বের মাপকাঠি। রাসূলুল্লাহ (দ.) বলেছেন, ‘তোমাদের মাঝে ঐ ব্যক্তি সর্বোত্তম, যে কুরআন শেখে ও অপরকে শিক্ষা দেয়।’ (বুখারী) রাসুল (দ.) বলেছেন, সর্বশ্রেষ্ঠ বাণী হল আল্লাহর বাণী। আর সর্বশ্রেষ্ঠ পথ হল মুহাম্মদ (সা.) এর দেখানো নূরানি পথ। (মুসনাদে আহমাদ।)
কুরআনের প্রতিটি হরফ পাঠ করলে দশটি নেকি লাভ করা যায়। হযরত ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (দ.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর কিতাবের একটি হরফ পাঠ করল, এতে সে দশটি নেকির অধিকারী। তিনি আরো বলেন, আমি বলছি না যে, আলিফ-লাম-মীম একটি হরফ। বরং আলিফ একটি হরফ, লাম একটি হরফ এবং মীম একটি হরফ।’ (তিরমিযী শরীফ।)
আল কুরআন তিলাওয়াতের এত ফজিলত হওয়ার কারণে অতীতের উম্মতে মুহাম্মদী (দ:) বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াত করতেন। হজরত উসমান (রা.) তিনদিনে এক খতম কুরআন পড়তেন। ইমাম বুখারীও তিন দিনে এক খতম কুরআন পড়তেন বলে জীবনীকাররা উল্লেখ করেছেন। আমাদের ইমাম হযরত আবু হানীফা (রহ.) প্রতিরাতে একখতম কুরআন পড়তেন বলে বর্ণিত আছে।
পবিত্র কুরআন পাঠকারীর পিতামাতাকে কিয়মতের ময়দানে হাশরে নূরের টুপি পরানো হবে। রাসূলুল্লাহ (দ.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কুরআন শরীফ পড়ে এবং উহার উপর আমল করে, তার মাতা-পিতাকে কিয়ামতের দিন এমন একটি (নূরের) টুপি পরানো হবে, যার জ্যোতি দুনিয়ার সূর্যের জ্যোতি অপেক্ষা অধিক হবে।’ (আবু দাউদ।) আরেকটি হাদিস শরীফ থেকে জানা যায়, কুরআন মানুষকে আলোকিত করে। রাসূলুল্লাহ (দ.) বলেছেন, ‘যার হৃদয়ে কুরআনের কোন শিক্ষা নেই, তা বিরান ঘর সমতুল্য।’ (তিরমিযী।) আমাদের প্রতেক্যের অবশ্যই কর্তব্য নিয়মিত কোরআন পড়া, আল কোরআনের চর্চা করা। নয়ত আমাদের অন্তুর বিরান ঘরের মত হয়ে যাবে।
আল কুরআন সৃস্টি জগতের স্রষ্টা মহান আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে নাযিল হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘কিতাব অবতীর্ণ হয়েছে পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময় আল্লাহর পক্ষ থেকে।’ (সূরা আয-যুমার, আয়াত : ০১।) আল কুরআন পূর্ববর্তী কিতাবের সত্যয়নকারী। ‘আর আমি তোমার প্রতি কিতাব নাযিল করেছি যথাযথভাবে, এর পূর্বের কিতাবের সত্যয়নকারী ও এর উপর তদারককারীরূপে।’ (সূরা আল-মায়েদা, আয়াত : ৪৮।)
পবিত্র কুরআন লওহে মাহফুযে লিপিবদ্ধ। কুরআনুল কারীমে বলা হয়েছে, ‘বরং এটা মহান কুরআন, লওহে মাহফুযে লিপিবদ্ধ।’ (সূরা বুরূজ, আয়াত : ২১-২২।) অপবিত্র অবস্থায় কুরআন স্পর্শ করা নিষেধ। কুরআনুল কারীমে বলা হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই এটা সম্মানিত কুরআন, যা আছে এক গোপন কিতাবে, যারা পাক-পবিত্র, তারা ব্যতীত অন্য কেউ একে স্পর্শ করবে না, এটা সৃষ্টিকুলের রবের পক্ষ থেকে অবতীর্ণ।’ (সূরা ওয়াকিয়া : ৭৭-৮০।)
আল কুরআনের আরেকটি মর্যাদা হল, এটি একটি চ্যালেঞ্জময় গ্রন্থ। কুরআন নিয়ে মহানআল্লাহ চ্যালেঞ্জ ঘোষণা করে বলেন, ‘বলুন, যদি মানব ও জ্বিন এই কুরআনের অনুরূপ রচনা করে আনয়নের জন্যে জড়ো হয় এবং তারা পরস্পরের সাহায্যকারী ও হয়; তবুও তারা কখনও এর অনুরূপ রচনা করে আনতে পারবে না।’ (সূরা বনী ইসরাঈল, আয়াত : ৮৮।)
কুরআনের হিফাযতকারী স্বয়ং আল্লাহ। কুরআনুল কারীমে বলা হয়েছে, ‘এই যিকর (কুরআন) আমিই নাযিল করেছি, আর আমি নিজেই এর হিফাযতকারী।’ (সূরা হিজর, আয়াত : ০৯।)
কুরআনুল কারীম বিশ্ব মানবতার জন্য এক অফুরন্ত নিয়ামাত। মহান আল্লাহ তা‘আলার বড়ই মেহেরবানী যে, তিনি আমাদের উপর কুরআন অবতীর্ণ করেছেন। কুরআনুল কারীমে বলা হয়েছে, ‘বড়ই মেহেরবান তিনি (আল্লাহ) যিনি মাহবুবকে কুরআন শিক্ষা দিয়েছেন।’ (সূরা আর-রহমান, আয়াত : ১-২।)
এই সুমহান মর্যাদামন্ডিত গ্রন্থের পূর্ণ হক আদায় করে কুরআন নাযিলের এ মাসে আমরা বেশী বেশী কুরআন তিলাওয়াত করে এর অর্থ তাফসীর বুঝে আমরা জীবনযাপন করব এবং আম্বিয়ায়ে কিরাম ও আউলিয়াদের পথ ধরে জান্নাতের পথে এগিয়ে যাব। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে কবুল করুন। আমিন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।