পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নূরুল ইসলাম : এলকোহলের পর এবার এনার্জি ড্রিংকসে মেশানো হচ্ছে যৌন উত্তেজক ভায়াগ্রা। সিলডেনাফিল সাইট্রেট নামক ভায়াগ্রার উপাদান মিশ্রিত এনার্জি ড্রিংকস তরুণদের ছাপিয়ে বয়স্কদেরকেও আসক্ত করে ফেলেছে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর বাজারে থাকা ৪৮টি এনার্জি ড্রিংকস পরীক্ষা করে ১৮টিতে ভায়াগ্রার উপাদান পেয়েছে। এর মধ্যে ১২টিতে মাত্রাতিরিক্ত ক্যাফেইন এবং ৪টিতে মাত্রাতিরিক্ত এলকোহল পাওয়া গেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব পান করলে মানুষের হৃদরোগসহ কিডনী, ডায়াবেটিসজনিত রোগের ঝুঁকি রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাসিউটিক্যাল কেমিস্ট্রি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মো: আব্দুল মজিদ বলেন, ক্ষতিকর খাদ্য ও পানীয় উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ বন্ধ করার জন্য এগুলোকে আমেরিকার মতো ফুড এন্ড ড্রাগসের অধীনে নিয়ে আসতে হবে। বিএসটিআইকে ‘নিধিরাম সর্দার’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারা একটা সিল মেরে দিয়ে দায়িত্ব শেষ করে। সরকারের উচিত এক্ষুণি এসব ক্ষতিকর ড্রিংকস উৎপাদন বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া। এভাবে চলতে থাকলে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম দিন দিন ধ্বংস হয়ে যাবে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের পরীক্ষায় বাজারের বেশ কিছু এনার্জি ড্রিংকসে ক্ষতিকর মাত্রার এলকোহল পাওয়া যায়। এরপর এর ক্ষতিকর দিকগুলো তুলে ধরে এগুলোর উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ বন্ধ করার জন্য সুপারিশও করা হয়। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় নি। বিক্রেতাদের মতে, এলকোহল থাকার কারণেই এগুলোর চাহিদা অনেক বেশি। বরং বিক্রির স্রোতে ৫/৬টি কোম্পানি বেড়ে এখন প্রায় একশ’তে গিয়ে ঠেকেছে। বোতল প্রতি বেড়েছে এলকোহলের মাত্রাও। বিক্রেতারা জানান, উঠতি বয়সি তরুণ-তরুণীরাই ক্ষণিকের ফিলিংসের জন্য এনার্জি ড্রিংকস পান করে বেশি। বেশিরভাগই স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী। এরই মধ্যে বাজারে এসেছে ভায়াগ্রা মিশ্রিত এনার্জি ড্রিংকস ও সিরাপ। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের প্রধান রাসায়নিক কর্মকর্তা ড. দুলালকৃষ্ণ সাহা জানান, বাজারে থাকা কমপক্ষে ৬২ রকমের এনার্জি ড্রিংকস ও সিরাপের রাসায়নিক পরীক্ষায় ২৩টিতে ভায়াগ্রার উপাদান পাওয়া গেছে। এছাড়া মাত্রাতিরিক্ত ক্যাফেইন ও এলকোহলও রয়েছে কয়েকটিতে। তিনি বলেন, আমরা এই সব এনার্জি ড্রিংকসের ক্ষতিকর দিক তুলে ধরে এগুলোর উৎপাদন ও বাজারজাত বন্ধ করার জন্য বিএসটিআইকে সুপারিশ করেছি। কিন্তু তারা কোনো ব্যবস্থা নেয় নি। অন্যদিকে, বিএসটিআই-এর একজন সহকারী পরিচালক জানান, ভায়াগ্রা মিশ্রিত কোনো এনার্জি ড্রিংকসকে বিএসটিআই ছাড়পত্র দেয় নি। যারা বিএসটিআই’র সিল ব্যবহার করছে তারা অবৈধভাবে তা করছে।
