পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রেজাউল করিম রাজু : রাজশাহী অঞ্চলে ঘুরে বেড়ানোর জন্য মধুর স্বাদের বাহারি নামের আম হাতছানি দিচ্ছে। দেখা ও খাওয়ার মজা উপভোগ করতে হলে রাজশাহী ঘুরতেই হবে। দেশে পর্যটন মানেই চট্টগ্রাম, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত, পার্বত্য তিন জেলা ও চা বাগান পরিবেষ্ঠিত সিলেট। এর বাইরেও যে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য রয়েছে তা না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না।
আম মওসুমে যারা একবার রাজশাহীর আ¤্রকাননে এসে অবাক বিস্ময়ে বলেছেন পর্যটনের এ যেন আরেক পিঠ। কিলোমিটার ছাড়িয়ে দৃষ্টির শেষ সীমানা পর্যন্ত আম বাগান। চোখ ধাঁধানো নানা জাতের আম যে কাউকে নষ্টালজিয়ায় ফেলবে। মনের অজান্তে গেয়ে উঠবেন ছেলে বেলার ছড়ার কয়েকটি লাইন- ‘ঝড়ের দিনে মামার বাড়ি আম কুড়াতে সুখ। পাকা আমের মধুর রসে রঙ্গিন করি মুখ।’
রাজশাহী অঞ্চলের মানুষের বৈশিষ্ট্য হলো তাদের সরলতা আন্তরিকতা আর আতিথেয়তা। আছে শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ পরিবেশ। পথ চলতে গিয়ে দেখবেন আমের ভারে নুইয়েছে গাছ। থোকায় থোকায় ঝুলছে আম। ইচ্ছে হবে ঝুলে থাকা আমের সাথে সেলফি তুলে পোষ্ট করে দিতে। আমের বাজার দেখে অবাক হবেন। কত বাহারি নামের আম। শুধু আম নয়, আছে আরেক ঐতিহ্য রাজশাহী সিল্ক। যার কারনে সিল্কসিটি হিসাবেও পরিচিতি রয়েছে।
বাংলার প্রাচীন ইতিহাস সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের বিশাল একটা অংশকে প্রতিনিধিত্ব করছে রাজশাহী অঞ্চল। বিশাল এই জনপদে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে মৌয্য, কুষাণ, গুপ্ত, পাল, সেন, সুলতানী, মোঘল, ডাচ ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিসহ বৃটিশ আমলের অসংখ্য প্রতœতাত্বিক ও ঐতিহাসিক নিদর্শনসহ ইতিহাসের বহু তথ্য উপাত্ত ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। পর্যটনের অপার সম্ভাবনায় ভাসছে পুরো উত্তরাঞ্চল। শুধুমাত্র প্রচার প্রচারণার অভাবে পর্যটন অঞ্চল হিসাবে গড়ে উঠতে পারছে না।
বিশ্বের এক ঐতিহ্য বরেন্দ্র যাদুঘর, নাটোরের রাজবাড়ি, বরেন্দ্রের উঁচু নিচু লাল মাটি, পুঠিয়ার মন্দির, সারদা পুলিশ একাডেমী, চাপাইনবাবগঞ্জের সোনা মসজিদ, নওগার পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার, আলতা দিঘী ঐতিহাসিক বাঘা মসজিদ, কুসম্বা মসজিদ, সোনা মসজিদ যা শুধু টাকার নোটে ছবি দেখে নয় বাস্তবে এলে অন্যরকম অনুভুতি হবে।
রাজশাহী অঞ্চলে ঘুমিয়ে আছেনন হযরত শাহ মখদুম (রহ.) হযরত তুরকান শাহ (রহ.) আব্দুল হামিদ দানিস মান্দ, হযরত শাহ নেয়ামতুল্লাহ সহ অসংখ্য আল্লাহর ওলি। তাদের মাজার জেয়ারতে মনে প্রশান্তি আনবে। কবর রয়েছে স¤্রাট শাহজাহানের পুত্র যুবরাজ শাহ সুজা ও তার স্ত্রীর। সোনামসজিদ চত্ত¡রে শায়িত রয়েছেন দুজন শহীদ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর ও মেজর নাজমুল। অষ্টাদশ শতাব্দীতে নির্মাণ করা ডাচদের নীল ও রেশমের কুঠি রাজশাহীর পদ্মার তীরে সাক্ষী হিসাবে রয়েছে। এটি বড়কুঠি নামে পরিচিত।
আ¤্রকাননে ঘেরা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজ মতিহার চত্ত¡র। রয়েছে এক সময়ের প্রমত্ত পদ্মা। ভরা বর্ষায় উত্তাল ঢেউ মনে করিয়ে দেয় ‘পদ্মার ঢেউরে মোর শূন্য হৃদয় নিয়ে যারে...।’ আবার শুকনো মওসুমে মরুভূমিসম বিশাল বালুচর। যারা মরুভূমি দেখেননি তারা বালুচরে হেঁটে কিছুটা অনুভব করতে পারেন। কোথাও পলিতে ফসলের আবাদ দেখে মনে করতে পারেন মরুদ্যানের কথা।
