পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
খুলনা সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের কৌশল গাজীপুরেও কাজে লাগাতে চায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। খুলনার মত গাজীপুরেও ‘প্রশ্নমুক্ত’ ও ‘নিয়ন্ত্রিত’ নির্বাচন চায় দলটি। এজন্য সবার আগে সংগঠনের ঐক্যবদ্ধতা ও স্বতস্ফূর্তভাবে প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণার জন্য ক্ষেত্র তৈরী করা হচ্ছে। এরপর সরকারের উন্নয়ন প্রচার ও বিএনপির অপকর্ম-দূর্নীতি জনগণের কাছে তুলে ধরে ভোট চাওয়া হবে। এছাড়া খুলনায় ভোটের দিন যে যে কৌশল অবলম্বন করা হয়েছিল জয় নিশ্চিতে গাজীপুরেও একই কৌশল অবলম্বন করা হবে।
আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে সিটি নির্বাচনে জয়লাভ করা ইমেজ রক্ষার বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে। তাই গাজীপুরেও খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মতো প্রশ্নমুক্ত ও নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন চায় দলটি। যেন এই ভোট নিয়ে কোন বিশৃঙ্খখলা না হয় এবং বিরোধীদলগুলো রাজনীতি করার সুযোগ না পায়। এক্ষেত্রে খুলনার নির্বাচন আওয়ামী লীগের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছে। এজন্য খুলনার কৌশলের আলোকে গাজীপুরে কাজ করা হবে। এছাড়া নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা ও রংপুর সিটিকরপোরেশনের নির্বাচনের শিক্ষা কাজে লাগাবে ক্ষমতাসীনরা। এর আলোকে ইতোমধ্যে গাজীপুরের বিভিন্ন সমস্যা সমাধান কাজ করা শুরু হয়েছে এবং জয়ের বিষয়ে আশাবাদি ক্ষমতাসীনরা। তবে দলীয় ঐক্য ও শৃঙ্খলা যারা নষ্ট করবে তাদেও বিরুদ্ধে এবার কঠোর ব্যবস্থা নেবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের একজন কেন্দ্রীয় নেতা ইনকিলাবকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন ঐক্যবদ্ধ থাকলে যেকোন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়লাভ করবে। তাই দলীয় ঐক্যেও উপর গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে এবং যারা শৃঙ্খলা মানবে না তাদের কাছে শৃঙ্খলা ভঙ্গের শাস্তির বার্তাও পৌছে দেয়া হচ্ছে।
দলীয় সূত্র বলছে, খুলনার মেয়র প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেক যতটা জনপ্রিয় ছিলেন গাজীপুরের প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম ততটা জনপ্রিয় নন। এছাড়া সর্বজন গ্রহণযোগ্য ও মান্যজন নন। এছাড়া গাজীপুরের কোন্দল এবং পরিবেশ একটু ভিন্ন যেমনটা ছিল কুমিল্লা সিটিতে। তাই জয় পেতে কষ্ট করতে হবে প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমকে।
সেজন্য খুলনার চেয়ে গাজীপুরে বেশি পরিশ্রম করতে হবে আওয়ামী লীগকে। তাই সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে দলীয় ঐক্যে। এরপর উন্নয়ন প্রচার ও বিএনপির সমালোচনা। এ নিয়ে খোদ আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গাজীপুরের নেতাদের প্রার্থী নয় নৌকার বিজয়ের জন্য কাজ করতে বলেছেন।
দলের নেতারা বলছেন, কুমিল্লা ও রংপুর সিটিতে দলীয় ঐক্য না থাকার কারণে প্রার্থীর পরাজয় হয়েছিল। তবে দলীয় ঐক্য ঠিক রেখে খুলনার নির্বাচনে ভাল ফলাফল এসেছে। গতবার দলীয় কোন্দলের কারণেই খুলনায় পরাজয় হয়েছিল বলে গণমাধ্যমে মন্তব্য করেছিলেন বর্তমান মেয়র তালুকদার খালেক। এ নিয়ে নির্বাচনে প্রার্থী হতে চাননি তিনি। এরপর প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং নিজে তাকে প্রার্থী হতে বলেছেন এবং দলীয় কোন্দলের বিষয়ে পদক্ষেপ নিয়েছেন। ফলে প্রার্থীর জয় হয়েছে। এর আগে নারায়ণগঞ্জ সিটিতেও শামীম ওসমান ও সেলিনা হায়াত আইভীর মধ্যকার সমস্যার সমাধান করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাতে দলীয় প্রার্থী আইভী জয়লাভ করেন। তাই গাজীপুরেও দলীয় ঐক্যের বিষয়ে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় টিমের সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, আওয়ামী লীগ যখনই ঐক্যবদ্ধ হয়েছে, তখনই বিজয় এসেছে। আওয়ামী লীগের প্রার্থী নয়, প্রতীকটাই মুখ্য বিষয়। খুলনাতে ঐক্যবদ্ধ ও উন্নয়নের কারণে বিজয় এসেছে, গাজীপুরেও আসবে। তিনি বলেন, গাজীপুরে শুরুর দিকে ছোটখাটো সমস্যা ছিল-কিন্তু এখন তা নেই। গাজীপুর আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ ও সুসংগঠিত।