পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ভোগান্তি মাথায় নিয়েই নাড়ির টানে বাড়ি ফিরছেন রাজধানীবাসী। পথে পথে নানান ঝক্কি-ঝামেলা উপেক্ষা করে প্রিয়জনের সান্নিধ্যে ঈদ উদযাপনের জন্য গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছেন তারা। অনেক যুদ্ধ করে ট্রেনের বা বাসের টিকিট পেয়ে অনেকে নিজেদের সৌভাগ্যবান মনে করেছিলেন। তবে বাসের জন্য অপেক্ষা ও রাস্তায় যানজট এবং ট্রেনে যাত্রীর ভিড়ে চিড়েচ্যাপ্টা হয়ে তাদেরই এখন নিজেদের বড় অসহায় মনে হচ্ছে। তবে ঈদ যাত্রায় এবার নদী পথে অনেকটা স্বস্তি পরিলক্ষিত হচ্ছে।
আগামী দু’দিন নদী পথে যাত্রী আরো বাড়বে তবে সড়ক ও রেলপথের মতো এত ভোগান্তি হবেনা। দেশের প্রধান চারটি মহাসড়কে কম বেশি যানজট লেগে আছে। রমজানের শুরু থেকেই যানজটের সূচনা। সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের মহাসড়ক ব্যবস্থাপনা বিভাগের (এইচডিএম) সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশের ২১ দশমিক ২৫ শতাংশ জাতীয় মহাসড়ক ভাঙাচোরা দশায় রয়েছে। গত বছরের তুলনায় দেশের জাতীয় মহাসড়কগুলোর ভগ্নদশা প্রায় ১ শতাংশীয় পয়েন্ট বেড়েছে। প্রতিবেদন বলছে সারাদেশের মধ্যে সবচেয়ে ভালো অবস্থায় রয়েছে রংপুর জোন। অথচ রংপুরের সড়ক-মহাসড়কের অবস্থা বাস্তবে মোটেও ভাল নেই। ঢাকা থেকে রংপুর যেতে এখন ১২/১৩ ঘণ্টা লাগে। ভুক্তভোগিদের মতে, ঈদযাত্রায় গাড়ির ভিড়ে, যানজটে এখন তার চেয়েও দু’তিন ঘন্টা সময় বেশি লাগছে।
সড়কপথে যানজট ভোগান্তি এড়াতে এবার ঈদযাত্রায় ট্রেনের দিকে ঝুঁকেছেন অনেকে। তাই ট্রেনের টিকিট নিয়ে অন্যান্য বাড়ের চেয়ে এবার কাড়াকাড়ি একটু বেশি হয়েছে। বেশিরভাগ টিকিট কালোবাজারিতে বিক্রিরও অভিযোগ উঠেছে। কোটা পদ্ধতির বাইরে টিকিটের ছিল ভীষন চাপ। সে হিসাবে এবার সাধারণ যাত্রীদের টিকিট পেতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। অনেকে বেশি টাকায় বø্যাকারদের কাছ থেকে টিকিট কিনেছেন। তবে ট্রেনে এবার সিটিংয়ের চেয়ে স্ট্যান্ডিং যাত্রী তিনগুন। এতে অতিরিক্ত যাত্রীর ভিড়ে সবার নাকাল অবস্থা।
ঈদযাত্রায় যাত্রীদের স্বস্তি দিতে সড়ক ও যোগাযোগমন্ত্রী মন্ত্রণালয়কে সার্বিক ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তার নির্দেশে গেল বর্ষায় যে সব সড়ক-মহাসড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল সেগুলো কোনোমতে জোড়াতালি দিয়ে মেরামত করা হয়েছিল। তবে গত দু’তিন দিনের টানা বৃষ্টিতে জোড়াতালির মেরামত আবার বেহাল অবস্থায় পরিণত হয়েছে। এবার বর্ষা আগেভাগেই এসে পড়ায় সেগুলো পুরোপুরি মেরামত করার আগে আবার নতুন করে সেগুলো ভেঙে গেছে। এতে করে সড়ক পথে স্বস্তির বদলে যাত্রীদের সেই ভোগান্তিই পেহাতে হচ্ছে।
