প্রাণের ঢাকা এখন অনেকটাই ফাঁকা। তাই ছিনতাই, চুরি, ডাকাতির মতো অপরাধের শঙ্কা দূর করে জনশূন্য হয়ে পড়া রাজধানীতে নজিরবিহীন নিরাপত্তা বেষ্টনী গড়ে তুলেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
সরেজমিন রাজধানীর গুলিস্তান, জিপিও মোড়, পল্টন, প্রেসক্লাব, হাইকোর্ট, মৎস্যভবন, শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, বাংলামোটর, কারওয়ান বাজার, ফার্মগেটসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে প্রায় প্রতিটি মোড়েই পুলিশের চেকপোস্ট দেখা গেছে।
এছাড়া জাতীয় ঈদগাহ ও জাতীয় মসজিদ বায়তুল মুকাররমের সামনে মোতায়েন রয়েছে অতিরিক্ত সংখ্যক পুলিশ।
শুক্রবার সকালে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল পরিদর্শন করেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী।
এসময় তিনি বলেন, ফাঁকা ঢাকার জন্য বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তারপরও যারা গ্রামে যাচ্ছেন, তারা বাসায় ভালো করে তালা মেরে যাবেন।
আইজিপি বলেন, পুলিশি তৎপর থাকায় এবার দেশে কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি। সবাই নির্বিঘ্নে গ্রামে পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ঈদ করতে যাচ্ছেন। ঈদের পরও কোথাও খারাপ কিছু ঘটবে না বলেই আশা করছি।
এদিকে, পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামাজের সময় কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ঈদগাহ মাঠে নিরাপত্তার স্বার্থে ছাতা ও জায়নামাজ ছাড়া মুসল্লিদের আর কোনো কিছুই অ্যালাও করা হবে না বলে জানিয়েছেন
ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া।
তিনি বলেন, পবিত্র ঈদকে কেন্দ্র করে যাতে কোনো ধরনের অঘটন না ঘটে তার জন্য নগরজুড়ে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারি। পোশাকে ও সাদা পোশাকে সর্বত্রই পুলিশ থাকবে। শহরের গুরুত্বপূর্ণ ঈদ জামাত ছাড়াও নগরজুড়েই থাকবে সিসিটিভি ক্যামেরা।
প্রতিটি জামায়াতে প্রবেশকালে সব মুসল্লিকে দুটি আর্চওয়ের স্তর পার হয়ে ঈদগাহ মাঠে প্রবেশ করতে হবে। সাথে থাকবে ডগ স্কোয়াড ও দক্ষ সোয়াট বাহিনী। এক কথায় কোথাও কোনো নিরাপত্তার ঘাটতি থাকবে না। প্রশিক্ষিত কর্মকর্তারা সিসিটিভি ক্যামেরা মনিটরিং করবেন বলেও জানান পুলিশ কমিশনার।
আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, ঢাকা শহর থেকে যারা গ্রামের বাড়িতে ঈদ করতে গেছেন, তাদের বাসা-বাড়ি এমনকি শহরের সকল দোকানপাট থাকবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নিরাপত্তায়।
শুধু তাই নয়, প্রতিটি এলাকায় সিকিউরিটি গার্ডদের সাথে সমন্বয় করে পুলিশ তাদের দায়িত্ব পালন করবে।
ডিএমপি কমিশনার আরো বলেন, ঈদের আগে ও পরে শহরের বিভিন্ন দর্শনীয় জায়গায় নিরাপত্তা জোরদার থাকবে। ওই সকল জায়গায় যাতে ইভটিজিংয়ের মতো কোনো ধরনের ঘটনা না ঘটে তার জন্য পুলিশ তৎপর থাকবে। ঈদে কোনো ধরনের থ্রেট নেই, তবে আমরা সতর্ক অবস্থায় আছি।
ডিএমপি’র রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মারুফ হোসেন সরদার পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ঈদের ছুটিতে ফাঁকা রাজধানীতে আমরা নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছি। প্রতিটি এলাকায় পুলিশের টহল বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি মাদকের ওপর বিশেষ নজরদারি রাখা হয়েছে।
এছাড়া র্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে র্যাব সুসংহত নিরাপত্তা ব্যবস্থা হাতে নিয়েছে। চেকপোস্টের পাশাপাশি সিভিল টিম মাঠে থাকবে। ফাঁকা হয়ে যাওয়া রাজধানীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য।
শুক্রবার দুপুরে জাতীয় ঈদগাহের নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিদর্শন শেষে র্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ বলেন, ঈদে ফাঁকা রাজধানীর নিরাপত্তায় অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মতো র্যাবও সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে। র্যাবের টহল টিম কাজ করছে। গোয়েন্দা সদস্যরা সক্রিয় রয়েছেন।