Inqilab Logo

বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

উৎপাদন পর্যায়েই সবজিতে বিষ

প্রকাশের সময় : ২৫ জানুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : উৎপাদন পর্যায়ে বেগুন, শিম, ফুলকপি ও শাকের জমিতে কৃষকরা সহনীয় মাত্রার চেয়ে অবাধে অনেকগুণ বেশি বিষাক্ত কীটনাশক ছিটাচ্ছেন। খুচরা ও পাইকারির চেয়ে উৎপাদন পর্যায়ে স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে সর্বোচ্চ ২০ গুণ পর্যন্ত অতিরিক্ত বিষ মেশানোর প্রমাণ পাওয়া গেছে। ফলে সাধারণ মানুষ তাদের অজ্ঞাতসারেই বিভিন্ন রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছেন।
জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের ন্যাশনাল ফুড সেইফটি ল্যাবরেটরি (এনএফএসএল)তে পরিচালিত ‘মনিটরিং অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশন অব হর্টিকালচার প্রোডাক্টস্ অ্যান্ড আদার ফুড কমোডিটিজ ফর কেমিক্যাল কন্টামিনেশন এট এনএফএসএল : অ্যান আপ্রাইজাল অব ফুড সেইফটি সার্ভে ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক জরিপ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। নভেম্বরে ফুলকপি ও শাক এবং ডিসেম্বর মাসে শিম ও বেগুনের ওপর এ জরিপ পরীক্ষা করা হয়। জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পরিচালক ডা. মো. জাফরউল্যাহ বলেন, স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে বেশি পরিমাণ বিষাক্ত কীটনাশকের অবাধ ব্যবহারে জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকি সম্পর্কে কৃষক, পাইকারী ও খুচরা পর্যায়ের ব্যবসায়ীদের অধিক জনসচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে অবাধ অপব্যবহার বন্ধ করা এখন সময়ের দাবি। অতিরিক্ত মুনাফা লোভের পাশাপাশি কৃষকদের অজ্ঞতার কারণে কৃষক পর্যায়ে পেস্টিসাইড ব্যবহার বাড়ছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
এনএফএসএল সূত্রে জানা গেছে, জরিপকালে কৃষক, পাইকারি বাজার ও খুচরা বাজার থেকে প্রতিটি শাক-সবজির ৯টি করে মোট ২৭টি করে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হয়। ২৭টি ফুলকপির ৮টিতে, ২৭টি লালশাকের ৩টিতে, ২৭টি সিমের ৯টি ও ২৭টি বেগুনের ১২টিতে অতিরিক্ত কীটনাশক পাওয়া যায়। সীমের নমুনা পরীক্ষা ডাইমেথয়েট, মেটালাক্সিল ও ক্লোরোপাইরিফস্ নামক কীটনাশক ব্যবহার করা হচ্ছে। এ সব পেস্টিসাইড স্বাভাবিক মাত্রায় ব্যবহারের হার ২০ পিপিবি হলেও কৃষক পর্যায়ে সর্বোচ্চ ২০ গুণ অর্থাৎ ৪২৪ পিপিবি পাওয়া গেছে। বেগুনের নমুনায় কুইনালফস নামক কীটনাশক স্বাভাবিক ব্যবহারের মাত্রা ১০ পিপিবি হলেও খুচরা বাজারে সর্বোচ্চ ১২৮ পিপিবি মেশানোর প্রমাণ পাওয়া গেছে।
লালশাকের নমুনায় খুচরা বাজারে ক্লোরোপাইরিফস নামক পেস্টিসাইডে স্বাভাবিক ব্যবহারের মাত্রা ৫০ পিপিবি হলেও সর্বোচ্চ ৫০ গুণ অর্থাৎ ১৫৩৭ পিপিবি পর্যন্ত ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এছাড়া ফুলকপির নমুনাতেও মাত্রাতিরিক্ত পেস্টিসাইড ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া যায়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনএফএসএলের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, যেকোনো ধরনের পেস্টিসাইড ব্যবহারের সঠিক নিয়মাবলি রয়েছে। ফসলে পোকা-মাকড় যেন না ধরে সেজন্য স্বাভাবিক মাত্রায় পেস্টিসাইড ব্যবহার করতে হয়।
কৃষক পর্যায়ে যে কোন ধরনের পেস্টিসাইড ব্যবহারের আগে পরে ১০ থেকে ১২ দিন সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। তারা কৃষকদের সঙ্গে আলাপকালে জেনেছেন তারা সাতদিনের তৃতীয় দিন ও সপ্তম দিন ক্ষেতে পেস্টিসাইড ছিটান। নেপথ্যে কারণ অনুসন্ধানে জেনেছেন কৃষকরা দ্রæত শাক-সবজির বৃদ্ধির জন্য কৃত্রিম হরমোন ব্যবহার করেন। হরমোন ছিটানোর ফলে শাক-সবজির দ্রæত বর্ধন হয়। কিন্তু সেই শাক-সবজিতে হরমোন মেশানোর ২ থেকে ৩ দিনের মধ্যে ক্ষেত থেকে তুলতে হয়। তা না হলে শাক-সবজিতে পচন ধরার সম্ভাবনা থাকে। ফলে দ্রæত ফসল তোলা হয় এবং তোলার আগে নির্দিষ্ট সময় বিরতি না দিয়ে ফের পেস্টিসাইড ছিঁটানো হয়। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শাক-সবজিতে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহারের ফলে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদে শ্বাসকষ্ট, নাক দিয়ে পানি পড়া, বমি, পেটে ব্যথা, ডায়রিয়া, শরীরের চামড়া-চোখে চুলকানি ও হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: উৎপাদন পর্যায়েই সবজিতে বিষ

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