সওজ সূত্র জানায়, গত বছর ঈদুল ফিতরে ৩২ শতাংশ মহাসড়ক খারাপ ছিল। সে তুলনায় এবার মহাসড়কের অবস্থা ভাল বলা হলেও বাস্তবতা ভিন্ন। ঈদযাত্রার শুরুতেই মহাসড়কগুলোতে দীর্ঘ যানজট ঘরমুখী মানুষদের চরম ভোগান্তিতে ফেলেছে। সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালের বাস মালিক সমিতির এক নেতা বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের যানজট কোনো ভাবেই নিয়ন্ত্রণে আসছে না। এখনও ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যেতে ৮/৯ ঘণ্টা লাগছে। ঈদযাত্রায় আরও বেশি সময় লাগবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে মালিক সমিতির ওই নেতা বলেন, এবার ভোগান্তির কি অবস্থা হবে তা এখনই অনুমান করা যাচ্ছে। সড়কের বেহাল দশার কারনে যাত্রীরা ট্রেনের দিকে ঝুঁকছে বলেও জানান তিনি।
হাইওয়ে পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানবাহনগুলো দ্রæত গতিতে গোমতী, মেঘনা ও কাঁচপুর সেতুর কাছে এসে জড়ো হয়ে মেঘনা ও গোমতীর টোল প্লাজায় সারিবদ্ধ হয়। এরপর সেতুতে ওঠার সময় যানবাহনের গতি অন্তত ৮০ ভাগ কমে যায়। চার লেনের গাড়িগুলো দুই লেনের সেতুতে ধীর গতিতে চলায় যানজট দেখা দেয়। এক পর্যায়ে তা ভয়াবহ আকার ধারণ করে। ওই কর্মকর্তা বলেন, দাউদকান্দির টোল প্লাজায় একসঙ্গে এত যানবাহনের ওজন নিয়ন্ত্রণ, টোল আদায় ও চলাচলের পাসিং দেওয়া যায় না। এ কারনে যানজট দীর্ঘায়িত হয়। ঈদে একই সমস্যায় যানজট ভয়াবহ আকার ধারণ করে। অপরদিকে, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চার লেনের কাজ চলছে। এখনও অনেক অংশে মাত্র এক লেন দিয়ে গাড়ি পার হয়। ঈদযাত্রায় গাড়ির চাপ কয়েক গুণ বাড়ছে। সড়কে ভয়াবহ অবস্থার বিষয়টি আঁচ করতে পেরে উত্তরাঞ্চলের বেশিরভাগ যাত্রীই এবার ট্রেনের দিকে ঝুঁকেছেন।
জানতে চাইলে গাবতলী বাস টার্মিনালের একজন বাস মালিক বলেন, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের বেহাল অবস্থা চলছে কয়েক বছর ধরে। এখনও বঙ্গবন্ধু সেতুর আগে ৮/১০ কিলোমিটার যানজট লেগেই থাকে। ঈদযাত্রায় এ যানজট বেড়ে ঘরমুখি মানুষ সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়েছে। সেতুর ওপাড়ে সিরাজগঞ্জ অংশে এখনও সড়কের বেহাল অবস্থা বিদ্যমান। অন্যদিকে ঢাকা ময়মনসিংহ সড়কে টঙ্গি থেকে জয়দেবপুর পর্যন্ত খোঁড়াখুঁড়িতে একেবারে বাজে অবস্থা। টঙ্গি থেকে জয়দেবপুর এই আধ ঘন্টার রাস্তা যেতে কখনো তিন চার ঘন্টা লাগছে। সব মিলিয়ে ঈদযাত্রায় স্বস্তির কোন অবস্থা কোথাও নেই।