রাজধানীর কয়েকটি এলাকা ঘুরে এনার্জি ড্রিংকস বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত কয়েক বছর ধরেই বাজারের হট আইটেম হিসাবে দেদারছে বিক্রি হয় এনার্জি ড্রিংকস। বিশেষভাবে কয়েকটি কোম্পানীর এনার্জি ড্রিংকসের চাহিদা অনেক বেশি। এর সাথে নতুন করে যুক্ত হয়েছে যৌন উত্তেজক কিছু ড্রিংকস এবং সিরাপ। এগুলো পান করার কয়েক মিনিটের মধ্যেই শরীরে যৌন উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। জানতে চাইলে যাত্রাবাড়ীর দনিয়া এলাকার একজন বিক্রেতা জানান, তার দোকানে লায়ন সিরাপ বেশি বিক্রি হয়। বয়স্করা এটা কিনে।
লায়ন সিরাপের পুরো নাম তনু লায়ন ফ্রুট সিরাপ। তবে লায়ন শব্দটি বড় করে লেখা। এর উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান তনু নিউট্রিশন ফুড প্রোডাক্টস লিমিটেড। ঠিকানা, মনসুরাবাদ, আদাবর, ঢাকা। বিএসটিআই নম্বর: এস ৫২৮। বোতলের গায়ে এর উপাদান লেখা আছে, মাল্টা, পরিশোধিত চিনি, সাইট্রিক এসিড, সোডিয়াম বেনজায়েট, অনুমোদিত খাদ্য রং এবং ফ্লেভার। অথচ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের রাসায়নিক পরীক্ষায় তনু লায়ন ফ্রুট সিরাপে ১৮৮ দশমিক ২৫ মিলিগ্রাম ক্যাফেইন ও ১২৬ দশমিক ৮০ মিলিগ্রাম সিলডেনাফিল পাওয়া গেছে। এর মধ্যে সিলডেনাফিল যৌন উত্তেজক ভায়াগ্রার প্রধান উপাদান। লায়ন সিরাপ পান করেছেন এমন দুজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এটি পান করার পর যৌন উত্তেজনার সৃষ্টি হয় ঠিকই কিন্তু কয়েকদিন এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে। বিশেষ করে গ্যাসট্রিক ও হার্টবিট বেড়ে যায়। খাওয়ার কোনো রুচি থাকে না। মাঝে মাঝে পেট ব্যথা করে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের প্রধান রাসায়নিক কর্মকর্তা ড. দুলালকৃষ্ণ সাহা বলেন, ভায়াগ্রামিশ্রিত এসব সিরাপ পান করলে গর্ভবতী নারীর গর্ভপাত হয়ে যেতে পারে। হৃদরোগীর তাৎক্ষণিকভাবে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যুও হতে পারে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরীক্ষায় বাজারে থাকা যে সব এনার্জি ড্রিংকস ও সিরাপে ক্ষতিকর ভায়াগ্রা, ক্যাফেইন ও এলকোহলের উপস্থিতি পাওয়া গেছে সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, দুবাই থেকে আনা রেডবুল নামে এনার্জি ড্রিংকসের প্রতি লিটারে ৩৩০ দশমিক ২৫ মিলিগ্রাম ক্যাফেইন পাওয়া গেছে। খুলনার জিএম এগ্রো ফুড এন্ড বেভারেজের ডাবল হর্সের প্রতি লিটারে ২০৬ দশমিক ৭০ মিলিগ্রাম ক্যাফেইন ও ১৬৩ দশমিক ৮ মিলিগ্রাম সিলডেনাফিল পাওয়া গেছে। বাংলাদেশে তৈরী হলেও পাওয়ার হর্স নামে এনার্জি ড্রিংকসের লেবেলে লেখা অস্ট্রেলিয়ার তৈরী। এর প্রতি লিটারে ৩২২ দশমিক ০৬ মিলিগ্রাম ক্যাফেইন পাওয়া গেছে। কুমিল্লার জাহান ফুড প্রোডাক্টের মাশরুম ব্র্যান্ডের প্রতি লিটারে ২০২ দশমিক ৫০ মিলিগ্রাম, ফু-ওয়াং