Inqilab Logo

শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

প্রত্যাবাসনের বাধা দূর করতে দরকার নাগরিক স্বীকৃতি -পুরস্কারপ্রাপ্ত রোহিঙ্গা আইনজীবী

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১২ জুন, ২০১৮, ১২:০০ এএম

রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব না মিললে মিয়ানমারে তাদের প্রত্যাবাসন ও পুনর্বাসন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হবে বলে মনে করেন অরোরা পুরস্কারপ্রাপ্ত রোহিঙ্গা আইনজীবী ড. কিয়াও হ্লা অং। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, মিয়ানমারকে অবশ্যই রাষ্ট্রহীন রোহিঙ্গাদের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে; রোহিঙ্গাদের পরিচয়সংক্রান্ত কাগজপত্র দিলে তারা দেশের ভেতরে নিরাপদে থাকতে পারবে, তাদেরকে অন্য দেশে পালিয়ে যেতে হবে না।
গত বছরের ২৫ আগস্ট রাখাইনের কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার পর পূর্ব-পরিকল্পিত ও কাঠামোবদ্ধ সহিংসতা জোরালো করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। জাতিগত নিধন থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় প্রায় ৭ লাখ রোহিঙ্গা। মিয়ানমার শুরু থেকেই রোহিঙ্গাদের বাঙালি মুসলিম আখ্যা দিয়ে নাগরিকত্ব অস্বীকার করে আসছে। তবে এবারের ঘটনায় আন্তর্জাতিক চাপ জোরালো হওয়ার একপর্যায়ে প্রত্যাবাসন চুক্তিতে বাধ্য হয় মিয়ানমার। তবে সেই চুক্তির পর বেশ খানিকটা সময় পেরিয়ে গেলেও এখনও ধোঁয়াশা কাটছে না। চুক্তির আওতায় এখনও একজন রোহিঙ্গাকেও ফিরিয়ে নেয়নি মিয়ানমার। এরমধ্যেই গত ৬ জুন রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রশ্নে মিয়ানমারের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে জাতিসংঘ। তবে নাগরিকত্ব প্রশ্নটি অমীমাংসিত থাকায় এরইমধ্যে ওই চুক্তি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছে রোহিঙ্গারা।
সহিংসতা থেকে বাঁচতে একসময় রাখাইন ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন রোহিঙ্গা আইনজীবী ড. হ্লা কিয়াও। নেদারল্যান্ডসের নির্বাসিত জীবনের মনবেদনা তাকে বারবার ফিরিয়ে নিয়ে যায় বঞ্চনা আর দীর্ঘশ্বাসের স্মৃতিভরা রাখাইনে। এখন তিনি কাজ করছেন শরণার্থীদের জন্যই। দায়িত্ব পালন করেছেন ইউরোপিয়ান রোহিঙ্গা কাউন্সিল এর চেয়ারম্যান হিসেবে। ১০ জুন (রবিবার) আর্মেনিয়ায় তিনি তার কাজের স্বীকৃতি হিসেবে ‘অরোরা সম্মাননা’ গ্রহণ করেন। এদিন রয়টার্সকে টেলিফোনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অং নাগরিকত্ব প্রদান ছাড়া রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন আদৌ সম্ভব কিনা তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন।
অং মনে করেন, প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের অভাব থাকলে এবং রোহিঙ্গাদের নাগরিকের স্বীকৃতি না মিললে তাদের প্রত্যাবাসন ও পুনর্বাসন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হবে। তিনি বলেন, ‘কিভাবে এসকল লোক সরকারের জন্য তাদের কাগজপত্র তৈরি করবে? তারা আমাদেরকে রাষ্ট্রহীন বলে ডাকার জন্য এমনটা করছে।’
প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে রোহিঙ্গারা রাখাইনে থাকলেও মিয়ানমার তাদের নাগরিক বলে স্বীকার করে না। উগ্র বৌদ্ধবাদকে ব্যবহার করে সেখানকার সেনাবাহিনী ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে স্থাপন করেছে সামপ্রদায়িক অবিশ্বাসের চিহ্ন। ছড়িয়েছে বিদ্বেষ। ৮২-তে প্রণীত নাগরিকত্ব আইনে পরিচয়হীনতার কাল শুরু হয় রোহিঙ্গাদের। এরপর কখনও মলিন হয়ে যাওয়া কোনও নিবন্ধনপত্র, কখনও নীলচে সবুজ রঙের রশিদ, কখনও ভোটার স্বীকৃতির হোয়াইট কার্ড, কখনও আবার ‘ন্যাশনাল ভেরিফিকেশন কার্ড’ কিংবাএনভিসি নামের রং-বেরঙের পরিচয়পত্র দেওয়া হয়েছে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মানুষকে। ধাপে ধাপে মলিন হয়েছে তাদের পরিচয়। ক্রমশ তাদের রূপান্তরিত করা হয়েছে রাষ্ট্রহীন বেনাগরিকে।
দ্য রোহিঙ্গা প্রজেক্ট-এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিশ্বজুড়ে ৪০ লাখ রোহিঙ্গা রয়েছে। এর বেশিরভাগই ১৯৮২ সালের পর থেকে তারা মিয়ানমারে তাদের আদি ভিটা ছেড়ে গেছেন। ১৯৮২ সালে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদেরকে দেশের স্বীকৃত জাতিগোষ্ঠীর তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার পর রাষ্ট্রীয় পরিচয়হীন হয়ে পড়ে রোহিঙ্গারা। জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা বলছে, বিশ্বে রাষ্ট্রীয় পরিচয়বিহীন ১ কোটি মানুষের মধ্যে রোহিঙ্গাদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। ‘রাষ্ট্রহীন’ এ রোহিঙ্গারা তাদের পরিচয়, অধিকার ও চাকরি সবকিছু থেকে বঞ্চিত।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রত্যাবাসন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