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের অবস্থা গত বছরের তুলনায় আরও খারাপ। চার লেনের কাজ শুরু হয় হচ্ছে করে গুরুত্বপূর্ণ এই মহাসড়কটি সেভাবে মেরামত করা হয়নি। এই রুটে চলাচলকারী যাত্রী ও বাস চালকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ঈদযাত্রায় সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি হচ্ছে রূপগঞ্জে নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারের দু’পাশে। সেখানে ৫/৬ কিলোমিটার যানজট লেগে থাকে। ঈদযাত্রায় এটি বেড়ে আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করছে।
সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের মহাসড়ক ব্যবস্থাপনা বিভাগের (এইচডিএম) সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী সারাদেশের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা বরিশাল জোনের জাতীয় মহাসড়কের অবস্থা। এ জোনের ১১৮ কিলোমিটার জাতীয় মহাসড়কে জরিপ চালিয়ে ২৭ কিলোমিটারের বেশি ‘খুবখারাপ’ অবস্থায় পেয়েছে এইচডিএম। ‘দুর্বল’ ও ‘খারাপ’ অবস্থায় রয়েছে আরো প্রায় ১১ কিলোমিটার সড়ক। বরিশাল-কুয়াকাটা জাতীয় মহাসড়কের শেখ জামাল সেতু থেকে কলাপাড়ার পাখিমারা বাজার পর্যন্ত প্রায় ১১ কিলোমিটার সড়কের বেহাল দশা। কোথাও কার্পেটিং উঠে গেছে। কোথাও ইট-খোয়া সরে গিয়ে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। বরিশাল জোনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় মহাসড়কটির এ দশা সীমাহীন ভোগাচ্ছে স্থানীয় মানুষ ও কুয়াকাটামুখী পর্যটকদের। ঈদযাত্রায় এ ভোগান্তি চরম আকার ধারণ করেছে।
ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের কিছু অংশ চলাচলযোগ্য হলেও এখনও বেশিরভাগ অংশ চলাচলের অযোগ্য। অন্যদিকে, ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কের অবস্থাও বেহাল। এইচডিএমএর প্রতিবেদন বলছে, বরিশালের পরেওই খারাপের তালিকায় রয়েছে রাজশাহী জোনের নাম। সুতরাং ঈদযাত্রায় রাজশাহীসহ নাটোর, পাবনা, চাপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, কুষ্টিয়া, বগুড়াসহ উত্তরের কমপক্ষে ১৬টি জেলার যাত্রীরাও ভোগান্তি নিয়েই সড়ক পথে গন্তব্যে যাচ্ছেন।
চৌদ্দগ্রাম সংবাদদাতা মোঃ আকতারুজ্জামান জানান, অন্যান্য বছরের মতো এ বছরও দেশের ব্যস্ততম ঢাকা-চট্টগ্রাম মহসড়কে যানজট নিয়ে শঙ্কায় ঈদে ঘরমুখো যাত্রীরা। যদিও এরই মধ্যে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবারের ঈদ যাত্রায় যাত্রীদের ভোগান্তিতে পড়তে হবে না বলে ঘোষণা দিয়েছেন। তাই মন্ত্রীর দেয়া প্রতিশ্রæতি বাস্তবায়ন করতে কুমিল্লা জেলা ও হাইওয়ে পুলিশের এখন অনেকটা গলদঘর্ম অবস্থা। তাদের প্রস্তুতিও কম নয়। ঈদের তিন দিন আগে এই ফোরলেন সড়কে যাত্রীবাহী যানবাহনের চাপ সামাল দিতে পণ্যবাহী যানবাহন বন্ধ রাখার সরকারি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে কাল থেকে মাঠে কঠোর অবস্থানে থাকবে পুলিশ। মহাসড়কের কুমিল্লা অংশের ৯৭ কি.