গুলিস্তানের বিস্ফোরণে নিহত ১৬ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে
রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজার এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এ
আবু হেনা মুক্তি : বিকল্প উৎস হারিয়ে বৃহত্তর খুলনার বোরো ধান ও গমসহ শীতকালিন ফসল চাষে ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার দ্রæত বাড়ছে। এ অঞ্চলের চাষাবাদ দিনে দিনে সেচনির্ভর হয়ে পড়েছে। চলতি বোরো মৌসুমে ৩ হাজার কোটি ঘনফুটের ওপর ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার হচ্ছে। কৃষি স¤প্রসারণ বিভাগ এ সম্পর্কিত কোন বিশেষ প্রকল্প গত ১ যুগেও গ্রহণ করেনি। তাছাড়া পাউবো নদী ও খাল খননে গত ১০ বছরে তেমন কোন বাস্তবমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেনি। দু’একটি প্রকল্প গৃহীত হলেও কাজের চেয়ে হরিলুট হয়েছে বেশি। নদী খননের ক্ষেত্রে দেখা গেছে দু’পাশের মাটি কোন রকম কেটে পাড় তৈরী করা হয়েছে। কিন্তু নদী খনন হয়নি। চাল গম আর প্রজেক্টের অর্থ ব্যয় হয়েছে ঠিকই কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এ ধরনের কর্মকাÐের মধ্যে খুলনার নালুয়া নদী, ডুমুরিয়ার কপোতাক্ষ নদ, মাংঙ্গা নদী, বটিয়াঘাটার ঝপঝপিয়া নদী অন্যতম। এছাড়া বৃহত্তর খুলনাঞ্চলের জমিভুক্ত এবং সরকারের খাস খতিয়ানে থাকা কয়েক হাজার খাল সংস্কারের অভাবে এবং পলি পড়ে পানি সংরক্ষণের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। খালগুলোর অধিকাংশই এখন প্রভাবশালীদের দখলে। অনেক খাস খাল ও জলাখাল এখন ফসলী জমিতে পরিণত হয়েছে। কিছু কিছু খালের অস্তিত্ব বর্ষাকালে থাকলেও শীতকালে বা শুষ্ক মৌসুমে তাদের খুঁজে পাওয়া যায় না। ফলে পানি উৎস দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে।
কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, বিগত এক দশকের ব্যবধানে খুলনাঞ্চলের জেলাগুলোতে ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহারে পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়েছে বলে পরিবেশবিদরা অভিমত ব্যক্ত করেছেন। বর্ধিত জনসংখ্যার খাদ্য চাহিদা মেটাতে চাষী অধিকমাত্রায় বোরো চাষে ঝুঁকছে। গত বোরো মৌসুমে প্রায় ১০ হাজার কোটি ঘনফুট ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার হয়েছিল। কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী বোরো চাষে গড়ে একরে ৮০ ইঞ্চি পানির প্রয়োজন হয়। ঐ হিসাব অনুযায়ী এক একরে ২ লাখ ৮৩ হাজার ১৪০ ঘনফুট পানির প্রয়োজন পড়ে। সূত্রে জানা যায়, চলতি রবি মৌসুমে খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট জেলায় প্রায় পৌনে ১ লাখ অগভীর (শ্যালো মেশিন) এবং ৬ শতাধিক নলকূপ সেচ কাজে ব্যবহারে হচ্ছে। আমাদের অঞ্চলের চাষীরা অবৈজ্ঞানিক উপায়ে যত্রতত্র নলক‚প স্থাপন করায় সমস্যা আরো ঘনীভূত হয়। পাশাপাশি কৃষি বিভাগেরও রয়েছে যথেষ্ট উদাসীনতা। প্রাপ্ত পরিসংখ্যানে দেখা যায় “১২ সালের এ অঞ্চলে প্রায় পৌনে ৩শ’ টি গভীর এবং প্রায় ১৮ হাজার অগভীর নলক‚প (শ্যালো মেশিন) সেচ কাজে ব্যবহার হয়েছিল। বোরো ধানের চারা রোপণের পর থেকে বোরো ক্ষেতে সেচদান শুরু হয়। বিপুল পরিমাণ ধান চাষে পানির চাহিদা মেটাতে ভূগর্ভস্থ পানি ভাÐারে টান পড়েছে। পানির স্তর প্রতিবছর বোরো আবাদকালে নীচে নেমে যায়। বোরো চাষ মৌসুমে কমে যায়। এ পানি ভাÐারপূর্ণ পূরণ হয় বৃষ্টি ও নদীর পানিতে। কিন্তু জমিতে খালের মত রিজার্ভ ট্যাংকি না থাকায় এই সময় সংকট তৈরী হয়। অপরদিকে ফারাক্কার প্রভাবে এ অঞ্চলের উপর দিয়ে প্রবাহিত নদ-নদীগুলো আজ মৃত। নদীতে পানি থাকে না। কোন কোন নদীতে একটা ক্ষীণধারা বহমান থাকে। কোথাও হাঁটু বা কোথাও কোমর পানি থাকে। নদীগুলোর বুকজুড়ে ধান চাষ হয়। পানি উন্নয়ন বোর্ডের একজন কর্মকর্তা জানান, সেচকাজে ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমাতে হলে প্রয়োজন ভূগর্ভস্থ পানির উৎস বৃদ্ধি করা। আর এ জন্য দরকার মৃত নদীগুলোকে জীবিত করা। কিন্তু মৃত নদীগুলোকে ফের জীবিত করতে সমন্বিত পানি উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ প্রয়োজন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের হাতে এ অঞ্চলে পানি সম্পদ উন্নয়নে তেমন কোন বাস্তবমুখী প্রকল্প নেই। খুলনার নাগরিক নেতা শেখ আশরাফ উজ জামান ইনকিলাবকে বলেন, সবকিছুই হতে হবে পরিকল্পিত মাফিক। অন্যথায় পানির স্তর খুব তাড়াতাড়ি নিচে নেমে যাবে। যা ভবিষ্যতের জন্য হবে চরম হুমকিস্বরূপ। বাংলাদেশ পরিবেশ ও মানবাধিকার বাস্তবায়ন সোসাইটির মহাসচিব মো: আজগর হোসেন ইনকিলাবকে বলেন, বাস্তবমুখী প্রকল্প এখনই গ্রহণ না করলে গোটা বৃহত্তর খুলনাঞ্চলজুড়ে যে সংকট সৃষ্টি হবে তা আগামী ৫০ বছরেও উত্তরণ ঘটানো সম্ভব হবে না। এজন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে যথা সময়ে ভূমিকা রাখতে হবে। তা না হলে এর জন্য চরম মূল্য দিতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।