শুকনো মওসুমে পদ্মার ক্ষীণ ধারায় নৌকায় ভেসে বেড়াতে মন্দ লাগবে না। অবশ্যই এখানকার মাস কালাইয়ের রুটি আর বট পরোটা খেতে ভুলবেন না। আমের সাথে মজাদার খাবারের পাশপাশি প্রতœতাত্বিক নিদর্শন দেখে চোখ জুড়িয়ে যাবে। লালমাটির বরেন্দ্রের উঁচু নিচু ঢালু জমিতে বিস্তীর্ন সবুজ ধানের পাশপাশি রকমারি ফসলের আবাদ দৃষ্টি কাড়বেই। কয়েক বছর ধরে দেশি-বিদেশী পর্যটক আসা শুরু হলেও সংখ্যায় একেবারে কম। পর্যটক আকৃষ্ট করতেই আম বাগানের একটি অংশে গড়ে তোলা হচ্ছে ছোট ছোট রির্সোট, বাগানবাড়ি ও বিশ্রামাগার। পর্যটকরা এসে বাগান দেখার পাশপাশি বিশ্রামও নিতে পারেন। কাঁচা-পাকা আমের স্বাদ নিয়ে কিনতেও পারেন।
রাজশাহীতে রয়েছে শিতলাইয়ে বরেন্দ্র রিসোর্ট, চব্বিশনগরে জাহাঙ্গীর চেয়ারম্যানের বাগান, খড়খড়িতে স্বাধীনের আম বাগানের মধ্যে হেরিটেজ বাংলাদেশ, বাঘার কাশেম কটেজ। তাছাড়া বেশকটি বাগান দু’একটা ঘর বসার বেঞ্চ করা হয়েছে। এসব স্থানে শুধু আম মওসুমেই নয়; শীতকালে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ছেলেমেয়ের আসে পিকনিকের জন্য।
সম্প্রতি বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের উদ্যোগে রাজশাহীতে কমিউনিটি বেইজড ট্যুরিষ্ট শীর্ষক এক কর্মশালা হয়েছে। এতে পর্যটনের কর্মকর্তা, ভ্রমন সংস্থা ট্রিপটিজের নির্বাহী কর্মকর্তা, বিডি ইন বাউন্ড ও ট্যুর অপারেটর এসোসিয়শেন অব বাংলাদেশের কর্মকর্তা ও স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সবাই উত্তরাঞ্চলের পর্যটনের অপার সম্ভাবনার বিষয়টা তুলে ধরেন। শুধুমাত্র প্রচারের অভাবে এ অঞ্চলের পর্যটন বিকশিত হচ্ছে না। এজন্য সরকারি বেসরকারী পর্যায়ে সবার এগিয়ে আসা প্রয়োজন।
বিদেশ থেকে পর্যটকরা এসে ফাইভ ষ্টার হোটেল খোঁজেন না। তারা গ্রামগঞ্জে ঘুরে বেড়াতে চান। সাধারণ মানুষের ঘরে থাকতে চান। তাদের খাবার খেতে চান। শিশুদের সাথে খেলতে চান। যোগাযোগ নির্ভর পর্যটনের মাধ্যমেই এটি সম্ভব। কমিউিনিটি বেইজড ট্যুরিজমের মডেল হিসাবে বাংলাদেশের সীমান্ত ঘেষা ভারতের মেঘালয় রাজ্যের মাউলিনং নামের একটি ছোট গ্রাম পর্যটনের উজ্জল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। সামাজিক পর্যটনের আওতায় গ্রামটি দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন গ্রাম হিসাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে হাজারো পর্যটকের দৃষ্টি আকর্ষনের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। গ্রামের প্রতিটি বাড়িই এখন একেকটি অতিথিশালা।
আমকে ঘিরেও এমন গ্রাম গড়ে উঠতে পারে। নতুন ধান ওঠার সময় যেমন নবান্ন উৎসব হয় তেমনি আম পাড়ার সময় একটি উৎসবের আয়োজন করতে হবে। এই উৎসব দেখতে দেশি-বিদেশী পর্যটকদের ভিড় হবে। এ অঞ্চলের গম্ভীরা গান, সাঁওতালদের নাচও কম আকর্ষণনীয় নয়। এসব স্থানে সারাদেশ থেকে আসার জন্য যোগাযোগ ব্যবস্থা খুব একটা মন্দ নয়। কক্সবাজার চট্টগ্রাম, বান্দরবন, ঢাকা ও সিলেট থেকে সরাসরি বাস যোগযোগ রয়েছে। রাজশাহী ঢাকার মধ্যে রয়েছে তিন জোড়া আন্তনগর ট্রেন। প্রতিদিন আকাশ পথেও যাতায়াত রয়েছে। সবকিছু উপভোগ করে মনের অজান্তে গেয়ে উঠবেন- এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি। সে যে আমার জন্মভূমি। আর ফিরবেন আমের মধুময় স্মৃতিকে সঙ্গে নিয়ে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।