মি. এলাকায় জেলা ও হাইওয়ে পুলিশের প্রায় ৫ শতাধিক সদস্য রাস্তায় থাকবে বলে জানিয়েছেন কুমিল্লার পুলিশ সুপার মো. শাহ আবিদ হোসেন। এ ছাড়াও মানুষের ঈদযাত্রা নির্বিঘœ করতে কুমিল্লা জেলা পুলিশের ঈদের দিন পর্যন্ত সব ধরনের ছুটি বাতিল করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এদিকে, গত দুইদিন ধরে ব্যস্ততম ঢাকা-চট্টগ্রাম ফোরলেনের কুমিল্লার দাউদকান্দি থেকে চৌদ্দগ্রাম সীমান্ত এলাকা পর্যন্ত এলাকা ঘুরে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। দিনের বেলায় পণ্যবাহী যানবাহন চলাচল আগের তুলনায় খুবই কম। গতকাল দিনভর দাউদকান্দির টোল প্লাজা এলাকায় ছিল না যানবাহনের দীর্ঘ লাইন।
বঞ্চিতদের ঈদ আনন্দ
খালেদ সাইফুল্লাহ সিদ্দিকী : আমাদের দেশে সরকারি ও বেসরকারি এতিম খানা বিক্ষিপ্ত ভাবে রয়েছে। ধর্ম প্রাণ বিত্তশালী লোকদের আর্থিক সাহায্য সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতা-তত্ত¡াবধানে প্রতিষ্ঠিত এসব এতিম খানা মানবতার অন্যতম সেবা কেন্দ্র এরূপ প্রশংসনীয় উদ্যোগ প্রয়াস আরও অধিক হওয়া যেমন জরুরী তেমনি উন্নয়ন, সংস্কার তৎপরতাও বৃদ্ধি পাওয়া উচিত।
বিভিন্ন এতিম খানায় লালিত, প্রতিপালিতদের বিয়ে-শাদীর ব্যবস্থা করে দেওয়ার উদ্যোগের খবর মাঝে মধ্যে দেখা যায়। এরূপ উদ্যোগ নি:সন্দেহে উৎসাহ ব্যঞ্জক এবং প্রশংসনীয়। বিভিন্ন জাতির মধ্যেও এতিম খানার প্রচলন রয়েছে বলে জানা যায়। তারা এতিম শিশুদের আপন সন্তান মনে করে এবং এতিমদের সুযোগ সুবিধার জন্য উন্নত ব্যবস্থা করে থাকে। এতিম খানা কর্তৃপক্ষ ওদের শিক্ষা দীক্ষায় উন্নত ব্যবস্থা করে থাকে। এতিম খানা থেকে বের হয়ে ওরা রাষ্ট্রে ও সমাজে সুখী স্বাচ্ছন্দ্য জীবন যাপন করতে সক্ষম হয়। কিন্তু আমাদের দেশে সরকারি, বেসকারি পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত এতিম খানাগুলোর ব্যবস্থাপনার নানা অভিযোগ রয়েছে। এতিম খানাগুলোকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং মাদ্রাসায় পরিণত করা হলে সেখান থেকে এতিমরা সুশিক্ষিত ও স্বনির্ভর হয়ে বের হতে পারে। পথে-ঘাটে, এখানে-সেখানে লাগামহীন ভাবে ঘোরা-ফেরাকারী শিশুদেরকে এতিম খানাগুলোতে ভার্তি করা হলে, তাদেরকে শিশু শ্রমিক হিসেবে ব্যবহার করার সুযোগ থাকবে না। তাছাড়া রাস্তা-ঘাটে, হাটে-বাজারে এবং যত্রতত্র ঘোরাফেরা করে বিপথে পরিচালিত হওয়ার সুযোগও থাকবে না।
এক এতিম বাচ্চার সাথে রসূলুল্লাহ (সা:) এর কথোপকথনের অদ্ভুত কাহিনী:
বিখ্যাত আরবী সাহিত্যিক হযরত শাহাবুদ্দীন কালয়ূবী তাঁর ‘নাওয়াদিরাত’ গ্রন্থে একটি অদ্ভুত ঘটনা বর্ণনা করেছেন, যার সংক্ষিপ্ত সার এই;