ব্র্যান্ডের প্রতি লিটারে ১৯৭ দশমিক ৪০, সাভারের এগ্রো ফুড এন্ড ফুড বেভারেজের জিন্টারে ১৮০ দশমিক ৪৩ মিলিগ্রাম ক্যাফেইন ও ১২৭ দশমিক ৫০ মিলিগ্রাম সিলডেনাফিল সাইট্রেট, বগুড়ার উত্তরা ল্যাবরেটরিজের জিনসিনে ১৭৪ দশমিক ৭২ মিলিগ্রাম ক্যাফেইন ও ১৩২ দশমিক ৮০ গ্রাম সিলডেনাফিল, থ্রি স্টার ইউনানি ল্যাবরেটরিজের জিন্টার প্লাস জিনসিনে ২০৬ দশমিক ৯১ মিলিগ্রাম ক্যাফেইন ও ১৩২ দশমিক ৮০ মিলিগ্রাম সিলডেনাফিল সাইট্রেট, বিএনসি এগ্রো ফুড এন্ড বেভারেজের হর্স ফিলিংসে ১৯৫ দশমিক ২ মিলিগ্রাম ক্যাফেইন ও ১৩২ দশমিক ৮০ মিলিগ্রাম সিলডেনাফিল, স্নেহা ফুড এন্ড হারবাল প্রোডাক্টের কোরিয়ান রেড জিনসিংয়ে ১৯৯ দশমিক ৮০ মিলিগ্রাম ক্যাফেইন, ১৩৫ দশমিক ৮০ মিলিগ্রাম সিলডেনাফিল সাইট্রেট, রানা ফুড বেভারেজের হাই পাওয়ার ফিলিংসে ১৩২ দশমিক ৮০ মিলিগ্রাম সিলডেনাফিল, স্ট্রং-৫০০-এ ১৬২ দশমিক ৫২ গ্রাম ক্যাফেইন, এপি ফিজে ১৮৫ দশমিক ৬ মিলিগ্রাম ক্যাফেইন, রয়েল টাইগারে ১৯৭ দশমিক ৮২ মিলিগ্রাম ক্যাফেইন, থ্রি স্টার ফুড এন্ড বেভারেজের জিনসিনে ১৬৩ দশমিক ৬০ মিলিগ্রাম ক্যাফেইন, ইন্ট্রা ফার্মাসিউটিক্যালসের জিনসিন প্লাসে ২১০ দশমিক ৫০ মিলিগ্রাম ক্যাফেইন ও ১৩৫ দশমিক ২৫ মিলিগ্রাম সিলডেনাফিল, আসিফ এগ্রো ফুড বেভারেজের সেভেন হর্স ফিলিংসে ১৯৮ দশমিক ২৮ মিলিগ্রাম ক্যাফেইন ও ১৯০ দশমিক ৮০ মিলিগ্রাম সিলডেনাফিল পাওয়া গেছে। অথচ দেশে এনার্জি ড্রিংকস তৈরীর বৈধতা নেই কোনো প্রতিষ্ঠানের। এনার্জি ড্রিংকস নামে বাজারে যে সব পানীয় বিক্রি হচ্ছে সেগুলো কার্বোনেটেড বেভারেজ নামে বৈধতা রয়েছে। এগুলোতে ক্যাফেইন, এলকোহল, ভায়াগ্রার উপাদান মেশানো অবৈধ এবং দ-নীয় অপরাধ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাসিউটিক্যাল কেমিস্ট্রি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো: আব্দুল মজিদ বলেন, এগুলো পান করে আমাদের তরুণ সমাজ ধ্বংসের পথে যাচ্ছে। তারা বুঝতে পারছে না তাদের সামনে কোন ধরনের বিপদ অপেক্ষা করছে। একদিন দু’দিন করে অভ্যাসে পরিণত হওয়ার পর একজন তরুণ প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার আগে মৃত্যু ঝুঁকিতে পড়ে যাচ্ছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. আ ব ম ফারুক বলেন, বাজার থেকে আমরা যে কয়েকটি এনার্জি ড্রিংকস বা সিরাপের নমুনা সংগ্রহ করেছি তার অধিকাংশের মধ্যে ভায়াগ্রা পাওয়া গেছে ২২০ মিলিগ্রাম করে। এটা ব্যবহার করলে মানুষ মারা যাবে। তিনি বলেন, ভায়াগ্রার প্রভাবে না জানি কতো মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। অধ্যাপক ড. ফারুক বলেন, ভায়াগ্রা প্রথম যখন বাজারে আসে তখন ওষুধটি খেয়ে কয়েক জনের মৃত্যু হয়। ডাক্তাররা তাই স্পর্শকাতর এই ওষুধটি কোনো রোগীকে দেয়ার বেলায় বারবার চিন্তা করেন। অথচ এই ভায়াগ্রাই এখন হরহামেশাই মেশানো হচ্ছে শক্তিবর্ধক পানীয় বা সিরাপে এবং তথাকথিত এনার্জি ড্রিংকসে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।