পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
হাসান সোহেল : নিয়ন্ত্রণহীন আলোচিত ওষুধ ‘ভায়াগ্রা’। দেশের শহর-বন্দর হয়ে গ্রামগঞ্জে এই ওষুধ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া এটি বিক্রি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ হলেও বেশি মুনাফার লোভে নিয়মের তোয়াক্কা না করেই এক শ্রেণির ব্যবসায়ীরা দেদারছে বিক্রি করছেন। ফলে ওষুধটির অপব্যবহার বেড়েই চলেছে। অত্যন্ত স্পর্শকাতর এই ওষুধ বেশি বিক্রি করার জন্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান, চিকিৎসক এবং ব্যবসায়ীদের প্রভাবিত করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। এমনকি অনুমোদিত কোম্পানি ছাড়াও অবৈধভাবে প্রতিবেশি ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আসা ভায়াগ্রা অবাধে বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে বিনা প্রেসক্রিপশনেই এই ওষুধ বিক্রি নিষিদ্ধ হলেও কোনভাবেই মানছে না ফার্মেসিগুলো। মনিটরিংয়ের দায়িত্বে থাকা ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর বলছে, অনুমোদিত ওষুধ এবং প্রেসক্রিপশন ছাড়া কোনভাবেই বিক্রির সুযোগ নেই। তারপরও দেশের বাস্তবতায় এখনও প্রেসক্রিপশন ছাড়া বিক্রি হচ্ছে। মাঠ কর্মীদের মাধ্যমে মনিটরিং চলছে। খুব শিগগিরই এটা দৃশ্যমান হবে।
সূত্র মতে, যত্রতত্র ভায়াগ্রা পাওয়া যাচ্ছে বলে সাধারণ মানুষ খুব সহজেই ব্যবহার করতে পারছে। যৌন সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তি ছাড়াও যিনি যৌন সমস্যাগ্রস্থ নন, তিনিও ভায়াগ্রায় মারাত্মভাবে আসক্ত হয়ে পড়ছেন। এই আসক্তের তালিকায় শীর্ষস্থানে রয়েছে উঠতি তরুণ ও বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। অথচ চিকিৎসা বিজ্ঞানে ভায়াগ্রা একটি ট্রেড নেম বা নির্দিষ্ট একটি ওষুধের রাসায়নিক নাম। এর মূল উপাদান সিলডেনাফিল সাইট্রেট। এটি হৃদযন্ত্রের সমস্যায় ব্যবহার করা হয়।
সমাজ গবেষকদের মতে, ভায়াগ্রার অপব্যবহার সমাজের ওপর চরম নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এটা কেবল সেবনকারীকেই নয়, গোটা সমাজকে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। আশঙ্কাজনকহারে বাড়ছে ধর্ষণ ও পারিবারিক কলহ। নৈতিকতার অবক্ষয়ের পাশাপাশি জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণেও বাদ সাধছে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, ভায়াগ্রার অপব্যবহারে যৌন ক্ষমতা স্থায়ীভাবে নষ্ট হওয়ার মারাত্মক ঝুঁঁকি থাকে। এছাড়া হƒদরোগ, লিভার-কিডনি-ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত এবং চোখে জটিলতা সৃষ্টি করে।
সরেজমিনে রাজধানীর মিটফোর্ড, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে, শাহবাগ, মোহাম্মদপুর, কলাবাগানসহ বেশ কয়েকটি এলাকার ওষুধ ব্যবসায়ী প্রেসক্রিপশন ছাড়াই ভায়াগ্রা বিক্রি করেছেন। আর ক্রেতাদের একটি বড় অংশ হচ্ছে তরুণ।