“এক ঈদের দিন রসূলুল্লাহ (সা:) ঈদের নামাজের জন্য গমন করছিলেন। পথে তিনি কয়েকটি শিশুকে খেলা ধূলা করতে দেখেন, কিন্তু একটি বিষণœ, ক্রন্দনরত শিশুকে দেখে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘হে বৎস, তুমি কেন চিন্তিত?’ শিশুটি তাকে চিনত না। সে একটি ঠান্ডা নি:শ^াস নিয়ে বেপরোয়া ভাবে জবাব দেয়, ‘হে ব্যক্তি, আপনি কি জানেন, আমার পিতা একটি যুদ্ধে শহীদ হয়েছে, আমার মা দ্বিতীয় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে এবং আমার পিতার সমস্ত সহায়-সম্পদ নিয়ে চলে গিয়েছে। দ্বিতীয় পিতা (মায়ের দ্বিতীয় স্বামী) আমাকে বের করে দিয়েছে, এখন আমার কোন অভিভাবক নেই, কোন লালন পালনকারীও নেই। এ দু:খজনক অবস্থায় আমি বিষণœ বসে আছি।’ রসূলুল্লাহ (সা:) এ শিশুর বেদনা দায়ক কাহিনী শ্রবণ করে বললেন; তুমি কি এই কথা পছন্দ কর যে, তোমার পিতা নেই। মোহাম্মদ (সা:) তোমার পিতা হয়ে যাবেন, আয়েশা (রা:) তোমার মা হয়ে যাবেন এবং হাসান (রা:) ও হোসেন (রা:) এবং ফাতেমা (রা:)তোমার ভাই-বোন হয়ে যাবেন?’ শিশুটি আরজ করল; মোহাম্মদ (সা:) অপেক্ষা হাজারবার আমার পিতাকে আমি কোরবান করতে প্রস্তুত, আয়েশা (রা:) হতে উত্তম মা এবং খাতুনে জান্নাত হতে উত্তম বোন ও হাসান (রা:) এবং হোসেন (রা:) অপেক্ষা উত্তম ভাই আমি কোথায় পাব?’ এরপর হুজুর (সা:) শিশুটিকে তাঁর ঘরে নিয়ে আসেন এবং হযরত আয়েশা (রা:) কে নির্দেশ দেন, তাকে খাওয়াতে এবং পোষাক পরিধান করাতে। শিশুটি হুজুর (সা:) এর তত্ত¡াবধানে থেকে বড় হতে থাকে। তাঁর ওফতের পর এ শিশু মাথায় মাটি মেখে চিৎকার এবং বিলাপ করতে থাকে এবং বলতে থাকে যে, ‘আজ আমি এতিম হয়েছি। যতদিন হুজুর (সা:) জীবিত ছিলেন, একদিনও আমার মনে হয়নি আমি এতিম।’ হুজুর (সা:) এর ওফাতের পর হযরত আবু বকর ছিদ্দীক (রা:) তার অভিভাবকের দায়িত্ব পালন করেন।
হুজুর আকরাম (সা:) নিজেও ছিলেন এতিম। তাই এতিমদেরকে তিনি অত্যন্ত ভালোবাসতেন, ¯েœহাদর করতেন। এতিমদের লালন পালন ও তাদের স্বার্থ ও অধিকার সংরক্ষণের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব আরোপা করতেন। মুসলমানগণ ইসলামের এ মহান আদর্শ শিক্ষা হতে দূরে সরে যাওয়ায় আমাদের সমাজে এতিম মিসকিন ও দরিদ্র, অভাবীদের দুরাবস্থা চরম আকার ধারণ করেছে। এ উপেক্ষিত নিগৃহীত, বঞ্চিত শ্রেণীর কথা বিস্মৃত হয়ে যখন বিত্তশালী, অর্থবান লোকেরা তাদের ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদেরকে নিয়ে ঈদ উৎসবের কেনা কাটায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে, তখন ঐ বঞ্চিত, অবহেলিত শ্রেণীর ছেলে-মেয়েদের মনের অবস্থা কি হতে পারে তা কি কেউ একবারও ভেবে দেখে? অভিভাবকহীন এ বিরাট শিশু সমাজ ও অবস্থাবান পরিবারগুলোর শিশু সন্তানদের ন্যায় ঈদের আনন্দ ভোগ করার অধিকারী। এ আনন্দঘন মূহুর্তে তাদের প্রতি যথাযথ সহানুভ‚তির দৃষ্টি প্রদর্শণ করা রাষ্ট্র ও সমাজপতিদের দায়িত্ব।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।