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য এস এম কামাল হোসেন খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলের মেয়র প্রার্থী সদ্য মেয়র আব্দুল খালেকের নির্বাচনী সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করেছেন। বিগত কুমিল্লা, রংপুর ও খুলনা সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের অভিজ্ঞতার আলোকে এই নেতা ইনকিলাবকে বলেন, দলের ঐক্য, উন্নয়ন প্রচার ও যোগ্য প্রার্থী না হলে নির্বাচনে জয়লাভ সম্ভব নয়। এছাড়া প্রার্থী নিজ গুণে দলের বাইরে দশ শতাংশ ভোট টানতে ব্যর্থ সে প্রার্থী কখনো নির্বাচনে জয়লাভ করতে পারবেন না। এছাড়া গতবার যারা তালুকদার আব্দুল খালেকের বিপক্ষে কাজ করেছিলেন তারা সবাই এবার ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করেছেন তাই দলীয় প্রার্থীর জয় হয়েছে।
এলক্ষ্য নিয়ে ঈদের পর ২৫ কেন্দ্রীয় নেতা মাঠে নামবেন। দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক ও কর্ণেল (অব.) ফারুক খানকে বিশেষ দায়িত্ব দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দায়িত্ব পেয়ে দুই নেতা তাদের মিশন শুরু করেছেন। এই দুই নেতা গত মঙ্গল ও বুধবার এই দুই নেতা পৃথক পৃথকভাবে আজমত উল্লাহ খানের সঙ্গে কথা বলেছেন। দলীয় প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমও তাদের জানিয়েছেন, দলের ভিতরে যে মান-অভিমান ছিল তা নিরসন হচ্ছে। নেতা-কর্মীরা সবাই ঐক্যবদ্ধ।
এছাড়া গাজীপুর সিটিতে স্থানীয় এমপিদের মধ্যে আ ক ম মোজাম্মেল হক, মেহের আফরোজ চুমকি ও জাহিদ আহসান রাসেল ইতিমধ্যে নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে নামার নির্দেশ দিয়েছেন। বিভিন্ন জায়গায় কর্মিসভা, ইফতার মাহফিলে যোগ দিয়ে নৌকা মার্কায় ভোট চাইছেন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও ডাকসুর সাবেক ভিপি আখতারুজ্জামান। ঈদের পর কেন্দ্রীয় নেতারা গাজীপুর সিটি এলাকায় নৌকা মার্কায় ভোট প্রার্থনা করবেন। একই সঙ্গে স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে নির্বাচনী সমন্বয় করবেন তারা।
গত বুধবার আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক জানিয়েছিলেন, দলীয় সভানেত্রীর নির্দেশনা নিয়ে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি আজমত উল্লাহ খানের সঙ্গে তিনি ও আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য কর্নেল (অব.) ফারুক খান কথা বলেছেন।
কর্ণেল (অব) ফারুক খান ইনকিলাবকে বলেন, ঐক্যের বিকল্প নেই। ঐক্যবদ্ধ থাকলে অসাধ্য জয় করা যায় আর ঐক্য না থাকলে সহজ বিজয় হাত ছাড়া হয়। তাই সংগঠনের সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচনে কাজ করার জন্য বলা হচ্ছে। আশা করি খুলনার মত গাজীপুরেও জয়লাভ করবে আওয়ামী লীগ।
উল্লেখ্য, গত ১৫ মে গাজীপুর সিটিতে ভোট হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সীমানা নিয়ে জটিলতায় একটি রিটের কারণে প্রথমে উচ্চ আদালত ভোট স্থগিত করে। পরবর্তীতে রিট করা হলে আগামী ৩০ জুন নির্বাচন করতে নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশ দেয় আদালত। এরপর নির্বাচন কমিশন ২৬ জুন ভোট গ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করে। এছাড়া আগামী ৩০ জুলাই সিলেট, রাজশাহী ও বরিশাল সিটিতে ভোট হওয়ার কথা। এই সুযোগে নিজেদের কোন্দল মিটিয়ে গুছিয়ে নেবার সময় পেয়েছে ক্ষমতাসীনরা।
সূত্রমতে, গাজীপুর সিটিতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে শীর্ষে ছিলেন গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আজমত উল্লাহ খান ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম। আজমত উল্লাহ খান গতবার দলের সমর্থনে সিটি নির্বাচনে প্রার্থী হন। সে সময় জাহাঙ্গীর আলম প্রার্থী হন। পরে কেন্দ্রের হস্তক্ষেপে প্রার্থিতা থেকে সরে দাঁড়ালেও আজমত উল্লাহর পরাজয়ের পেছনে স্থানীয় নেতা-কর্মীরা জাহাঙ্গীরকেই দায়ী করেন সে সময়। এবার মনোনয়ন যুদ্ধে আজমত উল্লাহ ছিটকে পড়েন। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্র থেকে আজমত উল্লাহ খানকে প্রধান সমন্বয়ক করা হয়। কিন্তু আজমত উল্লাহকে সক্রিয় করার ব্যাপারে জাহাঙ্গীরের তেমন ভূমিকা ছিল না। এ ছাড়া দলীয় মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলমের ‘একলা চল’ নীতিতে ক্ষুব্ধ হন দলের হাইকমান্ড। যে কারণে তাকে গণভবনে ডেকে কথা বলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নির্দেশ দেন দলের সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করতে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।