মিটফোর্ড আমির মার্কেটের আবদুল্লা মেডিসিন হলের এক বিক্রেতা জানান, ভায়াগ্রা বিক্রি এখন বৈধ। তারপরও দিনের পরিবর্তে অন্ধকার নামলেই বেশি সংখ্যায় ক্রেতা আসে। মোহাম্মদপুরের জাহান ফার্মেসির বিক্রেতা নুরুল ভূঁইয়া বলেন, ভায়াগ্রা দিনে ৫০ থেকে ৬০ পিস বিক্রি হয়। প্রথমে এত ছিল না। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে চাহিদা বেড়েছে। প্রেসক্রিপশন ছাড়াই বেশি বিক্রি করার কতা তিনি স্বীকার করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের প্রফেসর আ ব ম ফারুক ইনকিলাবকে বলেন, দেশে ভায়াগ্রার ব্যবহার বাড়ছে। কিন্তু কোথায়, কী কাজে ব্যবহার করছে, তা বোঝার কোনো উপায় নেই। বিএসএমএমইউ ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফার্মাকোলজি বিভাগের চিকিৎসকরা জানান, ভায়াগ্রা যৌন দুর্বলতা ও প্যালমোনিক হাইপারটেনশনের জন্য চিকিৎসকরা রোগীদের দিয়ে থাকেন। তিনি আরও জানান, ইয়াবা ট্যাবলেটের চেয়েও ভয়ঙ্কর ভায়াগ্রা। ভায়াগ্রা সেবনকারী যৌনক্ষুধা মেটানোর জন্য যতটা উদগ্রীব হয়, ইয়াবা সেবনকারীর মধ্যে সে ধরনের কোনো প্রতিক্রিয়া হয় না।
সুনির্দিষ্ট কোনো পরিসংখ্যান না থাকলেও দেশে যৌন দুর্বলদের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছেÑ যুক্তি দেখিয়ে এর আগে ওষুধ নিয়ন্ত্রণ কমিটির এক সভায় ১৮টি কোম্পানিকে ভায়াগ্রা উৎপাদন ও বাজারজাত করার অনুমতি দেয়া হয়েছিল। আর অনুমতি দেয়ার সময় জোর আপত্তি ছিল দেশের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের। এমনকি বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনও (বিএমএ) আপত্তি জানায়। অবশ্য, উৎপাদন শুরু হওয়ার আগেও দেশে ভায়াগ্রা ব্যবহার হতো, যা প্রয়োজন অনুসারে বিদেশ থেকে আমদানি করা হতো। কিন্তু দেশে প্রস্তুত শুরু করার পর থেকে এটি হাতের নাগালে চলে আসে।
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সাবেক মহাসচিব ও স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) সভাপতি প্রফেসর ডা. এম ইকবাল আর্সলান ভায়াগ্রার অপব্যবহারের কথা উল্লেখ করে বলেন, প্রতিবেশি দেশ ভারতেও যৌন সংক্রান্ত অঘটন বেড়েছে। এর পেছনে ভায়গ্রার একটা প্রভাব রয়েছে। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। এ ব্যাপারে ওষুধ নিয়ন্ত্রণ কমিটির সঙ্গে কথা বলার কথাও জানান তিনি।
ভায়াগ্রার অবাধ বিক্রি সম্পর্কে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালক মো. রুহুল আমিন ইনকিলাবকে বলেন, প্রেসক্রিপশন ছাড়া যাতে ওষুধ বিক্রি না করা হয় সে জন্য ফার্মেসিগুলোকে বলা আছে। তারপরও কিছু কিছু ফার্মেসি বিভিন্ন ধরনের ওষুধ বিক্রি করছে। তিনি বলেন, পাশাপাশি ‘মডেল ফার্মেসি’ কার্যক্রম এগিয়ে চলছে। এ পর্যন্ত ৩০০ মডেল ফার্মেসি চালু হয়েছে। আরও ২০০টি উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে। ইতোমধ্যে আমাদের মানসিকতায় অনেক পরিবর্তন এসেছে। প্রেসক্রিপশন ছাড়া ওষুধ বিক্রি কিছুটা কমেছে। সারাদেশে মডেল ফার্মেসি ছড়িয়ে দিতে পারলে দৃশ্যমান পরিবর্তন আসবে। এছাড়া ড্রাগ আইনের ধারা সংযোজন করা হয়েছে। এতে প্রেসক্রিপশন ছাড়া ওষুধ বিক্রি করলে শাস্তি হিসেবে আর্থিক জরিমানার কথাও বলা হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।